Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

বাংলাদেশ থেকে বিদ্যুতের বকেয়া আদায়ে ভারতীয় সংস্থাগুলো কী করবে? (২০২৪)

Share on Facebook

শুভজ্যোতি ঘোষ বিবিসি নিউজ বাংলা, দিল্লি
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পালাবদলের মধ্যেই গোটা দেশ যখন এই মুহুর্তে লোডশেডিং আর তীব্র বিদ্যুৎ সংকটে ভুগছে, তখন অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বাড়তি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে পাওনাদার ভারতীয় সংস্থাগুলোর তাগাদা।

ভারতের বেসরকারি সংস্থা ‘আদানি পাওয়ার’ ও আরও কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ সংস্থার বাংলাদেশের কাছে মোট বকেয়ার পরিমাণ ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে ইতিমধ্যেই – আর এই অর্থের কিছুটা অন্তত এখনই পরিশোধ না-করা গেলে সে দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ আরও বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে শেখ হাসিনার আমলের শেষ দিক থেকেই বাংলাদেশ চরম আর্থিক সংকটে ভুগছে, টান পড়েছে দেশের বৈদেশিক রিজার্ভ বা ডলারের ভাঁড়ারেও – অথচ এই বকেয়া পরিশোধ করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে খুব দ্রুতই অর্থের সংস্থান করতে হবে।

ভারতের যে সংস্থাটির বাংলাদেশ থেকে প্রাপ্য অর্থের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, সেই আদানি পাওয়ার ইতিমধ্যেই প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বরাবরে চিঠি লিখে তাদের পাওনা ৮০০ মিলিয়ন বা ৮০ কোটি ডলার মিটিয়ে দেওয়ার জন্য তার ‘হস্তক্ষেপ’ চেয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আদানি পাওয়ার ঝাড়খন্ডের গোড্ডায় অবস্থিত তাদের যে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানি করে থাকে, সেখান থেকে সরবরাহ এর মধ্যেই অন্তত ৫০০ মেগাওয়াট কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুত বকেয়া মেটানো নিয়ে কোনও মীমাংসা না-হলে এই পরিমাণ আরও বাড়বে অবধারিতভাবে।

এনটিপিসি-সহ ভারতের আরও বিভিন্ন যে সব রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ সংস্থার বাংলাদেশের কাছে বিপুল অর্থ পাওনা আছে, তারাও দু-তিন মাস আগে থেকেই বাংলাদেশে বিদ্যুৎ পাঠানোর পরিমাণ কমাতে শুরু করেছে।

তবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো এখনও ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকারকে পেমেন্ট চেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘তাগাদা’ দেয়নি – তারা আশা করছে ভারত সরকারই কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা চালিয়ে এই সংকটের একটা সমাধান বের করতে পারবে।

বাংলাদেশে রাজধানী ঢাকার কাছে একটি বিদ্যুৎ ট্রান্সমিশন লাইনছবির উৎস,Getty Images
ছবির ক্যাপশান,বাংলাদেশে রাজধানী ঢাকার কাছে একটি বিদ্যুৎ ট্রান্সমিশন লাইন

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বিশেষজ্ঞরা বিবিসিকে বলেছেন, এই বিপুল পরিমাণ বকেয়া মেটানোর জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া না-হলে ভারতীয় কোম্পানিগুলো ক্ষতিপূরণ চেয়ে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতেরও দ্বারস্থ হতে পারে। যদিও সেটা একেবারে শেষ ধাপ, এখনও সেরকম পরিস্থিতি আসেনি বলেই তারা জানাচ্ছেন।

আন্তর্জাতিক ব্রোকারেজ ফার্ম ‘বার্নস্টাইন’ও মনে করছে, পাওনা শোধ করা নিয়ে এই সমস্যার জেরে কিছু সময়ের জন্য এই সংস্থাগুলোর হয়তো ‘স্বল্পকালীন’ ভোগান্তি হবে – তবে মধ্যম বা দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে বিষয়টি এখনও উদ্বেগজনক মাত্রা নেয়নি!

