রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের অন্যতম সফল উদ্যোক্তা আনিসুর রহমান সিনহা। তাঁর নিজ হাতে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান ওপেক্স অ্যান্ড সিনহা টেক্সটাইল গ্রুপ এক সময় ছিল দেশের শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। আশির দশকে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করতেন ৪৫ হাজার শ্রমিক। রপ্তানি হতো হাজার কোটি টাকার পোশাক। তবে তা এখন কেবলই অতীত। কয়েকবছর ধরে রুগ্ন হতে হতে গত সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে কাঁচপুরের সবগুলো কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে ওপেক্স অ্যান্ড সিনহা টেক্সটাইল গ্রুপ কর্তৃপক্ষ।
গত ১৮ অক্টোবর ওপেক্স অ্যান্ড সিনহা টেক্সটাইল গ্রুপের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (প্রশাসন) বানিজ আলী স্বাক্ষরিত এক নোটিশে বলা হয়, ওপেক্স অ্যান্ড সিনহা টেক্সটাইল গ্রুপের স্বত্বাধিকারী ২০১২ সাল থেকে কাঁচপুরের সব কারখানায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তারপরও ঋণ ও জমিজমা বিক্রির মাধ্যমে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য খরচ দিয়ে কারখানাগুলো চালু রেখেছিলেন। কিন্তু করোনা মহামারিতে ক্রয়াদেশের অভাব দেখা দেয়। তা ছাড়া শ্রমিক-কর্মচারীদের বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি নিম্নদক্ষতা ও সময়ে সময়ে কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার কারণে কারখানার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। এ অবস্থায় মালিকের আর্থিক অবস্থার চরম অবনতি ঘটেছে। বর্তমানে কারখানাগুলো আর চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
কারখানা চালিয়ে রাখার মতো আর্থিক সংগতি বা সামর্থ্য মালিকের নেই উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়, এমন পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে শিল্প ও শিল্পসংশ্লিষ্ট সবার নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর ২৮(ক) ধারা অনুযায়ী ওপেক্স গ্রুপের কাঁচপুর শাখার সব পোশাক কারখানা এবং ওয়াশিং প্ল্যান্টসহ সংশ্লিষ্ট সব ইউনিট ১৯ অক্টোবর থেকে স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হল। বকেয়া বেতনসহ পাওনাদি পরিশোধের ক্ষেত্রে শ্রম মন্ত্রণালয় বা শ্রম অধিদপ্তর , বিজিএমইএ, শ্রমিক প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিশোধ করা হবে।
আনিসুর রহমান ১৯৮৪ সালে পোশাক কারখানা স্থাপন করেন। ঢাকা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কাঁচপুরে বস্ত্র ও পোশাক উৎপাদনের বড় একটি কমপ্লেক্স গড়ে তুলেছিল তাঁর ওপেক্স অ্যান্ড সিনহা টেক্সটাইল গ্রুপ। সেখানে শার্ট, সোয়েটার, ডেনিম, নিট পোশাক ইত্যাদি তৈরি হতো। ৪৩ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এই কমপ্লেক্স এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ বস্ত্র ও পোশাক কমপ্লেক্স হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে। যদিও পরে কমপ্লেক্সটিতে কর্মরত শ্রমিক সংখ্যা ১৩-১৪ হাজারে নেমে এসেছিল।
কাঁচপুর শাখার সব পোশাক কারখানা এবং ওয়াশিং প্ল্যান্টসহ সংশ্লিষ্ট সব ইউনিট বন্ধের নোটিশের অনুলিপি পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিকেএমইএ ও বিজিএমইএর সভাপতির পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার, নারায়ণগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, শ্রম অধিদপ্তর, শিল্প পুলিশকে পাঠিয়েছে ওপেক্স অ্যান্ড সিনহা টেক্সটাইল গ্রুপ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের আজকের এই অবস্থানে আসার পেছনে আনিসুর রহমান সিনহা এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত ওপেক্স অ্যান্ড সিনহা টেক্সটাইল গ্রুপের অনেক অবদান রয়েছে। ফলে ওপেক্সের মতো কারখানা হারিয়ে যাওয়া খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
মোহাম্মদ হাতেম বলেন, কয়েকটি কারণে রুগ্ন হয়েছে গ্রুপটি। তার মধ্যে অন্যতম হল, দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও সেখানকার একটি গোষ্ঠী শ্রমিকদের আরও পাওয়ার দাবিতে উসকানি দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করাতেন। উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হতো। আবার কারখানা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারাও সেগুলো সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনা করতে পারেননি। মূলত শ্রমিকসংখ্যা বেশি হওয়ায় সেটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।
ওপেক্স অ্যান্ড সিনহা টেক্সটাইল গ্রুপের কাঁচপুর শাখার শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা ও ক্ষতিপূরণ দিতে ৪৫-৫০ কোটি প্রয়োজন বলে জানান মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, জমিজমা বিক্রি করে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধের চেষ্টা করছেন আনিসুর রহমান সিনহা।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ অক্টোবর ২২, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,