লেখক: শওকত হোসেন।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য এখন অর্থনীতিতে। ৫০ বছরে বাংলাদেশ নামের কথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হয়ে উঠেছে চমকেভরা জাদুর বাক্স। সাহায্যনির্ভর বাংলাদেশ এখন বাণিজ্যনির্ভর দেশে পরিণত। তবে যাত্রাপথটা সহজ ছিল না। বড় বড় ঝুঁকি নিয়ে অভিনব পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন আমাদের সাহসী উদ্যোক্তারা। এই সাফল্যের পেছনে আরও যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে অর্থনীতিবিদ যেমন ছিলেন, আছেন নীতিনির্ধারকেরাও। মূলত অর্থনীতির এসব অগ্রনায়ক, পথরচয়িতা ও স্বপ্নদ্রষ্টারাই ৫০ বছরে বিশ্বে বাংলাদেশকে বসিয়েছেন মর্যাদার আসনে।
আমরা বেছে নিয়েছি সেই নায়কদের মধ্যে ৫০ জনকে। আমাদের কাছে তাঁরাই অর্থনীতির ‘গেম চেঞ্জার’।
আট দশক আগে কলকাতার হাওড়া স্টেশনে জীবনসংগ্রাম শুরু করেছিলেন আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সেখ আকিজ উদ্দিন। মূলত তিনি খুলনার ফুলতলা থেকে উঠে আসা একজন বাংলাদেশি শিল্পপতি। পঞ্চাশের দশক থেকেই নানা ধরনের ব্যবসা করেছেন। আর দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে একের পর এক ব্যবসা বাড়িয়েছেন, বড় শিল্পপতি হয়েছেন। রাজধানী ঢাকায় থিতু হয়েছেন অনেক পরে। যে কজন উদ্যোক্তা বাংলাদেশকে শিল্পায়নের পথে নিয়ে গেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম সেখ আকিজ উদ্দিন।
শুরু চার টুকরি কমলালেবু থেকেই
সেখ আকিজ উদ্দিনের পৈতৃক বাড়ি খুলনার ফুলতলা উপজেলার বেজেরডাঙ্গা রেলস্টেশনের পাশে মধ্যডাঙ্গা গ্রামে। এই গ্রামেই তাঁর জন্ম ১৯২৮ সালে। পিতা শেখ মফিজউদ্দিনের একমাত্র সন্তান ছিলেন। বাবাও ব্যবসায়ী ছিলেন। নারকেল এবং ধান-চালের ব্যবসা ছিল তাঁর। যশোরের নোয়াপাড়া থেকে নারকেল কিনে রংপুর-দিনাজপুরে চালান দিতেন। ছোটবেলায় আকিজ দুষ্টু ও চঞ্চল প্রকৃতির ছিলেন, হইচই ও অন্য ছেলেদের সঙ্গে মারামারি ও খেলাধুলা করেই সময় কাটাতেন। মধ্যডাঙ্গা হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন তিনি। দুরন্তপনার জন্য একদিন তাঁর বাবা কঠোর শাসন করলে আকিজ উদ্দিন বাড়ি থেকে পালান। বাবার পকেট থেকে মাত্র ১৭ টাকা নিয়ে কলকাতাগামী এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠে পড়েন। সময়টা ছিল ১৯৪০ সাল, তাঁর বয়স তখন মাত্র ১২ বছর।
কলকাতায় কোনো আত্মীয়স্বজন ছিল না। সারা দিন এখানে–ওখানে ঘুরে শিয়ালদহ স্টেশনে এক পয়সায় কাগজ কিনে ইটের ওপর মাথা রেখে ঘুমাতেন। কিন্তু কোনো আয় নেই। একদিন বড় বাজারের রামলোচন মল্লিক স্ট্রিটে দেখলেন নিলামে কমলালেবু বিক্রি হচ্ছে। একপর্যায়ে নিজেও নিলামে অংশ নিয়ে আড়াই টাকায় চার টুকরি কমলালেবু কেনেন। সে সময়ে হাওড়া ব্রিজের কাজ মাত্রই শেষ হয়েছে, ঘষামাজার কাজ চলছে। এক কুলিকে দুই পয়সা ভাড়া দিয়ে সেই কমলা সেখানে আনলেন। আকিজ উদ্দিনের ব্যবসায়ী জীবন সেই শুরু। সেখানে কমলালেবু বিক্রি করার জন্য পুলিশকে দিতে হয় আরও দুই পয়সা। প্রথম দিনে ওই কমলা বিক্রি করে লাভ হয় ১০ পয়সা। এক মাস সেই ব্যবসা করে তিনি মূলধন সংগ্রহ করলেন প্রায় ৩০০ টাকা। তখনো তিনি শিয়ালদহ স্টেশনে থাকেন এবং দুই পয়সার ছাতু খেয়ে ক্ষুধা মেটান।
