আমদানিতে ডলারের দাম ১০২ টাকা
বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা উদ্যোগের পরও দেশে ডলারের সংকট কাটেনি। অনেক ব্যাংক এখন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম ১০২ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে। আর কোনো কোনো ব্যাংক ডলারপ্রতি ১০১ টাকা দিয়েও প্রবাসী আয় পাচ্ছে না। ফলে সংকট কমার পরিবর্তে যেন আরও বেড়েই চলেছে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তের ফলে অনেক রপ্তানিকারক তাঁদের রপ্তানি প্রত্যাবাসন কোটায় (ইআরকিউ) রাখা বিদেশি মুদ্রা বিক্রি করছেন। ব্যাংকগুলো এই ডলার কিনে আমদানি দায় শোধ করছে। একইভাবে অনেক ব্যাংকও নিজেদের কাছে রাখা ডলারও বিক্রি করছে। এরপরও সংকট কাটছে না।
**** পণ্য আমদানি ব্যয়ে রেকর্ড
পণ্য আমদানি কমলেও গেল অর্থবছরে আমদানি ব্যয় বেড়ে রেকর্ড হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির প্রতিফলন হয়েছে আমদানি ব্যয়ে। বাংলাদেশের ইতিহাসে আমদানি ব্যয় কখনো এত বেশি হয়নি।
আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো গেল অর্থবছরে পুরোটা সময় ধরে বৈশ্বিক বাজারে পণ্য ও শিল্পের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি। তবে বৈশ্বিক অর্থনীতি মন্দার দিকে যাওয়ায় দেশে দেশে চাহিদা কমছে। আবার অনেক পণ্যের উৎপাদনও বাড়ছে। তাতে গত মে-জুন মাস থেকে বিশ্ববাজারে শিল্পের কাঁচামাল ও পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। জাহাজভাড়াও কমেছে। এতে ভবিষ্যতে আমদানি ব্যয় কিছুটা কমতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
রেকর্ড আমদানি ব্যয়
চট্টগ্রাম, মোংলাসহ ২৯টি কাস্টমস ও শুল্ক স্টেশনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ২০২১–২২ অর্থবছরে আমদানি ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭৮৭ কোটি ডলার। তার আগের অর্থবছরের এসব স্টেশনে দিয়ে পণ্য আমদানি ব্যয় ছিল ৬ হাজার ৫৫৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে পণ্য আমদানিতে ব্যয় ৩৩ শতাংশ বা ২ হাজার ২৩২ কোটি ডলার বাড়তি ব্যয় হয়েছে। এসব শুল্ক স্টেশন দিয়ে ৯৮ শতাংশ পণ্য আমদানি হয়।
আমদানি ব্যয় বাড়লেও পরিমাণের দিক থেকে সার্বিকভাবে আমদানি কমেছে। রাজস্ব বোর্ডের প্রাথমিক হিসাবে, ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছে ১৩ কোটি ৯৪ লাখ টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য আমদানির পরিমাণ ছিল ১৪ কোটি ৫০ লাখ। অর্থাৎ পণ্য আমদানি ৫৬ লাখ টন বা ৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ কমেছে।
পরিমাণ ও আমদানি ব্যয়ের তুলনা করে দেখা গেছে, কোনো কোনো পণ্যের আমদানি কমলেও ব্যয় বেড়েছে। আবার অনেক পণ্যে আমদানি যেমন বেড়েছে তেমনি পাল্লা দিয়ে ব্যয়ও বেড়েছে। যেমন সিমেন্টশিল্পের কাঁচামাল ক্লিংকারের আমদানি কমলেও ব্যয় বেড়েছে। একই অবস্থা গম, সয়াবিন বীজ, অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রেও। আবার পুরোনো লোহার টুকরো, তুলা, এলপিজি, সার, পাম তেলের মতো পণ্যের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় ব্যয়ও বেড়েছে।
গরিব মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ ১০%- এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির হিসাব নিয়ে বিতর্ক আছে। এখনো ২০০৫-০৬ ভিত্তি বছর ধরে মূল্যস্ফীতি গণনা করা হয়। কিন্তু গত দেড় দশকে মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও ভোগের আচরণগত অনেক পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের খাবারের ধরন বদলেছে। জীবনযাত্রায় নতুন নতুন অনুষঙ্গ এসেছে। যত দিন পর্যন্ত ভিত্তি বছর পরিবর্তন না হবে, তত দিন প্রকৃত মূল্যস্ফীতির চিত্র উঠে আসবে না।
গত জুন মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশের বেশি হয়েছে। এটি আসলে ধনি-গরিবনির্বিশেষে গড় হিসাব। গরিব মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি থাকে। আমার হিসাবে গরিব মানুষের ওপর প্রকৃত মূল্যস্ফীতির চাপ ১০ শতাংশের মতো আছে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষের আয় না বাড়লে প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। ফলে দারিদ্র্যসীমার কিছুটা ওপরে থাকা বিপুলসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যায়।
