Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট আযমীকে হত্যার পরামর্শ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনাহিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট আযমীকে হত্যার পরামর্শ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনাহিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট আযমীকে হত্যার পরামর্শ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা (২০২৫)

Share on Facebook

ক্ষমতায় থাকাকালে কিছু ক্ষেত্রে গুম অথবা হত্যার সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন ভারতে পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনকি এক পর্যায়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবদুল্লাহ আমান আযমীকেও হত্যার পরামর্শও দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। এসব বিষয়ে জানেন এমন কর্মকর্তারা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটসকে জানিয়েছেন ভয়াবহ এ তথ্য। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) সোমবার প্রকাশ করেছে ৫৫ পৃষ্ঠার রিপোর্ট ‘আফটার দ্য মুনসুন রেভ্যুলুশন- এ রোডম্যাপ টু লাস্টিং সিকিউরিটি সেক্টর রিফর্ম ইন বাংলাদেশ’। এই রিপোর্টে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে র‌্যাবকে বিলুপ্ত করার জন্য দাবি জানানো হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ লিখেছে, র‌্যাব-পুলিশসহ নিরাপত্তাভিত্তিক সব প্রতিষ্ঠানে সংস্কারের সুপারিশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে পুলিশ-র‌্যাবসহ অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ করা হয় বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। তারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি বিচার বিভাগের সংস্কারের সুপারিশের কথাও জানিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে আগামী মার্চে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক অধিবেশনে সংস্কারকে দীর্ঘমেয়াদি করতে প্রস্তাব উত্থাপনেরও পরামর্শ দিয়েছে এইচআরডব্লিউ। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, কমপক্ষে গত ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনার নিষ্পেষণমূলক হাতিয়ারের মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা পর্যায়ক্রমে বিরোধীদলীয় সদস্য, সমালোচক, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীদের টার্গেট করেছে। এক্ষেত্রে বানোয়াট মামলা দেয়া হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, খেয়ালখুশিমতো গ্রেপ্তার এবং জোরপূর্বক গুম করা হয়েছে।

একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বাহিনীকে রাজনীতিকরণ করার মধ্যদিয়ে জনগণের সামনে পুলিশের ইমেজকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং র‌্যাবে (যারা হলো পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি বাহিনী) পছন্দের নিয়োগ, পদোন্নতি ও পুরস্কার দিয়ে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীকে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে। এ নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তারা বলেছেন, বাহিনীতে একটি সিস্টেম দাঁড় করা হয়েছিল। এর ওপর নির্ভর করতো রাজনৈতিক স্পন্সরশিপ এবং ঘুষের বিষয়। নিষ্পেষণের প্রণোদনা হিসেবে পুলিশকে পুরস্কার দেয়া হতো। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করতে ব্যবহার করা হতো নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার কুক্ষিগত নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর পদ্ধতিগত সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আইনের মাধ্যমে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করার যে পদ্ধতি রয়েছে তা বাতিল করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মনে করে, সংস্কারের মাধ্যমে সিভিল সার্ভিস, পুলিশ, সামরিক বাহিনী এবং বিচার বিভাগসহ সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক ক্ষমতা থেকে আলাদা করা উচিত। এক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের জাতিসংঘ এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সহায়তা নেয়া উচিত বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া পরিচালক এলেন পিয়ারসন বলেন, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে গিয়ে বাংলাদেশে প্রায় ১ হাজার বাংলাদেশি প্রাণ দিয়েছেন। তারা বাংলাদেশে মানবাধিকারের ভবিষ্যৎ নির্মাণের একটি যুগান্তকারী সুযোগ এনে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার যদি দ্রুত এবং কাঠামোগত সংস্কার না করে তাহলে ভবিষ্যতের সরকারগুলো যেকোনো সময় দমন-পীড়নের পথে পরিচালিত হতে পারে। যদি এমনটা হয় তাহলে কষ্টার্জিত অভূতপূর্ব এই সুযোগ সম্পূর্ণরূপে হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ২০ বছরের বেশি গবেষণা এবং নথিপত্রের পাশাপাশি বিভিন্ন মানবাধিকার কর্মী, অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্য, বর্তমান ও সাবেক আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এবং সামরিক কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে বর্তমান সুপারিশমালা তৈরি করেছে আন্তর্জাতিক এই সংস্থা। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, নিজ ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে হাসিনা বিচার বিভাগ এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পাশাপাশি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। এ বিষয়ে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, উচ্চ পদের ক্ষেত্রে যোগ্যতার চেয়ে আনুগত্যকে বেশি অগ্রাধিকার দিয়েছে হাসিনা সরকার। যার ফলে পুলিশ ক্রমশ পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে ওঠে। তারা বছরের পর বছর ধরে দলীয় ক্যাডারদের মতো আচরণ করেছে।