একদিন জাকারিয়া স্ট্রিটের এক হোটেলমালিক সদয় হয়ে তাঁকে নিজের হোটেলে নিয়ে আসেন। হোটেলে আসার পর কমলালেবুর ব্যবসা ছেড়ে দেন। তখন কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় চার চাকার ঠেলাগাড়ির ওপর বিভিন্ন পণ্য সাজিয়ে ‘যা নেবেন সাড়ে ছয় আনা’-এর দোকান বেশ জনপ্রিয় ছিল। আকিজ উদ্দিন সাড়ে ছয় আনার সেই দোকান দেন। দোকানিরা হিন্দিতে ছড়া কেটে পণ্য বিক্রি করতেন। আকিজ উদ্দিন সেই ছড়াও মুখস্থ করেন। প্রায় এক বছর পরে বিনা অনুমতিতে রাস্তায় দোকান বসানোর অভিযোগে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে এবং বিচারে ৩ দিনের জেল ও ৫ টাকা জরিমানা করা হয়। জেল থেকে বের হয়ে এই ব্যবসাও তিনি ছেড়ে দিলেন।
এভাবে একদিন একজন পেশোয়ারি ব্যবসায়ীর সঙ্গে দেখা হলে তিনি তাঁর সঙ্গে আফগানিস্তানের পেশোয়ার চলে যান। সেখানে আবার ফলের ব্যবসা শুরু করেন। পাইকারি বাজার থেকে আঙুর, বেদানা কিনে খুচরা বাজারে বিক্রি করতেন। তিনি পশতু ভাষাও শিখে নেন। বাড়ি ভাড়া করেও থাকতে শুরু করেন। কিন্তু ওই বাড়িওয়ালা নিজের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিতে চাইলে আকিজ উদ্দিন পেশোয়ার ত্যাগ করেন। তখন তাঁর মূলধন প্রায় সাড়ে ৪ হাজার টাকা। এরপর কিছুদিন দিল্লি ছিলেন, কিন্তু ভালো না লাগায় আবার কলকাতা ফিরে আসেন। এবার তিনি তরিতরকারির ব্যবসা শুরু করেন। সময় তখন ১৯৪৫, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে। এবার তিনি নিজের গ্রামে ফিরে এলেন, সঙ্গে আট হাজার টাকা। বাড়ি ফেরার তিন মাস পর তাঁর পিতা মারা যান আর পিতার মৃত্যুর এক বছর মা–ও মারা যান। আকিজ উদ্দিন ২০ বছর বয়সে, ১৯৪৮ সালে বিয়ে করেন।
আকিজ উদ্দিন পরিবারের প্রধান হিসেবে ব্যবসার হাল ধরেন। নিতাই চন্দ্র দাস নামে তাঁর একজন বন্ধু ছিলেন। তাঁর পিতা বিধুভূষণ দাস বিড়ি প্রস্তুত করতেন এবং রেলস্টেশনে তাঁদের একটা মুদিদোকান ছিল। ‘বিধুর বিড়ি’ বেশ জনপ্রিয় ছিল। নিতাইয়ের সঙ্গে বিড়ির তামাক কেনার জন্য তিনি মাঝেমধ্যে খুলনায় যেতেন। এভাবে তিনি বিড়ি ব্যবসায় আকৃষ্ট হন। ১৯৫২ সালে বেজেরডাঙ্গা রেলস্টেশনের পাশে তিন কাঠা জমি কিনে আকিজ উদ্দিন নিজেই মুদিদোকান দেন এবং নিজের বিড়ির ব্যবসা শুরু করেন।
