সর্বশেষ অর্থবছরে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে ১৬ লাখ টন পণ্য। এর মধ্যে কনটেইনারে আনা হয় তিন লাখ টনেরও কম। পাকিস্তান থেকে মাসে এক থেকে দেড় হাজারের বেশি কনটেইনার আসে না।
স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে সরাসরি জাহাজ সার্ভিস চালু হলো পাকিস্তানের। এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং নামে জাহাজের মাধ্যমে প্রথম চালানে এসেছে শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য। তবে এ নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
পাকিস্তানের করাচি বন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রামের সরাসরি কনটেইনার জাহাজ যোগাযোগ চালু হয়েছে গত সপ্তাহে। এ সেবা চালুর আগে পাকিস্তানের কনটেইনার পণ্য তৃতীয় দেশ হয়ে চট্টগ্রামে আনা হতো। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যাওয়ার আগে জাহাজটি থেকে ৩৭০ একক কনটেইনার জেটিতে নামানো হয়। এর মধ্যে পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে আনা হয়েছে ২৯৭ কনটেইনার। আর সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আনা হয়েছে ৭৩ কনটেইনার।
দুবাইভিত্তিক কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা ফিডার লাইনস ডিএমসিসি একটি কনটেইনার জাহাজ দিয়ে নতুন এ সেবা চালু করেছে। কর্ণফুলী লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রিজেনসি লাইনস লিমিটেড এ সংস্থার বাংলাদেশে স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে যুক্ত হয়েছে। এটি আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর পারিবারিক প্রতিষ্ঠান।
কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার (জেটি) মোহাম্মদ মারুফুর রহমান বলেন, এখানে ভোগ্যপণ্য থেকে শুরু করে শিল্পের কাঁচামাল, খনিজ পদার্থসহ ১০ থেকে ১৫ ধরনের আইটেম রয়েছে।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে আসা সেই জাহাজে পাকিস্তান থেকে ১৮টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ৬ হাজার ৩৩৭ টন শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য পাঠিয়েছে। সবচেয়ে বেশি আনা হয়েছে টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত সোডিয়াম কার্বনেট বা সোডা অ্যাশ। ১১৫ কনটেইনারে রয়েছে এই সোডা অ্যাশ। খনিজ পদার্থ ডলোমাইট রয়েছে ৪৬ কনটেইনারে। পেঁয়াজ আনা হয়েছে ৪২ কনটেইনারে। ৩৫ কনটেইনারে আনা হয়েছে চুনাপাথর। শতভাগ রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের কাঁচামাল কাপড়, রং ইত্যাদি রয়েছে ২৮ কনটেইনারে। ১৪ কনটেইনারে রয়েছে আলু।
কাচশিল্পের কাঁচামাল ভাঙা কাচ আনা হয়েছে ১০ কনটেইনারে। ম্যাগনেশিয়াম কার্বোনেট আনা হয়েছে ছয় কনটেইনারে। একটি কনটেইনারে রয়েছে গাড়ির যন্ত্রাংশ। এসব পণ্য আমদানি করেছে ২০ থেকে ৩০টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আকিজ গ্লাস কারখানা, প্যাসিফিক জিনস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ঢাকার হাফিজ করপোরেশন, এম আর ট্রেডিংস ও চট্টগ্রামের আল্লাহর রহমত স্টোর।
সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকেও পণ্য এসেছে এই জাহাজে। এর মধ্যে বেশি এসেছে খেজুর, জিপসাম, পুরোনো লোহার টুকরা, কপার ওয়্যার।
শুধু একটি কনটেইনারে এসেছে হুইস্কি, ভদকা ও ওয়াইন। আরব আমিরাতের ট্রুবেল মার্কেটিং অ্যান্ড ট্রেডিং কোম্পানি থেকে এ পণ্য এনেছে ঢাকার ডিপ্লোমেটিক ওয়্যারহাউস সাবির ট্রেডার্স।
কমবে খরচ
নতুন এই কনটেইনার জাহাজের পরিষেবা শুধু পাকিস্তান-বাংলাদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। আরও চারটি দেশ ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্দর থেকেও পণ্য আনা-নেওয়া করবে। এই ছয় দেশ ঘুরে একবার যাত্রা শেষ করতে জাহাজটির সময় লাগবে ৩৮ দিন। পণ্য আনা-নেওয়া মিলে পুরো যাত্রা শেষ করতে সময় লাগবে ৭৬ দিন। আপাতত একটি জাহাজ দিয়ে এ সেবা চালু রাখবে ফিডার লাইনস ডিএমসিসি। সমুদ্রপথে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের দূরত্ব ২ হাজার ৬১২ নটিক্যাল মাইলের বেশি। এ জন্য দুবাইভিত্তিক সংস্থাটি সংযুক্ত আরব আমিরাত হয়ে পাকিস্তানের করাচি বন্দরে আনবে জাহাজটি।
এরপর ভারতের মুন্দ্রা, ইন্দোনেশিয়ার বেলাওয়ান ও মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং হয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে আসবে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের বন্দরগুলোর চেয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব বেশি হওয়ায় এমন পরিকল্পনায় এগোচ্ছে জাহাজ পরিচালকারী সংস্থাটি। এটি সফল হলে দূরত্ব কমে যাবে। কমে আসবে খরচও।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বলছে গত অর্থবছরে পাকিস্তান থেকে আমদানি হয়েছে ৭৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলারের পণ্য। এর মধ্যে রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল ছিল ৭৯ শতাংশ বা ৫৯ কোটি ডলার। এ ছাড়া সিমেন্টশিল্পের কাঁচামাল ক্লিংকার, ফল, শুঁটকি ও মেয়েদের থ্রিপিস আমদানি হয়েছে। একই সময়ে পাকিস্তানে রপ্তানি হয় ৬ কোটি ২৪ লাখ ডলারের পণ্য। রপ্তানির তালিকায় রয়েছে কাঁচা পাট, ওষুধ, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, চা ও তৈরি পোশাক।
বাফার সহসভাপতি কায়রুল আলম সুজন মনে করেন, আগে পাকিস্তান থেকে পণ্য এলে শতভাগ পরীক্ষা করা হতো। সময়ক্ষেপণ হতো। এতে অনেকে নিরুৎসাহিত হতেন। এখন সেই বাধা তুলে দেওয়া হয়েছে। তাই অনেকে আগ্রহী হবেন। যেখানে দাম কম পাবে, সেখানে যাবেন ব্যবসায়ীরা। এটাই মুক্ত বাজার অর্থনীতির মূল কথা।
সূত্র:সমকাল।
তারিখ: নভেম্বর ১৬, ২০২৪
রেটিং করুনঃ ,