Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

কেউ আমাকে মূর্খ বা পাগল ভাবতে পারেন, আমি ঈশ্বরপ্রেরিত: নরেন্দ্র মোদি

Share on Facebook

লেখা: সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়।

ভারতের লোকসভা ভোট এবারের মতো আর কখনো এত রঙিন, এমন আলোচিত ও বিতর্কিত হয়ে ওঠেনি। শাসক দল ও বিরোধীদের মধ্যে আশার পেন্ডুলামও আগে কখনো এভাবে দোদুল্যমান হয়নি। বিরোধীদের হতবাক করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ভাষণের ভিন্নতা ও সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে কখনো এভাবে নিজেকে পাদপ্রদীপের সামনে হাজির করেননি। ভারতের কোনো রাজনৈতিক নেতাও কোনো দিন বলেননি, ‘আমি অবিনশ্বর।’

ভোট যত শেষের দিকে এগিয়েছে, নরেন্দ্র মোদি ততই নিজেকে ঈশ্বরপ্রেরিত দূত বলে জাহির করেছেন। একবার নয়, দুবার নয়, বারবার জনতাকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘তিনি ঈশ্বর! তিনিই পরমাত্মা!’ তিনি বলেছেন, ‘কেউ আমাকে মূর্খ বা পাগল ভাবতে পারেন। কিন্তু আমি জানি, আমি ঈশ্বরপ্রেরিত।’

এবারের ভোট পর্ব শুরুর আগে জনপ্রিয় ধারণা ছিল, মোদি-মাহাত্ম্যের তোড়ে খড়কুটোর মতো উড়ে যাবে বিরোধীরা। সেই ধারণা জনমনে গেড়ে দিতে মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি শুরু করে দারুণ এক মনস্তাত্ত্বিক প্রচার—‘৪০০ পার’। প্রথমবারের ২৮২ ছাপিয়ে দ্বিতীয়বার ৩০৩ আসন পাওয়া মোদি তাঁর দলের নিজস্ব লক্ষ্য ৩৭০ আসন স্থির করে দেন। জোটের প্রাপ্তির সম্ভাব্য সংখ্যা করে তোলেন নির্বাচনী স্লোগান, ‘আগলি বার চার শ পার’। বিজেপি ভোট শুরুও করে সেই আশা আঁকড়ে। তুলনায় বিরোধীরা ছিল নিতান্তই নিষ্প্রভ।

অথচ প্রথম দফার ভোটের পরই ভোজবাজির মতো বদলে গেল চালচিত্র। যা ছিল নিস্তরঙ্গ দিঘি, তাতেই আচমকা ঢেউ তুলল বিরোধীকুল। দেশবাসীও অবাক হয়ে দেখল, প্রধানমন্ত্রী কীভাবে বদলে দিলেন প্রচারের ঢং। তাঁর ভাষণ, ভাষণের বিষয়বস্তু, তাঁর শরীরী ভাষা, তাঁর বাচনভঙ্গি মুহূর্তের মধ্যে ভিন্ন খাতে বইতে শুরু করল। সেই বিচ্যুতি তাঁদের সম্ভাব্য স্খলনের শঙ্কাজনিত স্নায়ুবৈকল্য এবং সেই কারণে পরিচিত ‘হিন্দু-মুসলমান’ গাঙে অবগাহনের সিদ্ধান্ত কি না, শুরু হয় সেই বিচার।

কার্যকারণ যা-ই হোক, উন্নয়ন, প্রগতি ও উজ্জ্বলতর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখানো মোদির অবাক বিবর্তন বিরোধীদের জয় সম্পর্কে আশাবাদী করে তোলে। সেই প্রথম বোঝা গেল, এবারের লোকসভা ভোটের চরিত্র পুরোপুরি স্থানীয় ও আঞ্চলিক। কোনো বিশেষ বিষয় নিয়ে সব প্রদেশের মানুষ ভাবিত নয়। তাই, কোথাও ভোটের হাওয়া নেই। উদ্দীপনা নেই। টইটম্বুর উৎসাহ নেই। মোদির নামে জনপ্লাবন নেই। বরং মানুষ সরব বেকারত্ব নিয়ে। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে। সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষা নিয়ে।

এই উপলব্ধি কিন্তু আলোচনার অলিন্দ থেকে নরেন্দ্র মোদিকে সরাতে পারেনি। বরং তাঁর ভাষণের ভিন্নতা হয়ে দাঁড়ায় মূল আকর্ষণ ও বিতর্কের আধার।

যেমন কংগ্রেসের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘মুসলিম লীগের ছোঁয়া’, কংগ্রেসের ‘অতিমাত্রায় মুসলমান প্রীতি’ নিয়ে মোদির মাত্রাছাড়া সরব হওয়া। এবং তা করতে গিয়ে কল্পনায় ভেসে ‘তুষ্টিকরণের’ আজগুবি ছবি আঁকা। কেমন ছবি? না, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে দেশের সম্পদ মুসলমানদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করবে। সে জন্য ঘরে ঘরে একধরনের এক্স-রে মেশিন নিয়ে হানা দেবে। কারও ঘরে দুটি মহিষ থাকলে একটা কেড়ে নেবে। জমি, ঘরবাড়ি কেড়ে নেবে। এমনকি বিবাহিত মা-বোনেদের গলা থেকে পবিত্র মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে বিলিয়ে দেবে তাদের, যারা শুধু ‘কাঁড়ি কাঁড়ি বাচ্চা পয়দা করে’ও যারা ‘অনুপ্রবেশকারী’।

