Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

‘গরিব মন্ত্রী’ হাছানের বল্গাহীন ধন-সম্পদ (২০২৪)

Share on Facebook

কারও ওপর একবার নাখোশ হলেই হলো, আর নিস্তার নেই! সাত ঘাটের জল খাইয়ে ছাড়তেন। এ কারণে চট্টগ্রাম এলাকায় চাউর ছিল, তিনি ‘ঠান্ডা মাথার ডাকাত’। ভীতিজাগানিয়া মানুষটি আর কেউ নন, ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের প্রতাপশালী মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

শুধু ভয় ছড়িয়ে তিনি ক্ষান্ত হননি। ক্ষমতার ছড়ি ঘুরিয়ে সম্পদের চূড়ায় চড়েছেন। গেল সংসদ নির্বাচনের আগে দেওয়া হলফনামায় নিজেকে চট্টগ্রামের সবচেয়ে ‘গরিব মন্ত্রী’ দাবি করেছিলেন। আদতে তাঁর উত্থানের গল্প পুরোটাই বিপরীত। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে গেল সাড়ে ১৫ বছরে কামাই করেছেন হাজার কোটি টাকা। পাহাড় কেটে গড়েছেন বাংলো। জলাশয় ভরাট করে বানিয়েছেন রেস্তোরাঁ-রিসোর্ট। সম্পদে ফুলেফেঁপে ওঠার এ যাত্রায় সঙ্গী করেছেন স্ত্রী, মেয়ে, ভাইদেরও। ক্ষমতার জাদুতে তারাও একেকজন ‘টাকার কুমির’।
এলাকাবাসী বলছেন, আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় এই নেতার অর্থবিত্ত বেড়েছে রকেট গতিতে। নামে-বেনামে সম্পদ গড়ার পাশাপাশি অবৈধ আয়ের অর্থের পুরোটাই পাচার করে দিয়েছেন কৌশলী হাছান। বেলজিয়াম ও দুবাইয়ে তাঁর অঢেল সম্পদ থাকার প্রাথমিক প্রমাণও পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এলাকায় গেলে ভয়ে এখনও স্বনামে কথা বলতে চাননি অনেকে। পুরো জনপদে ‘হাছান মাহমুদ’ নামটি এখনও ভয়ের, আতঙ্কের।

জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী বলেন, ‘একজন জনপ্রতিনিধির জনগণের বন্ধু হওয়ার কথা। কিন্তু হাছান মাহমুদের ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টো। ক্ষমতায় থাকাকালে সবাই তাঁকে যমের মতো ভয় পেত। স্বেচ্ছাচারিতা ও কর্তৃত্ববাদ কোন পর্যায়ে গেলে এমনটি হয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।’

বল্গাহীন সম্পদ
রাজধানীর পূর্বাচলে অন্তত ২০ কোটি টাকা দামের ৭ দশমিক ৫ কাঠা জমি রয়েছে সাবেক এই মন্ত্রীর। চট্টগ্রামের বাকলিয়ায় গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন দালান। চট্টগ্রাম নগরীতে ৫ দশমিক ৬ কাঠা জমির ওপর হচ্ছে আরেকটি দালান। রাঙ্গুনিয়ার পদুয়ায় রয়েছে তাঁর ডুপ্লেক্স বাড়ি। এই বাড়ির দাম অন্তত ২০ কোটি টাকা। বিদেশি ফিটিংসে নজরকাড়া এ বাড়ির নাম দিয়েছেন তিনি ‘সুখবিলাস’। রাঙ্গুনিয়ার ইছাখালীতে প্রায় ১৬ একর জায়গায় গড়েছেন বাংলো। পাহাড় কেটে এই বাংলো গড়ে তুললেও তাঁর বিরুদ্ধে টুঁ শব্দ করেনি পরিবেশ অধিদপ্তর। পাশে সরকারি ভূমি দখল করে আনারস, কলাসহ বিভিন্ন ফলদ ও বনজ গাছ লাগিয়েছেন। বাংলোর পাশে বিএনপি নেতার মালিকানাধীন একটি পেট্রোল পাম্প দখল করে
নিয়েছিলেন।
৫ আগস্টের পর সেই পেট্রোল পাম্প ও বাংলোতে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।