ইতিমধ্যেই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসহ অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ছাত্রদের ডাকে সাড়া দেয়া অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের আগে এসব প্রতিষ্ঠানের কিছু সংস্কারের প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে তিনি বেশ কয়েকটি কমিশনও গঠন করেছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদের বাইরেও সংস্কার প্রক্রিয়া যেন দীর্ঘ হয় সে বিষয়ে ২০২৫ সালের মার্চে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের অধিবেশনে একটি প্রস্তাবনা উত্থাপন করা উচিত। কেননা, বাংলাদেশে পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা খাতের সংস্কারে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন রয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পরও বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে পুলিশ। তারা এখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করছে। পুলিশ আগের মতোই মানুষকে নির্বিচারে আটক করছে। অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গণ ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করছে তারা। ফলত পুলিশ যে কাউকেই গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে হুমকি দিতে পারছে এখনো। হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পরপরই ‘আয়নাঘর’ খ্যাত হাসিনার গোপন কারাগার থেকে তিনজনকে মুক্তি দেয়া হয়। যাদের আটকের বিষয়টি অস্বীকার করে আসছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারকে আইনপ্রয়োগের তত্ত্বাবধানে থাকা কর্মীদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাঠামোগত সংস্কারের পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এ ছাড়া প্রসিকিউশন এবং বিচার বিভাগ যাতে নির্বাহী বিভাগ থেকে স্বাধীন এবং রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ও হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষিত থাকে তা নিশ্চিত করার জন্যও সরকারকে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার সংস্থা।

নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের নির্যাতন বা ক্ষমতার অপব্যবহার অংশে বলা হয়েছে, জোরপূর্বক গুমের ঘটনা তদন্তের জন্য ২০২৪ সালের ১৪ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে একটি কমিশন। তারা প্রথম যে রিপোর্ট দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে কমপক্ষে ৩ হাজার ৫০০ মানুষকে গুম করা হয়েছে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, একটি ‘কেন্দ্রীয় কমান্ড কাঠামোর অধীনে গুম করা হতো। গুমের ঘটনা দেখাশোনা করতেন স্বয়ং শেখ হাসিনা এবং তার শীর্ষ কর্মকর্তারা। তার মধ্যে আছেন মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম এবং মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ। তারা এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গুমের সঙ্গে জড়িত থাকা কর্মকর্তারা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছেন, আটকের বিষয়ে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সিনিয়র সদস্যরা জানতেন। তবে এটা প্রকাশ করা হতো না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গুম এবং হত্যাকাণ্ডের সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। একজন সেনা কর্মকর্তা বলেছেন, ব্রিগেডিয়ার আযমীকে আটকের বিষয়ে সরাসরি জানতেন হাসিনা। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, যেহেতু আযমী একজন সেনা কর্মকর্তা ছিলেন, তাই শেখ হাসিনার কাছে তিনি মুক্তি দেয়ার আবেদন জানাতে থাকেন। কিন্তু প্রতিবারই তার আবেদন নাকচ করেন হাসিনা। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এক পর্যায়ে শেখ হাসিনা পরামর্শ দেন আযমীকে মেরে ফেলতে।

