লেখা: এএফপি ইসলামাবাদ।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করার পর রাজধানী ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে চারজনের বেশি জমায়েত।
আজ মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টের সামনে থেকে ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলার একটির শুনানিতে অংশ নিতে আদালতে যাচ্ছিলেন তিনি।
ইমরান খান গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফের (পিটিআই) নেতারা দলীয় কর্মী–সমর্থকদের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করার ডাক দিয়েছেন।
তবে গ্রেপ্তার করার পর ইমরানকে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে রাখা হয়েছে নাকি অন্য কোথাও নেওয়া হয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। ইসলামাবাদ পুলিশের টুইটার পেজে জানানো হয়েছে, ‘আল–কাদির ট্রাস্ট মামলায় ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
স্থানীয় টিভিতে প্রচারিত সংবাদে বলা হয়, ইসলামাবাদ হাইকোর্টের সামনে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেখানে জড়ো হয়েছেন পিটিআইয়ের কয়েক শ কর্মী–সমর্থক। সেখানে তাঁদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষ শুরু হয়।
অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা থেকে অপসারিত হওয়ার পর থেকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করছেন ইমরান খান। সম্প্রতি তিনি অভিযোগ করেন, একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছেন। তাঁর এমন অভিযোগে সেনাবাহিনী ক্ষোভ প্রকাশ করে গতকাল সোমবার তাঁকে সতর্ক করে। সেনাবাহিনী সতর্ক করার পরদিনই ইমরান গ্রেপ্তার হলেন।
গতকালের ওই সতর্কতার মধ্য দিয়ে আরও স্পষ্ট হয়, ইমরান খানের সঙ্গে পাকিস্তানের ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে। বলা হয়ে থাকে, সেনাবাহিনীর সমর্থন নিয়ে ইমরান ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয় পেয়ে সরকার গঠন করেন। তবে মতবিরোধের জেরে সেনাবাহিনী সমর্থন প্রত্যাহার করলে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে তাঁকে অপসারণ করা হয়।
অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে পাকিস্তানের সামগ্রিক পরিস্থিতি এখন অত্যন্ত নাজুক। ইমরান খান অপসারিত হওয়ার পর গঠিত জোট সরকারের অবস্থানও নড়বড়ে। আর ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান খান আগাম নির্বাচন আয়োজনে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছেন। যদিও শাহবাজ শরিফ সরকার এখনো নিজ অবস্থানে অনড়।
গত সপ্তাহের শেষ দিকে লাহোরে এক সমাবেশে ইমরান খান আবারও দাবি করেন, দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ফয়সাল নাসের গত বছর তাঁকে গুপ্তহত্যার চক্রান্ত করেন। এরপর একটি সমাবেশে ইমরানকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। তবে গুলি তাঁর পায়ে লাগে।
এদিকে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর গতকাল এক বিবৃতিতে ইমরানের ওই অভিযোগ খারিজ করে বলেছে, এ বানোয়াট ও বিদ্বেষপূর্ণ অভিযোগ অত্যন্ত দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য।
গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ইমরান খানের ভিডিও বার্তা।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এক মামলার শুনানিতে অংশ নিতে যাওয়ার সময় ইসলামাবাদ হাইকোর্টের সামনে থেকে আজ মঙ্গলবার তিনি গ্রেপ্তার হন। এর আগে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন ইমরান।
পাকিস্তানি সাংবাদিক এহতেশাম উল হক তাঁর টুইটার থেকে ইমরান খানের দেওয়া ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন।
ভিডিও বার্তায় কর্মী–সমর্থকদের উদ্দেশে পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রধান ইমরান খান বলেন, ‘যতক্ষণে আমার কথা আপনাদের কাছে পৌঁছাবে, ততক্ষণে একটি অবৈধ মামলায় আমাকে বন্দী করা হবে। পাকিস্তানে আমাদের মৌলিক ও আইনি অধিকারের দাফন হয়ে গেছে। এরপর হয়তো আপনাদের সঙ্গে আমার কথা বলার সুযোগ হবে না। তাই দু-তিনটি কথা বলতে চাই।’
ইমরান খান বলেন, ‘প্রথমত, পাকিস্তানের মানুষ আমাকে ৫০ বছর ধরে চেনে। আমি কখনোই পাকিস্তানের আইনের বিরুদ্ধে যাইনি বা নিয়ম ভাঙিনি। ক্ষমতায় যাওয়ার পর আমি যত লড়াই করেছি, তা আইনের গণ্ডির ভেতরে থেকে করেছি। এখন যা হচ্ছে সেটা আমি আইন লঙ্ঘন করেছি বলে হচ্ছে না, এসব করা হচ্ছে যাতে করে আমি সত্যের পথ থেকে পিছু হটি। এই দুর্নীতিগ্রস্ত চোরের দল ও আমদানি করা (বিদেশি মদদে ক্ষমতায় আসা) সরকারকে যেন আমি মেনে নিই।’
২ মিনিট ২০ সেকেন্ডের এই ভিডিও বার্তার শেষ দিকে ইমরান বলেন, ‘আপনাদের সবার কাছে আমার আবেদন, ন্যায়ের জন্য লড়তে সবাই পথে নামুন। স্বাধীনতা কাউকে থালায় সাজিয়ে দেওয়া হয় না, এর জন্য লড়াই ও পরিশ্রম করতে হয়। এখন সময় এসেছে পথে নামার।’
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ: মে ০৯, ২০২৩
রেটিং করুনঃ ,