লড়াই জিততে এই প্রচার পুরোপুরি সাম্প্রদায়িকতায় গা ভাসানোর অভিযোগে মাখামাখি হলেও মোদি সেই চেনা রাস্তা থেকে সরে এলেন না। গত ১০ বছরের সাফল্যের খতিয়ান মেলে ধরার ঝুঁকিও নিলেন না। তাঁর মুখে অনবরত শোনা যেতে লাগল বিরোধীদের ‘সাম্প্রদায়িকতা’, তাদের ‘জাতিবাদী চরিত্র’, ‘পরিবারবাদী মানসিকতার’ নিদর্শন এবং পাঁচ বছরে পাঁচজন প্রধানমন্ত্রী পাওয়ার সাতকাহন।

পাঁচ দফার নির্বাচন সাঙ্গ হওয়ার পর প্রচারের একঘেয়েমিও কাটিয়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং। নিজেকে এবার তিনি নবরূপে জাহির করলেন। বারানসির ঘাটে গঙ্গাপূজা সেরে দেশবাসীকে তিনি শোনালেন, জৈবিক মা গত হওয়ার পর মা গঙ্গা তাঁকে আশ্রয় দিয়েছেন। কোল পেতে দিয়েছেন।

ওইটুকুতেই কিন্তু মোদি থামেননি। গঙ্গাবিহারের সময় তিনি বলে, মায়ের মৃত্যুর পর উপলব্ধি করেছেন, হয়তো জৈবিকভাবে তাঁর জন্ম হয়নি। স্বয়ং ঈশ্বর নির্দিষ্ট কিছু কাজ করানোর জন্য তাঁকে ধরাধামে পাঠিয়েছেন, যা কিছু করানোর পরমাত্মাই তাঁকে দিয়ে করিয়ে নিচ্ছেন।

মোদির কথায়, ‘সমালোচকেরা, বামপন্থীরা হয়তো আমায় ছিঁড়ে খাবে। কিন্তু সত্য হলো, এই কাজের শক্তি কোনো জৈবিক দেহ থেকে উৎসারিত হতে পারে না। ঈশ্বরই আমাকে পাঠিয়েছেন। আমাকে দিয়ে কিছু কাজ করিয়ে নেওয়ার জন্য। আমি এক যন্ত্রমাত্র। যা কিছু আমি করছি, তা ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুযায়ী। তিনিই আমাকে দিয়ে সব করিয়ে নিচ্ছেন।’

কী সেই কর্তব্য? মোদি তার ব্যাখ্যাও দিতে ভোলেননি। ‘বিকশিত ভারত’। ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে বিকশিত করে তোলাই ঈশ্বরের ইচ্ছা। সেই কাজ শেষ করার আগে তাঁর মুক্তি নেই। তিনি চাইলেও মরতে পারবেন না।

অদ্ভুত ভাষণের জন্য নরেন্দ্র মোদি আলোচিত অনেক দিনই। কিন্তু তাতে তাঁর ভক্তের সংখ্যা কমেনি। জনপ্রিয়তা নিম্নমুখী হয়নি। ২০১৯ সালে বালাকোটে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর তিনি মেঘের সঙ্গে রাডারের সম্পর্কের ব্যাখ্যা করেছিলেন। বিমানবাহিনীকে বলেছিলেন, মেঘ ও বৃষ্টিতে সুবিধেই হবে। র‌াডারের চোখ এড়িয়ে কাজ হাসিল করা যাবে।

মোদি বেকারত্ব ঘোচানোর দাওয়াই দিয়ে বলেছিলেন, নর্দমায় গ্যাস সৃষ্টি হয়। তাই নর্দমায় পাইপ ফেলে সেই গ্যাস জ্বালিয়ে রান্না করা যায়। সেই ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রেখে পাঞ্জাবে ভোটের প্রচারে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষমতায় থাকলে আত্মসমর্পণ করা সেনাদের মুক্তির বিনিময়ে তিনি পাকিস্তানের কাছ থেকে কারতারপুর সাহেব গুরুদুয়ারা কেড়ে শিখ সমাজের কাছে অর্পণ করতেন। শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানক দেব তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলো ওই কারতারপুরেই কাটিয়েছিলেন।

সন্দেহ নেই, এবারের ভোটেও প্রচারের আলো সবার চেয়ে মোদির মুখেই বেশি। একেবারে শেষ বেলায় একের পর এক সাক্ষাৎকারে নিজেকে ঈশ্বরতুল্য করে তুলে তিনি অমরত্ব জাহির করেছেন। এনডিটিভি দেওয়া সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে মোদি আবার নতুন করে বলেছেন, ‘কেউ আমাকে মূর্খ ভাবতে পারেন। কেউবা পাগল। কিন্তু আমি জানি, ঈশ্বর আমাকে নির্দিষ্ট কিছু কাজের ভার দিয়ে মর্ত্যে পাঠিয়েছেন। সেই কাজ না সারা পর্যন্ত আমার মুক্তি নেই।’ তিনি দৃপ্তভাবে এ কথাও বলেছেন, ‘আমাকে ধ্বংস করা যাবে না। আমি অবিনশ্বর। আমি যে কাশীর (বারানসি) মানুষ।’

এমন রঙিন, আলোচিত ও বিতর্কে মাখামাখি নির্বাচন শেষ হওয়ার মুখে উজ্জীবিত বিরোধীদের প্রতি এটাই মোদির বার্তা। প্রবল আত্মবিশ্বাসে ভর দিয়ে বলেছেন, তিনি অবিনশ্বর। সারার্থ, যে যা-ই স্বপ্ন দেখুক, এবারেও ভোটে জিতে সরকার গড়বেন তিনিই।

সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: মে ২৫, ২০২৪

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