Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

আঙ্গু বনাম মাঙ্গু কাবিলার নতুন যুদ্ধ ( বুলঘা খানা) ২০১৫

Share on Facebook

লেখক:ফারুক ওয়াসিফ।

সম্রাট আকবরের নবরত্নের এক রত্ন আবুল ফজল সুবে বাংলাকে নিয়ে মহাচিন্তিত হয়ে এর নাম দিয়েছিলেন, ‘বুলঘা খানা’। এর অর্থ চির অশান্তির দেশ। ঐতিহাসিক কাল থেকে বাঙালিরা দুই ধরনের অশান্তির জন্ম দিয়ে আসছে: পরাধীন হলে এরা জোট বেঁধে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে। আবার স্বাধীন হওয়ামাত্রই তারা দুই দলে ভাগ হয়ে নিজেদের ধ্বংস করে। জীবজগতে এই স্বভাবটি অ্যামিবার। অ্যামিবা পরিণত হওয়া মাত্রই নিজেকে দ্বিখণ্ডিত করে। অ্যামিবার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, এদের দেহে মস্তিষ্ক নামক কোনো পদার্থ নেই। আমাদের ইতিহাস তাই অ্যামিবার মতো পরিণত হওয়ামাত্রই বিভক্ত হওয়ার ইতিহাস, নির্বোধের উত্তেজনার ইতিহাস।

বাঙালির এই স্বভাবের কথা জেনেই এক দেশপ্রেমিক মনেপ্রাণে কামনা করলেন যাতে তাঁর দেশে সৎ ও জ্ঞানীরাই নেতা হয়। তো একদিন তাঁর স্বপ্নে দেখা দিলেন এক দরবেশ। দরবেশ তাঁকে বললেন, ‘যুদ্ধ করে নতুন দেশ পেয়েছ। বলো, দেশের জন্য তুমি কী চাও? যা চাইবে তা-ই পাবে।’ ভালো মানুষটি এক পলক ভেবে বললেন, ‘হে দয়াল দরবেশ, আমি চাই যে আমার দেশের সব মানুষ সৎ হবে, জ্ঞানী হবে আর রাজনীতি করবে।’ কথা শুনে দরবেশের কপালে চিন্তার রেখা ফুটল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে তিনি বললেন, ‘বড় কঠিন দাবি রে! যাক, আমি বর দিলাম, তোর দেশের মানুষের মধ্যে ওই তিনটি গুণই থাকবে, তবে কেউই একসঙ্গে দুটির বেশি বৈশিষ্ট্য পাবে না।’

তখন থেকে দেশে সৎ ও জ্ঞানী মানুষের অভাব নেই, অভাব নেই রাজনীতিবিদেরও। কিন্তু মুশকিল হলো, সৎ রাজনীতিবিদ জ্ঞানী হন না, যিনি জ্ঞানী তিনি সৎ হন না। যিনি একই সঙ্গে সৎ ও জ্ঞানী, তাঁকে অসৎ ও মূর্খরা ঝেঁটিয়ে রাজনীতির ময়দান থেকে বিতাড়ন করে।

ফলে আমাদের রাজনীতি থেকে বিভক্তির ভাইরাস আর গেল না। বিভক্তির বিরুদ্ধে প্রতিষেধক হলো ক্ষমতার বণ্টন, যার আরেক নাম গণতন্ত্র। গণতন্ত্র মানে ক্ষমতার ভাগাভাগি। ভাগাভাগি নিয়ে একটা গল্প আছে:
এক ব্যক্তি দুই সন্তান এবং বেশ কিছু জমি রেখে গেলেন। বড় ভাইয়ের ইচ্ছা ছোট ভাই কম জমি পাক। তো মাসের পর মাস তারা এই নিয়ে লড়াই করে চলল। অবশেষে তারা এক বৃদ্ধ শিক্ষকের কাছে গেল মীমাংসার জন্য।
তিনি বললেন, ‘তোমরা কাল আস, তখন কথা বলব।’
পরদিন তারা এলে শিক্ষক সমাধান দিলেন।

তিনি এক ভাইকে একটা মুদ্রা দিয়ে বললেন, ‘টস করো’। অন্যজনকে বললেন, ‘তুমি হেডস চাও না টেইলস চাও, তা ঠিক করো’। সমাধান হলো, ‘যে টস জিতবে, সে-ই জমি দুই ভাগে ভাগ করবে।’

