বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস উপলক্ষে গ্রামীণফোন এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশ যৌথভাবে আয়োজন করেছে ‘গেট ফিউচার রেডি’ শিরোনামে মাস্টারক্লাস সিরিজ। তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে ‘গ্লোবাল প্রফেশনালস: থিঙ্ক বিয়ন্ড বাউন্ডারিজ’ বিষয়ে আলাপ করেছেন রিদওয়ান কবীর। তিনি ভারতের দিল্লির আইআইটি থেকে পড়াশোনা শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান। এখন কাজ করছেন এটিঅ্যান্ডটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ডালাস থেকে অংশ নিয়েছেন এই আয়োজনে। অনুষ্ঠানে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন গ্রামীণফোনের ইনহাউসস্কিল একাডেমি ‘গ্রামীণফোন এক্সপ্লোরার’ প্রোগ্রামের ৩০ জন তরুণ। অনুষ্ঠান শুরুর আগেই অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে প্রশ্ন নেন। সেই প্রশ্নগুলোর ওপর ভিত্তি করেই আলোচনা শুরু করেন রিদওয়ান। প্রথম আলো ও ইউএনডিপির ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি প্রচারিত হয়েছে এই অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শাম্মু ফারহানা।
‘গ্লোবাল’ আর ‘প্রফেশনাল’ শব্দ দুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হুট করে এসে একটা আইডিয়া পৃথিবী বদলে দিতে পারে। সব প্রতিষ্ঠিত আইডিয়ার জন্য সেটা একটা থ্রেট। চেসকিয়ার তখন খুবই তরুণ। তাঁর বাড়িভাড়া দেওয়ার টাকা নেই। তখন তিনি ভাবলেন, ‘আমার তো একটা ঘর আছে। আমি সেটা ভাড়া দিই। সেই ভাড়া থেকে আমি নিজের বাসাভাড়া দেব। আমি যা খাই, তা–ই খাওয়াব।’ এভাবেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় হোটেল—চেইন হোটেলের ধারণাটা আসে। বাড়ির ফাঁকা থাকা ঘর। যেখানে পর্যটকদের থাকতে দেওয়া হয়। ট্রাভিস কালানিক ক্লাস শেষে বন্ধুদের আড্ডায় বলেছিলেন, ‘এখন যদি এখান থেকেই আমি ট্র্যাক্সি কল করতে পারতাম!’ গ্যারেট ক্যাম্পের সঙ্গে মিলে তাঁরা গড়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ট্যাক্সি কোম্পানি। যদিও তাঁদের নিজেদের একটাও ট্যাক্সি নেই। উবার এখন ৭০টি দেশের ৬০০ শহরে সার্ভিস দিচ্ছে। এগুলো গ্লোবাল ডিসরাপটার্স।
মডার্ন কমিউনিকেশন কোম্পানি, যেমন স্কাইপ, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ—এগুলো টেলিফোন, মুঠোফোন, মেইলকে রিপ্লেস করছে। ফেসবুক কিনে নিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপকে। মাইক্রোসফট কিনে নিয়েছে স্কাইপকে। কেননা, তা না হলে তারা টিকে থাকতে পারবে না। আলিবাবা, ফেসবুক, নেটফ্লিক্স, গুগল, অ্যাপল বা আমাজনও তা–ই। আজ পর্যন্ত আমরা বুঝতে পারি না, গুগল এত সার্ভিস দেয়, সে কীভাবে এত টাকা আয় করে! গুগল ইউটিউব কিনে নিয়েছে। এখন সারা বিশ্বের সব জায়গার ওপর নজরদারি করছে গুগল ম্যাপ দিয়ে। যখন পোকেমন এসেছে, তখন আমাজনে এমন ডিমান্ড হয় যে তড়িঘড়ি করে আমাজন পোকেমনের সব পর্ব কিনে নেয়। বিষয়টা হচ্ছে, একটা আইডিয়া, যার সম্ভাবনা আছে, সেটাকে ঠিকমতো প্রতিষ্ঠা করায় তা রাজত্ব করছে।
