দেশে বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার অফিস বলতে সপ্তাহের ছয় দিন কাজ, এক দিন ছুটি। তবে সরকারি কার্যালয়সহ বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ চলে সপ্তাহে পাঁচ দিন। অর্থাৎ সপ্তাহে দুই দিন ছুটি। বেসরকারি খাতের অনেক কর্মীর কাছেই সপ্তাহে দুই দিন ছুটি স্বপ্নের মতো।
এই যখন বাস্তবতা, তখন বিশ্বের অনেক প্রযুক্তি সংস্থা সপ্তাহে তিন দিন ছুটি দিচ্ছে। অর্থাৎ কাজ হচ্ছে সপ্তাহে চার দিন। কর্মীদের দক্ষতা ও সৃজনশীলতা বাড়াতে বিশ্বের অনেক স্থানেই এমন নিয়ম চালু হয়েছে।
দ্য গার্ডিয়ানের এক খবরে দেখা গেছে, ইউরোপের অনেক দেশেই সপ্তাহে চার দিন কাজ হচ্ছে। দেখা গেছে, ইউরোপের যেসব দেশে কর্মসময় সবচেয়ে কম, সেখানেই কর্মীদের উৎপাদনশীলতা সবচেয়ে বেশি। জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসে কর্মসময় সবচেয়ে কম আর দুটি দেশেই কর্মীদের উৎপাদনশীলতা সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া মাইক্রোসফটের জাপান কার্যালয় যখন সপ্তাহে চার দিন কাজ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালু করল, তখন উৎপাদনশীলতা ৪০ শতাংশ বেড়ে গেল।
২০২৩ সালে এই সংস্কৃতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মহামারির পর অনেকেই এখন পূর্ণকালীন কাজ করতে চাচ্ছেন না। পাইকারি হারে চাকরি ছাড়ছেন অনেকে। এই পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যে সম্প্রতি চার দিনের কর্মসপ্তাহ নিয়ে পাইলট প্রকল্প করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ৭০টি কোম্পানি তাদের সাড়ে ৩ হাজার কর্মীর সাপ্তাহিক কর্মসময় ২০ শতাংশ হ্রাস করে দেখেছে, প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রে কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বেড়েছে। এই প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন এখনো বের হয়নি। ৮৮ শতাংশ কোম্পানি ইতিমধ্যে বলেছে, তারা পাইলট প্রকল্পের পরও এই ধারা বজায় রাখবে।
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও কিছু প্রযুক্তি কোম্পানিতে চার দিনের কাজের রীতি চালু হয়েছে। বৈশ্বিক সাইবার সিকিউরিটি সংস্থা টিএসি সিকিউরিটির কর্মীরা প্রতি সপ্তাহে সোম থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কাজ করেন। আর শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত টানা ছুটি ভোগ করেন। কয়েক বছর ধরেই এ নিয়মেই চলছে অফিস। টিএসি সিকিউরিটির সদর দপ্তর আমেরিকার সানফ্রান্সিসকোতে, ভারতের মুম্বাইয়ে তাদের অফিস আছে।
বাস্তবতা হলো, মানুষ এখন কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য খুঁজছে। অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ এখন আগের মতো ব্যক্তিগত জীবন কোরবানি দিয়ে কর্মজীবনকে প্রাধান্য দিতে চান না। সন্তানের লালন-পালনের বিষয়েও মানুষের সচেতনতা বেড়েছে। মহামারির পর এ বিষয়ে আরও পরিবর্তন এসেছে। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোয় মানুষ বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে এখন।
আধুনিক মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায়ও দেখা গেছে, মানুষ ব্যক্তিগত জীবনে অসুখী হলে কাজে উৎপাদনশীল হয় না। সে জন্য মানুষকে স্বস্তি দেওয়া প্রয়োজন। সেই চিন্তা থেকেই সপ্তাহে চার দিন কাজের রীতি গড়ে উঠছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:জানুয়ারী ২৩, ২০২৩
রেটিং করুনঃ ,