‘রিজার্ভের টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি’— প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রিজার্ভের টাকা চিবিয়ে খাননি, গিলে ফেলেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক যুব সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথা বলেন।
সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পায়রায় যুক্ত হওয়া ১১ হাজার ৭২ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এই পায়রা বন্দরের কথা বলতে গিয়ে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, আমাদের বিরোধীরা, অর্থাৎ বিএনপি বলে যে রিজার্ভের টাকা কোথায় গেল?’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘অবশ্যই, জিজ্ঞেস করতে চাই যে রিজার্ভের টাকা কোথায় গেল। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) উত্তর দিয়েছেন, রিজার্ভের টাকা চিবিয়ে খাওয়া হয়নি। চিবিয়ে তো খান নাই, গিলে ফেলেছেন। রিজার্ভের টাকা আপনারা গিলে ফেলেছেন।’
‘রিজার্ভের টাকা পায়রা বন্দরে খরচ করা হয়েছে’ বলে প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলেছেন, তার জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, ‘পায়রা বন্দরে খরচ করার জন্য রিজার্ভের টাকা নয়, রিজার্ভের টাকা হচ্ছে আমদানি করতে যে টাকা লাগে, তা ডলার দিয়ে পরিশোধ করবেন। রিজার্ভের টাকা হচ্ছে দেশে যখন অর্থনৈতিক ক্রাইসিস দেখা দেবে, তখন ক্রাইসিস ট্যাকল করবেন।’
পায়রা বন্দরের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পায়রা বন্দর কার্যকর হতে পারে না। কারণ, এর জন্য যে নাব্য দরকার, জাহাজ ভেতরে আসার জন্য পানির যে গভীরতা দরকার, সেই গভীরতা সেখানে নাই। তার জন্য কী করেছেন, সুপার ড্রেজার লাগিয়েছেন।
‘তিনটা সমাবেশেই কাঁপা কাঁপি শুরু হয়েছে’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের একটি বক্তব্যের উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা তিনটা সমাবেশ করেই না কি মনে করছি যে আমরা ক্ষমতায় চলে যাচ্ছি। আমরা তিনটা সমাবেশ করেই ক্ষমতায় চলে যাচ্ছি বলে মনে করছি না। আমরা মনে করছি, তিনটা সমাবেশেই আপনাদের এত কাঁপা কাঁপি শুরু হয়েছে যে ওই (সামনের) সমাবেশগুলো বন্ধ করার জন্য বাস-পরিবহন ধর্মঘট করাচ্ছেন।’
সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কী নির্লজ্জ, কী কাপুরুষ আপনারা যে বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে বন্ধ করার জন্য আপনারা আপনাদের পেটোয়া সেই সমস্ত ইউনিয়নকে দিয়ে ধর্মঘট ডাকাচ্ছেন।’ তিনি চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনার সমাবেশের আগে পরিবহন ধর্মঘট দেওয়ার অভিযোগ করে বলেন, ধর্মঘট দিয়ে গণতন্ত্রকামী মানুষকে আটকে রাখা যায়নি। মানুষ পায়ে হেঁটে, বিভিন্নভাবে সেই সমাবেশে উপস্থিত হয়েছে।
বরিশাল ও রংপুরে বাস ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমি বাস মালিক-শ্রমিক ভাইদের বলতে চাই, আপনারা সব সময় জনগণের সেবা করেন, আপনারা জনগণের সঙ্গেই বরাবর ছিলেন। আজকে চালের কেজি ৯০ টাকা হয়েছে, ডালের দাম বেড়েছে, ডিমের দাম ১৩৫ টাকা হয়েছে, চিনির দাম বেড়েছে। তাহলে কার ইঙ্গিতে, কাদের সহায়তা করতে এই ধর্মঘট? এই ভয়ংকর ফ্যাসিস্ট শক্তি—যারা আপনার সব অর্জন কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে তাদের সহায়তা করার জন্য এই কাজটা করবেন না।’ পরিবহন ধর্মঘট দিয়ে জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি না করতে বাস মালিক-শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব।
কীসের নির্বাচন?
আওয়ামী লীগ নির্বাচনব্যবস্থাই ধ্বংস করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, নির্বাচন করতে চায়, কীসের নির্বাচন? এই দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই, নির্বাচন নেই। নির্বাচন কমিশন করেছে, যাদের ডিসি-এসপিরাই মানে না। সুতরাং নির্বাচনের প্রশ্নই উঠতে পারে না।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা খুব স্পষ্ট করে বলেছি, সবার আগে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে দিতে হবে। পরিষ্কার কথা, নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা না দিলে এখানে কোনো নির্বাচন হবে না।’
বলে খেলা হবে, কীসের খেলা?
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, খোলা হবে মাঠে। এর উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বলে কী খেলা হবে। কীসের খেলা হবে, কীসের খেলা? খেলেছ তো, ১৮ কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলেছ। খেলা হয় না, খেলা তখনই হয়, যখন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকে। খেলা তখন হবে, যখন পদত্যাগ করবে সরকার থেকে। যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেবে, তখনই খেলা হবে। এ ছাড়া কোনো খেলা তোমাদের খেলতে দেওয়া হবে না। এই দেশের মানুষ আর কখনো সেটা করতে দেবে না।’
যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন ও খায়রুল কবির, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম প্রমুখ বক্তব্য দেন। সমাবেশ মঞ্চে দুটি চেয়ার খালি রাখা হয়। একটিতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও অন্যটিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি রাখা হয়।
সমাবেশের আগে সকালে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নেতা-কর্মীদের নিয়ে শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এরপর নয়াপল্টন থেকে কাকরাইলে বর্ণাঢ্য যুব শোভাযাত্রা বের হয়। সকালে শোভাযাত্রা ও বিকেলে সমাবেশ ঘিরে নয়াপল্টনের ভিআইপি সড়কে সকাল থেকেই সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। নেতা-কর্মীরা নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে অবস্থান নেন। এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কে। ফলে দিনভরই যানজটে পড়ে ওই এলাকায় চলাচলকারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:অক্টোবর ২৭, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,