কোটা আন্দোলন
একটি ঘটনাও জবাব ছাড়া যাবে না: ছাত্রলীগ সভাপতির হুঁশিয়ারি।
কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এখন আর কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী নেই, বরং রাজাকারদের প্রেতাত্মারা আছে বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। তিনি দাবি করেন, আন্দোলনকারীদের ‘পাশবিক ও দানবীয়’ আক্রমণে ছাত্রলীগের পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
সাদ্দাম হোসেন বলেছেন, ‘আন্দোলন যাবে, আন্দোলন আসবে। কিন্তু ছাত্রলীগ থাকবে। সবকিছুই মনে রাখা হবে এবং জবাব দেওয়া হবে। একটি ঘটনাও জবাব ছাড়া যাবে না। রাজাকারদের ফাঁদে পড়ে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করলে ভবিষ্যতে আমরা দেখে নেব, কত ধানে কত চাল হয়।’
কোটা আন্দোলনে প্রতিটি হত্যার দায় সরকারকে নিতে হবে: গণতন্ত্র মঞ্চ।
কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে হামলা ও প্রতিটি হত্যার দায় সরকারকে নিতে হবে বলে দাবি জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। মঞ্চে নেতারা, সংঘর্ষে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ (২২) নিহত হওয়ার প্রতিবাদে আগামীকাল বুধবার সারা দেশে কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ। গতকাল সোমবার সারা দেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে তারা আজ এ সমাবেশ করে।
সমাবেশ শেষে গণতন্ত্র মঞ্চের একটি মিছিল প্রেসক্লাব থেকে পুরানা পল্টন মোড় হয়ে বিজয়নগর পানির ট্যাংক এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে ‘আবু সাঈদের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘লেগেছেরে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’সহ নানা ধরনের স্লোগান দেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা-কর্মীরা।
সারা দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, প্রতিটি হামলা ও খুনের দায় সরকারকে নিতে হবে। এই আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য তারা পরিকল্পিতভাবে ‘মুক্তিযুদ্ধের খেলা’ খেলছে।
প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা বিদ্রূপাত্মক জবাব দিয়েছেন উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ভোট ছাড়া ক্ষমতায় থাকার জন্য সরকার মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারের নাটক খেলছে। প্রকারান্তরে ছাত্রদের ‘রাজাকার’ বলায় তাঁরা বিদ্রূপাত্মক জবাব দিয়েছেন।
কোটা আন্দোলন: ছয়জনের মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশ জাসদের ক্ষোভ।
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠন ও পুলিশের সংঘর্ষে ছয়জন নিহতের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ)।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দলের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধানের দেওয়া এক বিবৃতিতে এ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বিবৃতিতে ছয়জনের নিহতের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার এবং হতাহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আন্দোলনরত ছাত্রসমাজের কোটা সংস্কারের দাবিকে সরকার আলোচনা ও যুক্তির মাধ্যমে সমাধান না করে ধমক, পেশিশক্তি প্রয়োগ, পিটিয়ে মারা ও মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে দমন করার কৌশল নিয়েছে, ফলে আজ এতগুলো তাজা প্রাণ ঝরে গেছে।’
দেশবাসীকে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে বললেন মির্জা ফখরুল।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর গতকাল সোমবার ছাত্রলীগের হামলাকে দেশের ‘রাজনীতির ইতিহাসে জঘন্যতম ঘটনা’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শিক্ষার্থীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সারা দেশের মানুষকে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো উচিত বলেও মনে করেন তিনি। সব রাজনৈতিক দলকেও শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
মন্ত্রীরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে উত্তপ্ত করেছেন: জামায়াত।
আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের কটাক্ষপূর্ণ মন্তব্য করে সরকারের মন্ত্রীরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে উত্তপ্ত করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের ব্যাপারে যৌক্তিক সমাধানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে জামায়াতের সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরওয়ার এ আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে গোলাম পরওয়ার বলেন, সরকারি চাকরিতে বর্তমান কোটাপদ্ধতি বাতিলের দাবিতে গোটা ছাত্রসমাজ শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ছাত্রসমাজের দাবির যৌক্তিক সমাধানের পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সরকারের মন্ত্রীরা ছাত্রসমাজকে কটাক্ষ করে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে সহিংসতা সৃষ্টি করে ছাত্রসমাজের আন্দোলন বানচালের ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে ছাত্রলীগ ও বহিরাগত আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের ব্যাপক হামলায় গতকাল পাঁচ শতাধিক ছাত্রছাত্রী আহত হয়েছেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সমর্থন জি এম কাদেরের।
শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের তাঁদের ‘বীর মুক্তিসেনা’ বলে অভিহিত করেছেন।
কোটাপদ্ধতিকে একটি সুবিধাভোগী গোষ্ঠী তৈরির প্রক্রিয়ার অংশ বলে মন্তব্য করেন জি এম কাদের।
আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জি এম কাদের বলেন, ‘বর্তমান শাসকশ্রেণি, সরকারসৃষ্ট এই সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর মাধ্যমে দেশের জনগণকে শাসন–শোষণ করে চলেছেন। সামনের দিনগুলোতেও এ উদ্দেশ্য আরও ব্যাপকভাবে বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। কোমলমতি তরুণসমাজ এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। সেই কারণে আমি তাদের বৈষম্যমুক্তির এ সংগ্রামের বীর যোদ্ধা বা বীর মুক্তিসেনা বলে মনে করছি।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীদের অহিংস কোটা সংস্কারের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করছি। এই যৌক্তিক আন্দোলনে সশস্ত্র বাধাদানের ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী তরুণদের প্রতি আমার অভিনন্দন। তাদের আমি “বীর মুক্তিসেনা” হিসেবে অভিহিত করতে চাই।’
বিবৃতিতে জি এম কাদের আরও বলেন, বাঙালি জাতির ইতিহাসে সুদীর্ঘকাল থেকে বৈষম্যের মাধ্যমে সৃষ্ট বঞ্চনা, নিপীড়ন, নির্যাতন ও দারিদ্র্যের অভিশাপ প্রচলিত ছিল। বৈষম্যের এই অভিশাপ থেকে মুক্তি লাভের জন্য তাঁরা বারবার সংগ্রাম করেছেন। অনেকে আত্মদান করেছেন এবং বারবার বিজয়ী হয়েছেন। কিন্তু তাঁদের সেই বিজয় প্রতিনিয়ত ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বিরোধীদলীয় এই নেতা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ব্যবহার বা অপব্যবহার করে তাঁদের যেভাবে কলঙ্কিত করা হচ্ছে, তাতে আশঙ্কা হয়, ভবিষ্যতে কোনো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের পরিচয় প্রকাশ করতে সংকোচ বোধ করতে পারেন।
ধ্বংসাত্মক কাজ করলে ছাড় নয়: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলন করা হচ্ছে, তা নিয়ে বলার কিছু নেই। কিন্তু তাঁরা যদি ভাঙচুর করেন, কারও পরামর্শে–নেতৃত্বে ধ্বংসাত্মক কাজ করেন, তাহলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ধ্বংসাত্মক কিছু করলে, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে, রক্ত ঝরালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের কাজটি করবে। তাদের (আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী) প্রতি তা–ই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেখানেই ভাঙচুর হবে, রক্তপাত হবে, সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার দায়িত্ব পালন করবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাস্তা অবরোধ করে দাবি আদায় সঠিক পন্থা নয়। এসব পরিহার করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান মন্ত্রী। একই সঙ্গে এ বিষয়ে আদালতে গিয়ে বক্তব্য দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের পেছনে একটা মতলবি মহল আছে: ওবায়দুল কাদের।
শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পেছনে একটা মতলবি মহল আছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারকে উৎখাত করার জন্য দেশে-বিদেশে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যকেও বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। আদালতের রায় বল প্রয়োগের মাধ্যমে পরিবর্তনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এসবের পেছনে একটা মতলবি মহল আছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
ছাত্রলীগকে দোষ দেওয়া যেন ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পত্র-পত্রিকায় যা দেখতে পেলাম, তাতে ছাত্রলীগকে দোষ দেওয়া যেন ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। সব দোষই যেন নন্দ ঘোষ ছাত্রলীগের। অথচ এই হামলায় ছাত্রলীগের ৫০০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতা আছেন ২০ জন। দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।’
বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ
ওবায়দুল কাদের বলেন, তারেক রহমান আর রাজনীতি করবেন না বলে লন্ডনে পাড়ি দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে যে মামলা হয়, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফবিআই এসেও সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। সেই সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান তাঁর দল হেরে যাওয়ার ভয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়নি। আন্দোলন করতে গিয়ে বারবার ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।
সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এই বিষয়ে বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন যা বাংলাদেশে চলছে এর নেতৃত্ব নিয়েছেন লন্ডনের দণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমান। তাঁর দল বিএনপি প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছে। একটি অরাজনৈতিক আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে। তারেক রহমান প্রতিনিয়ত ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৮–এর মতো রাজনৈতিক আন্দোলন করার জন্য বিভিন্ন অপশক্তিকে লেলিয়ে দিয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের পাশাপাশি কিছু সমমনা দলও এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এর আগেও তারা (বিএনপি) সড়ক ও কোটা আন্দোলনের ওপর ভর করে রাজনৈতিকভাবে ফসল কুড়াতে চেয়েছিল। সে ব্যর্থ চেষ্টার পর অনেক ষড়যন্ত্র করেছে। রাজনীতিতে অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। এতে কত পুলিশ, চালক, নিরীহ যাত্রী হত্যা করেছে, পুড়িয়ে মেরেছে। তারা সে আন্দোলনেও ব্যর্থ হয়। জনগণের অবস্থানের কাছে তারা পরাস্ত হতে বাধ্য হয়।
‘সময়মতো অ্যাকশন’
সারা দেশব্যাপী জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে কোটা আন্দোলন করতে দেওয়া প্রশাসনিক দুর্বলতা কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এটা প্রশাসনিক দুর্বলতা না, আমরা ধৈর্য ধরছি। ধৈর্য ধরা মানে দুর্বলতা নয়। আমরা জোড় করে আন্দোলনের ওপর চড়াও হবো, তখন আপনি কি বলবেন? সময়মতো সব কিছুই দেখবেন, সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেওয়া হবে।
ক্যাম্পাসে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের জবাব দিতে ছাত্রলীগ প্রস্তুত: ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গতকাল রোববার রাতে ক্যাম্পাসে যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ হয়েছে, তার জবাব দেওয়ার জন্য ছাত্রলীগ প্রস্তুত।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ছাত্রদের বিষয় ক্যাম্পাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত। কিন্তু তারা ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ দেখিয়েছে। আমরা দেখি, কারা রাজনৈতিকভাবে প্রকাশ্যে আসে। আমরাও মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কোটাবিরোধী কতিপয় নেতা যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, এর জবাব দেওয়ার জন্য ছাত্রলীগ প্রস্তুত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে ভ্রান্ত পথে পরিচালিত শিক্ষার্থীদের রাজাকার পরিচয়-সংশ্লিষ্ট স্লোগান আমাদের জাতীয় মৌলিক চেতনার সঙ্গে ধৃষ্টতার শামিল।’
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের পাশে থাকার ঘোষণা ছাত্রদলের।
কোটা আন্দোলনের দাবির সফল বাস্তবায়নে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে আজ থেকে ‘সর্বাত্মকভাবে রাজপথে’ থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল সোমবার সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপরে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের ‘নির্মম’ হামলার পর আজ মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এ প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৫ জুলাই একটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে আজ থেকে কোটা প্রথা বাতিলের এই আন্দোলনে সব সময় মাঠে থেকে লড়াই করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।
ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, একই সঙ্গে ছাত্রদল আন্দোলনরত সব শিক্ষার্থীকে বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থার মূল উৎস তথা অবৈধ ফ্যাসিবাদী এই সরকারকে হটিয়ে প্রকৃত চেতনা তথা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সমাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক একটি সমাজ বিনির্মাণে এগিয়ে আসতে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।
একই সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য এবং গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপরে ছাত্রলীগসহ পুলিশি হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল বুধবার সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা দেয় ছাত্রদল।
সংবাদ সম্মেলনের পর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে নেতা-কর্মীরা প্রতিবাদ মিছিল বের করেন। মিছিলটি কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল রেস্তোরাঁর মোড় ঘুরে নয়াপল্টনে এসে শেষ হয়।
‘সাংগঠনিকভাবে নয়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদল থাকবে’
কোটা আন্দোলনে ছাত্রদল রাজপথে থাকবে কি না, জানতে চাইলে রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনের ব্যানারে যেদিন থেকে সভা-সমাবেশ শুরু করেছে, তখন থেকে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা তাঁদের পাশে রয়েছেন। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে এই আন্দোলনের সঙ্গে ছাত্রদলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ছাত্রদল সর্বাত্মকভাবে এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পাশে রয়েছে। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে ছাত্রদলের কোনো তৎপরতা নেই, সাংগঠনিকভাবে আমাদের কোনো সস্পৃক্ততা নেই।’
কোটাবিরোধী আন্দোলনকে রাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলনে রূপ দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
