করোনাভাইরাসের ভুয়া টেস্ট ও টাকার বিনিময়ে সনদ দেওয়ার মামলায় জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরী, তার স্বামী একই প্রতিষ্ঠানের সিইও আরিফুল হক চৌধুরীসহ আট আসামিকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
পৃথক তিনটি ধারায় প্রত্যেককে এ দণ্ডাদেশ দেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রায় ঘোষণা করা হয়।
২০২০ সাল থেকে এ মামলার আসামিরা হাজতে রয়েছেন। হাজতকালীন এ সময় দণ্ডাদেশ থেকে বাদ যাবে বলে রায়ে বলা হয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামিরা হলেন, জেকেজি হেলথ কেয়ারের কর্মকর্তা আবু সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ুন কবির হিমু ও তার স্ত্রী তানজিলা পাটোয়ারী, জেকেজি হেলথ কেয়ারের নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম রোমিও, জেবুন্নেছা রিমা এবং বিপ্লব দাস। তারা সবাই কারাগারে আছেন।
আসামি আরিফুল হকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফারুক আহমেদ বলেন, ‘রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ। তিনি দাবি করেন, পৃথক তিনটি ধারায় আসামিদের ১১ বছরের যে রায় দিয়েছেন আদালত তা সঠিক নয়। সরকারকে খুশি করার জন্য এই রায় দেওয়া হয়েছে। রায়ের সার্টিফায়েড কপি পেলে মহানগর দায়রা জজ আদালতে আপিল করা হবে।’
এদিকে রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবু। তিনি বলেন, আসামিদের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। তারা রাষ্ট্রের মর্যাদা ও ভাবমূতি নষ্ট করেছে। আদালত সঠিক রায় দিয়েছেন।
এর আগে সকাল ৮টার দিকে আসামিদের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে করে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) কোর্ট চত্বরে হাজির করা হয়। তাদের রাখা হয় আদালতের হাজতখানায়। রায় ঘোষণার আগে তাদের আদালতে হাজির করা হয়।
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় করোনা ভাইরাস শনাক্ত করার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা না করেই ২৭ হাজার মানুষকে রিপোর্ট দেন ডা. সাবরিনা ও তার স্বামীর প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথ কেয়ার। ২০২০ সালের মার্চে জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ার (জেকেজি) বুথের মাধ্যমে বিনামূল্যে করোনা নমুনা সংগ্রহের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তি করে। এরপর ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পৃথক ছয়টি স্থানে ৪৪টি বুথ স্থাপন করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। এসব এলাকা থেকে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে জেকেজি। তবে সংস্থাটি চুক্তি ভেঙে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকার বিনিময়ে নমুনা সংগ্রহ শুরু করে। এসব নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই মনগড়া রিপোর্ট দেয় জেকেজি।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী একজন তেজগাঁও থানায় মামলা করে। এরপর ২০২০ সালের ২৩ জুন আরিফুল হক চৌধুরীসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২০২০ সালের ১২ জুলাই ডা. সাবরিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে শফিকুল ও জেবুন্নেসা রিমাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। ২০২০ সালের ২৩ জুন অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ২০ আগস্ট সাবরিনাসহ আট আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত।
সূত্র: সমকাল।
তারিখ: জুলাই ১৯, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,