লেখক:স্টিফেন ব্রায়েন।
এই বসন্তে ইউক্রেনে দুটি শক্তিশালী আক্রমণ পরিচালনা হতে চলেছে। দুটি অভিযানই রাশিয়া-ইউক্রেন উভয় পক্ষের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করবে। যদিও ফলাফল সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন, কেননা বাইরের খেলোয়াড়েরা বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সেনারা এ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে পারে।
প্রথম আক্রমণ অভিযান সম্পর্কে মোটামুটিভাবে সবার জানা। সেটি হলো, রুশ বাহিনীর পরিচালিত বসন্তকালীন আক্রমণ অভিযান। কয়েক মাস ধরেই এই আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে মস্কো। এ সময় রুশ বাহিনী তাদের রণকৌশল শাণিত করেছে এবং যুদ্ধে এ পর্যন্ত তারা যেসব অস্ত্র ও যান (বিশেষ করে ট্যাংক ও পদাতিক যুদ্ধের সাঁজোয়া যান) খুইয়েছে, সেগুলো নতুন করে উৎপাদন করেছে।
একটি প্রতিবেদনের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, টি-৯০ এস ও টি-১৪ আর্মটাস ট্যাংকসহ অন্যান্য ট্যাংক উৎপাদনের ক্ষেত্রে রাশিয়া সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। অস্ত্র ও সব ধরনের গোলাবারুদ উৎপাদনেও তারা অনেকটাই বাড়িয়েছে। এই আক্রমণ অভিযানের জন্য রাশিয়া দুই থেকে তিন লাখ সেনা সমবেত করেছে। প্রশ্ন হলো, বিশাল এই বাহিনীকে কীভাবে কাজে লাগাবে তারা? একটি তত্ত্ব হলো দক্ষিণ ও পূর্ব দিক থেকে ঘেরাও করতে করতে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করবে রুশ বাহিনী।
আরেকটি তত্ত্ব হলো, রুশ বাহিনী দক্ষিণ, পূর্ব ও উত্তর দিক থেকে ইউক্রেনীয়দের ঘেরাও করে নিয়ে যেতে যেতে কিয়েভে আটকে ফেলবে। দ্বিতীয় পদ্ধতিটাই রুশদের সবচেয়ে সেরা বাজি হতে পারে। কিন্তু এটা করার জন্য যে লোকবল দরকার কিংবা ইউক্রেনীয় বাহিনীর পাল্টা আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সেনাবাহিনীর যে ধরনের গতিশীলতা দরকার, সেটা রাশিয়ার আছে কি না।
অন্যদিকে ইউক্রেনও বসন্তকালীন আক্রমণ অভিযানের জন্য আন্তরিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে চলেছে। এই আক্রমণ পরিকল্পনা কিয়েভ থেকে নয় বরং পেন্টাগনে প্রণয়ন হওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশি। বিপুল পরিমাণ সামরিক সরঞ্জাম এরই মধ্যে পোল্যান্ডে পৌঁছে গেছে। সেগুলো হয় ইউক্রেনে প্রবেশের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে অথবা ইউক্রেনের পথে আছে। এ ছাড়া ন্যাটো সেনাশক্তি জোরদার করছে। গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের পতাকাবাহী লিবার্টি প্রাইড নামে একটি জাহাজ ন্যাটো সৈন্যদের জন্য সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে গ্রিসের বন্দরে নোঙর করেছে।
যদিও এ মুহূর্তে সমুদ্রে যুক্তরাষ্ট্রের আর কয়টি জাহাজ আছে, কোন কোন বন্দরে সেগুলো নোঙর করবে, সেসব তথ্য এখনো জানা যায়নি। কিন্তু ইউক্রেনীয় বাহিনী যখন আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন ন্যাটো চারপাশে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করছে। ইউক্রেনীয় বাহিনীর বসন্তকালীন আক্রমণের মূল কেন্দ্রবিন্দু হবে ক্রিমিয়া এবং দক্ষিণ অঞ্চলে অবস্থানরত রুশ বাহিনী। উদ্দেশ্য হচ্ছে, সেখানে অবস্থানরত রুশ বাহিনীকে বিচ্ছিন্ন করে পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করা এবং ক্রিমিয়ায় বড় আক্রমণ পরিচালনা করা।
রাশিয়ার কাছে যুদ্ধে ইউক্রেন কি হারতে চলেছে?
