ন্যাটোর ভবিষ্যৎ কৌশলপত্রে এই প্রথম চীনকে ‘মারাত্মক হুমকি’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে একমত হয়েছে সামরিক জোটটির সদস্যদেশগুলো। গতকাল বুধবার স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলেনবার্গ বলেছেন, চীন শত্রু না হলেও মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। তবে ন্যাটোর এ হুঁশিয়ারিকে ‘একেবারেই অনর্থক’ বলে মন্তব্য করেছে বেইজিং। খবর রয়টার্স ও এএফপির।
মঙ্গলবার মাদ্রিদে ন্যাটোর এবারের তিন দিনের শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়। তবে শীর্ষ নেতাদের মূল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় বুধবার। আলোচনায় গুরুত্ব পায় ইউক্রেন যুদ্ধ। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা এই জোটের সবচেয়ে নিরাপত্তা উদ্বেগে জায়গা করে নেয় চীন।
ইউক্রেনে রাশিয়া হামলার কারণে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পরিস্থিতিতে এবার বিশ্বের বৃহত্তম এ সামরিক জোটের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে মিত্রদের নিরাপত্তার প্রতি রাশিয়াকে ‘সরাসরি হুমকি’ হিসেবে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। অবশ্য এমন ইঙ্গিত আগেই মিলেছিল। তবে চীনকে হুমকির পর্যায়ে ধরা এই প্রথম।
স্টলেনবার্গ বলেন, ‘আমরা এখন কৌশলগত প্রতিযোগিতার একটি যুগের মুখোমুখি। পারমাণবিক অস্ত্রসহ চীন তার বাহিনীগুলোকে উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী করে তুলছে। তাইওয়ানসহ প্রতিবেশীদের উসকানি দিচ্ছে দেশটি।’ তিনি বলেন, ‘চীন আমাদের শত্রু নয়। তবে যে মারাত্মক হুমকি দেশটি তৈরি করছে, সে বিষয়টি অবশ্যই আমাদের ভালোভাবে নজরে রাখতে হবে।’
ন্যাটো জোটের আগের পরিকল্পনা তথা কৌশলগত ধারণাপত্র ২০১০ সালে মিত্ররা গ্রহণ করে। তাতে চীনের বিষয়টি উল্লেখ ছিল না। তবে নতুন কৌশলগত ধারণাপত্রে বলা হয়, চীনের নীতি ন্যাটোর স্বার্থ, নিরাপত্তা ও মূল্যবোধের প্রতি হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। যদিও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে রাশিয়াই সবচেয়ে বড় ও সরাসরি হুমকি হিসেবে রয়েছে।
ন্যাটোর কৌশলগত ধারণাপত্রে বলা হয়, ‘পিআরসির (পিপলস রিপাবলিক অব চায়না) ক্ষতিকর হাইব্রিড ও সাইবার কার্যক্রম, সংঘাতপ্রবণ বক্তব্য ও গুজবের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে মিত্ররা। এতে জোটের নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মহাকাশ, সাইবার ও সামুদ্রিক ক্ষেত্রগুলোর পাশাপাশি আইনের শাসননির্ভর আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ধ্বংসের প্রচেষ্টায় রাশিয়ার সঙ্গে চীনের গভীর অংশীদারত্বের বিষয়টিও এই ধারণাপত্রে উল্লেখ করা হয়।
ন্যাটো সতর্ক করে বলেছে, অধিকতর স্বচ্ছতা কিংবা অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের সদিচ্ছা প্রদর্শন ছাড়াই পারমাণবিক সামর্থ্য ব্যাপকভাবে বাড়াচ্ছে চীন সরকার। পাশাপাশি কৌশলগত নির্ভরশীলতা তৈরি ও প্রভাব বাড়াতে অর্থনৈতিক সামর্থ্যকে কাজে লাগাচ্ছে দেশটি।
ন্যাটোর সম্মেলনে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে আইনের শাসনভিত্তিক বৈশ্বিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করার অভিযোগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এ ব্যবস্থায় (আইনের শাসন) বিশ্বাস করি, এ ব্যবস্থা তৈরিতে সাহায্য করি। চীন যদি এটাকে কোনো না কোনোভাবে চ্যালেঞ্জ করে, তবে আমরা সেই প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব।’
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ প্রথমবারের মতো ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, বেইজিং ও মস্কোর সম্পর্ক জোরদার সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতি ঝুঁকি তৈরি করেছে। রাশিয়া পুনরায় একটি রুশ কিংবা সোভিয়েত সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। চীনের বিষয়ে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে চীন সরকার সব জায়গায় বন্ধু খুঁজছে। ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মতো যেসব জায়গায় ঐতিহাসিকভাবে পশ্চিমা জোট রয়েছে, তাদের দুর্বল করতে জোট গঠনের উদ্দেশ্যেই এ কাজ করছে চীন।
ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ওপর বাড়তি গুরুত্ব দিতে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে মাদ্রিদে ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন নিয়েই ব্যতিব্যস্ত ন্যাটো সদস্যরা। আলবানিজের উদ্দেশ্য ছিল ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে কৌশলগত প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় মঞ্চ হিসেবে সম্মেলনে তুলে ধরা।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: জুন ৩০, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,