Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

সবাই সহজে সবকিছু পেতে চায়

Share on Facebook

লেখক: প্রতীক বর্ধন।

নাম না-জানা বা স্বল্প পরিচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মালিকদের বিরুদ্ধে ইদানীং যে শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠছে, তাতে বিস্মিত হওয়ার অবকাশ আছে। এতে সমাজের একটি প্রবণতা পরিষ্কার, মানুষ সহজে বড়লোক হতে চায়। আবার যাঁরা স্বল্পমূল্যে পণ্য কেনার জন্য এ-জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে আগাম টাকা দিচ্ছেন, তাঁরাও লোভের বশবর্তী হয়ে এ কাজ করছেন। অর্থাৎ সমাজে সহজে অনেক কিছু হয়ে যাওয়ার (টিকটক বা সামাজিক মাধ্যম তারকা) বা পেয়ে যাওয়ার প্রবণতা অত্যন্ত শক্তিশালী।

সমাজের এই বাস্তবতার সঙ্গে ১৯ শতকের ইংরেজ ঔপন্যাসিক চার্লস ডিকেন্সের ‘গ্রেট এক্সপেকটেশনস’-এর কাহিনির মিল পাওয়া যায়। সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের ওপরে ওঠার যে আকুতি, সেটাই এই উপন্যাসের উপজীব্য। অসহায় অবস্থা থেকে মধ্যবিত্ত স্তরে ওঠার, কিংবা ভদ্রলোক হয়ে ভদ্রসমাজে মেশার যে আকুলতা, মানুষের এমন সব কাণ্ডকারখানা নিয়ে এ উপন্যাসের পটভূমি। সমস্যা হচ্ছে, সবাই শর্টকাটে পয়সাওয়ালা হতে চায়। কঠোর পরিশ্রম করে স্বপ্নের পানে ছোটার চেয়ে অধিকাংশ মানুষই ই-কমার্স সাইট ই-অরেঞ্জের মালিকের মতো হতে চায় বলেই বোধ হচ্ছে।

মিলটা এখানেই যে সমাজের মানুষের মধ্যে যেনতেন প্রকারে কিছু পাওয়ার প্রবণতা অত্যন্ত প্রবল, তা সে বৈধ, অবৈধ, নৈতিক বা অনৈতিক, যে পথেই আসুক না কেন। মসজিদের ইমাম বহুস্তরিক বিপণনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে শত কোটি টাকা লোপাট করে গ্রেপ্তার হচ্ছেন, আবার টেকনাফ স্থলবন্দরে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে দিনে ১৩০ টাকা বেতনে চাকরি শুরু করা নুরুল ইসলাম ২০ বছরে ‘অবৈধভাবে’ ৪৬০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন—এমন খবরও মিলছে।

এভাবে যাঁরা বিপুল অর্থসম্পত্তির মালিক হচ্ছেন, তাঁরা আবার এককভাবে যে এসব করেন, তা নয়। সম্ভবও নয়। তাঁদেরও অনেককে ম্যানেজ করে চলতে হয়, যাঁদের মধ্যে আছেন রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে প্রশাসন, অনেকেই। এভাবে সমাজে এক চক্র গড়ে উঠেছে, অর্থনীতির পরিভাষায় যাকে বলে ক্রোনি ক্যাপিটালিজম বা স্বজনতোষণের পুঁজিবাদ। অর্থাৎ পুঁজিবাদের নিকৃষ্ট এক রূপ। শুধু বাংলাদেশ নয়, চীন, ভারতসহ উন্নয়নশীল সব দেশেই এই চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। এদের সংঘবদ্ধ অপকর্মের কারণে একশ্রেণির মানুষ যেনতেন প্রকারে বিপুল সম্পদের মালিক হয়। সমাজে বৈষম্য আরও বেড়ে যায়।

এ ধরনের আর্থসামাজিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠার পেছনে প্রধান কারণ হলো মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণে রাষ্ট্রের অকার্যকারিতা। মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করে যে কটি অধিকার মানুষের আপনা-আপনি পাওয়ার কথা ছিল, তা আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের মানুষের ভাগ্যে জোটে না। সে জন্যই দেখা যায়, বেকার মানুষ নেতা বা ক্ষমতাশালীদের পেছনে পেছনে ঘোরে। পরিবারেও দেখা যায়, গরিব আত্মীয়রা ধনবান আত্মীয়দের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে। এর মধ্য দিয়ে সর্বব্যাপী দুর্নীতির পরিবেশ তৈরি হয়। কারণ, যাঁরা পৃষ্ঠপোষকতা করেন, তাঁরাও নানা উপায়ে অর্থবিত্তের মালিক হন।
বিজ্ঞাপন