ওই কর্মকর্তার ভাষায়- ‘আমি সেটা করতে পারিনি। আমি থেমে গিয়ে তাকে মুক্তির বিষয়ে কথা বলেছি’। আযমীকে যখন মুক্তি দেয়া হয় তার আগেই শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। ওই রিপোর্টে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের নিয়ম লঙ্ঘনের বিশদ বর্ণনা দিয়েছে। বলা হয়, শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর মাইকেল চাকমা, মীর আহমেদ বিন কাসেম (আরমান) ও আবদুল্লাহ আমান আযমীকে মুক্তি দেয়া হয়। তিনজনের ক্ষেত্রেই কর্তৃপক্ষ তাদের হেফাজতে থাকা এসব ব্যক্তির বিষয় অস্বীকার করেছে। তারা সবাই সাংবাদিকদের বলেছেন, তাদের নিঃসঙ্গ কারাবাসে রাখা হয়েছিল। একই বন্দিশিবিরে তারা অন্য বন্দিদের কথা শুনতে পেতেন। হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে আটক করা হয় ২০১৬ সালের আগস্টে। প্রায় কাছাকাছি সময়ে আযমী ও আরমানকেও আটক করা হয়। তারা তিনজনই বিরোধীদলীয় নেতাদের ছেলে। এসব বিরোধীদলীয় নেতা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অভিযুক্ত হয়ে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। হুম্মাম হলেন বিএনপি’র প্রয়াত নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে। বেআইনিভাবে আটকে রাখার বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখবেন এই শর্তে তাকে ২০১৭ সালের মার্চে মুক্তি দেয়া হয়। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরেই শুধু তিনি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কাছে মুখ খুলতে সক্ষম হয়েছেন। ওদিকে মীর আহমেদ বিন কাসেম (আরমান) তার পিতা মীর কাসেম আলীর আইনি টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। মীর কাসেমকেও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত একই অভিযোগে অভিযুক্ত করে শাস্তি দেয়। ২০১৬ সালের ৯ই আগস্ট সাত থেকে আট সদস্যের একদল অফিসার তার বাড়ি থেকে স্ত্রী, বোন ও সন্তানের সামনে থেকে আরমানকে তুলে নিয়ে যায়।