১৯৫৪ সালের দিকে আকিজ উদ্দিনের দোকানের মূলধন দাঁড়ায় প্রায় ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু এক শীতের রাতে আগুনে পুড়ে যায় দোকানটি। পরে গ্রামবাসীই সদয় হয়ে বিনা পারিশ্রমিকে দোকানঘরটি আবার নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। নতুন করে দোকান চালু হলে দোকানে মালামালের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় এক লাখ টাকা। বিড়ি বিক্রিও বাড়তে থাকে। শুরু থেকেই বিড়ির নামকরণ ছিল ‘আকিজ বিড়ি’। খুলনায় তাঁর বিড়ির ব্যাপক চাহিদা ছিল।
১৯৫৪ সালেই বিশেষ এক প্রয়োজনে আকিজ উদ্দিন যশোর জেলার শার্শা থানার নাভারনে আসেন। জায়গাটি বেশ পছন্দ হয়ে যায়। দেখতে পেলেন এখানে ধান বেশ সস্তা। তখন নাভারন থেকে ধান কিনে যশোরের নোয়াপাড়ার আড়তে বিক্রি করতে শুরু করেন। এ সময়ে মোহাম্মদ আলী নামে খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলের একজন পাট ক্রয় কর্মকর্তা আকিজ উদ্দিনকে পাটের ব্যবসায়ে উৎসাহ দেন। এরপর তিনি পাট ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৫৬ সালে আকিজ উদ্দিন সপরিবার সাভারে এসে বসবাস শুরু করেন। ১৯৬২ সালে খুলনার দৌলতপুরে স্থানীয় একজন পাট ব্যবসায়ীকে অংশীদার করে ফতেহা জুট বেলিং নামে একটি পাটের আড়ত খোলেন। ১৯৬২ সাল থেকে তিনি ধান-চালের ব্যবসা বন্ধ করে দেন। তবে নতুন করে ডাল ও গুড়ের ব্যবসা শুরু করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তিনি নাভারনেই ছিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে এ সময় তিনি লাঞ্ছিত হন, এমনকি গুলি করার জন্য লাইনেও দাঁড় করানো হয়েছিল। তারপরও তিনি বেঁচে ফিরে আসেন। জানা যায়, আফগানিস্তানের পেশোয়ারে ছিলেন বলে পশতু ভাষা শিখেছিলেন। পাকিস্তানি বাহিনী যখন তাঁকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তিনি পশতু ভাষায় সেনাদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্বাধীনতার পরে তিনি টেন্ডু পাতার পরিবর্তে কাগজের বিড়ি তৈরি শুরু করেছিলেন। আর ১৯৭৪ সাল থেকে ফিলটার বিড়ি তৈরি শুরু হয়। ১৯৭৬ সালে একবার তিনি অন্য কাজে ঢাকায় আসেন। তখনো আকিজ বিড়ি ঢাকার বাজারে পাওয়া যেত না। ঢাকায় পাওয়া যায় এমন ৩১ রকমের বিড়ি সংগ্রহ করে সব খেয়ে দেখলেন। বুঝলেন যে আকিজ বিড়ির মান মোটেই খারাপ নয়। এরপর তিনি ঢাকায় তা বাজারজাত শুরু করেন এবং বাজার দখল করেন।
১৯৭৭ সালে সরকার পুঁজি প্রত্যাহার কর্মসূচি শুরু করলে টঙ্গীর ঢাকা টোব্যাকো ফ্যাক্টরি লিমিটেড কিনে নেন ৮০ লাখ টাকায়। তাদের কে-২ ব্র্যান্ড সিগারেটের প্রচুর চাহিদা ছিল বাজারে। পরে ৭৫ লাখ টাকায় কেনেন এশিয়ান টোব্যাকো নামের আরেকটি কারখানা। সেখ আকিজ উদ্দিন ১৯৭৯ সালে যশোর জেলার নোয়াপাড়ায় অবস্থিত এস এ এফ ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড নামের একটি চামড়ার ট্যানারির শেয়ার কিনেছিলেন। আগে এর মালিক ছিলেন একজন ব্রিটিশ নাগরিক। ১৯৮০ সাল থেকে তিনি যশোরে ইটভাটা তৈরি করে ইটের ব্যবসা শুরু করেন। একই বছর ১২টি ট্রাক নিয়ে শুরু করেন আকিজ ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি নামে