লেখক: বকুল আহমেদ।
রাজধানীর মগবাজারের নয়াটোলার ৫৪২/বি হোল্ডিংয়ের আবাসিক ভবনের গেটে ফ্ল্যাট ভাড়া সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞাপন সাঁটানো। তাতে লেখা- ‘১ জানুয়ারি, ২০২১ থেকে ফ্ল্যাট ভাড়া হবে।’ তবে চলতি সেপ্টেম্বরে এসেও সেটির ভাড়াটে মেলেনি। ভবনের ম্যানেজার আবুল কাশেম জানালেন, ভবনটির ছয় এবং সাততলায় দুটি ফ্ল্যাট খালি আছে জানুয়ারি থেকে। অনেকেই ভাড়া নিতে আসেন। কিন্তু ভাড়া নিতে চান কম টাকায়। তাই এখনও কাউকে ভাড়া দেওয়া হয়নি।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজন রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ক্রমেই সংক্রমণের হার বাড়তে থেকে। সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রথম দফায় গত বছরের ২৬ মার্চ সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। ওষুধের দোকান, কাঁচাবাজারসহ নিত্যপণ্যের দোকান বাদে সব বিপণিবিতান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ছুটির মেয়াদ বাড়ে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মন্দাভাব নেমে আসে। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মীদের চাকরিচ্যুত করা হয়। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক ছুটি কিংবা বেতন কমিয়ে দেওয়া হয়। এতে রাজধানীতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় স্বল্প আয়ের মানুষকে।
মগবাজার, নয়াটোলা, মীরবাগ, বড় মগবাজার, দিলু রোড, ইস্কাটন, মালিবাগ, পশ্চিম রামপুরা ও বনশ্রী এলাকা সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় বাড়িতেই ‘টু-লেট’ টাঙানো। একাধিক বাড়ির মালিক, ম্যানেজার ও দারোয়ানের সঙ্গে বাসা ভাড়া বিষয়ে কথা হয়। তাদের ভাষ্য- করোনার থাবা পড়েছে বাসাবাড়িতে। তাই পরিবারের সদস্যদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে খরচ কমাতে বাসা ছেড়ে মেসে উঠেছেন অনেকেই। অনেকে চাকরি হারিয়ে গ্রামে চলে গেছেন। রাজধানীর অনেক বাসাই তাই ভাড়াটেশূন্য হয়ে পড়েছে। এদিকে অনেক বাড়ির মালিকের আয়ের একমাত্র উৎস বাড়ি ভাড়া। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। ভাড়াটেশূন্য ফ্ল্যাটের গ্যাস-পানি-বিদ্যুতের বিলও গুনতে হচ্ছে তাদের। ঋণ নিয়ে নির্মাণ করা বাড়ির মাসিক কিস্তিও পরিশোধ করতে পারছেন না কেউ কেউ।
নিউ ইস্কাটনের ১৩৭/বি নম্বর বাড়িটি ছয়তলা, ১২টি ইউনিট। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কয়েক মাস পর থেকেই ইউনিটগুলো ভাড়াটেশূন্য হতে থাকে। পরে অবশ্য নতুন ভাড়াটে উঠেছেন; কিন্তু এখনও তিনটি ফ্ল্যাট খালি। বাড়ির মালিক হাজি বুলবুল সমকালকে জানান, তিন-চার মাস ধরে খালি পড়ে আছে ফ্ল্যাটগুলো। করোনার আগে কখনও তার বাসা খালি থাকেনি। কোনো ইউনিট খালি হলেও পরের মাসেই ভাড়াটে জুটেছে। কিন্তু এখন বাসা খালি হলে ভাড়াটে মিলছে না তেমন। বিভিন্ন ফ্ল্যাটের ভাড়াটেরাও এক থেকে দুই হাজার টাকা ভাড়া কম দিচ্ছেন করোনার কারণে। তিনিও বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ফ্ল্যাট খালি থাকলেও গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের বিল ঠিকই দিতে হচ্ছে। ঋণ নিয়ে নির্মাণ করা ভবন। ফ্ল্যাট খালি থাকলে কিংবা ভাড়া কমানো হলেও ঋণের কিস্তি তো মওকুফ হবে না।’
মগবাজার নয়াটোলার ১৮০/৪ নম্বর ভবনের মালিক হাসান রশিদ জানান, দুই মাস ধরে তার ভবনের দোতলার একটি ফ্ল্যাট খালি রয়েছে।
পশ্চিম রামপুরার উলন রোডের একটি বাড়ির ভাড়াটে নাজমুল হোসাইন জানান, তিনি রামপুরায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। করোনার কারণে গত বছরের আগস্ট থেকে তার বেতন মাসে ১২ হাজার টাকা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে ১৮ হাজার টাকা ভাড়ার বাসা ছেড়ে দিয়ে ১১ হাজার টাকায় ছোট একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ বাস করছেন তিনি।
মীরবাগের বাড়ির মালিক আব্দুর রহমান জানান, তার পাঁচতলা ভবনে ১০টি ইউনিট। তিনি থাকেন দোতলার পুরো ফ্লোরে। বাকি আটটি ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া হয়। গত বছরের জুন থেকে শুরু করে এখনও দুটি ফ্ল্যাট খালি পড়ে রয়েছে। তার ফ্ল্যাটে সর্বনিম্ন ভাড়া তিনটি বিল বাদে ১৬ হাজার টাকা। দুই হাজার টাকা ভাড়া কমানো হলেও ভাড়াটে মিলছে না। যারা বাসার খোঁজে আসেন, তার ১১-১২ হাজার টাকায় বাসা নিতে চান। কিন্তু এ টাকায় ভাড়া দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।
রাজধানীতে ভাড়াটিয়া পরিষদ নামে একটি সংগঠন রয়েছে। সংগঠনটির সভাপতি বাহারানে সুলতান বাহার বলেন, রাজধানীতে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বাসা খালি পড়ে রয়েছে। কারণ করোনায় চাকরি হারিয়ে কিংবা উপার্জন কমে যাওয়ায় অনেকেই বাসা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন। তিনি বলেন, মধ্যবিত্ত পরিবারের যারা ১৫-২০ হাজার টাকায় ভাড়া থাকতেন, তাদের অনেকেই আগের বাসা ছেড়ে ১০-১২ হাজার টাকার মধ্যে বাসা ভাড়া নিচ্ছেন।
সূত্রঃ সমকাল।
তারিখঃ সেপ্টম্বর ১৬, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,