Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

ধর্মের উত্থানে আদর্শের রাজনীতি বিদায় নিচ্ছে ভারতে (২০২১)

Share on Facebook

লেখক:শুভজিৎ বাগচী

গত এক মাসের মধ্যে ভারতে কোনো নেতা নিজের দল ছেড়ে অন্য দলে গেছেন, এই তালিকা বানানো সহজ নয়। নিয়মিত নেতা-নেত্রীরা দল ছেড়ে শত্রুপক্ষে গিয়ে ভিড়ছেন। কয়েক সপ্তাহ আগেই ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন বিজেপির মহাতারকা বাবুল সুপ্রিয়। কিছুদিন আগেও তিনি বিজেপির মন্ত্রী ছিলেন, এখনো দলের একজন এমপি। এর দিন কয়েক আগে গেছেন আসামের কংগ্রেস নেত্রী সুস্মিতা দেব। আর নির্বাচনে হারার পরপরই বিজেপি থেকে তৃণমূলে চলে গেছেন বিজেপির সহসভাপতি মুকুল রায়। আবার নির্বাচনের আগে ধর্মনিরপেক্ষ দল বলে পরিচিত তৃণমূল ছেড়ে হিন্দুত্ববাদী বিজেপিতে গেছেন অনেকে। যেমন শুভেন্দু অধিকারী, অর্জুন সিং, দীনেশ ত্রিবেদী প্রমুখ।

তারও আগে কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া মার্ক্সিস্ট (সিপিআইএম) ছেড়ে বিজেপিতে গেছেন মুর্শিদাবাদের মাহফুজা খাতুনের মতো দীর্ঘদিনের কমিউনিস্ট নেত্রী, বামপন্থী আদিবাসী সম্প্রদায়ের নেতা খগেন মুর্মু। জাতীয় স্তরে কংগ্রেসের সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতিন প্রসাদ থেকে গোয়ালিয়রের মহারাজা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার মতো প্রথম সারির অনেক নেতাই গেছেন বিজেপিতে। প্রায় সব দলই দাবি করছে, তারা আগামী দিনে আরও বেশি নেতা-নেত্রীকে অন্য দল থেকে ভাঙিয়ে আনবে। গত এক সপ্তাহের মধ্যে গোয়া রাজ্যে কংগ্রেসের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন এবং কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (সিপিআই) ছেড়ে যুবনেতা কানাইয়া কুমার চলে গেছেন কংগ্রেসে।

এরও বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে গিয়ে ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর অন্তত ছয়টি রাজ্যে নির্বাচনে হেরে গিয়ে, অন্য দল থেকে এমএলএ ভাগিয়ে এনে সরকার গঠন করেছে বিজেপি। তাঁরা ধর্মনিরপেক্ষ না হিন্দুত্ববাদী, সে বিচার অন্য দলের মতোই বিজেপিও করেনি। ভারতের নেতারা বরাবরই দল ছেড়েছেন, নতুন দল করেছেন। ইন্দিরা গান্ধী বড় উদাহরণ। পুরোনো কংগ্রেস ভেঙে ১৯৬৯ সালে তিনি যে দল গড়েছিলেন, সেই দলই আজকের কংগ্রেস। এই ভাঙা-গড়ার মধ্যে একটা হিন্দুত্ববাদী ধারা সব সময় চোরা স্রোতের মতো ভেতরে–ভেতরে ছিল। সেই স্রোত আজ ভারতীয় রাজনীতির মূলধারা। ফলে ভারতে রাজনীতির পরিবর্তন ঘটছে।

বিভিন্ন দলের মধ্যে ভারতে মূল বিভাজক একসময় ছিল অর্থনীতি। ভারতে ১৯৯১ সালে আর্থিক উদার ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর সব দলের আর্থিক নীতিই কাছাকাছি চলে আসে। বৃহৎ পুঁজির পথ মসৃণ করার পক্ষে সওয়াল করে সব দলই। আর্থিক নীতির প্রশ্নে ভেদাভেদ কমে যায়। দ্বিতীয় যে ফারাক ছিল সেটা হলো, ভারত হিন্দু না ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, এই বিষয়ে। ভারতের সংবিধানে সেক্যুলার (ধর্মনিরপেক্ষ) শব্দটি ঢোকানো হয়েছে স্বাধীনতার প্রায় ৩০ বছর পর, ১৯৭৬ সালে। শব্দটি এখনো আছে। তাই অনেকে মনে করেন, ভারত সেক্যুলার রাষ্ট্র। কিন্তু মানুষের মধ্যে থেকে করে-কর্মে খেতে হয় যে রাজনীতিবিদদের, তাঁরা সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সমান অধিকারের প্রশ্নটিকে আজকাল কূটনীতিবিদদের মতো এড়িয়ে গিয়ে রাজনীতি করেন। কয়েকটা উদাহরণ দেওয়া যাক।

