২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (এআই) চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি। চালু হওয়ার পরই সারা বিশ্বে হইচই ফেলে দেয় এটি। এআইয়ের ক্ষমতা দেখে রীতিমতো শিউরে ওঠে মানুষ।
সিএনএনের এক সংবাদে বলা হয়েছে, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানীয় কর্তারা মনে করছেন, নিকট ভবিষ্যতে এআই মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
ইয়েল সিইও সামিটে বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের (সিইও) ওপর পরিচালিত এক জরিপে ৪২ শতাংশ সিইও বলেছেন, আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে এআই মানবসভ্যতা ধ্বংস করে দিতে পারে। এ জরিপের প্রতিবেদন কেবল সিএনএনই পেয়েছে।
এ জরিপের ফলাফল সম্পর্কে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেফরি সোনফেল্ড সিএনএনকে দেওয়া এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘বিষয়টি খুবই বিপজ্জনক, তমসাচ্ছন্ন।’
তবে এআইয়ের প্রভাব সম্পর্কে সিইওদের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ আছে। জরিপে যে ১১৯ জন সিইও অংশগ্রহণ করেন, মানবসভ্যতার জন্য এআই কতটা বিপজ্জনক, সে বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে তীব্র মতভেদ দেখা গেছে। জরিপে অংশগ্রহণ করেন ওয়ালমার্টের সিইও ডৌগ ম্যাকমিলান, কোকাকোলার সিইও জেমস কুইনসি। এ ছাড়া প্রযুক্তি কোম্পানি জেরক্স, জুম এবং ওষুধ কোম্পানি, গণমাধ্যম ও উৎপাদন কারখানার সিইওরা এতে অংশ নেন।
৩৪ শতাংশ সিইও বলেছেন, আগামী ১০ বছরের মধ্যে এআই মানবসভ্যতা ধ্বংস করে দিতে পারে। ৮ শতাংশ বলেছেন, আগামী ৫ বছরের মধ্যে তা ঘটতে পারে। তবে ৫৮ শতাংশ সিইও বলেছেন, এটা কখনোই হবে না এবং তাঁরা এ বিষয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন নন।
আরেক প্রশ্নের উত্তরে ৪২ শতাংশ সিইও বলেছেন, এআইয়ের বিপর্যয়কর প্রভাব সম্পর্কে বাড়িয়ে বলা হচ্ছে; আবার ৫৮ শতাংশ বলেছেন, এআই সম্পর্কে মোটেও বাড়িয়ে বলা হচ্ছে না।
এআইয়ের প্রভাব সম্পর্কে সিইওদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও স্বয়ং ওপেনএআই, অর্থাৎ চ্যাটজিপিটির প্রতিষ্ঠাতারাই বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় লাগাম টানা উচিত। এমনকি সম্প্রতি এআই খাতের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতৃত্ব, একাডেমিশিয়ান, এমনকি সেলিব্রিটিরা এআই মানবসভ্যতাকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে—এমন সতর্কতামূলক বিবৃতি জারি করেছেন।
এ বিবৃতিতে সই করেছেন ওপেন এআইয়ের সিইও স্যাম অল্টম্যান, এআইয়ের গডফাদার হিসেবে খ্যাত জেফরি হিনটন; সেই সঙ্গে এতে আরও সই করেছেন গুগল ও মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীরা।
বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, এআইয়ের কারণে মানবসভ্যতা যে ধ্বংসের হুমকিতে আছে, তা নিরসনই হওয়াই উচিত এখন মূল অগ্রাধিকার। মহামারি ও পারমাণবিক যুদ্ধের মতো বিষয়গুলোর সঙ্গে এতেও জোর দেওয়া উচিত।
বাস্তবতা হলো, এআইয়ের গডফাদার জেফরি হিনটন নিজেই তাঁর কাজের জন্য অনুতপ্ত। এআই আরও উন্নত হলে বিপদের আশঙ্কা করছেন তিনি। সেই অনুতাপ থেকে ৭৫ বছরের হিনটন গুগল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। নিউইয়র্ক টাইমসে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ ঘোষণা দেন।
তবে চাকরি ছাড়ার পেছনে বয়সও একটা কারণ বলে উল্লেখ করেছেন জেফরি হিনটন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমার বয়স ৭৫; তাই এখনই অবসরে যাওয়ার সময়।’
জেফ্রি হিনটন বিবিসি ও সিএনএনকে বলেন, এআই চ্যাটবট থেকে কিছু বিপদ হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘আমি যত দূর বলতে পারি, এখন এআই চ্যাটবট আমাদের চেয়ে বেশি বুদ্ধি রাখে না, তবে শিগগিরই এমনটা হতে পারে। তখন সে কারসাজিতে ওস্তাদ হয়ে উঠবে। এমনও হতে পারে, মানুষ এআইয়ের ওপর যেসব বিধিনিষেধ আরোপ করবে, সেগুলোও সে অনায়াসে পাশ কাটিয়ে যাবে।’
জরিপে অংশ নেওয়া সিইওরা মনে করেন, এআই মানুষের জগতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে—এ বিষয়ে তাঁরা কমবেশি একমত। যে তিন খাতে এআই সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে, সেগুলো হলো স্বাস্থ্যসেবা, পেশাদার/আইটি সেবা ও মিডিয়া/ডিজিটাল। ৪৮ শতাংশ সিইও বলেছেন স্বাস্থ্যসেবার কথা, ৩৫ শতাংশ আইটির কথা আর ১১ শতাংশ মিডিয়া/ডিজিটাল সেবার কথা।
সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, এআইয়ের কারণে মানবজাতির ধ্বংসের কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু এর মধ্যে আবার অন্তর্বর্তীকালীন আরও অনেক প্রভাব পড়তে পারে, যেমন ভুল তথ্য ছড়ানো ও মানুষের চাকরি হারানো।
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:জুন ১৮, ২০২৩
রেটিং করুনঃ ,