ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে ২০০২ সালে ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনা আজও ভুলতে পারেননি নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের স্বজনেরা। সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে হেয়াতি একা লক্ষ্মী নামের এক নারী বলেন, সে বছর ১২ অক্টোবর রাতের পালার কাজ শেষে তাঁর স্বামী বাড়িতে ফেরেননি। তখনই তিনি বিপদ আঁচ করতে পেরেছিলেন।
২০০২ সালের ১২ অক্টোবর ইন্দোনেশিয়ার পর্যটন দ্বীপ বালিতে ভয়াবহ বোমা হামলা হয়। ওই ঘটনার ২০ বছর পূর্তি হয়েছে আজ বুধবার। ভয়াবহ ওই হামলায় ২০২ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। হামলায় ২০টি দেশের নাগরিকেরা নিহত হন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৮৮ জন অস্ট্রেলিয়ার ও ৩৮ জন ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক।
বালির ওই ঘটনা ইন্দোনেশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে বিবেচিত। সেদিন নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের স্বজনেরা বলছেন, তাঁরা দিনটি কখনো ভুলবেন না।
হায়াতি একা লক্ষ্মীর স্বামী ইমাওয়ান সার্দজোনোর বয়স তখন ছিল ৩৩ বছর। বালির নাগুরা রাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অগ্নিনির্বাপণকর্মী হিসেবে কাজ করতেন তিনি। ঘটনার দিন শ্যালক ও দুই বন্ধুকে বালির দর্শনীয় স্থানগুলো দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন ইমাওয়ান সার্দজোনো।
হেয়াতি একা লক্ষ্মী বলেন, সার্দজোনো সেদিন বেড়ানোর জন্য একটি গাড়ি ভাড়া করেছিলেন। ঘোরাঘুরি শেষে তাঁরা সবাই একসঙ্গে রাতের খাবার খেয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, কাজে যাওয়ার আগে শ্যালক ও বন্ধুকে হোটেলে নামিয়ে দেবেন। কিন্তু সেসব পরিকল্পনার কোনো কিছুই বাস্তবে রূপ নেয়নি।
যে গাড়িতে চড়ে স্বামী, পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিলেন, সেই গাড়ি ভাড়া দেওয়া প্রতিষ্ঠানের এক প্রতিনিধির কাছে দুঃসংবাদটি পেয়েছিলেন লক্ষ্মী। বিস্ফোরণে গাড়িটি চুরমার হয়ে গিয়েছিল। তখন লক্ষ্মীর ছেলেদের বয়স দুই ও তিন বছর।
আল-জাজিরাকে লক্ষ্মী বলেন, ‘এ কষ্ট বর্ণনা করা যায় না। আমার স্বামী খুব দায়িত্বশীল ছিলেন। এটা আমার জন্য অনেক বড় ক্ষতি ছিল। আমি এখনো তাঁর অভাব বোধ করি।’
বালি দ্বীপের কুটা এলাকায় সারি ক্লাবের বাইরে সার্দজোনোর গাড়ির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছিল। এলাকাটিতে অনেক পানশালা ও রেস্তোরাঁ ছিল।
ইন্দোনেশিয়ার উগ্র গোষ্ঠী জামিয়া ইসলামিয়ার (জেআই) সদস্যদের সমন্বিত হামলার লক্ষ্য ছিল এলাকাটি। বিস্ফোরণে সার্দজোনোরা যে গাড়িতে ছিলেন, সেটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। গাড়ি ভাড়া দেওয়া প্রতিষ্ঠানটি লক্ষ্মীকে বলেছিল, সার্দজোনো, তাঁর ভাই এবং তাঁদের দুই বন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে।
লক্ষ্মীর বয়স এখন ৫২ বছর। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেরা জিজ্ঞেস করছিল, কী হয়েছে মা? তখন আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না।’
সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:অক্টোবর ১২, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,