দেশে প্রবাসী আয় আসা গত সপ্তাহে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। ২১ থেকে ২৭ জুলাই এই সাত দিনে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে মাত্র ১৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এর মধ্যে ১৯-২৩ জুলাই সময়ে সরকারি ছুটি ও সাধারণ ছুটির কারণে ব্যাংক বন্ধ ছিল। এ ছাড়া টানা ৫ দিন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এবং ১০ দিন মোবাইলে ইন্টারনেট সেবা ছিল না। পাশাপাশি গত শুক্রবার রাত থেকে কারফিউ জারি রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রবাসী আয়সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, চলতি মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে ৪০-৫০ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছিল। এর মধ্যে ১-২০ জুলাই আসে ১৪২ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। সেই হিসাবে ২৭ জুলাই পর্যন্ত দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১৫৬ কোটি ৭৪ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, ১-২৮ জুলাই সময়ে প্রবাসী আয় এসেছে ১৬৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার। চলতি সপ্তাহে প্রবাসী আয় বাড়বে, এমন আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর আগে গত জুনে ২৫৪ কোটি ডলার আয় দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। জুনে দেশে যে পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছিল, তা ছিল গত তিন বছরের মধ্যে একক কোনো মাসে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়। এর আগে সর্বশেষ ২০২০ সালের জুলাইয়ে ২৫৯ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল।
শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা নিয়ন্ত্রণে ১৯ জুলাই শুক্রবার রাত থেকে কারফিউ জারি করে সরকার। এরপর গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ব্যাংকের অনলাইন লেনদেনও বন্ধ ছিল। টানা পাঁচ দিন লেনদেন বন্ধ থাকার পর ২৪ জুলাই ব্যাংক চালু হয়। সেদিন সুইফট সিস্টেম বিচ্ছিন্ন থাকায় অনেক ব্যাংকে কোনো প্রবাসী আয়ের অর্থ আসেনি। তবে পরদিন থেকে স্বাভাবিক বৈশ্বিক লেনদেনে ফেরে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, কেউ বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় দেশে পাঠিয়ে থাকলে ব্যাংকগুলো তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিতরণ করতে বাধ্য। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দেশের প্রবাসী আয় প্রেরণকারী রেমিট্যান্স হাউসগুলো যদি এ আয় ধরে রাখে, তাহলে তা দেশে আসতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে সাধারণত দুই-তিন দিনের বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় না।
এদিকে প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় শীর্ষ একডজন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ডেকে প্রবাসী আয় বাড়াতে জোর দেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো প্রতি ডলার ১১৭-১১৮ টাকা দরে প্রবাসী আয় সংগ্রহ করে আসছিল। প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার তাদের কিছুটা বাড়তি দাম দিয়ে হলেও আয় বৈধ পথে আনতে বলা হয়েছে। ডলারের কম দামের কারণে ব্যাংকের মাধ্যমে আসা প্রবাসী আয় যাতে হুন্ডিতে চলে না যায়, সেদিকে নজর দিতে বলা হয়েছে।
একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দাম বেশি দেওয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো কড়াকড়ি আরোপ করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এ জন্য আমরা হন্যে হয়ে রেমিট্যান্স হাউসগুলোর কাছে ডলার বুকিং দিয়ে রাখছি। প্রবাসীদের অনেকেই ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে চলে যাওয়ার প্রচারণা শুরু করেছেন। এ জন্য ডলার–সংকট কাটাতে আমরা বৈধ পথে প্রবাসী আয় আনাকেই এখন বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি।’
দীর্ঘদিন ধরে দেশে ডলার-সংকট চলছে। এ সংকট কাটাতে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত বাড়াতে প্রবাসী আয়সহ বিদেশ থেকে অর্থ আনতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় তদারকি কমিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি যেকোনো ধরনের অর্থ বৈধ পথে দেশে আনার ক্ষেত্রে যে নিয়মকানুন রয়েছে, তা শিথিল করেছে। গত কয়েক মাসে যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছিল প্রবাসী আয় দেশে আসার ক্ষেত্রে।
২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেলে দেশে বৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা বেড়ে যায়। তখন প্রতি মাসে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ গড়ে ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছিল। বিপুল পরিমাণ প্রবাসী আয় আসার কারণে একপর্যায়ে বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। তবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে পণ্য আমদানির খরচ বেড়ে যায়। দেখা দেয় ডলার-সংকট। এ সংকট এখনো কাটেনি বলে ব্যাংকাররা মনে করছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ২ হাজার ১৬১ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ৩৯১ কোটি ডলার
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: জুলাই ২৯, ২০২৪
রেটিং করুনঃ ,