বর্তমান মূল্যস্ফীতির অন্যতম প্রধান কারণ হলো আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া। এই মূল্যস্ফীতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা নির্ভর করবে আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি কোথায় যায়। কেননা, আমরা আমদানিনির্ভর দেশ। তাই আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে।
মূল্যস্ফীতি বাড়লে দরিদ্র মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খাদ্যপণ্য কিনতেই তাঁদের আয়ের সিংহভাগ খরচ হয়। বর্তমান চাল-ডাল, তেল-নুন—সবকিছুর দাম বাড়ছে। তাই মূল্যস্ফীতি বাড়লে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগী বাড়াতে হবে। তাঁদের সুষ্ঠুভাবে খাদ্যপণ্য বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে।
কিন্তু বাংলাদেশে গরিব মানুষকে এই ধরনের সুবিধা দিতে গিয়ে তিন ধরনের অপব্যবহার হয়। প্রথমত, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে যাঁদের (অপেক্ষাকৃত ধনী) অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা নয়, তাঁরা স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও প্রশাসনের আশীর্বাদে তালিকাভুক্ত হয়ে যান। দ্বিতীয়ত, যাঁরা প্রকৃত গরিব, তাঁরা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন না। তৃতীয়ত, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির তহবিল তছরুপ হয়।
ভারতে ডলারের বিপরীতে রুপির দর ৮০-তে উঠল।
ডলারের বিপরীতে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অব্যাহতভাবে স্থানীয় মুদ্রার দরপতন চলছে। সেই ধারাবাহিকতায় নতুন রেকর্ড করল ভারতীয় মুদ্রা রুপির দাম। সোমবার দিনের একপর্যায়ে ভারতের প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য দাঁড়ায় ৮০ রুপি।
এর ফলে প্রথমবারের মতো ৮০ রুপিতে লেনদেন হয়েছে প্রতি ডলার। যদিও দিন শেষে সর্বোচ্চ এ দাম আর ধরে রাখতে পারেনি। দিন শেষে ডলারের দাম নেমে আসে ৭৯ দশমিক ৯৮ রুপিতে। মঙ্গলবার সেই দাম আরও একটু কমে দাঁড়িয়েছে ৭৯ দশমিক ৫৬ রুপিতে। ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
কয়েক দিন ধরে ভারতের মুদ্রার ক্রমাগত পতনের জেরে বিরোধীদের আক্রমণের মুখে পড়েছে মোদি সরকার। সোমবার লোকসভার বর্ষাকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনে রুপির দর নিয়ে মুখ খোলেন ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ।
জানালেন, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর (ডলার ছিল ৬৩ দশমিক ৩৩ রুপি) থেকে এখন পর্যন্ত ভারতীয় মুদ্রার দর পড়েছে ২৫ শতাংশ। এই পতনের অন্যতম কারণ বিদেশি বিনিয়োগকারী সংস্থাগুলোর পুঁজি তুলে নেওয়া।
নির্মলার দাবি, রুশ–ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের উচ্চমূল্য এবং বিভিন্ন দেশে সুদের হার বৃদ্ধির কারণে রুপির দরপতন হচ্ছে। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রে নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে ভারতের শেয়ারবাজার থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ক্রমাগত পুঁজি প্রত্যাহারের বিরূপ প্রভাব দেখা গেছে রুপির দরে।
ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা প্রায় ১৫৬ কোটি রুপির শেয়ার কিনেছে। তাতে ভারতের প্রধান শেয়ারবাজার বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক সেনসেক্স বেড়েছে ৭৬০ পয়েন্ট।
তবে শুধু ভারতীয় মুদ্রা রুপিই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুদ্রার দরপতন হয়েছে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে বিশ্বের প্রায় সব মুদ্রার মানের অবনমন ঘটেছে। ২০২২-এর প্রথমার্ধে রুপির দরপতন হয়েছে প্রায় ৬ শতাংশ। এর সঙ্গে তুলনা টানলে দেখা যাবে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর অভিন্ন মুদ্রা ইউরোর মানের অবনমন ঘটেছে ১১ দশমিক ৬ শতাংশ, জাপানি মুদ্রা ইয়েনের ক্ষেত্রে ১৯ দশমিক ২ শতাংশ আর যুক্তরাজ্যের মুদ্রা পাউন্ডের দরপতন হয়েছে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ। চীনের ইউয়ানে অবনমনের চিহ্ন কমই দেখা যায়, মাত্র ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: জুলাই ২০, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,