এই পটভূমিতেই বুধবার বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, এই খাতের সংকট মেটানোর জন্য জরুরি ভিত্তিতে বিশ্ব ব্যাংক তাদের ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেবে বলে সরকার আশ্বাস পেয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে, এই অর্থ হাতে পেলে পাওনাদার সংস্থাগুলোর দাবি হয়তো অনেকটাই মেটানো সম্ভব হবে। তবে এই ঋণের টাকা কখন সরকারের হাতে আসতে পারে বা এটা দিয়ে পাওনাদারদের কাকে কতটা কী মেটানো হবে, তা নিয়ে কিছুই জানানো হয়নি।

বিবিসি বাংলার খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল অনুসরণ করুন

বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো কী বলছে?
বাংলাদেশের মোট বিদ্যুতের চাহিদার ১২ শতাংশ (বা তার সামান্য কমবেশি) ভারত থেকে সরবরাহ করা হয় বলে এই সেক্টরের সঙ্গে জড়িতরা জানাচ্ছেন।

এখন ভারতের যে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলোর মিলিতভাবে বাংলাদেশের কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলারের ওপর পাওনা, তার মধ্যে আদানি পাওয়ার ছাড়াও আরও অন্তত সাতটি কোম্পানি রয়েছে।

এর মধ্যে আদানি পাওয়ারের পাওনা অর্থের পরিমাণই অবশ্য সবচেয়ে বেশি, ৮০ কোটি ডলার। তবে এই হিসেব ৩০শে জুন, ২০২৪ তারিখের, এরপর আরও আড়াই মাসের পাওনা অর্থ যোগ হবে।

‘পাওনাদার’দের তালিকায় আর একটি বড় নাম ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনটিপিসিছবির উৎস,Getty Images
ছবির ক্যাপশান,‘পাওনাদার’দের তালিকায় আর একটি বড় নাম ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনটিপিসি

পাওনাদারদের তালিকায় বাকি সংস্থাগুলো হল : সেইল এনার্জি ইন্ডিয়া লিমিটেড (পুরনো নাম সেম্বকর্প এনার্জি) – ১৫ কোটি ডলার, পিটিসি ইন্ডিয়া – ৮.৪৫ কোটি ডলার, এনটিপিসি (দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন) – ৬.৪৬ কোটি ডলার, এনটিপিসি (ত্রিপুরা) – ২.১৯ কোটি ডলার, এনটিপিসি – ১.৬৫ কোটি ডলার এবং পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন – ২ কোটি ডলার।

এর মধ্যে আদানি পাওয়ারের পক্ষ থেকে গত ২৭ অগাস্ট প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি লিখে পরিষ্কার জানানো হয়েছে, তারা যাতে বিদ্যুৎ সরবরাহের অঙ্গীকার রক্ষা করতে পারে সে জন্য এই ৮০ কোটি ডলার পরিশোধ করাটা জরুরি – কারণ ঋণদাতা সংস্থাগুলো তাদের প্রতি এখন ‘কঠোর মনোভাব’ দেখাচ্ছে।

ওই চিঠির একটি প্রতিলিপি বিবিসির হাতেও এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে পাওনা অর্থ পরিশোধের জন্য আদানি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে একটি ‘ফর্মুলা’ও সুপারিশ করা হয়েছে।

মোটামুটিভাবে এই ‘ফর্মুলা’টা হল : বিদ্যুৎ সরবরাহের অ্যারেঞ্জমেন্টটা টেঁকসই (‘সাসটেইনেবল’) রাখার জন্য বকেয়ার পরিমাণ কিছুতেই ৫০ কোটি ডলার ছাড়ানো চলবে না। ফলে বকেয়ার পরিমাণ এই সীমায় নামিয়ে আনতে হলে বাংলাদেশকে অবিলম্বে অন্তত ৩০ কোটি ডলার একবারে শোধ করতে হবে।

এছাড়া ১৬০০ মেগাওয়াট (পূর্ণ ক্ষমতা) বিদ্যুৎ আমদানির সাপেক্ষে বাংলাদেশের পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (পিডিবি) প্রতি মাসে আদানিকে ৯ থেকে ৯.৫ সাড়ে কোটি ডলার মেটানোর কথা (‘মান্থলি রিসিভেবল’) – কিন্তু গত বেশ কয়েক মাস ধরে প্রতি মাসে বড়জোর ৪ থেকে ৪.৫ কোটি ডলার মেটানো হয়েছে বলেই বকেয়ার পরিমাণ এভাবে আকাশ ছুঁয়েছে।

