লেখক: সানাউল্লাহ সাকিব।
টানা চার মাস ধরে দেশে প্রবাসীদের পাঠানো আয় কমছে। তবে রপ্তানিতে হয়েছে নতুন রেকর্ড। এর বিপরীতে বাড়ছে আমদানি ব্যয়। আমদানি খরচের তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে করোনার টিকা। ফলে তিন মাস ধরে বাড়ছে টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম। অর্থাৎ দিনে দিনে দুর্বল হচ্ছে বাংলাদেশি টাকা। ডলারের দামের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে। এরপরও দাম ধরে রাখা যাচ্ছে না। সর্বশেষ গত বুধবার দাম বেড়ে হয়েছে ৮৫ টাকা ৬০ পয়সা। খোলাবাজারে তা আরও বেশি, যা প্রতি ডলার ৮৮ টাকার বেশি।
ডলারের মূল্য বৃদ্ধির জন্য ব্যাংকাররা কয়েকটি বিষয়কে চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো করোনার কারণে অনেক আমদানি বিল যে বিলম্বে পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, এতে একসঙ্গে অনেক আমদানি বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। অন্যদিকে রপ্তানি যা হচ্ছে, তার আয় প্রত্যাবাসনে বাড়তি সময় দেওয়া আছে। এসব কারণে ডলারের ওপর চাপ পড়েছে। পণ্য ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ডলারের মূল্যবৃদ্ধি শিগগিরই থামবে না বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তা।
পণ্য আমদানির খরচ দ্বিগুণ হয়েছে। পরিবহন খরচও বেড়েছে। সে তুলনায় রপ্তানি বাড়ছে না, প্রবাসী আয়ও কমতির দিকে। এ জন্য ডলারের দাম বাড়ছে।
মোহাম্মদ শামস উল ইসলাম, এমডি, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড
এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমদানি হঠাৎ বেড়ে গেছে। অপর দিকে কমে গেছে প্রবাসী আয়। মানুষ বিদেশভ্রমণ শুরু করেছে। যেসব আমদানি বিল বকেয়া ছিল, তা এখন পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। তবে সে তুলনায় জোগান মিলছে না। এতে দাম বাড়ছে। বৈশ্বিক বাজারে পণ্যমূল্য ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ডলারের ওপর চাপ আরও কিছুদিন থাকবে, যার প্রভাব ডলারের দামের ওপর পড়বে।’
জানা গেছে, গত বছরের করোনা শুরুর পর টাকার বিপরীতে ডলারের দামে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর আমদানি বিল পরিশোধে বাড়তি সময় দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রপ্তানির অর্থ ফেরত আনতেও দেওয়া হয় বাড়তি সময়। এসব সুবিধা এখনো বহাল আছে। এদিকে সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় কমে প্রায় ২০ শতাংশ। আয় কমার প্রবণতা এখনো আছে।
আর গত আগস্টে আমদানিতে রেকর্ড হয়। এক মাসে ৬৫৮ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৩ শতাংশ বেশি। আর জুলাই-আগস্ট সময়ে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণপত্র খোলা বাড়ে ৪৮ দশমিক ৬০ শতাংশ ও ঋণপত্র নিষ্পত্তি বাড়ে ৪৫ দশমিক ৩১ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৯ জুলাই প্রতি ডলারের মূল্য ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। ১৯ আগস্ট তা বেড়ে হয় ৮৫ টাকা। গত বুধবার ব্যাংকগুলোর কাছে ৮৫ টাকা ৬০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল আন্তব্যাংকে ডলারের মূল্য ছিল ৮৫ টাকা ৬৫ পয়সা। আর ব্যাংকগুলো আমদানি বিল পরিশোধে ডলারের মূল্য ধরে ৮৫ টাকা ৭০ পয়সা।
ডলারের দামের উচ্চ বৃদ্ধি ঠেকাতে গত আগস্টে বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বুধবার পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১১০ কোটি টাকা ডলার বিক্রি করে। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২০-২১ অর্থবছরেই ব্যাংকগুলো থেকে ৭৯৩ কোটি ডলার কিনেছিল। সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়ছে। গত বুধবার রিজার্ভ কমে হয় ৪ হাজার ৬০৮ কোটি ডলার। গত সেপ্টেম্বর শেষেও রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৬২২ কোটি ডলার।
ডলারের চাহিদা থাকা শীর্ষ ব্যাংকগুলোর মধ্যে অগ্রণী, রূপালী ও জনতা অন্যতম। এসব ব্যাংকের আমদানি তালিকায় বড় গ্রাহক বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন। পাশাপাশি রূপালী ব্যাংকের আমদানি খরচের তালিকায় এখন যুক্ত হয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের করোনার টিকা।
অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস উল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘একই পণ্য আনতে এখন দ্বিগুণ খরচ করতে হচ্ছে। পরিবহন খরচও বেড়ে গেছে। তবে সে তুলনায় রপ্তানি বাড়ছে না, প্রবাসী আয়ও কমতির দিকে। এ জন্য ডলারের দাম বাড়ছে। সামনে বড়দিনের অনুষ্ঠান, এ জন্য পোশাক ও চিংড়ির অনেক ক্রয়াদেশ আছে। তবে কনটেইনারের অভাবে পণ্য পাঠাতে সমস্যা হচ্ছে। এদিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, আগে যেসব ব্যাংক ডলার বিক্রি করত, তারাই এখন কেনার জন্য আসছে। তাদের সতর্ক করা হয়েছে, কৃত্রিম সংকট তৈরি করলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ অক্টোবর ১৫, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,