কোটাবিরোধী আন্দোলনকে রাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলনে রূপ দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সেন্টিমেন্টকে ব্যবহার করে কোটাবিরোধী আন্দোলনকে রাষ্ট্রবিরোধী ও সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে। সরকার কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে দেবে না।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোববার রাতে কোটা আন্দোলন থেকে রাষ্ট্রবিরোধী নানা ধরনের স্লোগান দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সেই দেশে রাজাকারের পক্ষে স্লোগান দেওয়া রাষ্ট্রবিরোধী। একই সঙ্গে সেখানে সরকারবিরোধী ও প্রধানমন্ত্রীবিরোধী স্লোগানও দেওয়া হয়েছে। এতে স্পষ্ট হয়েছে যে কোটা আন্দোলনে রাজনৈতিক অপশক্তি ঢুকেছে, বিএনপি-জামায়াতসহ যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তারা ঢুকেছে এবং তাদের প্ল্যান্টেড কিছু মানুষ এর নেতৃত্ব দিচ্ছে।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ স্লোগান ও বক্তব্যে এটা প্রমাণিত যে এটা কোটাবিরোধী আন্দোলন নয়, এটিকে রাষ্ট্রবিরোধী, সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সেন্টিমেন্টকে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিছু নেতা, বিএনপি-জামায়াত ও অন্যরা সেখানে ইন্ধন দিচ্ছে।’
‘রাজাকার’ স্লোগান নিয়ে মন্ত্রী–প্রতিমন্ত্রীদের ক্ষোভ।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ স্লোগান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন মন্ত্রী–প্রতিমন্ত্রী। এমন স্লোগানের সমালোচনা করে নিজেদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট দিয়েছেন তাঁরা।
অন্তত দুজন মন্ত্রী ও দুজন প্রতিমন্ত্রীর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘রাজাকার’ স্লোগানের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
গতকাল রোববার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে আসা বক্তব্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্রতি অবমাননা করা হয়েছে অভিযোগ তুলে রাতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল বের করেন। সেখানে তাঁরা ‘তুমি কে, আমি কে/ রাজাকার, রাজাকার’, ‘চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীদের এ স্লোগানের সমালোচনা করে ফেসবুকে সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি লিখেছেন, ‘যারা নিজেদের রাজাকার বলে পরিচয় দেয়, তাদের মুক্তিযুদ্ধের শহীদের রক্তস্নাত লাল সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে বা সে পতাকা কপালে বেঁধে নিয়ে মিছিল করার কোনো অধিকার থাকতে পারে না।’
রাজাকার স্লোগান দেওয়া সবাই এ যুগের রাজাকার বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে কোটাব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে অনেকেই পক্ষে–বিপক্ষে আলোচনা করেছে, আন্দোলন করেছে। এটি অবশ্যই নাগরিক অধিকার। এ ব্যপারে কারও কোনো দ্বিমত নেই; কিন্তু যারা প্রকাশ্যে আত্মপরিচয়, জন্মপরিচয়, ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে, “তুমি কে, আমি কে রাজাকার! রাজাকার!” স্লোগান দিয়েছে, এরা সবাই এই যুগের রাজাকার। এরা রাষ্ট্র মানে না, আদালত মানে না, ইতিহাস মানে না এবং সর্বোপরি এই দেশকেই মানে না!’
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক লিখেছেন, ‘যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পঁচিশে মার্চ ছাত্র-শিক্ষকদের গণহত্যা করেছে রাজাকারেরা, সেই রাজাকারের পক্ষে রাজাকারের সন্তান বলে স্লোগান দিতে লজ্জা করে না?’
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতছবি: সংগৃহীত
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত লিখেছেন, ‘যারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং মেধার পক্ষে কথা বলেছে, তাদের প্রতি আমার সহানুভূতি ছিল এবং আছে; কিন্তু তাদের মধ্যে যারা আজকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যকে বিকৃতভাবে ব্যাখ্যা করে নিজেরে “রাজাকার” বলে স্লোগান দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের পবিত্র মাটিকে অপবিত্র করেছে, তাদের প্রতি জানাই ধিক্কার। নিজেদের রাজাকার বলে পরিচয় দিতে এসব ছেলেমেয়ের লজ্জা হলো না? …নিজেদের রাজাকার পরিচয় দিয়ে আর যাই হোক মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে কোনো দাবি আদায় হবে না।’
বিষয়টি নিয়ে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ফেসবুকে কাছাকাছি সময়ে দুটি পোস্ট দেন। একটিতে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কখনো রাজাকারদের দখলে থাকতে পারে না। মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে, ত্যাগের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ। দাবি আদায়ে রাজাকার স্লোগানে তাঁদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) অপমান যাঁরা করছেন, তাঁরা নিজেদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করছেন।’
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ: জুলাই ১৬, ২০২৪
রেটিং করুনঃ ,