ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ ১২টি দূতাবাস বিবৃতি দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। যুক্তরাষ্ট্রে মানুষ মারা গেলে তারা এভাবে বিবৃতি দেয় কি না, সে প্রশ্ন করেছেন তিনি।
আজ বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তাঁর দপ্তরে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে জানি না। আমি অ্যাকটিভিস্ট ডিপ্লোম্যাটদের সম্পর্কে বলতে চাই, আমেরিকায় যখন–তখন লোক মেরে ফেলে, তখন কি তারা বিবৃতি দেয়, জাতিসংঘ কি বিবৃতি দিয়েছে? তারা কি বলেছে যে আমেরিকাতে লোক মারা যায় কেন?’
গত সোমবার উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলাকালে হিরো আলম বনানীর একটি কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে নৌকা প্রার্থীর সমর্থকেরা তাঁকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করেন। গতকাল এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে টুইট করেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস। ওই দিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এ প্রসঙ্গে বলেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচনে এ ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো স্থান নেই। এরপর আজ ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ১১টি দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাস এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
এ নিয়ে ক্ষুব্ধ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ‘কেমব্রিজে ফয়সাল নামের একজন বাংলাদেশি ছেলে মারা গেল। জাতিসংঘ কি বলেছে, ওই ছেলের মৃত্যুর তদন্ত কত দূর এগোল কিংবা রাষ্ট্রদূতেরা কি দল বেঁধে কোনো বিবৃতি দিয়েছে?’
এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা কেন তাদের জিজ্ঞাসা করেন না? যখন তাদের দেশে লোক মারা যায়, তখন কেন বিবৃতি দেয় না আর বাংলাদেশ হলেই মগের মুল্লুক পাইছে ওরা।’
আরও পড়ুন
হিরো আলমের ওপর হামলার নিন্দা ১২ দূতাবাসের, পূর্ণ তদন্তের দাবি
ঢাকা–১৭ আসনের উপনির্বাচনে গত সোমবার স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলা হয়
এভাবে বিবৃতি দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আর কোথাও হইচই করে কেউ? আমাকে একটি রিপোর্ট দেন সেখানে একজন লোক মারা যাওয়ার পরে একটি বিবৃতি দিয়েছে। কিছুদিন আগে ফ্রান্সে কতগুলো লোক আক্রান্ত হলো। ওরা কি দল বেঁধে বিবৃতি দিয়েছিল? কাজেই কেন শুধু বাংলাদেশ হলে তারা বিবৃতি দেয়?’ এখন ওই সব বিবৃতি বন্ধ করার সময় এসেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হিরো আলমের ওপর হামলা গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে মোমেন বলেন, ‘(তাঁকে) কেন মারল, সেটি তদন্ত করে দেখতে হবে।’
আরও পড়ুন
হিরো আলমের ওপর হামলা: রিমান্ডে দুজন, কারাগারে ৫ জন
ঢাকা-১৭ আসনে ভোট চলাকালে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হিরো আলমকে মারধর করা হয়। ১৭ জুলাই, ঢাকা
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এমন হতে পারে, এটিতে কেউ জড়িত ছিল, যা আমরা জানি না। হয়তো কেউ আমাদের আগামী নির্বাচন চায় না, একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য, বানচাল করার জন্য অকাম-কুকাম শুরু করছে।’
বিদেশিরা এলেই অনেকে অনেক কিছু মনে করেন বলে মন্তব্য করেন আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন সম্পর্ক উন্নতি করতে চান বলে একটির পর একটি দল পাঠাচ্ছে। আর আপনারা সেখানে খালি সন্দেহ খোঁজেন। আমার সঙ্গে ব্লিঙ্কেন সাহেবের বৈঠক হয়েছে কীভাবে সম্পর্ক উন্নয়ন করা যায়, অন্য কোনো বিষয় নয়। বিদেশ থেকে কেউ এলে আপনারা খালি ষড়যন্ত্র শুরু করেন, এটি বন্ধ করেন।’
বিবৃতিদাতা দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলো হলো—কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নরওয়ে, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
১২ দূতাবাস ও হাইকমিশনের এই বিবৃতি দূতাবাসের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে।
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:জুলাই ১৯, ২০২৩
রেটিং করুনঃ ,