বিরক্তিকর বিষয় আছে, তবে সেগুলো আমাদের দুই দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। দুই দেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও ইতিহাসের মতো উন্নতি ও সমৃদ্ধি পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
এসময় বাংলাদেশের রাজনীতিতে পালাবদল হওয়ার পরও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। গতকাল রবিবার ঢাকায় ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন (বিওবিসি)’ সম্মেলনে তিনি বক্তব্য দেন।
রাজনৈতিক পালাবদলকে ইঙ্গিত করে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ‘বাংলাদেশে উত্তাল পরিবর্তন সত্ত্বেও আমাদের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ, পরিবহন ও জ্বালানি সংযোগ ও মানুষে মানুষে সম্পৃক্ততা ইতিবাচক মাত্রায় পৌঁছেছে। এ থেকে স্পষ্ট, আমাদের সম্পর্ক সত্যিই বহুমুখী এবং একটি একক ইস্যু বা এজেন্ডায় এই সম্পর্কের মাত্রা কমবে না।’
প্রণয় ভার্মা বলেন, ‘বিরক্তিকর বিষয় আছে, তবে সেগুলো আমাদের দুই দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। দুই দেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও ইতিহাসের মতো উন্নতি ও সমৃদ্ধি পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। ’
হাইকমিশনার বলেন, ‘রাজনৈতিক হাওয়ায় পরিবর্তনের পরও এই সম্পর্কের শিকড়, আমাদের পারস্পরিক নির্ভরতা এবং পারস্পরিক সুবিধার বাস্তবতা বারবার নিজেকে পুনরুদ্ধার করতে থাকবে।’
একই সঙ্গে আগামী দিনে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পরস্পরের উদ্বেগ ও প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন ভারতীয় হাইকমিশনার।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্পর্কের মধ্যে অনেক রূপান্তর ঘটেছে। এটি আমাদের অঞ্চলের জন্যও সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।
একে অপরের উদ্বেগ ও প্রত্যাশার ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ছাড় না দেওয়া এবং ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় না দেওয়ার নীতি আমাদের সহযোগিতা ও সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। এটি ভবিষ্যতেও আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক আরো এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে থাকবে।’
ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের শক্তি আমাদের বিশ্বাসের মধ্যে রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের শান্তি, নিরাপত্তা, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। এ কারণে আমরা বহুমুখী সহযোগিতার মাধ্যমে অভিন্ন সমৃদ্ধির প্রয়াস চালাই।
’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ, ভারত—দুই দেশই বঙ্গোপসাগরের শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের অংশীদার। অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দুই দেশের সহযোগিতা অপরিহার্য।’
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথা উল্লেখ করে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে যেভাবেই বর্ণনা করা হোক না কেন, এই সম্পর্ক দুই দেশের জনগণকে কেন্দ্র করে।’
প্রণয় ভার্মা বলেন, ‘জনগণকে প্রধান অংশীদার হিসেবে রেখেই ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে স্থিতিশীল, ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক গড়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। আমরা একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল বাংলাদেশকে সমর্থন জানাব।’
হাইকমিশনার বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে ভারতের ভিসা কার্যক্রম সীমিত পরিসরে চলছে। এর পরও বাংলাদেশিদের যেসংখ্যক ভিসা দেওয়া হচ্ছে তা বাংলাদেশে অন্য যেকোনো বিদেশি মিশনের তুলনায় বেশি।’
ভারতীয় হাইকমিশনার বহুমুখী সম্পর্কের প্রতিফলন হিসেবে বাণিজ্য, পরিবহন ও জ্বালানি সংযোগ এবং মানুষে মানুষে সম্পৃক্ততার ক্রমাগত অগ্রগতির ওপর জোর দেন। হাইকমিশনার শুধু এই মাসের মধ্যেই ভারতীয় গ্রিডের মাধ্যমে নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালনের সূচনা ও পেট্রাপোল-বেনাপোল সমন্বিত চেকপোস্টের অবকাঠামো বিবর্ধনকে দ্বিপক্ষীয় বিনিময়ের ক্ষেত্রে অব্যাহত অগ্রগতির উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন। ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতাকে তিনি বিমসটেকের মতো কাঠামোর অধীনে আঞ্চলিক একীকরণের পরিকল্পনার ক্ষেত্রে একটি নোঙর হিসেবে বর্ণনা করেন।
হাইকমিশনার শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য যৌথ আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে এবং অংশীদারির মাধ্যমে উভয় পক্ষের সাধারণ জনগণের মঙ্গল নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
সূত্র:কালের কন্ঠ।
তারিখ: নভেম্বর ১৮, ২০২৪
রেটিং করুনঃ ,