কাজেই আদানি পাওয়ার সুপারিশ করেছে, পিডিবি প্রতি মাসে ‘মান্থলি রিসিভেবল’-এর এই পুরো পরিমাণটা মেটাতে থাকুক – তাতে বকেয়ার পরিমাণও বাড়বে না এবং পূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহও অব্যাহত থাকবে।

সেইল এনার্জি ইন্ডিয়া লিমিটেডের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রছবির উৎস,SEIL ENERGY
ছবির ক্যাপশান,সেইল এনার্জি ইন্ডিয়া লিমিটেডের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র

আদানি শিল্পগোষ্ঠীর একটি সূত্র বিবিসি বাংলাকে বলেন, কোভিড মহামারির মধ্যেও মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে ‘সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং ২০০ কোটি ডলার ঋণ নিয়ে’ গোড্ডার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও আলাদা ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে – কিন্তু এখন বিদ্যুৎ বেচার টাকা ঠিকমতো না-পেলে তাদের জন্য ঋণের কিস্তি শোধ করাই মুশকিল হয়ে উঠছে!

আদানি পাওয়ার বাংলাদেশ সরকারকে সরাসরি ‘তাগাদা’ দেওয়ার রাস্তায় হাঁটলেও এনটিপিসি-র মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো অবশ্য এখনও সে ধরনের চরম পদক্ষেপ নেয়নি।

তবে এই সংস্থাগুলোর প্রায় সবাই বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানির পরিমাণ ব্যাপকভাবে ছাঁটাই করেছে।

যেমন, ত্রিপুরা থেকে প্রতি দিন বাংলাদেশে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাঠানোর ব্যাপারে সমঝোতা থাকলেও প্রায় চার-পাঁচ মাস হয়ে গেল কখনওই দৈনিক ৯০ থেকে ১১০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ পাঠানো হচ্ছে না। আর এর মূলেও আছে ঠিক সময়ে অর্থ পরিশোধ না-করা।

ত্রিপুরা স্টেট ইলেকট্রিসিটি কর্পোরেশন লিমিটেডের এমডি দেবাশিস সরকার বলেছেন, “ঠিক সময়ে টাকাপয়সা না-পেলে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালিয়ে যাওয়া মুশকিল এটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। কর্পোরেশনের ‘ক্যাশ ফ্লো’ (নগদ অর্থের প্রবাহ) কমে গেছে বলেই আমরা বিদ্যুতের জোগানে রাশ টানতে বাধ্য হয়েছি।”

তবে এই বিষযটি ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে’র পর্যায়ে পড়ে এবং যেহেতু এর সঙ্গে একটি বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের সম্পর্ক জড়িত – তাই বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়নি।

ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যার উৎপাদনের একটা বড় অংশ বাংলাদেশে যায়ছবির উৎস,TSECL
ছবির ক্যাপশান,ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যার উৎপাদনের একটা বড় অংশ বাংলাদেশে যায়
ত্রিপুরার কর্মকর্তারা বিবিসিকে আরও জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে বিদ্যুতের পেমেন্ট নেওয়ার বিষয়টির তদারকি করে এনটিপিসি-র বাণিজ্যিক শাখা এনভিভিএন। ফলে তারা নিজেরা বাংলাদেশকে কোনও তাগাদা দেন না, তাদের হয়ে এই কাজটা এনভিভিএনেরই করার কথা।

দিল্লিতে এনটিপিসি-র একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা আবার বলছেন, “একটি বেসরকারি সংস্থা হিসেবে আদানি পাওয়ার যেভাবে বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি লিখে তাগাদা দিতে পারে, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি হিসেবে আমাদের পক্ষে তা সম্ভব নয়।”

তবে ঢাকার সঙ্গে নির্ধারিত কূটনৈতিক চ্যানেলের আলোচনায় দিল্লির পক্ষ থেকে এই প্রসঙ্গটি অবশ্যই উত্থাপন করা হচ্ছে বলে তারা নিশ্চিত।

