করোনার ভয় কাটিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে শুরু হলো শারদীয় দুর্গোৎসব। গতকাল সোমবার একই সঙ্গে পঞ্চমীর বোধন এবং ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে সূচনা ঘটেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানের। এদিন দুর্গতিনাশিনী দেবীর বোধন ছাড়াও অধিষ্ঠান, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনের দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশে পূজামণ্ডপগুলোতে বাড়তি সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দুর্গোৎসব আয়োজনের সিদ্ধান্ত ছিল। এ সিদ্ধান্তের আলোকে আলোকসজ্জা ও উৎসব-সংশ্নিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ মণ্ডপ-মন্দিরে করোনার শঙ্কা উৎসব-আনন্দমুখর পরিবেশে ছেদ ঘটাতে পারেনি। কোথাও কোথাও ভক্ত-পূজারিদের উচ্ছ্বাসে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হয়েছে কিছুটা হলেও।
৬ অক্টোবর দেবী দুর্গার আবাহন বা মহালয়ার মধ্য দিয়ে সূচনা হয় দেবীপক্ষের। সাধারণত দেবীপক্ষ শুরুর সাত দিন পর পাঁচ দিনের দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটে থাকে। তবে এবার পঞ্চমীর বোধন ও ষষ্ঠী তিথি একই দিনে পড়ায় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরুর দিনক্ষণও এক দিন এগিয়ে এসেছিল। ফলে গতকালই সায়ংকালে তথা সন্ধ্যায় বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙার জন্য বন্দনাপূজা করা হয়েছে। এর আগে ষষ্ঠী তিথিতে সকাল ৭টা ৩১ মিনিটের মধ্যে দেবী দুর্গার ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বেলতলা কিংবা বেলগাছের নিচে দেওয়া হয় ষষ্ঠীপূজা। মণ্ডপে মণ্ডপে হয় দেবীর অধিষ্ঠান। পরে সন্ধ্যায় বোধন শেষে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল দুর্গোৎসব। সব মণ্ডপে পুষ্পাঞ্জলি, ভোগআরতি ও প্রসাদ বিতরণের আয়োজনও করা হয়।
উৎসবের দ্বিতীয় দিনে আজ মঙ্গলবার মহাসপ্তমী। সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হবে। এরপর সকাল ৭টা ৩২ মিনিটের মধ্যে দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন, সপ্তমাদি কল্পারম্ভ ও সপ্তমীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এভাবে উৎসব চলবে আগামী শুক্রবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত।
ঢাকা মহানগরীর ২৩৭টিসহ সারাদেশের ৩২ হাজার ১১২টি পূজামণ্ডপে গতকাল দুর্গাপূজা শুরু হয়। হিন্দুদের পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষও যোগ দেওয়ায় পূজা সার্বজনীন রূপ নিয়েছে। সারাদেশের মণ্ডপে মণ্ডপে ঢাকের বাদ্য, শঙ্খ আর উলুধ্বনির শব্দ দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমনের জানান দিচ্ছে।
কেন্দ্রীয় পূজা উৎসব বলে পরিচিত ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনের মণ্ডপের সামনে প্যান্ডেল ছাড়াও মন্দিরকে সাজানো হয়েছে নতুন রং ও সাজে। তবে করোনার কারণে আলোকসজ্জার বাহারি রূপ অনুপস্থিত ছিল। এখানে পুলিশের বিশেষ কন্ট্রোল রুমের পাশাপাশি পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করেছে। বসানো হয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। ভক্ত-দর্শনার্থীদের মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে উপভোগ করতে হয়েছে পূজার আনন্দ।
রাজধানীর গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ, রমনা কালীমন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রম, রাজারবাগের বরোদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল এবং বনানীতে গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির, শাঁখারীবাজারের প্রতিদ্বন্দ্বী পূজামণ্ডপ, পান্নিটোলা, জয়কালী রোডের রামসীতা মন্দির, অভয়নগর দাস লেনের ভোলানন্দগিরি আশ্রম, রাধিকা বসাক লেন, নবেন্দ্র বসাক লেন, ঢাকেশ্বরীবাড়ী, টিকাটুলীর প্রণব মঠ, ঠাঁটারীবাজার পঞ্চানন শিবমন্দির, সূত্রাপুরের ঋষিপাড়া গৌতম মন্দির, বনগ্রাম তরুণ সংসদ, উত্তর মৈশুন্ডি, ফরাশগঞ্জ জমিদারবাড়ী, বিহারীলাল জিও মন্দিরসহ বিভিন্ন মন্দির ও মণ্ডপে দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে, দুর্গাপূজাকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল সারাদেশে। প্রতিটি মণ্ডপে পুলিশ, আনসার-ভিডিপির পাশাপাশি কোথাও কোথাও নিযুক্ত করা হয় র্যাব সদস্যদের। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যদের ছিল সতর্ক পাহারা। অনেক মণ্ডপে আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টরে কড়া তল্লাশির মধ্যদিয়ে মণ্ডপে প্রবেশ করতে হয়েছে দর্শনার্থীদের।
সূত্রঃ সমকাল।
তারিখঃ অক্টোবর ১২, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,