সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ রুল দেন।
বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ–সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়। পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি গত রোববার রিটটি করেন। অন্য চার ব্যক্তি হলেন তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী রিদুয়ানুল করিম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফয়েজ আহম্মেদ।
পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পঞ্চদশ সংশোধনী সংবিধানের মূল কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক—এমন অভিযোগ এনে রিট করেছেন আবেদনকারীরা। আদালত রুল দিয়েছেন। রিটের যুক্তিগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখব। সংবিধানের মূল কাঠামোকে আঘাত করেছে কি না, তা–ও দেখব।’
এক যুগের বেশি সময় আগে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়। অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান যুক্ত করা হয়। আগে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন করার বিধান ছিল। পঞ্চদশ সংশোধনীতে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিষয়টি সংযোজন করা হয়।
আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও সংসদবিষয়ক সচিবসহ বিবাদীদের ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে বলে জানান রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রস্তাবনাসহ অনেকগুলো অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে হলে গণভোটের প্রয়োজন হয়। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অনেক অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হয়। অথচ অনুচ্ছেদগুলো পরিবর্তনের জন্য গণভোট হয়নি, কাজেই এটি অসাংবিধানিক। সংবিধানে জাতীয় সংসদকে সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা দেওয়া আছে, যা জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার প্রতিফলন। অথচ পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংবিধানের বড় একটা অংশ সংশোধন অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। এতে করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সার্বভৌমত্বের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কারণ, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করতে চাইতে পারে। কিন্তু বলা হলো সংশোধন করা যাবে না, যা সংবিধানের মৌলিক ধারণা ও জনগণের সার্বভৌমত্বের অধিকারের পরিপন্থী। পঞ্চদশ সংশোধনী গণতন্ত্র ও নিরপেক্ষ নির্বাচনসহ সংবিধানের মূল কাঠামোরও পরিপন্থী। কেননা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে গণতন্ত্র ও নিরপেক্ষ নির্বাচন—এসবে আঘাত করা হয়েছে।
পঞ্চদশ সংশোধনী সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলসংক্রান্ত আপিল বিভাগের রায়ের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেন এই আইনজীবী। রিটের যুক্তি সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী–সংক্রান্ত মামলার রায়ের সংক্ষিপ্ত আদেশে আপিল বিভাগ বলেছিলেন, দুটি (দশম ও একাদশ) জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন হবে। কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ওই দুটি নির্বাচন না করে রায়ের পরিপন্থীভাবে দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন করা হয়।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: আগষ্ট ১৯, ২০২৪
রেটিং করুনঃ ,