ভারতের জাতীয় সংসদসহ সব রাজ্যের আইনসভায় মুসলমান সমাজের প্রতিনিধিত্ব ধারাবাহিকভাবে কমছে। কেউ এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন না। ভারতশাসিত কাশ্মীরের চরিত্র পাল্টে দেওয়া হয়েছে। কেউ একটি শব্দও খরচা করেননি। প্রায় নিয়মিতভাবে উত্তর প্রদেশে মুসলমান সম্প্রদায়ের ওপরে হামলা হচ্ছে, সেই রাজ্যে নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই হামলার ঘটনা বাড়ছে। এসব নিয়ে নিয়মিত আর ভারতের পত্রপত্রিকাতে লেখাও হয় না। একই সঙ্গে বাবরি মসজিদ হিন্দুদের হাতে তুলে দেওয়া নিয়ে গোটা দেশে পিনপতনের নীরবতা লক্ষ করা গেছে। সম্প্রতি আসামে বাঙালি মুসলমানের মৃতদেহের ওপরে উঠে এক ব্যক্তি লাফালাফি করলেও, এ নিয়ে কোনো বড় ধরনের আন্দোলন গড়তে কোনো দলই মাঠে নামেনি। এ রকম উদাহরণ অসংখ্য। এটি দশ বা কুড়ি বছর আগে হতো না। কংগ্রেস আমলে বহু মুসলমানকে বিনা কারণে সন্ত্রাসী বলে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সব দলই এর প্রতিবাদ করেছে। সেসব বর্তমানের ভারতে ইতিহাস।
এর কারণ কী? এর কারণ ভয়। হিন্দু ভোট হারানোর ভয়। সব দল বুঝেছে ভারতের সংবিধানে ‘সেক্যুলার’ শব্দ থাকুক আর না থাকুক, মাঠপর্যায়ের রাজনীতিতে এর মূল্য নেই। ফলে রাহুল গান্ধীকে হিন্দু ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতীক পইতা পরতে হয়, যদিও ওনার ঠাকুরদা ছিলেন একজন পার্সি, আর তাঁর মা জন্মসূত্রে রোমান ক্যাথলিক। পাশাপাশি তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ তৃণমূল কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে দক্ষিণ ভারতের গভীর হিন্দুত্ববিরোধী নেতা এম কে স্তালিন (যাঁর বাবা তাঁর নাম রাশিয়ার কমিউনিস্ট নেতার নামে রেখেছিলেন) তাঁকেও মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। দিল্লিতে ২০২০-এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর আরেক তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বিষয়টি নিয়ে মনে রাখার মতো কোনো মন্তব্য করেননি, তিনিও পূজার ওপরই ভালো রকম জোর দেন। বস্তুত গুজরাটের মতো দাঙ্গা ভারতে এখন হলে কত বড় প্রতিবাদ হবে, তা বলা মুশকিল।