মার্চের শুরুতেই এটা দৃশ্যমান যে, রুশরা বাখমুতে ইউক্রেনীয়দের রক্তশূন্য করে মারার যে পরিকল্পনা নিয়েছে, সেটা কাজ করছে।
এ অভিযানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ইউক্রেনকে বিপুল পরিমাণ যুদ্ধ সরঞ্জাম দিয়েছে। এর মধ্যে জার্মানির তৈরি লিওপার্ড-২ ট্যাংক চলাচলে সহায়তা করার মতো সেতুও রয়েছে। এ ধরনের ট্যাংকের ওজন প্রায় ৬২ টন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র তাদের এম-১ আব্রাহামস ট্যাংক দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যদিও আগামী বছরের আগে সেগুলো ইউক্রেনে পৌঁছানোর সম্ভাবনা নেই।
এ ধরনের আক্রমণ পরিচালনার জন্য ইউক্রেনীয় বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্যেরও ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বিমানশক্তির ওপরও নির্ভর করতে হবে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের হাতে থাকা এফ-১৬ এস বিমান চালনার জন্য ইউক্রেনীয় পাইলটদের প্রশিক্ষিত করার মতো যথেষ্ট সময় নেই, আবার এফ-১৬ এস বিমান যুদ্ধক্ষেত্রে নামানো হবে কি না, সে ধরনের হালনাগাদ তথ্যও নেই।
এ প্রেক্ষাপটে কেউ কেউ প্রত্যাশা করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান ছদ্মবেশে ইউক্রেনীয় যুদ্ধবিমান হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। যুদ্ধবিমানগুলো পরিচালনার দায়িত্বে থাকতে পারেন যুক্তরাষ্ট্র অথবা ন্যাটোর পাইলটরা। সেটা হলে যুদ্ধবিমান যুদ্ধের বড় নির্ধারক শক্তি হয়ে উঠবে। কেননা আকাশ থেকে আকাশে এবং আকাশ থেকে ভূমিতে দূরপাল্লায় গোলা নিক্ষেপের সক্ষমতা থাকবে সেগুলোর।
ইউক্রেনীয় বাহিনীর এই আক্রমণ অভিযানে ন্যাটোর সরাসরি অংশগ্রহণের অভিযোগ তুলে রাশিয়া এ ঘটনাকে প্রচারণামূলক কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করতে পারে। ন্যাটোর এ ধরনের সরাসরি চ্যালেঞ্জকে রাশিয়া কীভাবে মোকাবিলা করবে, সেটা বলা কঠিন। এমনও হতে পারে পোল্যান্ড ও রোমানিয়ায় অবস্থিত ন্যাটোর সামরিক মজুত ভান্ডারে আক্রমণ করে বসতে পারে মস্কো। যুদ্ধের কাজে ব্যবহৃত দেশ দুটির বিমানঘাঁটিতেও আক্রমণ করতে পারে রুশ বাহিনী।
এই বসন্তে রাশিয়া ও ইউক্রেন দুই পক্ষের আক্রমণ অভিযান নিয়ে এসব ভবিষ্যদ্বাণীর অনেকটাই সঠিক। কেননা, দুই পক্ষই যে এ ধরনের আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে, তার অজস্র প্রমাণ রয়েছে। বলা যায়, ইউরোপ এখন একটা মহাবিপর্যয়ের একেবারে কিনারে দাঁড়িয়ে।
***** স্টিফেন ব্র্যায়েন, সেন্টার ফল সিকিউরিটি পলিসি অ্যান্ড ইয়র্কটাউন ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো
এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত।
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:মার্চ ০৯, ২০২৩
রেটিং করুনঃ ,