আগামী দিনের বিশ্ব কেমন হবে? কিছুদিন পর এমন হবে যে বিশ্বের মানুষের একটা বড় অংশের বয়স হবে ৬৫ বা এর বেশি। এই তরুণদের বয়সই তখন সে রকম হবে। কর্মদক্ষতা কমবে। স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজন বাড়বে। মানসিক স্বাস্থ্য একটা গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছে যাবে। অভিবাসন বাড়বে। বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়বে। পানি, গ্যাসের সংকট বাড়বে। জিডিপি বাড়বে। সব সময়ের মতো সমস্যা থাকবে। টেনশন বাড়বে। এর মধ্যেই উদ্যোক্তারা বের হবেন, সফল হবেন। নতুন প্রযুক্তি আসবে। ‘হি–শি’ না–ও থাকতে পারে। সব জেন্ডারের জন্য একটা শব্দ থাকবে। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যবিত্তের সংখ্যা বাড়বে। প্রয়োজন পূরণে নতুন প্রযুক্তি আসবে। সারা বিশ্ব ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ করবে। সবাই বিশ্বের সেরাদের চাইবে তাঁদের উদ্যোগের সঙ্গী করতে। সেখানে বাংলাদেশের সরব উপস্থিতি থাকতে হবে। কেননা, প্রযুক্তি তো আর এমনি এমনি আসে না। তার পেছনে থাকে মেধাবী মাথা। এরপর চিকিৎসাব্যবস্থা এমন জায়গায় যাবে যে একটা স্ক্যানের মাধ্যমেই শরীরের অনেক অনেক তথ্য চলে আসবে। সাকিব আল হাসান যখন একটা চার মারলেন, ছয় মারলেন, তখন তাঁর শরীরের তাপমাত্রা কত ছিল; কত বেগে, অ্যাঙ্গেলে মারলেন, কী টেকনিক ব্যবহার করলেন—সব হয়তো জানা যাবে। আমাদের সময়ের সঙ্গে চলার সর্বোচ্চ সম্ভাব্য প্রস্তুতি থাকতে হবে।
বাংলাদেশ যেভাবে চলছে, সেভাবেই যদি চলতে থাকে, তাহলে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম অর্থনীতির দেশ হবে। গ্লোবাল মার্কেটের সংস্কৃতিটা জানা খুবই জরুরি। তাহলে আমাদের জন্য কোনটা ভালো হবে, সেটা বোঝা সহজ হবে। আমাদের সেটাই নিতে হবে। আমাদের দেশে এত ভালো নেতৃত্ব আছে, উদ্যোগ আছে, ভাবনা আছে, আমাদের সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে হবে। এভাবে তাঁরা বাংলাদেশকে ছড়িয়ে দেবেন। এমন না যে অক্সফোর্ড, হার্ভার্ড, কেমব্রিজে পড়তেই হবে, এমন নয়। আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক পিছিয়ে, তাতে কিছু আসে যায় না। কেননা, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা যখন বাইরে পড়তে যান, তখন খুবই ভালো করেন। ভালো স্কুলিং হলে ভালো একটা সার্কেল হয়। এটুকুই। বাংলাদেশকে ‘আন্ডারএস্টিমেট’ করার কোনো সুযোগ নেই। এ দেশের জিডিপি, পোশাকশিল্প খুবই ভালো করছে। নারী–পুরুষের বৈষম্য কমছে। বাংলাদেশের প্রায় সবখানে থ্রি–জি পৌঁছে গেছে। আমাদের স্যাটেলাইট আছে। এটা একটা গ্লোবাল প্লেয়ারের বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় টিকে আছে, থাকতে হবে।
বাংলাদেশের ভাসমান মার্কেট একটা দারুণ ব্যাপার। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নদীর পানির ক্ষতি না করে এভাবে ব্যবসা করা, বাজার বসানো একটা রোমাঞ্চকর ধারণা। আমাদেরকে আমাদের চরিত্র ধরে রাখতে হবে। সব সংস্কৃতির প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। সবার মতামতকে গ্রহণ করার মানসিকতা থাকতে হবে। আমাদের একটা ভয় হলো, আমরা হেরে যেতে ভয় পাই। আমাদের ভেতরে জাতিগতভাবে একটা হীনম্মন্যতা আছে। এসব ভেঙে নিজের ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে। নিজের শক্তিশালী আর দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করতে হবে। একই গতিতে লেগে থাকতে হবে। ‘ফিয়ার অব ফেইলিয়র’ আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু। এটাকে জয় করা আমাদের প্রথম আর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এরপর বাকি সবকিছুই সহজ হয়ে যাবে।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ অক্টোবর ২০, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,