লগ্নির টাকা মার যাবে না, তার কী গ্যারান্টি?
জেএনইউ-এর সাবেক অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ধর ভারতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ক্ষেত্রের একজন সুপরিচিত বিশেষজ্ঞ, দিল্লির একাধিক শীর্ষস্থানীয় থিঙ্কট্যাঙ্কে তিনি মহাপরিচালক বা প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা বা জাতিসংঘের মতো অজস্র ফোরামেও তিনি নিয়মিত ভারতের প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। সদস্য ছিলেন ভারত সরকারের বাণিজ্য বোর্ডেও।

অধ্যাপক ধরের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, বাংলাদেশে ভারতের বিদ্যুৎ সংস্থাগুলো গত এক দশকে যে বিপুল বিনিয়োগ করেছে তার ‘রিটার্ন’ কতটা সুরক্ষিত? বকেয়া অর্থ হাতে না-পেলে তাদের হাতে তা উদ্ধারের কী উপায় আছে?

জেনেভা থেকে তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “আসলে ভারতীয় সংস্থাগুলো যখনই বিদেশে এ ধরনের প্রকল্প হাতে নেয়, সেগুলো একরকম রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা বা গ্যারান্টির আওতায় থাকে। আদানির সঙ্গে বাংলাদেশের যে পিপিএ (পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট), কিংবা অন্য সংস্থাগুলোর যে চুক্তি – সেগুলোতেও একই রকম গ্যারান্টির সংস্থান আছে।”

অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ধরছবির উৎস,Biswajit Dhar
ছবির ক্যাপশান,অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ধর

“তবে বিষয়টা হল, বাংলাদেশ আমাদের বন্ধু দেশ, আর সচরাচর বন্ধু দেশের সঙ্গে এই গ্যারান্টিটা চট করে ‘ইনভোক’ করা হয় না। মানে রাষ্ট্রীয় স্তরে সেই ক্ষতি পুষিয়ে দেবার দাবি জানানোর ঘটনা বন্ধু দেশের ক্ষেত্রে বেশ বিরলই বলব!”

তবে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে ক্রমশ যেভাবে অবনতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তাতে আগামী দিনে বকেয়া আদায়ের জন্য ভারত সরকার বা তাদের অধীনস্থ সংস্থাগুলো যদি এই গ্যারান্টির ধারা বা ক্লজ-টি প্রয়োগ করে – অধ্যাপক ধর তাতে অবাক হবেন না বলেই জানাচ্ছেন।

“শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা বন্দরের ক্ষেত্রে চীন ঠিক এই জিনিসটাই করেছিল। চীন সেই বন্দর বানানোর পর শ্রীলঙ্কা যখন ঋণের কিস্তি মেটাতে ব্যর্থ হয়, তখন চীন কিন্তু ঠিক এই ধরনের রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টিই ইনভোক করেছিল।”

“যার ফলে ২০১৭র ডিসেম্বরে ৯৯ বছরের লিজে ওই বন্দরের পরিচালনার ভার চীনের হাতে তুলে দিতে শ্রীলঙ্কা বাধ্য হয়”, জানাচ্ছেন বিশ্বজিৎ ধর।

ভারতের ক্ষেত্রে এই ধরনের পদক্ষেপ বিরল হলেও দৃষ্টান্ত একেবারে যে নেই, তা কিন্তু নয়!

বিশ্বজিৎ ধর মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস সংস্থা ওএনজিসি-র বৈদেশিক শাখা ‘ওএনজিসি বিদেশ’ আফ্রিকার দেশ সুদানের কাছ থেকে প্রায় একই রকম পরিস্থিতিতে লন্ডনের আরবিট্রেশন আদালতের মাধ্যমে ১৯ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ আদায় করতে সক্ষম হয়েছিল।

তিনি বলছিলেন, “ওএনজিসি বিদেশ তেল ও জ্বালানি পাইপলাইনের এই অফশোর প্রকল্পটি যখন হাতে নেয়, তখনও সুদান ভাগ হয়নি।”

শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা বন্দরে ভিড়েছে চীনের একটি রিসার্চ ও সার্ভে ভেসেল (অগাস্ট ২০২২)ছবির উৎস,Getty Images
ছবির ক্যাপশান,শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা বন্দরে ভিড়েছে চীনের একটি রিসার্চ ও সার্ভে ভেসেল (অগাস্ট ২০২২)
“কিন্তু ২০১১তে দেশটি যখন সুদান ও সাউথ সুদান, এই দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায় তখন সুদান তাদের ভাগের টাকা দিতে অস্বীকার করলে ভারতের ওই সংস্থাটি সালিশি আদালতে যাওয়ার রাস্তা বেছে নিয়েছিল। অবশেষে গত বছর তাদের অনুকূলে রায় আসে”, জানাচ্ছেন ড: ধর।