তখন অপর ভাই হা হা রে রে করে বলে উঠল, ‘এটা কোনো সমাধান হলো না, একতরফা ভাগ করা নিয়েই তো সমস্যা!’
শিক্ষক বললেন, ‘রসো বৎস! যে টস জিতবে সে ভাগ করবে বটে, তবে বেছে নেওয়ার প্রথম সুযোগটা পাবে অন্যজন।’
কিন্তু খেলার এই নিয়ম তারা মানতে চাইল না। তারা তাদের প্রতিবেশী-আত্মীয়স্বজনসহ সবাইকে এই সংঘাতে জড়িয়ে ফেলল। দুটি দল দুটি রণহুংকার জন্ম নিল। এর সঙ্গে খুবই মিল মোকাবেলা নামের একটি ঢাকাই ছবির।

সেই ছবিতে এফডিসির দুই বিখ্যাত অ্যাকশন হিরো ওয়াসিম আর জসীমকে দেখা যায় দুই গোত্রসর্দারের ভূমিকায়। প্রাগৈতিহাসিক গোত্র দুটির নাম আঙ্গু কাবিলা আর মাঙ্গু কাবিলা। আঙ্গু আর মাঙ্গু কাবিলার মধ্যে বিরোধের কোনো শেষ নেই। নতুন হলো নায়িকা নিয়ে বিবাদ। ছবিজুড়ে নায়ক-নায়িকার নাচ-গানে ভরপুর দৃশ্যের সঙ্গে সঙ্গেই দেখা যায় দুই গোত্রপতির হুংকার এবং লাঠি-বল্লম-তলোয়ার নিয়ে মারামারি। মাঝেমধ্যে তারা বনের বাঘ পুড়িয়ে ভোজ খায়! তো পরিচালকের অসাবধানতায় একটি দৃশ্যে দেখা গেল, সেই বাঘ-ভোজ অনুষ্ঠানের পেছন দিয়ে একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক গাড়ি চলে যাচ্ছে। তেমনি একবিংশ শতাব্দীর ডিজিটাল বাংলাদেশের মঞ্চে আমরা দেখতে পাচ্ছি মান্ধাতা আমলের লেঠেল-লড়াই। তবে এই লড়াই সিনেমার চেয়েও নিষ্ঠুর: কারণ এখানে বনের বাঘের বদলে দেশের মানুষকে পুড়িয়ে ও গুলি করে ক্ষমতার লড়াইয়ের ভোজ দেওয়া হচ্ছে!

সভ্যতা যেন এ দেশকে বাইপাস করে চলে গেছে। বাইরে যতই আধুনিক রোশনাই, ভেতরে এখনো সেই আঙ্গু কাবিলা আর মাঙ্গু কাবিলার যুগ। কাবিলায় কাবিলায় ভাগ হয়ে আছে সবাই, আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপি কাবিলা, একই দলের বিভিন্ন উপদলীয় কাবিলা, এলাকাভিত্তিক কাবিলাসহ গ্রুপিংয়ের হাজারো ফেরকা। আর এদের ভেতরে পদ, ক্ষমতা বা অর্থ নিয়ে বিরোধ-মীমাংসার অব্যর্থ উপায় হলো ‘যুদ্ধ’। এবং পরিশেষে ‘জো জিতা ওহি সিকান্দর’; যিনি জিতবেন, তিনিই হবেন অধিপতি। সকল প্রশংসা অবশ্যই হবে তাঁর।