পরিবহন ব্যবসা। এ সময় যুক্ত হন পেট্রলপাম্পের ব্যবসায়, নাম ছিল আকিজ পেট্রোলিয়াম। আকিজ উদ্দিন লিমিটেডের মাধ্যমে আগে থেকেই তিনি যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, পোল্যান্ডে কাঁচা পাট রপ্তানি করতেন। ১৯৭৯ সালে একটি যাত্রীবাহী এবং দুটি কার্গো লঞ্চ নিয়ে খোলেন আকিজ নেভিগেশন কোম্পানি। ১৯৭৪ সালে বড় ছেলের নামে যশোরের নাভারনে শুরু করেছিলেন নাসির জর্দা ফ্যাক্টরি। নাভারন প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজেজ লিমিটেডও ছিল তাঁরই কোম্পানি।
এই ছিল ১৯৮৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় গবেষণা সংস্থা থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের কয়েকজন শিল্পোদ্যোগীর জীবনকাহিনী’ বইতে থাকা সেখ আকিজ উদ্দিনের জীবনের কাহিনি। তখনো তিনি বেঁচে ছিলেন। তিনি মারা যান ২০০৬ সালে, ৭৭ বছর বয়সে। বাবার পকেট থেকে ১৭ রুপি নিয়ে বাড়ি ছেড়েছিলেন সেখ আকিজ উদ্দিন, কমলালেবু বিক্রি করে ১০ পয়সা মুনাফা করা ছিল তাঁর প্রথম আয়, মারা যাওয়ার সময় রেখে যান ৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা, আর তাঁর সন্তানেরা সেটাকে ১৪ হাজার কোটিতে উন্নীত করেছেন।
ছেলের চোখে বাবা
প্রথম আলোতেই ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর প্রকাশিত হয়েছিল সেখ আকিজ উদ্দিন ও আকিজ গ্রুপ নিয়ে একটি প্রতিবেদন। সেখ আকিজ উদ্দিনের ছেলে আকিজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেখ বশির উদ্দিনই এ নিয়ে কথা বলেছিলেন। আকিজ গ্রুপের বর্তমান অবস্থার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি। ‘বাংলাদেশের কয়েকজন শিল্পোদ্যোগীর জীবনকাহিনী’ বইয়ে তাঁর বাবাকে নিয়ে লেখা ঘটনাগুলোর কথা প্রথম আলোকে তিনিও বলেছিলেন। তবে অঙ্কের হিসাবের কিছু পার্থক্য ছিল।
আকিজ উদ্দিনের ‘ট্রেডমার্ক’ পোশাক ছিল সাদা পাঞ্জাবি, সঙ্গে মোটা ফ্রেমের চশমা। প্রথম দিকে ভেসপা (দুই চাকার মোটরযান) চালাতেন। তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে তেজগাঁওয়ে আকিজ ভবনের সামনে সেই ভেসপা সাজিয়ে রাখা আছে। ১৯৭৭ সালের পর নিজের জন্য কোনো গাড়ি কেনেননি। ছেলে সেখ বশির উদ্দিনের ভাষায়, ‘বাবা ছিলেন ধনী কোম্পানির গরিব মালিক। আমরাও যে খুব বিলাসী জীবন যাপন করি, তা-ও নয়। বাবা আমাদের সম্পদকে দায়িত্বের সঙ্গে নিতে শিখিয়েছেন।’
মূলত নব্বইয়ের দশকেই একের পর এক ভারী শিল্পের কারখানা করেছিলেন সেখ আকিজ উদ্দিন। তখনই গড়ে তোলেন আকিজ গ্রুপ। এখন আকিজের সিমেন্ট, সিরামিক, খাদ্যপণ্য, বস্ত্রকল, প্লাস্টিক, পাট, প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, পার্টিকেল বোর্ড, জাহাজে পণ্য পরিবহন, চা-বাগান, কৃষিভিত্তিক শিল্পসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা রয়েছে। গ্রুপের অধীনে রয়েছে ২৬টি কোম্পানি। কাজ করেন ৩৫ হাজার কর্মী।
