Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা তুলনা নিয়ে অর্থহীন বাহাস কেন (২০২২)

Share on Facebook

লেখক:মো. তৌহিদ হোসেন।

চরম দুর্দশায় পড়েছে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি। বৈদেশিক ঋণের কিস্তি দিতে না পারায় ঋণখেলাপিতে পরিণত হয়েছে দেশটি। শুধু তা-ই নয়, জনগণের ভোগের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি আমদানি করার অর্থও নেই তাদের। অর্থনৈতিক সংকট এখন রাজনৈতিক সংকটেও রূপ নিয়েছে। এসব নিয়ে প্রচুর আলোচনা-লেখালেখি হয়েছে। তার বিস্তারিত উল্লেখ এখানে নিষ্প্রয়োজন।

একটা সময় ছিল, যখন এশিয়ায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে শ্রীলঙ্কা ছিল রোল মডেল। তামিলদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে সৃষ্ট গৃহযুদ্ধ শ্রীলঙ্কাকে পিছিয়ে দেয় অনেক। ২৬ বছরব্যাপী এই গৃহযুদ্ধ শেষ হয় ২০০৯ সালে নির্মম সামরিক অভিযান ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের মধ্য দিয়ে। এরপর ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল দেশটি। কিন্তু সরকারের নেওয়া বিভিন্ন ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আবার নতুন সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা।

মোটা দাগে তিন-চারটি কারণে শ্রীলঙ্কার আজকের এ অবস্থা। প্রথমত, ব্যাপক কর হ্রাসের কারণে সরকারের রাজস্ব কমে যায়, আর সেই ঘাটতি পূরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিপুল পরিমাণ টাকা ছাপায়, যাতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। অন্যদিকে ডলারের সরকারি মূল্য বেঁধে রাখার কারণে অভিবাসী শ্রমিকেরা রেমিট্যান্স পাঠাতে থাকেন হুন্ডির মাধ্যমে। ডলারের বাজারদর সরকারি দরের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি। ফলে রেমিট্যান্সে ধস নামে। পাশাপাশি পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া হঠাৎ অর্গানিক চাষাবাদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। রাসায়নিক সার ব্যবহার বন্ধের ফলে একদিকে কৃষি উৎপাদন ব্যাপক হ্রাস পেয়ে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ঘটে, অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য চায়ের উৎপাদন ও রপ্তানি কমে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বিপজ্জনক পর্যায়ে নেমে আসে। পর্যটন শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। ২০১৯ সালের ইস্টার বোমা হামলা পর্যটক আগমন কমিয়ে দেয়। ২০২০ থেকে শুরু হওয়া কোভিড মহামারির কারণে খাতটি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি সমস্যা বাড়িয়েছে আরও।

এসবের কোনোটিই বাংলাদেশের সঙ্গে তেমন মেলে না। মূল্যস্ফীতি আছে, তবে তা শ্রীলঙ্কার পর্যায়ে পৌঁছায়নি। রেমিট্যান্স-প্রবাহ এখন পর্যন্ত মোটামুটি ঠিক আছে। কৃষি ও রপ্তানি খাত ভালো করছে। পর্যটন তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখনো আছে স্বস্তিদায়ক পর্যায়েই। তাহলে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা তুলনা নিয়ে মাঠ গরম করা কেন?

শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে যাঁরা চিন্তাভাবনা করেন, তাঁদের অনেকেই কিছু সাবধানবাক্য উচ্চারণ করেছেন, যাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে অনুরূপ দুর্দশায় পড়তে না হয়। কেউ কিন্তু বলেননি, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার অবস্থায় পড়েছে। তবু আমরা দেখলাম, হাঁ হাঁ করে তেড়ে উঠলেন অনেকেই। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ক্ষমতাসীনেরা বিশ্বাস করেন, সবকিছু চলছে নিখুঁতভাবে, কোথাও কোনো সমস্যা নেই, কোনো ভুলচুক নেই। যাঁরাই কোনো সমস্যা দেখেন, তাঁদের তাঁরা শত্রুজ্ঞান করেন। এবারও তা-ই হয়েছে। একজন তো বলেই বসলেন যে বাংলাদেশের অর্থনীতি শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা মূর্খতার নামান্তর! কিছু পরিসংখ্যান দিয়েও তিনি বাংলাদেশের উচ্চতর অবস্থান তুলে ধরার চেষ্টা করলেন।

মূলত যে কারণে শ্রীলঙ্কার আজ দেউলিয়া অবস্থা, তা হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত বৈদেশিক ঋণ। ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বৈদেশিক ঋণ দ্বিগুণ হয়েছে। এর অনেকাংশই ব্যয় হয়েছে উচ্চাভিলাষী অতিমূল্যায়িত বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে (সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর ইত্যাদি), যেগুলো থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল আসেনি।

বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ এখনো সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে, তবে মেগা প্রকল্পের জ্বরে আক্রান্ত বাংলাদেশও। এর অনেকগুলো প্রকল্পই উন্নয়ন যাত্রায় প্রয়োজনীয় ও উপকারী। তবে এটা সবাই মানেন যে এশিয়ার অন্যান্য দেশে একই ধরনের প্রকল্পের তুলনায়, আমাদের অধিকাংশ প্রকল্পই অতিমূল্যায়িত। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ সম্ভবত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রায়ই যে অর্থমূল্যের ওপর ভিত্তি করে সম্ভাব্যতা নিরীক্ষা করা হয়, প্রকল্প সমাপ্তিতে তার ব্যয় দাঁড়ায় দ্বিগুণ। এ ছাড়া সব প্রকল্পই যে প্রয়োজনীয় বা ভালো তা-ও নয়। ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতু হয়ে রেললাইন প্রকল্প, কক্সবাজার রামু রেল প্রকল্প, পায়রা বন্দর ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আহসান এইচ মনসুর (বাংলাদেশের নেওয়া সব প্রকল্পই ভালো নয়, প্রথম আলো, ৪ এপ্রিল ২০২২)।

নগর-পরিকল্পনাবিদেরা আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন, প্রস্তাবিত ঢাকা সাবওয়ে প্রকল্প গলার কাঁটা হয়ে উঠতে পারে (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২৩ এপ্রিল ২০২২)। অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম কোনো ভণিতা না করে আটটি অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প চিহ্নিত করেছেন: ১. ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার বুলেট ট্রেন, ২. দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, ৩. পূর্বাচলে ১১০ তলাবিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু বহুতল ভবন কমপ্লেক্স, ৪. শরীয়তপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ৫. পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া দ্বিতীয় পদ্মা সেতু, ৬. নোয়াখালী বিমানবন্দর, ৭. দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প এবং ৮. ঢাকার বাইরে রাজধানী স্থানান্তর। (সৈয়দপুর বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প মনে হয় তাঁর দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে)। মেগা প্রকল্পগুলো নিয়ে উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিয়াজ আসাদুল্লাহ। সিপিডির অধ্যাপক মুস্তাফিজ বলেছেন, দুই দেশের পরিস্থিতি তুলনীয় নয়, তবে এতে অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে।

তাঁরা কেউই মূর্খ নন, নিজ নিজ ক্ষেত্রে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ। তাঁদের হাতে স্ফটিক গোলক নেই, যা দেখে কী ঘটবে, তা নিশ্চিতভাবে বলে দিতে পারেন। তাঁরা যা বলবেন, সব সময় যে তা-ই ঘটবে, এমনও নয়। তবে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে তাঁরা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে কী হতে পারে, তা অনুমান করবেন ও পরামর্শ দেবেন। এটাই তাঁদের দায়িত্ব এবং তাঁরা তা পালন করছেন। তাঁরা শিক্ষা নিতে বলেছেন, সাবধান হতে বলেছেন। তাঁদের বক্তব্যকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য না করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তা বিবেচনায় রাখাই হবে পরিপক্বতার লক্ষণ।

শ্রীলঙ্কার এ দুর্যোগ একসময় কেটে যাবে এবং দেশটি আবার উঠে দাঁড়াবে। শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির ভিত্তি ততটা দুর্বল নয়। মানবসম্পদে দেশটি দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ অবস্থানে (শ্রীলঙ্কার বৈশ্বিক অবস্থান ৭২, ভারতের ১৩১, বাংলাদেশের ১৩৩)। মাথাপিছু আয় ভারতের চেয়ে বেশি বলে আমরা তৃপ্তির ঢেকুর তুলি, কিন্তু ক্রয়ক্ষমতার বিচারে (পিপিপি) ২০২১ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় ৫ হাজার ৮৮২ ডলার, ভারতের ৭ হাজার ৩৩৩ ডলার। অর্থাৎ গড়পড়তা একজন ভারতীয় একজন বাংলাদেশির চেয়ে অনেকটাই বেশি দ্রব্য ও সেবা কিনতে পারেন। সাধারণ মানুষের জন্য কিন্তু এটাই গুরুত্বপূর্ণ। আজ যদিও গুরুতর সমস্যায় নিমজ্জিত, ২০২১ সালেও পিপিপিতে শ্রীলঙ্কার মাথাপিছু আয় ছিল ১৩ হাজার ৬২৮ ডলার, বাংলাদেশের দ্বিগুণের বেশি। ১০ বছর আগে কেউ ভাবেননি, এমন সংকটে পড়বে শ্রীলঙ্কা। আত্মতৃপ্তিতে না ভুগে সাবধান হতে হবে বাংলাদেশকেও, যাতে ভবিষ্যতে অনুরূপ পরিস্থিতির সম্ভাব্য উদ্ভব ঠেকানো যায়।

● মো. তৌহিদ হোসেন সাবেক পররাষ্ট্রসচিব।

সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: মে ১১, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