লেখা: রয়টার্স।
যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহার করতে চাইলে বিভিন্ন দেশের সরকারকে মোটা অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করতে হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি আরোপিত শুল্ককে ওষুধ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপকে কেন্দ্র করে আজ সোমবার বিশ্বব্যাপী আর্থিক বাজার আরও অস্থির হয়ে উঠেছে।
দিনের শুরুতেই এশিয়া ও ইউরোপের শেয়ারবাজারে দ্রুত দরপতন হতে দেখা গেছে। মার্কিন শেয়ারবাজারের অবস্থাও নিম্নমুখী। বিনিয়োগকারীদের আশঙ্কা, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের কারণে দাম বেড়ে যাওয়া, চাহিদা কমা, আস্থা কমে যাওয়া এবং বিশ্বব্যাপী মন্দা দেখা দিতে পারে।
গতকাল রোববার এয়ারফোর্স ওয়ান উড়োজাহাজে বসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ সময় ইঙ্গিত দেন, বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে যে কোটি কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে, তাতে তাঁর কিছু আসে যায় না।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি চাই না কোনো কিছুতে ধস নামুক। তবে মাঝেমধ্যে কিছু জিনিস ঠিক করার জন্য আপনাকে ওষুধ নিতে হয়।’
ট্রাম্প বলেন, তিনি সপ্তাহান্তে ইউরোপ ও এশিয়ার নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এসব নেতা শুল্ক কমানোর জন্য তাঁকে রাজি করানোর চেষ্টা করছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘তাঁরা আলোচনার টেবিলে আসছেন। তাঁরা আলোচনা করতে চান। তবে আমাদের বছরভিত্তিক প্রচুর অর্থ পরিশোধ না করা পর্যন্ত কোনো আলোচনা হবে না।’
গত সপ্তাহে ট্রাম্প শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা দেখা দেয়। এর প্রতিক্রিয়ায় চীন পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। এমন অবস্থায় বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধ ও মন্দা দেখা দেওয়া আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শুল্ক আরোপের পেছনে ট্রাম্পের উদ্দেশ্য কী, তা নির্ধারণ করতে বিনিয়োগকারী ও রাজনীতিবিদেরা হিমশিম খাচ্ছেন। এটা কি ট্রাম্পের নতুন শাসনব্যবস্থার অংশ, নাকি অন্যান্য দেশ থেকে সুবিধা পাওয়ার জন্য আলোচনার কৌশল, তা তাঁরা নিশ্চিত হতে পারছেন না।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন, গত বুধবারের ঘোষণার পর থেকে ৫০টির বেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক সিবিএস নিউজের ‘ফেস দ্য নেশন’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘কয়েক দিন এবং কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত’ শুল্ক বহাল থাকতে পারে।
এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশগুলোর একটি জাপান। শুল্কের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমঝোতায় পৌঁছাতে চাওয়া দেশগুলোর একটি হচ্ছে জাপান। তবে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা সোমবার বলেছেন, ‘রাতারাতি ফল আসবে না।’
গত বুধবার বিশ্বের অনেক দেশের ওপর কমপক্ষে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ ছাড়া কিছু দেশের ওপর ১১ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
লেখা: রয়টার্স।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপের পর থেকে ৫০টিরও বেশি দেশ বাণিজ্য আলোচনা শুরু করার জন্য হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ট্রাম্পের শুল্কের প্রতি সমর্থন জানিয়ে গতকাল রোববার মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তারা এ কথা জানিয়েছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের প্রভাবে গত সপ্তাহে প্রায় ৬ ট্রিলিয়ন ডলার হারিয়েছে মার্কিন পুঁজিবাজার। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, এর ফলে অর্থনীতিতে আশঙ্কার চেয়ে কম প্রভাব পড়েছে।
গতকাল সকালের টক শোতে ট্রাম্পের শীর্ষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টারা শুল্ককে বিশ্ববাণিজ্য ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি কৌশলগত পুনর্বিন্যাস হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করেছেন। শুল্ক ঘোষণার পর গত সপ্তাহ অর্থনীতিতে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল, তা কমে এসেছে বলেও ইঙ্গিত করার চেষ্টা করেন তাঁরা। গতকাল ওয়াল স্ট্রিট স্টক এক্সচেঞ্জে ব্যাপক দরপতন হয়। তখনই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল, আরও একটি কঠিন সপ্তাহ অপেক্ষা করছে।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন, গত বুধবার শুল্ক ঘোষণার পর থেকে ৫০টির বেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। এটি ট্রাম্পকে একটি প্রভাবশালী অবস্থানে অধিষ্ঠিত করেছে।
যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করছে বা করার চেষ্টা করছে, তাদের নাম কিংবা কী আলোচনা হচ্ছে, তা প্রকাশ করেননি বেসেন্ট বা অন্য কোনো কর্মকর্তা। তবে একই সময়ে একাধিক সরকারের সঙ্গে আলোচনা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা দীর্ঘায়িত করতে পারে।
মার্কিন কাস্টমস এজেন্টরা গত শনিবার থেকে অনেক দেশের আমদানি পণ্যের ওপর ট্রাম্পের একতরফা ১০ শতাংশ শুল্ক আদায় শুরু করেছে। আগামী বুধবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে প্রতিটি দেশের ওপর ১১ থেকে ৫০ পর্যন্ত ব্যাপক হারের এই পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
কিছু সরকার ইতিমধ্যেই শুল্ক এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার আগ্রহের ইঙ্গিত দিয়েছে।
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তি হিসেবে মার্কিন পণ্যে শূন্য শুল্কের প্রস্তাব দিয়েছেন। এ ছাড়া বাণিজ্য–বাধা অপসারণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, তাইওয়ানের কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ বাড়াবে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, আজ ট্রাম্পের সঙ্গে একটি পরিকল্পিত বৈঠকের সময় তিনি নিজ দেশের পণ্যের ওপর ১৭ শতাংশ শুল্ক থেকে অব্যাহতি চাইবেন।
একজন ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ভারত ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা করছে না। সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলেও উল্লেখ করেছে ভারত।
ইতালিতে প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিকল্পিত ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসাগুলোকে তিনি রক্ষা করবেন।
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:এপ্রিল ০৭, ২০২৫
রেটিং করুনঃ ,