ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ নিশ্চিত করেছেন, বিদ্রোহী বাহিনীর দ্রুত অগ্রগতির মুখে সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ রাশিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজেই গ্রহণ করেছেন বলে তিনি জানান। আলজাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
পেসকভ সোমবার মস্কোতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ ধরনের সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপ্রধান ছাড়া কেউ নিতে পারে না।
এটি তার (পুতিনের) সিদ্ধান্ত।’ তবে রুশ মুখপাত্র আল-আসাদের সুনির্দিষ্ট অবস্থান সম্পর্কে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান এবং পুতিনের সঙ্গে তার সাক্ষাতের কোনো পরিকল্পনা নেই বলেও উল্লেখ করেন।
মস্কো থেকে আলজাজিরার প্রতিবেদক ইউলিয়া শাপোভালোভা বলেন, ‘রুশ কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক আশ্রয় মঞ্জুর করেছে। আমরা এখানে দেখছি, রাশিয়া কঠিন পরিস্থিতিতে পদত্যাগী সিরীয় প্রেসিডেন্টকে ত্যাগ করেনি।
আল-আসাদকে সম্ভবত লাতাকিয়ার রুশ বিমানঘাঁটি থেকে একটি রুশ বিমানে করে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’
শাপোভালোভা আরো বলেন, সাবেক নেতাকে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত রাশিয়া ও সিরিয়ায় রুশ সম্পদের ওপর কী প্রভাব ফেলবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, রুশ সামরিক ঘাঁটিগুলোর ভবিষ্যৎ, বিশেষ করে লাতাকিয়ায় হিমেইমিম বিমানঘাঁটি ও টার্তুসে নৌঘাঁটির বিষয়ে।
আরো পড়ুন
আসাদের পতনে বদলে যাবে মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য
আসাদের পতনে বদলে যাবে মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য
জাজিরাপ্রতিবেদক জানান, ক্রেমলিন তাদের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সতর্কতা নিচ্ছে।
তবে টার্তুস থেকে আসা প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাৎক্ষণিক কোনো হুমকির খবর নেই।
ক্রেমলিন আরো জানিয়েছে, সিরিয়ায় রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটিগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব তাড়াতাড়ি হবে। পেসকভ বলেন, ‘যারা সিরিয়ায় ক্ষমতায় থাকবে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
টার্তুস ঘাঁটি রাশিয়ার একমাত্র ভূমধ্যসাগরীয় মেরামত ও রসদ কেন্দ্র এবং মস্কো আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে তাদের সামরিক ঠিকাদারদের আনা-নেওয়ার জন্য সিরিয়াকে ব্যবহার করে আসছে।
পেসকভ ইউক্রেনের পরিস্থিতি ও মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে একটি অস্থির সময় আসছে বলে মনে করেন জানিয়ে আরো বলেন, ‘আমরা ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে বেশ কিছু বিবৃতি শুনছি, যা পরস্পরবিরোধী।
অন্য অঞ্চলে বাড়তে থাকা সংঘাতের সম্ভাবনা আমরা দেখছি। আমরা বলতে পারি, মধ্যপ্রাচ্য এখন জ্বলন্ত অবস্থায় রয়েছে।’
সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে উদ্বেগ
এদিকে রবিবার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে বিদ্রোহী জোটের আকস্মিক বিজয় ও প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন রাশিয়াসহ বিশ্বজুড়ে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে।
এই জোটের নেতৃত্ব দেওয়া একসময়কার আল-কায়েদার শাখা হায়াত তাহরির আল-শাম এখনো জাতিসংঘ ও অধিকাংশ দেশের কাছে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা নিজেদের আল-কায়েদার শিকড় থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে এবং বিদেশি রাষ্ট্র ও সিরিয়ার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করতে কাজ করে আসছে।
পেসকভ জানান, সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে রাশিয়া আংকারা ও অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে এবং অস্থিতিশীলতা মোকাবেলায় সব দেশকে আলোচনায় যোগ দিতে প্রস্তুত রয়েছে। রাশিয়া, তুরস্ক ও ইরান নিয়মিত সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করেছে, যা আস্তানা শান্তি প্রক্রিয়া নামে পরিচিত।
আলজাজিরা জানিয়েছে, আসাদের পতনে ইরান ও রাশিয়ার আঞ্চলিক শক্তির অন্যতম প্রধান ঘাঁটি ধসে পড়েছে। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে আসাদের বিরোধীদের পক্ষে থাকা তুরস্ক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ইসরায়েল এই ঘটনাকে আসাদের ইরান সমর্থিত মিত্রদের দুর্বল করার ফল হিসেবে দেখছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সোমবার মাউন্ট হারমনের সীমান্ত এলাকা থেকে তাদের বাহিনীর ছবি প্রকাশ করে। তারা জানায়, রাসায়নিক অস্ত্র ও দূরপাল্লার রকেট যাতে বিরোধী যোদ্ধাদের হাতে না পড়ে, সে জন্য তারা সেখানে বিমান হামলা চালাচ্ছে। ইসরায়েল সিরিয়ায় ইরান সমর্থিত স্থাপনাগুলোতে রবিবার হামলা চালায় এবং দামেস্কের অস্থিরতার কারণে কোনো সংঘাত যাতে সীমান্তে না ছড়ায়, তা নিশ্চিত করতে বাফার জোনে ট্যাংক মোতায়েন করে। তবে তারা জানিয়েছে, সিরিয়ার সংঘাতে জড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই।
সূত্র: কালের কন্ঠ।
তারিখ: ডিসেম্বর ০৯, ২০২৪
রেটিং করুনঃ ,