ভারত নানা মত ও ধর্মের সমাহারে তৈরি এবং তা থেকে শুধু হিন্দু সংস্কৃতিকে পৃথক করে দেখা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে জাতির অস্তিত্ব নিয়ে ভারতে চিন্তার কারণ দেখা দেবে বলে মন্তব্য করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেন। বৃহস্পতিবার কলকাতার গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রতীচী ট্রাস্টের অধীনে অমর্ত্য সেন রিসার্চ সেন্টারের উদ্বোধন করে এ কথা বলেন তিনি।
ভারতে যে বিভিন্ন সম্প্রদায় ও ধর্ম গভীরভাবে সম্পৃক্ত, তা মনে করিয়ে দিয়ে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘সবচেয়ে বড় যে সমস্যা এখন সামনে আসছে তা হলো “নেশন” বা জাতি হিসেবে ভারতের পতনের আশঙ্কা। আজ যদি আমার কোনো কিছু নিয়ে ভয় হয়, তা হলো জাতি হিসেবে একদিন ভারতের শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। আমি অবশ্যই একজন জাতীয়তাবাদী নই, কিন্তু আমি চাই যে জাতি থাকুক এবং এ দুয়ের মধ্যে কোনো বিরোধও নেই। আমি যখন জাতির কথা ভাবি, তখন এই দেশের মধ্যে নানান ভাগাভাগির কথা ভাবি। তা বড়ই পীড়াদায়ক।’
বিষয়টির আরও ব্যাখ্যা করে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘ভারতে বারবার বলা হয় সহনশীলতার কথা। আমরা অবশ্যই সহনশীল। কিন্তু তার পাশাপাশি আর একটা কথা বলা হয় না। সেটা হলো আমাদের একসঙ্গে থেকে, বিভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার কথা।’ ভারত প্রাচ্য, পাশ্চাত্য, ইসলামিক, বাহাই, ফারসি—সব ভাষা-সংস্কৃতি থেকেই গ্রহণ করেছে, সমৃদ্ধ হয়েছে। শুধু হিন্দু সংস্কৃতির মধ্যে একে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না, যায় না।’
‘শাহজাহানের পুত্র দারা শিকো হিন্দুদের উপনিষদ ফারসিতে অনুবাদ করেছিলেন। যা পৌঁছাল জার্মানিতে। ম্যাক্স মুলার তা থেকে জার্মানে অনুবাদ করলেন, আর তা অনূদিত হলো ইংরেজিতে। ভারতের উপনিষদ ছড়িয়ে পড়ল গোটা বিশ্বে। এই একসঙ্গে কাজ করার সংস্কৃতিকে কীভাবে অস্বীকার করা যাবে?’ প্রশ্ন অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের।
ইরানের পণ্ডিত আল-বেরুনীর ১০১০ সালের লেখা ভারতের ইতিহাস যে ভারতকে বুঝতে বিশ্বকে অনেকটাই সাহায্য করেছে, তা জানিয়ে অমর্ত্য সেন বলেন, এটি তাঁর পড়া অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভারতের ইতিহাসবিষয়ক গ্রন্থ।
অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রেজ, বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কে শ্রীনাথ রেড্ডি, অমর্ত্য সেনের মেয়ে অন্তরা দেবসেন প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: জুলাই ০১, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,