গত পাঁচ-ছয় বছরে বিরোধীরা বুঝে গেছেন খেলার নিয়ম পাল্টে গেছে, এই সমাজ দ্রুত পাল্টে গেছে। সংখ্যালঘু সমাজের মৃত সদস্যদের বুকের ওপরে উঠে নাচানাচি করলে, সেটাকে ইস্যু করে নির্বাচনে যাওয়া রাজনৈতিক আত্মহত্যার শামিল। ফলে বিজেপির বিরোধিতা দলগুলো করছে ঠিকই, কিন্তু সংখ্যালঘুদের কোণঠাসা করার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সামনে আনছে না। এই কাজটা ধর্মনিরপেক্ষ দল নয়, মুসলিমপ্রধান দলগুলো করবে এমনটাই যেন ধরে নেওয়া হয়েছে।
এটা নতুন নয়, একে পোস্ট-আইডিওলজি বা আদর্শ-উত্তর একধরনের রাজনীতির ভারতীয় সংস্করণ বলা যেতে পারে। এটি সাম্প্রতিক অতীতে সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর পশ্চিমের দেশগুলোতে লক্ষ করা গেছে। কমিউনিজমের পতনের পর সেখানেই আদর্শনির্ভর রাজনীতি নিয়ে বিতর্কের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়। এই অবস্থা বছর বিশেক চলার পর আমেরিকা ও ইউরোপের অর্থনীতি ২০০৮ সালে আংশিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং চীনের উত্থান হয়। আবার নতুন করে তর্কবিতর্ক শুরু হয়, আদর্শের রাজনীতির প্রশ্ন সামনে আসে।

ভারতে ব্যাপারটা অন্য রকমভাবে হয়। দারিদ্র্যের কারণে ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার সমাজ কখনোই পুরোপুরি রাজনীতিহীন হয়ে পড়বে না। এখানে সংঘাত, তর্কবিতর্ক থাকবে। কিন্তু লক্ষণীয়ভাবে ভারতে যেন ধরে নেওয়া হয়েছে, হিন্দুত্ববাদী সমাজব্যবস্থার মধ্যে থেকেই রাজনৈতিক তর্কবিতর্ক করতে হবে। ভারতে সমাজ বরাবরই ধার্মিক ছিল, রাজনীতিতে ধর্মের যাতায়াতও ছিল। কিন্তু রাজনীতিতে ধর্মকে কত দূর পর্যন্ত প্রবেশ করতে দেওয়া উচিত, তা নিয়ে একটা জোরদার বিতর্কও ছিল।
এই বিতর্ক অন্তর্হিত হয়েছে। এখন আর কেউ প্রশ্ন করেন না, প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীরা কেন সারা দিন পূজা করেন, মন্দিরে পড়ে থাকেন? শঙ্খ বাজিয়ে এবং কথায় কথায় মন্ত্র পড়ে নির্বাচনকেই–বা কেন তাঁরা কার্যত একটা বড় পূজায় পরিণত করেছেন? সেই কারণে ভবানীপুরে যখন দেখা যায় দুর্গার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুলনা করে তৃণমূল ব্যানার লাগাচ্ছে বা নরেন্দ্র মোদির মূর্তি মন্দিরে রেখে পূজা করা হচ্ছে, তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না যে বর্তমানে ভারতের ধর্ম ও রাজনীতি একেবারে আনুষ্ঠানিকভাবেই মিশে গেছে। এটি নিয়ে যাবতীয় বিতর্কের প্রয়োজন ফুরিয়েছে।

এটাই ভারতের পোস্ট-আইডিওলজি মোমেন্ট বা আদর্শ-উত্তর রাজনীতির মুহূর্ত। ধর্মকেন্দ্রিক রাজনীতির প্রশ্নে সবাই একদিকে। হয়তো এটার কথা মাথায় রেখেই হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) এক জ্যেষ্ঠ প্রচারক সুনীল আম্বেদকর তাঁর বই আরএসএস রোডম্যাপ ফর দ্য টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরিতে লিখেছেন ‘ভারতের স্বাধীনতার এক শ বছর পর ২০৪৭ সালে সংঘকে ভারতের সমাজ থেকে আলাদা করা যাবে না। সংঘ ভারতের সমাজের সঙ্গে সমার্থক হয়ে যাবে। পৃথকভাবে সংঘের বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয়তাও ফুরোবে।’
অর্থাৎ ভারত সংঘ পরিবারের মতো একটা বৃহৎ সামাজিক-ধার্মিক সংগঠনকেন্দ্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হবে। প্রতিটি ছোট–বড় নির্বাচন ও রাজনীতির গতিপ্রকৃতি দেখলে বোঝা যায় পর্যবেক্ষণ কতটা সঠিক।

**** শুভজিৎ বাগচী প্রথম আলোর কলকাতা সংবাদদাতা।

সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:অক্টোবর ০৫, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