তবে ভারতের বিদ্যুৎ সংস্থাগুলোর বাংলাদেশের সঙ্গে এরকম চরম পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন হবে, বিশেষজ্ঞরা এখনই অবশ্য তা মনে করছেন না।

লন্ডন-ভিত্তিক গ্লোবাল বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ফার্ম আরএসবি এলএলপি-র চকরি লোকপ্রিয় যেমন মনে করেন, বাংলাদেশের সরকার এই সমঝোতা বা চুক্তিগুলোর মর্যাদা দেবে বলেই তার ধারণা।

ভারতের ইকোনমিক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মি লোকপ্রিয় বলেছেন, “এই চুক্তিগুলোতে রাষ্ট্রীয় স্তরে হস্তক্ষেপের অবকাশ আছে। তবে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও আমি মনে করি না রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এই চুক্তিগুলো নিয়ে কখনওই ছিনিমিনি খেলবে!”

“আর তার কারণটাও খুব সহজ, স্বাভাবিকভাবে দেশ চালানোর জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহের এই ব্যবস্থাগুলো বাংলাদেশের জন্য অপরিহার্য।”

ভারতের এনটিপিসি-র মতো বৃহৎ সংস্থার জন্য বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ বা বকেয়ার অঙ্ক যে তাদের মোট ক্যাপাসিটি বা টার্নওভারের তুলনায় অতি নগণ্য, মি লোকপ্রিয় সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন।

অর্থাৎ এই অর্থ আদায়ের জন্য কিংবা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরিয়ে আনার জন্য এনটিপিসি-র মতো সংস্থা খুব একটা তৎপরতা দেখাবে না বা তাড়াহুড়ো করবে না বলেই তিনি ইঙ্গিত করছেন।

সালিশি আদালতে গিয়ে সুদানের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করেছিল ওএনজিসিছবির উৎস,Getty Images
ছবির ক্যাপশান,সালিশি আদালতে গিয়ে সুদানের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করেছিল ওএনজিসি
আন্তর্জাতিক ব্রোকারেজ ফার্ম বার্নস্টাইনের এক সাম্প্রতিক রিপোর্টেও বলা হয়েছে, বকেয়া পরিশোধ নিয়ে আপাতত সংকট তৈরি হলেও দীর্ঘমেয়াদে এখনও উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।

তবে তারা সেই সঙ্গেই সতর্ক করে দিয়েছে, “পরিস্থিতি যদি অবনতির দিকে যায়, তাহলে আদানি গোষ্ঠীকে হয় পিপিএ (বিদ্যুৎ ক্রয়ের সমঝোতা) নিয়ে নতুন করে আলোচনা চালাতে হবে (রিনিগোশিয়েশন), অথবা আরবিট্রেশনের পথে যেতে হবে।”

আদানির জন্য বিশেষ ‘বেইল আউট’
শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রিত্বে ইস্তফা দিয়ে নাটকীয় পরিস্থিতিতে যে দিন ভারতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন, তার ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় ভারতের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় একটি বিতর্কিত বিজ্ঞপ্তি জারি করে।

১২ই অগাস্ট, ২০২৪ তারিখে মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রতিবেশী দেশগুলোতে (ক্রস বর্ডার) বিদ্যুৎ রফতানির জন্য ভারতের নীতিমালায় সংশোধন আনা হচ্ছে। এর ফলে যে বিদ্যুৎ বিদেশে রফতানির কথা ভেবে উৎপাদন করা হয়েছিল তা প্রয়োজনে ভারতের জাতীয় গ্রিডেও যুক্ত করা যাবে এবং দেশের ভেতরেও বেচা যাবে!