একজন আইনজীবী হিসেবে তিনি গ্রেপ্তারের পরোয়ানা দেখতে চান। কিন্তু কর্মকর্তারা তা প্রত্যাখ্যান করে তাকে বাসার ভেতর থেকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যান। তাকে একটি ভ্যানে তোলে এবং চোখ বেঁধে ফেলে। তিনি এর প্রতিবাদ করলে একজন কর্মকর্তা তাকে বলেন- আমাদেরকে নিষ্ঠুর হতে বলবেন না। ওদিকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় একজন কর্মকর্তা তাকে আটক করার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। আরমানের গুমের বিষয়ে দেখাশোনা করেছেন এমন সাবেক আরেকজন উচ্চ পর্যায়ের কমান্ডিং অফিসার বলেছেন, এ ধরনের আটকের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক এবং সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তিনি আরও বলেন, যখন তিনি জিজ্ঞাসাবাদ টিমে যোগ দেন তখন তাকে বলা হয় আরমান, আযমী ও চৌধুরী হলেন বিরোধী দলের প্রথম সারির তিন নেতার সন্তান। তাদের মুক্তি দেয়ার যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন শেখ হাসিনা। বিরোধী দলের তিন নেতার এই তিন ছেলেকে কীভাবে তুলে নেয়া হয় এবং তাদের সঙ্গে কি নির্যাতন করা হয়েছে, তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওই রিপোর্ট। এতে বলা হয়, একজন কর্মকর্তা বলেছেন, র‌্যাব, ডিবি এবং ওই সময়ের বিভিন্ন এজেন্সির কর্মকর্তারা অনেক মানুষকে হত্যা করেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সহিংসতা অংশে বলেছে, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার রিপোর্ট আন্তর্জাতিক উদ্বেগের কারণ হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে সমর্থন করতেন এমন হিন্দু এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু ব্যক্তিরা আক্রান্ত হয়েছেন। পাবনার একজন সাংবাদিক বলেছেন, যেসব মানুষ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তারাই টার্গেট হয়েছেন। ওই এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায় আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। এ জন্যই সেখানে হিন্দুরা আক্রান্ত হয়েছেন। এমন হামলার কিছু রিপোর্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হিন্দুত্ববাদী উগ্রপন্থি গ্রুপ এবং ভারতে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপি’র সমর্থকরা অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যদিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতার খবর সত্য। হিন্দুত্ববাদী গ্রুপগুলো দাবি করেছে তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর ও উপাসনালয় টার্গেট করে শত শত হামলা হয়েছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার নিশ্চিত করেছে কমপক্ষে ৮৮টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মামলা হয়েছে ৫ই আগস্ট থেকে ২২শে অক্টোবরের মধ্যে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭০ জনকে। এ বিষয়ে দোয়ারাবাজারের ২৯ বছর বয়সী ব্যবসায়ী চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশে হিন্দুরা দ্বিমুখী সমস্যায়। একদিকে ভারতীয় মিডিয়া মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে, ঘটনাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রকাশ করছে, যার কিছুই কখনো ঘটেনি। এর ফলে ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্ট বাড়ছে। ফলে তাতে হিন্দুদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতাও বাড়ছে। সেপ্টেম্বরে বার্তা সংস্থা পিটিআই’কে একটি সাক্ষাৎকার দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ক্যাডারদেরকে প্রহার করতে গিয়ে লোকজন হিন্দু সম্প্রদায়ের কাউকে কাউকে প্রহার করেছে। তারা মনে করেছে, বাংলাদেশে অবস্থানরত হিন্দুরা আওয়ামী লীগের সমর্থক।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে লিখেছে, ছাত্রদের নেতৃত্বে আন্দোলনে ১৫ই জুলাই সহিংসতা দেখা দেয়। এ সময় অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। তারা নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর বৈষম্যমূলকভাবে সরাসরি গুলি করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের পেছন থেকে গুলি করা হয়েছে। পরে একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছেন- আমি দেখেছি কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে গুলি করছে। অনেক ক্ষেত্রেই আমি দেখেছি, কর্মকর্তাদের জীবন বিপজ্জনক অবস্থায় না থাকলেও তারা সরাসরি গুলি করছেন। ১৮ই জুলাই সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ। বন্ধ করে দেয় সব রকম যোগাযোগ। বন্ধ করে দেয় তথ্য পাওয়ার সব পথ। তা সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীরা সংগঠিত হতে থাকেন। পুলিশ তাদের পিছু নেয় এবং গুলি করে। ১৮ বছর বয়সী আমির হোসেন বলেন, তিনি ১৯শে জুলাই পুলিশের হামলার সময় এক ভিড়ের মধ্যে পড়ে যান। তিনি কীভাবে নিজের জীবন রক্ষার চেষ্টা করছিলেন তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পায়। বিক্ষোভকারীরা একটি জেলে নিরাপত্তা ভেঙে প্রবেশ করার পর রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনের অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ অবস্থায় ২০শে জুলাই সরকার সারা দেশে কারফিউ জারি করে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেয়।

