মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ ও করোনা মহামারির পর বিশ্বের অনেক কিছুই বদলে গেছে। বিশেষ করে করোনা মহামারির পর পশ্চিমা দেশগুলো এখন আর এককভাবে চীননির্ভর থাকতে চাইছে না। আমদানির উৎস বাড়ানোর চেষ্টা করছে তারা। এ বাস্তবতায় বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দেশ লাভবান হতে পারে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে প্রকাশিত এক জরিপের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের এই সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। মূলত অর্থনীতিবিদদের ওপর এই জরিপ করা হয়েছে।
এই পরিবর্তনের কিছু সুবিধা বাংলাদেশ ইতিমধ্যে পাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলে থাকেন। তবে বিশ্লেষকেরা বলেন, এই সুযোগ ভালোভাবে কাজে লাগাতে হলে নানা ধরনের সংস্কার করতে হবে। নিয়ম–নীতি সংশোধন থেকে শুরু করে অবকাঠামো—অনেক খাতেই হাত দিতে হবে।
জরিপের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা করছেন বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতিবিদেরা। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের জরিপে অংশ নেওয়া দুই-তৃতীয়াংশের বেশি (৬৮ শতাংশ) অর্থনীতিবিদ এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। এর মধ্যে আবার ১৮ শতাংশ অর্থনীতিবিদ মনে করেন, মন্দা তীব্র রূপ নিতে পারে।
দেখা গেছে, সার্বিক মন্দার বিষয়ে অর্থনীতিবিদের মধ্যে একধরনের মতৈক্য আছে। তবে তীব্র মন্দার আশঙ্কা অনেকটাই কমেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ৩৫ শতাংশের বেশি অর্থনীতিবিদ মনে করতেন, তীব্র মন্দার আশঙ্কা আছে। অর্থাৎ নানা পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে অনেক অর্থনীতিবিদ মত বদলেছেন। এখনো এক-তৃতীয়াংশ অর্থনীতিবিদ মনে করেন, এ বছর মন্দা হবে না।
এদিকে সম্প্রতি গোল্ডম্যান স্যাকসের এক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, চলতি বছর বৈশ্বিক মন্দা হওয়ার আশঙ্কা কম। কিছু কিছু উন্নত দেশে মন্দা হতে পারে। তবে সামগ্রিকভাবে প্রবৃদ্ধির গতি অনেকটাই কমে যাবে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের জরিপে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ অর্থনীতিবিদের মতে, এ বছর অর্থনীতিতে রীতিমতো ঝড় বয়ে যাবে। এতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকার স্বার্থে নানা ধরনের ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করতে বাধ্য হতে পারে। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, যত না অর্থনৈতিক, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক কারণে এসব ঘটবে। রাজনৈতিক স্বার্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আরও বেশি কড়াকড়ি আরোপ করবে, আর তার খেসারত দিতে হবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষকে।
বিষয়টি হলো রাশিয়ার তেল-গ্যাস আমদানি সীমিত করার সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক স্বার্থের বিষয়। ইউরোপের এই সিদ্ধান্তের কারণে জ্বালানির দাম আকাশচুম্বী হয়েছে। এ কারণে বিপাকে পড়েছে মহাদেশটির সীমিত আয়ের মানুষেরা। বস্তুত, পশ্চিমাদের এই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের জের টানতে হচ্ছে বিশ্বের প্রায় প্রত্যেক মানুষকে। কারণ, সবকিছুতেই জ্বালানি প্রয়োজন। এটা ছাড়া কিছুই করা যায় না।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক, বিশেষত ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা খুবই কম। জরিপে অংশ নেওয়া সব শীর্ষ অর্থনীতিবিদ ২০২৩ সালে ইউরোপে দুর্বল প্রবৃদ্ধি হবে বলেই মনে করছেন। ৯১ শতাংশ অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবৃদ্ধি হলেও তার হার হবে খুবই কম।
ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির পরিস্থিতি নিয়ে অর্থনীতিবিদেরা একমত হলেও চীনের বিষয়ে তাঁরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। কেউ মনে করেন, এ বছর চীনও মন্দার কবলে পড়বে। আবার অন্যরা মনে করছেন, দেশটির প্রবৃদ্ধি হবে।
মূল্যস্ফীতি কমবে
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমে আসবে। গত বছর উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় যেভাবে বিশ্বের প্রায় সব কেন্দ্রীয় ব্যাংক একযোগে নীতি সুদহার বাড়িয়েছে, তাতে সমাজে অর্থের প্রবাহ কমেছে। স্বাভাবিকভাবেই কমেছে চাহিদা। সেই সঙ্গে সরবরাহব্যবস্থাও স্বাভাবিক হয়ে আসছে। অর্থনীতিবিদদের কথায় সেই চিত্র উঠে এসেছে।
তবে সব অঞ্চলের মূল্যস্ফীতির হার এক হবে না। ইউরোপের ক্ষেত্রে ৫৭ শতাংশ অর্থনীতিবিদ মনে করেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সম্ভাবনা আছে, অথচ চীনের ক্ষেত্রে মাত্র ৫ শতাংশ অর্থনীতিবিদ তা মনে করেন।
এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ভাষ্য, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে, ২০২২ সালে যা ছিল ৮ দশমিক ৮ শতাংশ।
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:জানুয়ারী ১৭, ২০২৩
রেটিং করুনঃ ,