লেখক:দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে। গত বুধবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ সেই সুপারিশ অনুমোদন করেছে। এর মানে, সিডিপির সুপারিশ জাতিসংঘ গ্রহণ করেছে। এ বছর বাংলাদেশের পাশাপাশি নেপাল ও লাওস এই তালিকায় আছে।
এলডিসি থেকে উত্তরণে সিডিপি সাধারণত সুপারিশ করে থাকে। যেসব দেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণের সুপারিশ করা হয়, তাদের মধ্যে কোনো দেশ যদি মনে করে বিভিন্ন অসুবিধার কারণে এই মুহূর্তে এলডিসি থেকে বের হতে পারবে না। উত্তরণের পথে কারও সুনামি, ভূমিকম্প কিংবা অন্য ধরনের সমস্যা থাকতে পারে। সিডিপির সুপারিশ পাওয়া যেকোনো দেশ এমন যুক্তি দেখিয়ে আপত্তি জানাতে পারে। আপত্তি জানালে সিডিপির সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ তা গ্রহণ করে না। এ বছর বাংলাদেশ, নেপাল ও লাওস—কোনো দেশই এই ধরনের আপত্তি করেনি। তাই সিডিপির সুপারিশ চূড়ান্তভাবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্ল্যানারি সভায় অনুমোদন বা গ্রহণ করেছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশসহ তিনটি দেশের এলডিসি থেকে বের হওয়ার চূড়ান্ত সময়সীমার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে গেল।
এলডিসি থেকে উত্তরণ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের জন্য তিন ধরনের পর্যবেক্ষণ আছে। প্রথমত, এ দেশের নীতিনির্ধারকেরা অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হন। আবার ১২ বছরের জন্য শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা চান তাঁরা। এটি মিশ্র বার্তা দেয়। একদিকে নীতিনির্ধারকেরা মুখে সাফল্যের কথা বলেন, অন্যদিকে সুবিধার জন্য ধরনাও দেন। দ্বিতীয়ত, এখন পর্যন্ত যত আলোচনা হচ্ছে, এর বেশির ভাগই তৈরি পোশাকসহ পণ্য রপ্তানি সুবিধা নিয়ে। এর বাইরে বড়জোর ওষুধশিল্প নিয়ে কিছু আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, মেধাস্বত্বের ভিত্তি শক্তিশালী করা, শ্রমের মান—এসব বিষয় খুব বেশি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয় না। আমরা মুখে উন্নয়নের কথা বলি, কিন্তু মনোভাব এখনো পুরোনো এলডিসির মতো।
রপ্তানি পণ্যের বাজার সুবিধার চেয়ে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে অভ্যন্তরীণ বাজার বহুমুখীকরণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সুবিধা পাওয়ার দিকে মনোযোগী হতে হবে। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সম্পদ আহরণে জোর দিতে হবে। তৃতীয়ত, উত্তরণ প্রক্রিয়ায় আগামী পাঁচটি বছর কীভাবে কার্যকরভাবে ব্যবহার করব, সেটা বিবেচনায় আনতে হবে। এ জন্য একটি সমন্বিত পরিকল্পনা করা দরকার। এলডিসি থেকে উত্তরণ নিয়ে আমরা নীতিনির্ধারকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখছি, কিন্তু উদ্যম দেখছি না। নীতিনির্ধারকদের একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা উচিত। এই পরিকল্পনার সঙ্গে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি), পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকে সম্পৃক্ত করতে হবে। পাশাপাশি কার্যকরভাবে ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও উদ্যোগ নিতে হবে।
সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: নভেম্বর ২৬, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,