দখল করা জায়গায় খামার, রিসোর্ট
রাঙামাটি-বান্দরবান সড়কে দশমাইল এলাকার পাঁচ একর জমিতে হাছান মাহমুদ ও তাঁর পরিবার গড়ে তোলে মুক্তিযোদ্ধা পার্ক ও রেস্তোরাঁ। পাহাড়ের মাটি কেটে তৈরি করেন তিনটি পুকুর। সুখবিলাস এলাকার ১৫ একর জমি খনন করে দুটি পুকুরে করা হয় মাছ চাষ। একই এলাকার ৫০ একর জমিতে তৈরি করা হয় গরুর খামার। দুধপুকুরিয়া বন বিটের ৩০ একর এলাকা দখলে নিয়ে করেন বিভিন্ন ফলের বাগান। বনের জায়গা দখল করে নির্মাণ করেন বিশাল বাংলো। এ ছাড়া আট স্পটে শতাধিক একর জায়গা দখল করে তৈরি করেছিলেন মৎস্য ও গরুর খামার। হাছান মাহমুদের পরিবারের দখলে থাকা সব জমিই এখন উদ্ধার করছে বন বিভাগ।

হলফনামায় অকল্পনীয় মিথ্যাচার
ড. হাছানের নির্বাচনী এলাকা রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে বিপুল সম্পদের খোঁজ মিলেছে। তবে সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামার সঙ্গে দেখা গেছে আকাশ-পাতাল ফারাক। এই হলফনামা দেওয়ার পর নিজেকে চট্টগ্রামের সবচেয়ে ‘গরিব মন্ত্রী’ বলে তখন মন্তব্য করেছিলেন তিনি। নির্বাচনের আগে তাঁর হাতে নগদ মাত্র ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা রয়েছে বলে ঘোষণা দেন তিনি। এটাকে অবিশ্বাস্য মনে করেন ইছাখালীর বাসিন্দা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, হাছান মাহমুদকে আমরা ‘মিথ্যা মাহমুদ’ ডাকি। তিনি খুব সুন্দর করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মিথ্যা বলতে পারেন। হলফনামায় সব মিলিয়ে তাঁর বার্ষিক আয় মাত্র চার লাখ টাকা দেখান। ঋণ দেখান ২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার খুলশীতে কোটি টাকার নিচে কোনো জায়গা নেই। কিন্তু হলফনামায় খুলশী মৌজায় ছয় কাঠা জমির বাজারদর দেখান মাত্র ১৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।

সহধর্মিণী শতকোটির মালিক
স্থানীয়রা বলছেন, নামে-বেনামে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন হাছানের স্ত্রী নুরান ফাতেমা। এর একটি বড় অংশই পাচার করেছেন তারা। হাছান নিজেও উন্নয়ন প্রকল্প থেকে কমিশন বাবদ নেওয়া হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন হুন্ডির মাধ্যমে। ঠিকাদারদের কমিশনের টাকা বিদেশে দিতে বলতেন তিনি– পাওয়া গেছে এমন অভিযোগও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার বলেন, ‘বেলজিয়াম ও দুবাইয়ে অঢেল টাকা পাচার করেন সাবেক এই মন্ত্রী। তিনি যেভাবে চাইতেন, সেভাবেই আমরা পৌঁছে দিতাম তাঁর কমিশনের টাকা।’ অথচ সর্বশেষ হলফনামায় হাছান তাঁর স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে মাত্র এক কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। আবার বিভিন্ন ব্যাংকে তাঁর ২ কোটি ২৮ লাখ টাকার ঋণও রয়েছে। তাঁর স্ত্রীর স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন নির্বাচন কমিশনে। কিন্তু তাদের এ ঘোষণা বিশ্বাস করে না রাঙ্গুনিয়ার মানুষ।

বন বিভাগের ২১২ একর জায়গা দখল
সাবেক পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং তাঁর পরিবার সাড়ে ১৫ বছর রাঙ্গুনিয়ায় বন বিভাগের কমপক্ষে ২১২ একর জায়গা দখল করেছে। এসব জায়গায় তারা গড়ে তোলেন রেস্তোরাঁ, মাছের খামার, রিসোর্ট ও বাংলোবাড়ি। এরই মধ্যে বন বিভাগ প্রায় ২০০ একর জায়গা উদ্ধার করেছে।
রাঙ্গুনিয়া কুরুশিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, হাছান মাহমুদ ও তাঁর ভাইয়েরা বন বিভাগের জায়গায় নানা স্থাপনা গড়ে তুলেছিলেন। এখন সেগুলো উচ্ছেদ করা হচ্ছে।

