Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

লালবাহাদুর শাস্ত্রী যিনি শাস্ত্রীজী- পর্ব-এক

Share on Facebook

লেখা:স্বপন সেন।

রাত পোহালেই দোসরা অক্টোবর, জাতির জনকের জন্মদিন। কিন্তু ওনার আড়ালে চাপা পড়ে গেছে এক খর্বকায় অথচ বজ্রের মতো দৃঢ় মানুষের জন্মদিন। বিদেশের মাটিতে মৃত দেশের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী। সত্যিই কি স্বাভাবিক মৃত্যু তাঁর, নাকি হয়েছিল #তাসখন্দে_খুনখারাপি..

পঁয়ষট্টির পাক ভারত যুদ্ধ শেষ….. সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় ১৯৬৬-এর ৪ জানুয়ারি তাসখন্দ শহরে ভারত পাকিস্তান বৈঠক শুরু হল৷ প্রায় এক সপ্তাহ দড়ি-টানাটানির পরে দশ তারিখ বিকেলে শাস্ত্রীজি ও আয়ুব খান সমঝোতা চুক্তি সই করলেন।
ঐদিন বৈঠকের সাফল্য উদযাপনের জন্য সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী কোসিগিন একটি পার্টির আয়োজন করেন৷ সেখানে নাচ গান খাদ্য-পানীয় কোনও কিছুর অভাব ছিল না৷ উপস্থিত ভারতীয় কূটনীতিকরা বলেন শাস্ত্রীজিকে সেখানে খুবই প্রফুল্ল মনে হচ্ছিল৷ তিনি ঘুরে ঘুরে সকলের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলেছিলেন৷ তবে রাত ন’টা বাজতেই তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা পার্টি থেকে বিদায় নিয়ে তাঁদের বাসস্থানে ফিরে যান৷ (তাসখন্দ-দিল্লির সময়ের ব্যবধান মাত্র আধ ঘণ্টা)৷

শাস্ত্রীজীর থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল একটি বিশাল ভিলায়, রাশিয়াতে যাকে ‘ডাচা’ বলা হয়৷ ভারতীয় প্রতিনিধিদল ছিলেন একটু দূরে এক হোটেলে৷ ডাচা-য় ওনার সঙ্গে ছিলেন তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডঃ চুঘ, ব্যক্তিগত সচিব জগন্নাথ সহায়, সহায়ক এম এন শর্মা, নিরাপত্তা অফিসার আর কাপুর ও নিজস্ব বিশ্বস্ত সেবক রামনাথ৷ রামনাথ কুড়ি বছরেরও বেশি শাস্ত্রীজির বাড়িতে কাজ করেছে। তাঁকে দেখাশোনা ও তাঁর জিনিসপত্রের পুরো দায়িত্ব সব সময় ঐ রামনাথের হাতেই থাকত৷
হাতমুখ ধুয়ে জামাকাপড় বদলানোর পরে রামনাথ জানতে চায়, রাতে কী খাবেন৷ পার্টিতে টুকিটাকি খাওয়ার পরে শাস্ত্রীজির বিশেষ খিদে ছিল না, তিনি হালকা কিছু খেতে চান৷ রামনাথ তাঁর জন্য আলু-পালক ও আর একটি তরকারি নিয়ে আসে৷ ডাচা-য় রান্নার দায়িত্বে রাশিয়ান পাচকেরা ছাড়াও ছিলেন রাশিয়ায় ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের খাস রাঁধুনি জান মহম্মদ, যাঁকে মস্কো থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছিল।

খাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী গিয়েছিলেন তাঁর শয়নকক্ষের পাশে অফিসঘরে৷ সেখানে রাত দশটা কুড়িতে দিল্লি থেকে তাঁর একান্ত সচিব ভেঙ্কটরমন ফোন করেন৷ তাসখন্দ চুক্তির ব্যাপারে কথা শেষ হওয়ার পরে তিনি জানতে চান, দিল্লিতে তাসখন্দ চুক্তির প্রতিক্রিয়া কী রকম৷ ভেঙ্কটরমন জানান প্রতিক্রিয়া ভালই শুধু দু’জন নেতা— সুরেন্দ্রনাথ দ্বিবেদী ও অটলবিহারী বাজপেয়ী বিরোধিতা করেছেন৷ স্মিত হেসে শাস্ত্রীজি বলেন— বিরোধীরা তো বিরোধিতা করবেই৷ এর পর তিনি দিল্লিতে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন৷ তাঁর বড় মেয়ে সুমন সিংহ (বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহের মা) তাঁকে বলেছিলেন, তাসখন্দ চুক্তি তাঁর একেবারেই পছন্দ হয়নি৷

লালবাহাদুর জানতে চান, তাঁর মার কী মত৷ সুমন উত্তর দিয়েছিলেন, মাও খুশি হননি৷ তখন উনি স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চান, কিন্তু লাইনে গোলমাল হচ্ছিল বলে কথা বলা সম্ভব হয়নি৷ (এই দুঃখ শাস্ত্রী-পত্নী ললিতা দেবী আমৃত্যু বহন করেছেন) ফোন রেখে দিয়ে তিনি নাকি একটু হতাশ কন্ঠে রামনাথকে বলেছিলেন— ‘‘আমার ঘরের লোকেরই যদি পছন্দ না হয়, তা হলে বাইরের লোককে আমি কী বোঝাব৷’’

