১.বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে। সংস্থাটির কাছ থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৮১৬ কোটি ডলার।
২. এডিবি সংস্থাটির কাছে ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৩২৮ কোটি ডলার।
৩. জাপানের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে ৯২৩ কোটি ডলার।
৪.রাশিয়া কাছে ঋণের পরিমাণ ৫০৯ কোটি ডলার
৫.চীনের কাছে ঋণের পরিমাণ ৪৭৬ কোটি ডলার।
বাংলাদেশের কাছে উন্নয়ন সহযোগীদের কে কত অর্থ পায়, তা নিয়ে অনেকের কৌতূহল আছে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা সব মিলিয়ে বাংলাদেশের কাছে ৭ হাজার ২২৯ কোটি ডলার পায়। প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ১০৫ টাকা ধরে হিসাব করলে বাংলাদেশি মুদ্রায় এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৭ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এই পরিমাণ অর্থ বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশের ঋণ আছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত এই হিসাবটি করা হয়েছে। আইএমএফ মনে করে, বাংলাদেশের ঋণ এখনো ঝুঁকি সীমার মধ্যেই রয়েছে। সংস্থাটি গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য নতুন করে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এ ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ছাড়ও করা হয়েছে।
প্রথম কিস্তির অর্থ ছাড়ের পাশাপাশি স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে আইএমএফ ঋণের শর্তসহ ১২৫ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বাংলাদেশের ঋণের সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়। সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৪৯০ কোটি ডলার, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আট শতাংশের বেশি। অন্যদিকে দ্বিপক্ষীয় বা বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৬৭ কোটি ডলার, যা জিডিপির ৫ শতাংশের বেশি।
এবার দেখা যাক, কে কত অর্থ পায় বাংলাদেশের কাছে। বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে। সংস্থাটির কাছ থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৮১৬ কোটি ডলার। বিশ্বব্যাংকের পরের স্থানে আছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সংস্থাটির কাছে ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৩২৮ কোটি ডলার। এরপর আছে যথাক্রমে জাপান, রাশিয়া ও চীন।
বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু জাপানের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে ৯২৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া রাশিয়া ও চীনের কাছে ঋণের পরিমাণ যথাক্রমে ৫০৯ কোটি ডলার ও ৪৭৬ কোটি ডলার। আইএমএফের কাছে ঋণের পরিমাণ ৯৮ কোটি ডলার। নতুন করে সংস্থাটির কাছ থেকে আরও ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ নিচ্ছে বাংলাদেশ।
একসময় প্যারিস কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে উন্নত দেশগুলো বাংলাদেশকে ঋণ দিত। প্রতিবছর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বৈঠকে বসতেন দাতা দেশগুলোর প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী ওই সব বৈঠকে নিজেদের চাহিদার কথা জানাতেন। দাতারাও নানা শর্তে ঋণ দিত। তখন ওই সব দাতাদের নিয়ে যে জোট তৈরি হয়েছিল, তাকে প্যারিস ক্লাব হিসেবে ডাকা হতো। ২০০২ সাল পর্যন্ত প্যারিস কনসোর্টিয়ামের অস্তিত্ব ছিল। এরপর বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম (বিডিএফ) গঠিত হয়।
বহু বছর পর আইএমএফের প্রতিবেদনে প্যারিস ক্লাবের কথাটি এসেছে। সেই ঋণের পালা এখনো চলছে। সেখানে বলা হয়েছে, জাপান, রাশিয়াসহ প্যারিস ক্লাবের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৫৫১ কোটি ডলার। অন্যদিকে প্যারিস ক্লাবের সদস্য নয়, এমন দেশগুলোর কাছেও বাংলাদেশের বড় অঙ্কের ঋণ আছে। এর পরিমাণ ৬১৬ কোটি ডলার। চীন, ভারতের মতো দেশ হলো নন-প্যারিস ক্লাবের সদস্য। ভারতের কাছে বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ ১০২ কোটি ডলার।
আইএমএফ যদিও বলছে, বাংলাদেশের ঋণ এখনো ঝুঁকিমুক্ত সীমার মধ্যেই আছে। তারপরও বাস্তবতা হলো বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের চাপ ধীরে ধীরে বাড়ছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১০৫ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। ছয় মাসে এত ঋণ পরিশোধ আগে কখনোই করা হয়নি। সামনে আরও বেশি ঋণ পরিশোধ করতে হবে এমন পূর্বাভাসও মিলেছে ইআরডির এক প্রতিবেদনে। নতুন ঋণ চুক্তি না হলে ও শুধু পাইপলাইনে থাকা প্রতিশ্রুতি থেকে ঋণ পেলে এবং ডলারে আগামী কয়েক বছরে ঋণ পরিশোধে কি পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হবে, তা দেখানো হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ২৭৮ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। প্রতিবছরই এ পরিমাণ বাড়বে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৪০২ কোটি ডলারে। ২০২৯-৩০ অর্থবছরে ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ ৫১৫ কোটি ডলার খরচ হবে। এরপর ঋণ পরিশোধ কমতে থাকবে।
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:ফেব্রুয়ারী ০৪, ২০২৩
রেটিং করুনঃ ,