লেখক:
চাল আমদানিতে এখন বিশ্বে দ্বিতীয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ওপরে আছে চীন। এরপরে রয়েছে ফিলিপাইন, নাইজেরিয়া ও সৌদি আরব।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) চলতি মাসের ‘খাদ্যশস্য: বিশ্ববাজার ও বাণিজ্য’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ হিসাব তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, ২০২০-২০২১ বাণিজ্য বছরে বাংলাদেশ ২৬ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানি করেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বাণিজ্য বছর হিসাব করা হয় প্রতিবেদন প্রকাশের আগের ১২ মাস ধরে।
চাল উৎপাদনে বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন ধরে স্বয়ংসম্পূর্ণ দাবি করে আসছে সরকার। তবে ইউএসডিএর প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ এখন বড় আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। যদিও বাংলাদেশের আমদানি ধারাবাহিক নয়। মানে হলো, কোনো বছর উৎপাদন কম হলে বাংলাদেশ চাল আমদানি করে।
এর আগে ২০১৭ সালে দেশে হাওরে আগাম পানি চলে আসায় ফসলহানি ও বন্যার কারণে চাল উৎপাদন কম হয়েছিল। এতে শুল্ক তুলে নিয়ে বিপুল চাল আমদানি করতে হয় সরকারকে।
এদিকে ইউএসডিএর ডিসেম্বরের ‘বৈশ্বিক কৃষি উৎপাদন’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০২১-২০২২ সময়ে চাল উৎপাদন আগের পূর্বাভাসের তুলনায় সাড়ে ৭ লাখ টন কম হতে পারে। উৎপাদন দাঁড়াতে পারে ৩ কোটি ৫৫ লাখ টন। এর আগে গত মাসে ইউএসডিএ বাংলাদেশ নিয়ে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, দেশে এ বছর আউস মৌসুমে ধানের আবাদ কম হয়েছে। চলতি বছর বর্ষাকাল দেরিতে শুরু হওয়া ও বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে আমন ধানের উৎপাদনও কিছুটা কম হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, উৎপাদন কিছুটা কম হওয়ার কারণে বাংলাদেশকে আমদানি অব্যাহত রাখতে হবে। বাজারে চালের দাম এখনো বেশি। সরকার আমদানির সুযোগ দিয়েও দাম কমাতে পারছে না।
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, দেশে মানুষের আয় বাড়ছে। ফলে ভাতসহ অন্যান্য সব ধরনের খাদ্য গ্রহণ বাড়ছে। হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর খাবারসহ বিভিন্ন খাতে চালের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু তার পরিমাণ কত, সেটার হিসাব এখনো হয়নি। তিনি বলেন, ‘আদমশুমারি করে দেশের বর্তমান জনসংখ্যারও একটি সর্বজনগ্রাহ্য হিসাব তৈরি করা দরকার। তাহলে আমরা বলতে পারব আমাদের কী পরিমাণ চাল দরকার। আমরা প্রতিবছর চাল উৎপাদন বাড়াচ্ছি। কিন্তু তারপরও চাহিদা থেকে যাচ্ছে। যে কারণে আমরা এখন বস্তুনিষ্ঠ পরিসংখ্যানের ওপরে গুরুত্ব দিচ্ছি।’
দেশের বাজার পরিস্থিতি
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ৮ ডিসেম্বরের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে মোটা চাল খুচরা পর্যায়ে কেজি ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সরু চালের দাম কেজি ৬৬ থেকে ৭০ টাকা। এ ছাড়া মাঝারি চাল কেজি ৫২ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
দেশে গত বছর মার্চ মাসে করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে চালের দাম অনেকটা বেড়ে যায়। এরপর আর তেমন একটা কমেনি। এখন সরকারের খোলাবাজারে বিক্রি কর্মসূচির (ওএমএস) দোকানে কম দামে চাল কিনতে মানুষের লম্বা লাইন দেখা যায়।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন ভারত থেকে আমদানি করলে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম পড়বে ৩২ থেকে ৩৩ টাকা, পাকিস্তানে ৩৪ টাকা, ভিয়েতনামে ৩৮ টাকা এবং থাইল্যান্ডে ৪০ টাকা। এর মানে হলো ওই সব দেশে চালের দাম বাংলাদেশের চেয়ে কম।
সাবেক কৃষিসচিব এ এম এম শওকত আলী বলেন, সরকারের উচিত দ্রুত বেসরকারি খাতের মাধ্যমে আরও বেশি চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া।
আমদানি-রপ্তানিতে শীর্ষ দেশ
চালের বাজারে বড় আমদানিকারক চীন। নভেম্বর পর্যন্ত ১২ মাসে দেশটি ৪৫ লাখ টন চাল আমদানি করেছে। ফিলিপাইন করেছে বাংলাদেশের চেয়ে ৫০ হাজার টন কম, ২৬ লাখ টন। এ ছাড়া নাইজেরিয়া ১৯ লাখ টন ও সৌদি আরব ১৩ লাখ টন চাল আমদানি করেছে।
বাংলাদেশ নিয়ে ইউএসডিএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ দেশের চালের বাজারে সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ হয়ে উঠেছে ভারত। দাম কম এবং দ্রুত ও সহজে আমদানির সুযোগ থাকায় বাংলাদেশে ভারত থেকে চাল আসছে বেশি। ভারত গত বছর থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় চাল রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। এরপরে রয়েছে ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড।
চালের সঙ্গে গম আমদানিও বাড়ছে। ইউএসডিএর হিসাব বলছে, নভেম্বর পর্যন্ত ১২ মাসে বাংলাদেশের গম আমদানি দাঁড়িয়েছে ৭২ লাখ টন। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চার লাখ টন বেশি।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাহজাহান কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশে যে পরিমাণে উৎপাদিত হচ্ছে, তাতে আমাদের এত চাল আমদানির দরকার নেই। চালের বাজারে কেউ না কেউ কারসাজি করছে।’
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ ডিসেম্বর ১৩, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,