এই সংশোধনীটি যে শুধুমাত্র আদানি পাওয়ারকে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দিতেই আনা হয়েছে – ভারতের বিরোধী দলগুলো সে বিষয়ে নিশ্চিত।

প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ এরপরই টুইট করেন, যেহেতু এখানে প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রিয় ‘টেম্পোওয়ালা’ (গৌতম আদানিকে ইঙ্গিত করে) স্বার্থ জড়িত, তাই সরকার ‘বিদ্যুতের গতি’তে পদক্ষেপ নিয়েছে এবং নিয়ম পর্যন্ত পাল্টে দিয়েছে!

তিনি আরও বলেন, অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা আমদানি করে ঝাড়খন্ডের গোড্ডা প্ল্যান্টে যে বিদ্যুৎ তৈরি হচ্ছে তার পুরোটাই বাংলাদেশে রফতানি করার কথা – আর এজন্য আদানি গোষ্ঠীকে প্রচুর বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গেও তারা একটি অতি বিতর্কিত বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি সই করেছে।

অথচ সেই কোম্পানিকে এখন কীভাবে ভারতের অভ্যন্তরেই সেই বিদ্যুৎ বেচার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, প্রশ্ন তোলেন জয়রাম রমেশ।

গত মাসে ‘আদানি ওয়াচ’ পোর্টালে এক নিবন্ধে সাংবাদিক পরঞ্জয় গুহঠাকুরতাও লিখেছেন, শেখ হাসিনার ভারতে চলে আসা আর তার দিনসাতেকের মধ্যে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের এই বিজ্ঞপ্তি – এই দুটোর মধ্যে যে গভীর সম্পর্ক আছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

“শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সংকট যে আরও গভীর হবে এবং আদানি বিরাট আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে, সেই আশঙ্কা থেকেই তাদের এভাবে বেইল আউট করা হল”, লিখেছেন মি গুহঠাকুরতা।

বিদেশে রফতানির জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে, এই যুক্তি দেখিয়ে আদানি পাওয়ার গোড্ডা প্লান্টের জন্য এমন বহু সুবিধা পেয়েছে যা ভারতে কার্যত নজিরবিহীন।

এককভাবে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র হওয়া সত্ত্বেও গোড্ডা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্বীকৃতি পেয়েছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রর জন্য আদিবাসীদের সুরক্ষিত জমি অধিগ্রহণ করতে দেওয়া হয়েছে। পুরো প্রকল্পের জন্য অত্যন্ত সহজ শর্তে তাদের ঋণ দিয়েছে অন্তত দুটি সরকারি কর্পোরেশন।

এই নিবন্ধে Twitterএর কনটেন্ট রয়েছে। কোন কিছু লোড করার আগে আমরা আপনার অনুমতি চাইছি, কারণ তারা হয়ত কুকি এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকতে পারে। আপনি সম্মতি দেবার আগে হয়ত Twitter কুকি সম্পর্কিত নীতি এবং ব্যক্তিগত বিষয়ক নীতি প়ড়ে নিতে চাইতে পারেন। এই কনটেন্ট দেখতে হলে ‘সম্মতি দিচ্ছি এবং এগোন’ বেছে নিন।

সম্মতি দিচ্ছি এবং এগোন
সতর্কবাণী: বিবিসির নয় এমন ওয়েবসাইটের কনটেন্টের জন্য বিবিসি দায়ী না

বিদ্যুৎ খাতের পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এরপর সেই বিদ্যুৎ যদি দেশের ভেতরে বেচার অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে সেটা ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজম’ বা রাজনৈতিক পছন্দের শিল্পপতিদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার পুঁজিবাদী ব্যবস্থা ছাড়া আর কিছুই নয়।

তবে এই পদক্ষেপের ভেতরে বাংলাদেশের জন্য একটা সিলভার লাইনিং বা ‘রূপোলি রেখা’ আছে বলেও তারা কেউ কেউ মনে করছেন।

“বাংলাদেশের নতুন সরকার যদি আদানির সঙ্গে চুক্তি পুনর্বিবেচনা করতে চায়, তাহলে তারা এটা অন্তত বলার সুযোগ পাবে যে তোমাদের তো এখন দেশের ভেতরেও বিদ্যুৎ বেচার অনুমতি আছে, ফলে আমরাও সেই একই দামে কিনব না কেন?”, বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন ভারতের একজন সাবেক বিদ্যুৎ সচিব।

বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে পাওনাদারদের ‘তাগাদা’ যে বাংলাদেশকে একটা চরম বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে, অন্তর্বর্তী সরকার অবশ্য তা খোলাখুলিই স্বীকার করছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বুধবার মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের অবস্থা হইল এখন গ্যাস নাই, অথচ পাওনাদার আছে। বিদ্যুৎ নাই, অথচ পাওনাদার আছে।”

সরকার দায়িত্ব নেওয়ার দু’দিনের মধ্যে কাতার যেভাবে বাংলাদেশে গ্যাস পাঠাতে বেঁকে বসেছে, কিংবা আদানি গোষ্ঠী চিঠি লিখে পাওনা টাকার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে তা সরকারকে তীব্র অস্বস্তিতে ফেলেছে বলেও তিনি জানান।

তবে এই সংকটের সমাধান খুঁজতে ইতিমধ্যেই তারা বিশ্ব ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়েছেন এবং তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে বলেও বিদ্যুৎ উপদেষ্টা দাবি করেন।

“আমরা যেভাবে এই সেক্টরে সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছি, তাতে তারা খুবই সন্তুষ্ট। বিশ্ব ব্যাংক তো বলছে বহু জায়গায় তিন-চার বছরেও এত সংস্কারের কাজ সম্ভব হয় না।”

“সে জন্যই তারা আমাদের ১ বিলিয়ন ডলারের মতো ঋণ দিতে রাজি হয়েছে … একটা সেক্টরের জন্য আলাদাভাবে এই পরিমাণ ঋণ দেওয়ার ঘটনা খুব বিরল, তবু আমাদের জন্য তারা এটা করতে সম্মত হয়েছে”, বলেন ফাওজুল কবির খান।

তবে এই টাকা কবে নাগাদ পাওয়া যেতে পারে, পাওয়া গেলে কীভাবে সেটা খরচ করা হবে বা পাওনাদারদের কাকে কতটা শোধ করা হবে – সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানাননি।

এদিকে বাংলাদেশের জ্বালানি খাতের একজন সুপরিচিত বিশেষজ্ঞও নাম প্রকাশ না-করার শর্তে বিবিসিকে বলেছেন, আদানির সঙ্গে চুক্তিটি যতই বিতর্কিত হোক – এই মুহুর্তে আশু সংকট মেটাতে তাদের সঙ্গে একটি সমঝোতায় আসা প্রয়োজন।

তিনি বলছিলেন, “আদানির চুক্তিটা নিয়ে অনেক কথা হতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে আদানির সরবরাহ যদি বন্ধ হয়ে যায় তবে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।”

“কথা হচ্ছে যে আদানি আটশ মিলিয়ন ডলার পাবে, এটা তো তার চুক্তি অনুযায়ী প্রাপ্য। এখন আমরা যদি না দিতে পারি টাকাটা, ওরাই বা কতদিন বাকিতে বিদ্যুৎ দেবে?”

আদানি পাওয়ার বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে লেখা চিঠিতে সমাধানের যে ‘ফর্মুলা’ সুপারিশ করেছে, সেটাও মোটামুটি গ্রহণযোগ্য বলেই মনে করছেন তিনি।

ওই বিশেষজ্ঞর কথায়, “আদানিরা বলেছে পাঁচশ মিলিয়ন ডলারের উপরে হলে এটা সাসটেইনেবল না। সুতরাং তারা পাঁচশ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত রানিং বিল বাকি রাখতে রাজি আছে।”

“আসলে চুক্তি অনুযায়ী সেটাও থাকতে পারে না। কিন্তু তারা এগ্রি করেছে। এর উপরে হলে তো … তাদেরও কয়লা আমদানি করতে হয়, লজিস্টিক, মেইনটেনেন্স কস্ট আছে। তাই না?”

ফলে আপাতত ‘বকেয়া’ সংকট গভীর আকার নিলেও অচিরেই বাংলাদেশ সরকারকে পাওনাদারদের সঙ্গে একটা ‘মীমাংসা’য় আসতে হবে এবং সেটা একেবারে অসম্ভবও নয় – এমনটাই বহু পর্যবেক্ষকের ধারণা।

সূত্র: বিবিসি বাংলা
তারিখ: সেপ্টম্বর ১৪, ২০২৪

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