লেখক:এম সায়েম টিপু।
সরকার পরিবর্তনের পর শিল্পাঞ্চলগুলোতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংকট শুরু হলেও শ্রমিকদের বেশ কিছু ন্যায্য দাবিও আছে। তবে কেউ কেউ এর নেপথ্য কারণ নতুন বাংলাদেশ গঠনের সময়টাকে অস্থির করার চেষ্টা বলেও মনে করেন।
অন্যদিকে মালিকরা বলছেন, চলমান অস্থিরতার ফলে জ্বালানিসংকটসহ শিল্পের প্রকৃত সমস্যার কথা তুলে ধরা যাচ্ছে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে ক্রেতাদের কাছ থেকে সামনের মৌসুমে কাজ পাওয়া যাবে কি না, এ নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, শ্রমিকদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বৈশ্বিক ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে তাদের কার্যাদেশ অন্য দেশে স্থানান্তর করতে পারে। এমন ঘটনা হবে মালিক-শ্রমিক উভয়ের জন্য আত্মহত্যার শামিল। এই প্রেক্ষাপটে সংকট সমাধানে শ্রমিকদের দাবিগুলো সমাধানের জন্য সরকারের তদারকি সংস্থা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরকে (ডাইফি) কার্যকর করার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
শ্রমিক নেতারা বলেন, কারখানাভিত্তিক কিছু সমস্যা আছে; যেমন—হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল, নাইট অ্যালাউন্স বাড়ানো, মজুরি সমন্বয় এবং মাতৃত্বকালীন ভারী কাজ থেকে মুক্তি না দেওয়া।
এ ছাড়া মূল্যস্ফীতির এই সময়ে সাড়ে ১২ হাজার টাকা দিয়ে সংসার চলে না। ফলে তৃতীয় পক্ষ বাইরে থেকে লোক পাঠিয়ে কারখানার ভেতর অস্থিরতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। সেই সঙ্গে আছে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে ঝুট ব্যবসা দখলকারীদের প্রতিযোগিতা।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির (বিসিডব্লিউএস) প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আখতার কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে শিল্পাঞ্চলে সংকট শুরু হলেও বর্তমানে শ্রমিকদের কিছু ন্যায্য দাবি ঘিরে আন্দোলন-বিক্ষোভ হচ্ছে।
গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, নতুন বাংলাদেশে শিল্পাঞ্চলকে গতিশীল করার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আগের সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে সতর্ক থাকতে হবে।
বিজিএমইএর পরিচালক ও ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি সামস মাহমুদ বলেন, সংকট সমাধানে সরকার, উদ্যোক্তা ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা আন্তরিক হলেও দিন দিন সংকট বাড়ছে। এতে আগামী মৌসুমে কাজ নিয়েও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আশুলিয়ার ৯০ কারখানা বন্ধ ও ছুটি ঘোষণা
গত দু-তিন দিনে গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভার এলাকার গার্মেন্টস কারখানায় অস্থিতিশীলতা কিছুটা কমে এলেও গতকাল সোমবার পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিশেষ করে আশুলিয়া এলাকার গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে অস্থিরতা আবার বেড়ে গেছে।
এ জন্য ওই এলাকার ৯০টি কারখানা বন্ধ ও ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া টঙ্গীতে ১৩ দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা।
কালের কণ্ঠ’র আশুলিয়া প্রতিনিধি জানান, আশুলিয়া-ডিইপিজেড-আবদুল্লাপুর সড়কের নরসিংহপুর এলাকায় হা-মীম ও শারমিন নামের বড় দুটি পোশাক কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। পরে ওই এলাকার নিউ এইজ, নাসা, আল মুসলিম, জেনারেশন নেক্সটসহ প্রায় ৯০টি পোশাক কারখানা বন্ধ ও ছুটি ঘোষণা করা হয়। তবে বাকি কারখানাগুলোতে উৎপাদন চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম।
উসকানির অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
পোশাক কারখানায় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির উসকানি দেওয়ার অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা ইসতিয়াক আহম্মেদ হৃদয়কে (২৪) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল নেত্রকোনার কেন্দুয়া থেকে জেলা পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃত হৃদয় ছাত্রলীগের নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির শিক্ষা ও পাঠ্যক্রম বিষয়ক সম্পাদক। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোশাক শ্রমিকদের উদ্দেশে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে ভাইরাল হন তিনি।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়েছে, তাঁর বিষয়ে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
সূত্র:কালের কন্ঠ।
তারিখ: সেপ্টম্বর ১০, ২০২৪
রেটিং করুনঃ ,