দুই.
রাজনীতি এখন নিষ্ঠুরতার শিল্প। মনোবিজ্ঞানে নিষ্ঠুরতাও আবার দুই প্রকারের। একটিকে বলে মর্ষকামী, অন্যটিকে বলে ধর্ষকামী। মর্ষকামী নিজেকে কষ্ট দিয়ে সুখ পায়। অনেক সময় নিজের দেওয়া কষ্টেও তার কুলায় না, তাই একজন অত্যাচারী সেবকের দরকার হয় তার। আর ধর্ষকামী সুখ পায় অন্যকে কষ্ট দিয়ে। তো নিষ্ঠুরতা নিয়ে নিষ্ঠুর কৌতুকটা এ রকম:
একবার এক মর্ষকামী ধর্ষকামীকে গিয়ে বলল: ‘আমাকে মারো, আঘাত করো, যন্ত্রণা দাও!’
কষ্ট দেওয়ার এই সুযোগ ধর্ষকামী ছাড়বে কেন? সে ঠিক করল, মর্ষকামীকে না-মারাই হবে তাকে কষ্ট দেওয়ার সেরা উপায়। তাই দাঁত কিড়মিড় করে চিবিয়ে চিবিয়ে সে বলে, ‘দাঁড়াও, এখনো সময় হয়নি।’
বাংলাদেশের রাজনৈতিক নিষ্ঠুরতা যেন এই ধর্ষকামী আর মর্ষকামীদের নিষ্ঠুর কৌতুক।

তিন.
বিএনপি ও আওয়ামী লীগের হানাহানির চরিত্র সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের একটি গল্পের দৃশ্যের সঙ্গে মিলে যায়। গল্পটি এ রকম: দুপুরবেলা খেয়েদেয়ে পেট ফুলিয়ে রোদ পোহাচ্ছে একটা বিড়াল। ফুটপাতে শুয়ে আরামে তার ঘুমই এসে গেছে। এমন সময় একটা হাভাতে ইঁদুর কোত্থেকে দৌড়ে এসে বিড়ালটাকে খোঁচাতে থাকল। বিরক্ত বিড়াল এক চোখ একটু মেলে জানতে চায়, ‘কী সমস্যা শুনি?’ ইঁদুর বলছে, ‘বিড়াল আমাকে খাও, আমার মরার শখ হয়েছে।’ বিড়াল তো মহাবিরক্ত। সে বলল, ‘আমার খিদে নেই; এখন আমি খেতে পারব না।’ ইঁদুর নাছোড়বান্দা। বলে, ‘না, তোমাকে খেতেই হবে এবং এখনই।’ এই নিয়ে দুজনের অনেক ঝগড়াঝগড়ি শেষে একটা রফা হলো। বিড়াল রাজি হলো ইঁদুর-ভক্ষণে, তবে ঠিক এখনই না, আরেকটু পরে। আর ইঁদুরের শর্ত হলো, যতক্ষণ না বিড়াল তাকে খাচ্ছে, ততক্ষণ সে বিড়ালের মুখের হাঁয়ের মধ্যে নিজের মাথা ঢুকিয়ে রাখবে। এখন রফা তো হলো, কিন্তু খাবেটা কখন? তখন বিড়াল বলল, ‘ওই যে মোড়ের ধারে অন্ধ শিশুদের একটা স্কুল আছে না? সন্ধ্যার সময় স্কুলটা ছুটি হবে; তখন অন্ধ শিশুরা এলোমেলো পায়ে এই পথ দিয়ে যাবে। এই যে আমি আমার লেজটা পথের ওপর মেলে রাখছি। ওদের কেউ যদি আমার লেজে পা দেয়, অমনি আমি তোমাকে খাব।’ আচ্ছা বন্দোবস্ত! ইঁদুরও রাজি, বিড়ালও খুশি।

গল্পের এই বিড়াল হলো সরকার, ইঁদুরটি হলো বিএনপি। আর অন্ধদের স্কুলটি থেকে কারা বেরোবে সেটাই রহস্য। এটাই বাংলাদেশি রাজনীতির অনিশ্চিত উপাদান, দশকে দশকে যার অভিঘাতে রাজনীতির ধারাবাহিকতা বদলে গেছে। অন্ধদের স্কুলের দরজা খুলে যাওয়ার আগেই তাই, সাধু সাবধান!
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মতামতপুষ্ট নামজাদা পত্রিকা ফরেন পলিসি বলেছিল, ২০১৪ সালে বিশ্বের মধ্যে সংঘাতের ঝুঁকিপূর্ণ ১০ দেশের পঞ্চমটি ছিল বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে কাবিলা যুদ্ধে আমরা নিশ্চয়ই আরও এগিয়ে যাব!

**ফারুক ওয়াসিফ: সাংবাদিক ও লেখক।

সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: ফেব্রুয়ারী ০৮, ২০১৫

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

,

ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪,সোমবার

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