ফোনপর্বের শেষে শাস্ত্রীজি বেশ কিছুক্ষণ ঘরের মধ্যে পায়চারি করেছিলেন। ইতিমধ্যে ফিলমস ডিভিশনের লোকেরা এসে নিউজ রিলের জন্য শ্যুটিং করে চলে গেলেন৷ ঘড়ির কাঁটা ততক্ষণে বারোর দিকে পৌঁছে গিয়েছে৷ উনি শোওয়ার ঘরে ফিরে আসেন। অভ্যাস মতো রামনাথ তাঁকে এক গ্লাস গরম দুধ ও ইসবগুলের ভুষি ধরিয়ে দেয়৷ শাস্ত্রীজি জল চেয়েছিলেন এবং রামনাথ তাঁকে বিছানার পাশে রাখা ফ্লাস্ক থেকে জল দিয়েছিল৷ এসময় উনি রামনাথকে বলেছিলেন তাঁর মাথা ভারী লাগছে, তিনি আর কারোর সঙ্গে দেখা করবেন না । পরদিন সকাল সাতটায় রওনা, এ বার তিনি শুয়ে পড়বেন৷ রামনাথও যেন শুয়ে পড়ে৷ ৷ রামনাথের শাস্ত্রীজির সঙ্গে সেই শেষ দেখা৷

শাস্ত্রীজি ডাচা-র যে অংশে ছিলেন, তার পাশের উইং-এ তাঁর সহায়কদের ঘর৷ রাত সওয়া একটা নাগাদ তাঁর দুই সহায়ক সহায় ও কাপুর যখন জিনিসপত্র গোছাচ্ছেন, তখন পায়ের শব্দ শুনে তাঁরা তাকিয়ে দেখেন, বিবর্ণমুখে লালবাহাদুর তাঁদের ঘরের দরজা ধরে দাঁড়িয়ে৷ সহায়কেরা ছুটে এলে তিনি কোনওমতে বলেন— ‘‘ডক্টর সাব কঁহা?’’ একজন ডাঃ চুঘকে ডাকতে যান, আর একজন শাস্ত্রীজিকে ধরে ধরে তাঁর শোওয়ার ঘরে নিয়ে আসেন৷ কোনওমতে ঘরে ঢোকার পরে তাঁর বুক-ফাটা কাশি শুরু হয়, তিনি বুক চেপে খাটে বসে পড়েন৷ তিনি বার বার বলছিলেন— ‘‘ও মেরে রাম!’’ সহায় তাঁকে জল খাওয়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছেন, সেই সময়ে ডাঃ চুঘ ছুটতে ছুটতে ঘরে ঢোকেন৷ তিনি পরীক্ষা করে দেখেন নাড়ি দুর্বল এবং দ্রুত আর হৃদস্পন্দন প্রায় বন্ধ৷ অভিজ্ঞ চিকিৎসক চুঘ বুঝে যান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রবল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন৷ তিনি তাঁকে বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় দু’টি ইঞ্জেকশন দেন, কিন্তু তাতে কোনও ফল হয়নি৷ শাস্ত্রীজি চেতনা হারিয়ে ফেলেন। একটু পরেই তাঁর হৃদস্পন্দন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়৷ চুঘ তখন বুকে মালিশ ও অন্যান্য প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ৷ চুঘ কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন— ‘‘বাবুজি, আপনে মুঝে কোই মওকা নেহি দিয়া৷’’ ৷ তাসখন্দের ঘড়িতে তখন রাত একটা বেজে বত্রিশ, ভারতবর্ষে একটা দুই। সুখনিদ্রায় আচ্ছন্ন দেশবাসী জানতেও পারেনি যে পনেরো মিনিটের মধ্যে দেশের ইতিহাস বদলে গেল৷

রুশ সরকারের একজন ডাক্তার ডাচায় ডিউটি করতেন৷ চুঘের ডাকে লেডি ডাক্তার ইভজেনিয়া ইয়েরেমেনকা এসে শাস্ত্রীজিকে পরীক্ষা করে মৃত বলে ঘোষণা করেন৷ কয়েক মিনিটের মধ্যেই একদল রাশিয়ান ডাক্তার এসে পৌঁছেছিলেন, উজবেকিস্তানের উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ আরিপভ স্বয়ং তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন। কিন্তু প্রায় এক ঘণ্টা সব রকম চেষ্টা করে তাঁরাও বুঝতে পারলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাঁদের দেশেই চিরঘুমে চলে গিয়েছেন৷

ভোর হওয়ার আগেই তাসখন্দে আগুনের মতো এই দুঃসংবাদ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল৷ ডাচায় ছুটে এসেছিল বিমূঢ় ভারতীয় প্রতিনিধিদল, ছুটে এসেছিলেন শোকাহত কোসিগিন ও আয়ুব খান৷ সকাল সাড়ে ন’টায় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর শবদেহ কামানগাড়িতে চড়ে বিমানবন্দরের দিকে রওনা হল৷ বিশেষ বিমানে তোলার সময় কফিনে কাঁধ দিয়েছিলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী স্মরণ সিংহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী যশবন্তরাও চ্যবন, আয়ুব খান ও কোসিগিন৷ আয়ুব ভারতের বিদেশসচিব চন্দ্রশেখর ঝা-কে প্রায় হাহাকার করে বলেছিলেন— ‘‘এ কী হল, ঝা সাহেব? খুদা করে এর পরিণতি দু’দেশের পক্ষে আরও খারাপ যেন কিছু না হয়৷’’

বিশেষ বিমান দিল্লিতে নামল দুপুর আড়াইটেয়৷ আর তখন থেকেই ফেলুদার ভাষায়— গণ্ডগোল, বিস্তর গণ্ডগোল রে তোপসে।

সূত্র: নেট থেকে সংগৃহিত মলাট।
তারিখঃ অক্টোবর ০১, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