আকিজ উদ্দিনের ১৫ জন সন্তান। ১০ ছেলে ও ৫ মেয়ে। আকিজ উদ্দিনের ছেলেরাই শুধু ব্যবসায় যোগ দিয়েছেন। নব্বইয়ের দশকে ১০ সন্তানের মধ্যে ব্যবসার ভাগ করে দেন আকিজ উদ্দিন নিজেই। বড় ছেলে সেখ মহিউদ্দিন চিকিৎসক, তিনি আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল পরিচালনা করেন। দ্বিতীয় ছেলে সেখ মমিন উদ্দিন সম্প্রতি মারা গেছেন। তিনি ট্যানারি, চামড়াসহ বিভিন্ন ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। তৃতীয় ছেলে সেখ আমিন উদ্দিনের তথ্যপ্রযুক্তি, গাড়িসহ বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে। চতুর্থ ছেলে সেখ আফিল উদ্দিন সাংসদ। পঞ্চম ছেলে সেখ আজিজ উদ্দিনের পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট খাত, কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা রয়েছে। সেখ নাসির উদ্দিন, সেখ বশির উদ্দিন, সেখ জামিল উদ্দিন, সেখ জসিম উদ্দিন ও সেখ শামীম উদ্দিন একসঙ্গে ব্যবসা করেন। সব ভাইয়ের ব্যবসা মিলিয়ে আকার অনেক বড়।
২০০০ সাল পর্যন্ত আকিজ গ্রুপের ব্যবসার অর্ধেকটা জুড়েই ছিল তামাকসংশ্লিষ্ট পণ্যের ব্যবসা। ২০১৮ সালে জাপান টোব্যাকোর কাছে তামাক ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসা বিক্রি করে দেয় আকিজ। দাম পায় প্রায় ১২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সেই টাকা দিয়ে কী করেছে আকিজ? সেখ বশির উদ্দিন জানান, টাকাটি দীর্ঘ সময় ধরে ধাপে ধাপে দেবে জাপান টোব্যাকো। টাকার একটা অংশ যাবে সরকারের কর হিসেবে। যে টাকা পাওয়া গেছে, তা থেকে কর দিয়ে বাকিটা নতুন ব্যবসা অধিগ্রহণ ও বর্তমান ব্যবসার সম্প্রসারণে ব্যয় করেছে আকিজ। যেমন ৭২৫ কোটি টাকায় তারা জনতা জুট মিল কিনেছে। মালয়েশিয়ায় একটি এমডিএফ বোর্ডের কারখানা অধিগ্রহণ করেছে। দেশে তৈজসপত্র ও কাচের কারখানায় বিনিয়োগ করেছে।
তামাক ব্যবসা কেন ছেড়ে দেওয়া, তার একটা কারণও জানান বশির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের যে পরিকল্পনা, তার সঙ্গে তামাক মেলে না; বরং ব্যবসার ভাবমূর্তি ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। তাই ছেড়ে দেওয়া।’
ছেলের নিজের কথা
বশির উদ্দিন গত বছর প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘বাবা সব সময় কর্মীদের ভালোবাসতেন। ১৯৮৮ সালে ম্যাট্রিক পাস করে আমি বাবার ব্যবসায় যোগ দিই। পদ ছিল স্টেশনারি খরিদকারী। তখন আমার মূল্যায়ন আলাদা কিছু ছিল না। কারও সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ হলে বাবা সব সময় কর্মীর পক্ষ নিতেন। অন্যান্য কর্মীর মতো আমারও বার্ষিক কাজের মূল্যায়ন হতো। সেই অনুযায়ী বেতন বাড়ত। ছেলে হিসেবে আলাদা কোনো সুবিধা ছিল না।’
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ নভেম্বর ১৩, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,