গ্রেপ্তার করে কয়েক হাজার মানুষকে। একজন পুলিশ কর্মকর্তার কলেজপড়ুয়া ছেলে ইমান হোসেন তায়েম ২০শে জুলাই তার দুই বন্ধুকে নিয়ে একটি চায়ের দোকানে অবস্থান করছিলেন। এ সময় তাদের দিকে গুলি শুরু করে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। তাদের একজন বুলেটবিদ্ধ হওয়ার পর দোকানের ভেতরে লুকিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নেন তারা। নামিয়ে দেন দোকানের শাটার। তাদের এক বন্ধু মোহাম্মদ রাহাত হোসেন বলেন, ১০-১৫ জন পুলিশ সদস্য দোকানের ভেতর প্রবেশ করে। তারা আমাদের দিকে বন্দুক ধরে। আমাদেরকে বুট ও তাদের অস্ত্র দিয়ে শারীরিকভাবে আঘাত করতে থাকে। কোনো কোনো কর্মকর্তা বলতে থাকেন, আমাদেরকে গুলি করা উচিত। অন্যরা পরামর্শ দেন আমাদের পায়ে গুলি করা উচিত। তায়েম ও আমি একসঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় আমাদেরকে অশ্লীল ভাষায় গালি দেয় পুলিশ। বলে দৌড়ে পালাতে। এ নির্দেশ পেয়ে তায়েম দুই থেকে তিন পা সামনে যেতেই আমি ওকে অনুসরণ করার কথা ভাবি। কিন্তু আমি যাইনি। ও দৌড় দেয়ার পর পেছন থেকে ওকে দু’টি বুলেট মারা হয়। তার একটি তার বুক ভেদ করে চলে যায়। দ্বিতীয় বুলেটটি লাগে তার পায়ে। এমনতরো বিভিন্ন ব্যক্তিকে হত্যা করে পুলিশ ও নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ র‌্যাব সম্পর্কে লিখেছে, এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালে, তখন ক্ষমতায় ছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। তারপর থেকে বছরের পর বছর পর্যায়ক্রমিক সরকারগুলো এই বাহিনীকে তার কর্মকাণ্ডের জন্য দায়মুক্তি দিয়েছে। ফলে তারা ডেথ স্কোয়াড হিসেবে কাজ করেছে। একজন কর্মকর্তা বলেছেন, গুম, হত্যাকাণ্ড এবং ক্রসফায়ারের ঘটনাগুলো ঘটানোর জন্য র‌্যাবে আছে একটি আলাদা টিম। বেশির ভাগ কাজ করে এই টিম। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে র‌্যাবে যোগ দেয়ার পর হতাশ হয়েছি। আমি কর্মকর্তাদের নাম জানি না। প্রশিক্ষণের সময় তিনি এলেন ক্লাস করাতে। সেখানে প্রায় ৩৫ জন ইন্সপেক্টর উপস্থিত ছিলেন। তখন তিনি প্রকাশ্যে বলছেন, ১৬৯টি ক্রসফায়ার সম্পন্ন করেছেন তিনি। আমার একজন ব্যাচমেটের কথা স্মরণে আছে। তিনি বলেছিলেন, সবার সামনে ১৬৯টি ক্রসফায়ারের বিষয় স্বীকার করা কতোটা ক্রেজি এই কর্মকর্তা। ক্ষমতার বাইরে গেলেই রাজনৈতিক নেতারা একমত হন যে, র‌্যাবকে নিষিদ্ধ করা উচিত।

লেহি অ্যামেন্ডমেন্টের অধীনে র‌্যাবকে প্রশিক্ষণ দেয়া থেকে নিষিদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃটিশ সরকার র‌্যাবকে অর্থ ও প্রশিক্ষণ দেয় উইকিলিকস-এ তথ্য প্রকাশ করার পর ব্যাপক সমালোচনা হয়। এরপর র‌্যাবের প্রশিক্ষণ বন্ধ করে দেয় বৃটেন। ২০২১ সালের ১০ই ডিসেম্বর র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। একই নিষেধাজ্ঞায় পড়েন তাদের সাত কর্মকর্তা। তাদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়। গুম তদন্তে গঠিত জাতীয় কমিটি ১৪ই ডিসেম্বর একটি রিপোর্ট দিয়েছে। এতে র‌্যাবকে ভেঙে দেয়ার সুপারিশ করা হয়। এসব তথ্য সামনে আসার পর র‌্যাবের প্রধান একেএম শাহিদুর রহমান স্বীকার করেন র‌্যাবের গোপন বন্দিশিবিরের কথা। বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যদি র‌্যাবকে ভেঙে দেন তাহলে তারা সেই সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন। এর প্রেক্ষিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কিছু সুপারিশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে শুধু নির্যাতন বন্ধের জন্যই শুধু র‌্যাবকে বিলুপ্ত করা উচিত নয়, একই সঙ্গে এর মধ্যদিয়ে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা যাবে যে, তাদের পরবর্তী সরকারগুলো নিষ্পেষণের হাতিয়ার হিসেবে আর ব্যবহার করতে পারবে না। জাতিসংঘ এবং দাতারা অনুরোধ জানিয়েছে র‌্যাবে থাকা সব কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে র‌্যাবকে বিলুপ্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সংক্ষিপ্ত পরিসরে এই রিপোর্টে ৫৫ পৃষ্ঠার ওই রিপোর্টের পুরোটা তুলে ধরা সম্ভব নয়।

সূত্র:মানবজমিন।
তারিখ:জানুয়ারী ২৯, ২০২৫

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