ফ্যাশন শিল্প খাতকে আরও জবাবদিহির মধ্যে আনতে বিস্তৃত ও স্থায়ী একটি আইন করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক রাজ্য। তৈরি পোশাক ও জুতা শিল্পে পরিবেশগত ও সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইনটি করার প্রক্রিয়া চলছে। গত মাসের শেষ সপ্তাহে এ–সংক্রান্ত একটি বিল রাজ্যটির আইন পরিষদে তোলার পর তা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।
মানবাধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়ে সব সময়ই সরব ভূমিকায় থাকে বিশ্বের ফ্যাশন শিল্পের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র নিউইয়র্ক। সেই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ জানুয়ারি নিউইয়র্কের আইনসভায় ফ্যাশন সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি অ্যাক্ট নামের ওই বিল উত্থাপন করা হয়। সংক্ষেপে এটিকে ফ্যাশন আইন বলা হচ্ছে।
নিউইয়র্ক রাজ্যের সিনেটর আলেসান্দ্রা বিয়াগি ও নারী সাংসদ অ্যানা কেলেসের উদ্যোগে আনা এই বিলটি চলতি অধিবেশনেই পাস হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। বিলটি সম্পর্কে সিনেটর বিয়াগি বলেছেন, এই আইন শ্রম, মানবাধিকার ও পরিবেশগত সুরক্ষার দিকগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া তৈরি পোশাকের বড় গন্তব্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর মোট পোশাক রপ্তানির ২০ শতাংশ গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। ফলে নতুন এই বিল নিয়ে পোশাকশিল্পের মালিকেরা খোঁজখবর রাখছেন। তাঁদের কয়েকজন বলেন, বিলটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের খরচ কিছুটা বাড়তে পারে। তবে তার চেয়ে বেশি ব্যবসার সুযোগ বাড়বে বলে মনে করছেন তাঁরা।
নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইনটি কার্যকর হলে পোশাকশিল্পে কমপ্লায়েন্স (উন্নত কর্মপরিবেশ) বাড়বে। সে জন্য খরচ কিছুটা বাড়বে। তবে আমি মনে করি, আমাদের সুযোগ বাড়বে। কারণ, ইতিমধ্যে উন্নত কর্মপরিবেশ ও টেকসই পোশাক কারখানা গড়ার ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। ফলে এটি কার্যকর হলে আমাদের কাজের স্বীকৃতি পাব।’
নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, নিউইয়র্কে ব্যবসা করছে এমন পোশাক ও জুতা তৈরির কোম্পানিগুলোর জন্য আইনটি প্রযোজ্য হবে। পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে জবাবদিহির মধ্যে আনার কথা বলা হয়েছে বিলে। এর মধ্যে থাকবে শ্রমিকদের মজুরি, মানবাধিকার, শিশুশ্রম থেকে শুরু করে কার্বন নিঃসরণসহ পরিবেশগত সব দিক। এসব তথ্যই প্রকাশ করতে বলা হয়েছে বিলে। বিলটি পাস হলে ফ্যাশন শিল্পের জন্য এ ধরনের বিস্তৃত ও স্থায়ী কোনো আইন করার ক্ষেত্রে নিউইয়র্কই প্রথম কোনো রাজ্য হবে।
প্রস্তাবিত ফ্যাশন আইন অনুসারে, কোম্পানিগুলোকে তাদের সরবরাহ ব্যবস্থার কমপক্ষে ৫০ শতাংশ পণ্যের সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্তের ম্যাপিং করতে হবে। সেখানে কাঁচামাল উৎপাদন থেকে শুরু করে কারখানায় উৎপাদন কিংবা পরিবহনের (শিপিং) সব তথ্যই থাকতে হবে। এর মাধ্যমে ন্যায্য মজুরি, জ্বালানি খরচ, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন, পানি ও রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা ইত্যাদির বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে হবে কোম্পানিগুলোকে। একই সঙ্গে এসবের মধ্যে পরিবেশগত ও সামাজিক যেসব প্রভাব থাকবে, তা কমানোর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দিতে হবে তাদের। কোম্পানিগুলোকে পণ্য উৎপাদনের পরিমাণও প্রকাশ করতে হবে।
নিউইয়র্ক টাইম জানিয়েছে, ম্যাপিং নির্দেশিকা মেনে চলার জন্য কোম্পানিগুলো এক বছর সময় পাবে। আর পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব প্রকাশের জন্য তারা পাবে ১৮ মাস সময়। আইন লঙ্ঘন করলে কোম্পানিগুলোর বার্ষিক আয়ের ২ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। এই অর্থ পরিবেশ সংরক্ষণ বিভাগ পরিচালিত নতুন একটি তহবিলে চলে যাবে। নিউইয়র্কে ব্যবসা করা ফ্যাশন কোম্পানিগুলো বছরে ১০ কোটি ডলারের বেশি ব্যবসা করে।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিউইয়র্কের নতুন বিলে আমাদের ব্যবসায় নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়বে না। যদি না ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শিল্পে শিশুশ্রম নেই। কাউকে জোরপূর্বক কাজও করানো হয় না।’ নতুন নিয়মকানুনে ব্যবসার খরচ বাড়বে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মনে হয় না খরচ বাড়বে।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, নিউইয়র্কের বিলের মাধ্যমে ব্যবসায় বড় ধরনের পরিবর্তন হবে না। কারণ, সব উৎপাদক দেশের ক্ষেত্রেই এটি সমানভাবে প্রয়োগ হবে। আইনটি কার্যকর হলে ব্যয় কিছুটা বাড়লেও ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, আইনটি পাস হলে যেসব দেশ ও কোম্পানি শ্রমিকসংক্রান্ত ইস্যু ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, সেখান থেকে ক্রয়াদেশ স্থানান্তরিত হবে। তখন কিন্তু বাংলাদেশের যেসব প্রতিষ্ঠান এসব পরিপালন করে, তাদের ক্রয়াদেশ বাড়বে। আবার যাদের এসব পরিপালনে দুর্বলতা রয়েছে, তাদের ক্রয়াদেশ কমতে পারে।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ ফেব্রুয়ারী ০৪, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,