দুই ভাইয়ের লুটপাট
শেখ রাসেল অ্যাভিয়েরি অ্যান্ড ইকো পার্কে সাড়ে ১৫ বছরে অন্তত চার হাজার কোটি টাকার কাজ হয়েছে। এসব কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন হাছান এবং তাঁর দুই ভাই এরশাদ মাহমুদ ও খালেদ মাহমুদ। স্থানীয় বাসিন্দা ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘পশুপাখির খাঁচা তৈরি, নিরাপত্তা দেয়াল নির্মাণ, বাংলো-সড়কপথ ও কেবল কার তৈরির বিভিন্ন কাজে অনুগত বাহিনী দিয়ে করাতেন হাছান ও তাঁর ভাইয়েরা। বরাদ্দের টাকার ৪০ শতাংশও প্রকল্প কাজে খরচা করেননি তারা। এই পার্কে ৭০ থেকে ৮০ জন আউটসোর্সিং শ্রমিকের নামে প্রতি মাসে বিল তোলা হতো। বন্যপ্রাণীর খাবার নিয়েও বড় মাপের দুর্নীতি হয়েছে রাঙ্গুনিয়ায়।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে সাড়ে ১৫ বছরে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে রাঙ্গুনিয়ায়। এর মধ্যে আছে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া শিলক ব্রিজ, উত্তর রাঙ্গুনিয়া ডিসি সড়ক, দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া সংযোগ সড়ক, উত্তর রাঙ্গুনিয়া ডিগ্রি কলেজ ভবন নির্মাণ, উত্তর রাঙ্গুনিয়া হাই স্কুল ভবন, রানীরহাট কলেজ ভবন, মজুমদার খিল উচ্চ বিদ্যালয় ভবন, রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজ ভবন, রাঙ্গুনিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, রাঙ্গুনিয়া মহিলা কলেজ, বেতাগী রোটারিয়ান উচ্চ বিদ্যালয়, শাহ আলম চৌধুরী ডিগ্রি কলেজ, পদুয়া সম্মিলিত বালিকা বিদ্যালয়, পদুয়া মাধ্যমিক হাই স্কুল ভবন নির্মাণ প্রকল্প। এসব প্রকল্পে নয়ছয় হয়েছে হাজার কোটি টাকা। হাছান ও তাঁর ভাইয়ের পছন্দের ঠিকাদার ছাড়া এসব সরকারি দপ্তরে কাজ করতে পারত না কেউই। কাগজে-কলমে সরকার নির্ধারিত ঠিকাদার থাকলেও পুরো কার্যক্রমের নাটাই ছিল তিন ভাইয়ের হাতে।

রাঙ্গুনিয়ার চারপাশে বালু তোলার কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন হাছানের ভাই এরশাদ মাহমুদ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বালু ব্যবসায়ী জানান, শিলক খাল, কর্ণফুলী নদী, সরফ ভাটা, বেতাগী, ইছামতী, রানীরহাট নদীতীর থেকে বালু তুলতে কমিশন দিতে হতো এরশাদকে। প্রতি ফুটে সাত থেকে আট টাকা কমিশন নিতেন তিনি। তাঁর হয়ে এ কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন ইঞ্জিনিয়ার সামশু। এই টাকার ভাগও যেত হাছানের কাছে।
হাছানের ভাই খালেদ মাহমুদ চন্দ্রঘোনা চক্ষু হাসপাতালের সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতেন। এখানে নামে-বেনামে শেয়ার ছিল তাদের। মরিয়মনগর সেন্ট্রাল হাসপাতালেও রয়েছে তাঁর অংশীদারিত্ব। চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইআইইউসির নিয়ন্ত্রণও ছিল তাঁর হাতে। আবার চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে যে কোনো গাড়ি চলাচল করতে হলে অনুমতি নিতে হতো খালেদ মাহমুদের কাছে। তাঁর অনুমতি ছাড়া এই পথে কোনো গাড়ি নামতে পারত না। রুট পারমিট ছাড়াই এবি ট্রাভেলসের গাড়ি এই পথে চলত খালেদ মাহমুদের মদদে।

কথা বলতে পারেনি সমকাল
অভিযোগের বিষয়ে জানতে হাছান মাহমুদের সঙ্গে নানাভাবে কথা বলার চেষ্টা করেছে সমকাল। তবে তাঁর সব ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। একটি সূত্র বলছে, ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর হাছান সপরিবারে বেলজিয়াম উড়ে গেছেন। সে দেশের নাগরিকত্বও রয়েছে তাঁর পরিবারের সব সদস্যের। বন্ধ পাওয়া যায় তাঁর স্ত্রী নুরান ফাতিমা এবং দুই ভাই খালেদ মাহমুদ ও এরশাদ মাহমুদের ফোন নম্বরও।

সূত্র:সমকাল।
তারিখ: অক্টোবর ০৪, ২০২৪

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