দেশে নিয়মকানুনের বালাই নেই, যে যেভাবে পারছে, করেকেটে খাচ্ছে—এমন অভিযোগ এন্তার শোনা যায়। অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হান এক গবেষণায় দেখাচ্ছেন, এটা হচ্ছে ডিলস স্পেস বা চুক্তির জগৎ, যেখানে রুলসের স্পেস বা নিয়মের জায়গা নেই। তবে এই চুক্তির জগৎ আবার উন্মুক্ত। নির্দিষ্ট কিছু মানুষের জন্য তা সীমাবদ্ধ নয়। ফলে সেখানে যে কেউ চাইলেই ঢুকতে পারে, অর্থাৎ সেই স্বজনতোষণের জগতে। সেই সুযোগের হাত ধরে এখানে জন্ম নিচ্ছে সাহেদ, নুরুলদের মতো মানুষ। আর যেসব মধ্য ও নিম্নবিত্ত উদয়াস্ত পরিশ্রম করছেন, তাঁরা সেই তিমিরেই থেকে যাচ্ছেন। তাঁদের জীবনমানের উন্নয়ন হচ্ছে না।

সুখের সন্ধানে
সুখের জন্যই মানুষ এত কিছু করে। কেউ ঘাড়-মাথা গুঁজে নিজ দায়িত্ব পালন করে যায়, আবার কেউ লুণ্ঠন-দুর্নীতির মধ্যে ঢুকে যায়। এমনকি যে পেশাদার খুনি, সে-ও তার সন্তানের সুখ চায়। কিন্তু এই স্বজনতোষণ ও চুক্তির জগতে সমাজে অনর্থই বেশি ঘটে। আর তাতে বাড়তে থাকে বৈষম্য। ক্রমবর্ধমান এই বৈষম্য অধিকাংশ মানুষের সেই সন্ধান ব্যর্থ করে দিচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে, যারা এই লুটপাটের ভাগীদার হয়ে উঠছেন, তাঁরাই সমাজে ভালো আছেন। সমাজে এখন তাঁদের কদর। অর্থনৈতিকভাবে তাঁরা যেমন অনেক ভালো আছেন, তেমনি সমাজে তাঁদেরই প্রভাব। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম করে সততার সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এখন কঠিন; বরং এ-জাতীয় মানুষকে উল্টো কথা শুনতে হয়।
বিজ্ঞাপন

শেষ করা যাক ‘ইন পারসুট অব হ্যাপিনেস’ নামে এক চলচ্চিত্রের কথা দিয়ে। ক্রিস গার্ডনার নামের এক প্রতিষ্ঠিত মার্কিন ব্যবসায়ীর জীবনী নিয়ে রচিত এই চলচ্চিত্র। তবে গার্ডনারের প্রথম জীবন ঠিক এখনকার মতো ছিল না। নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে এবং কঠোর পরিশ্রমের বদৌলতে তিনি সফল হয়েছেন। এমন পরিস্থিতি হয়েছিল যে তাঁকে এক রাত সন্তানকে নিয়ে পাবলিক টয়লেটে থাকতে হয়েছে। টানা কয়েক মাস তাঁর থাকার জায়গা ছিল না, সকালে সন্তানকে রেখে যেতেন দিবাযত্ন কেন্দ্রে, সেখান থেকে কাজে যেতেন এবং রাতে গৃহহীনদের অ্যাসাইলামে রাত কাটাতেন। কঠোর পরিশ্রম করে একপর্যায়ে তিনি স্টক ব্রোকার হন, তারপর বদলাতে শুরু করে তাঁর ভাগ্যের চাকা। প্রতিষ্ঠা করেন নিজের ব্রোকারেজ হাউস। এখন তাঁর জীবন সুখের। তবে ছবিটি দেখার সময় চোখের জল ধরে রাখা সত্যিই খুব কঠিন।

বাস্তবতা হলো যুক্তরাষ্ট্রের মতো সমাজে অনেক নেতিবাচক দিক থাকলেও কঠোর পরিশ্রমের মূল্যায়ন হয়। সে জন্য ক্রিস সফল হতে পেরেছেন। কিন্তু আমাদের মতো দেশে তথাকথিত সিস্টেমের মধ্যে না ঢুকলে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল। মেধা, কঠোর পরিশ্রম, সততা, আত্মমর্যাদা—এসব আমাদের সমাজে অপাঙ্‌ক্তেয় হওয়ার পথে। সবখানেই এখন স্বজনতোষণের জয়জয়কার। সবচেয়ে অবহেলিত হচ্ছে মেধা।

প্রতীক বর্ধন প্রথম আলোর সহসম্পাদক।

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ সেপ্টম্বর ২১, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