লেখক: ইলিয়াস হোসেন ও রাসেল পারভেজ
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের সড়কে দু’দিন আগেও ছিল প্রচণ্ড যানজট। ব্যাংক, ভিসাকেন্দ্র ও ট্রাভেল এজেন্সির সামনেও দেখা গিয়েছিল দীর্ঘ লাইন। তবে গতকাল সোমবার কাবুলজুড়ে বিরাজ করে ভূতুড়ে পরিবেশ। সবকিছুই ছিল স্থবির। ৬০ লাখ মানুষের এ শহর কট্টরপন্থি তালেবান বিনাযুদ্ধে দখল করার পর প্রথম দিনে দোকানপাট ও ব্যবসাকেন্দ্রগুলো খোলেনি। রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দেখা মেলেনি। তার বদলে অস্ত্র হাতে রাস্তায় রাস্তায় টহল দেয় তালেবান যোদ্ধারা। শুধু কাবুলের নয়, দেশটির শহর-গ্রাম সর্বত্রই ছিল এমন চিত্র।
ভয়ে-আতঙ্কে গতকাল রাস্তাঘাট হয়ে পড়ে জনশূন্য। তবে বিপরীত চিত্রের দেখা মেলে কাবুল বিমানবন্দরে। সেখানে বিরাজ করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। তালেবান শাসন ফিরে আসায় আতঙ্কে দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টায় মরিয়া হয়ে ওঠে দেশটির অনেকেই। কাবুল বিমানবন্দরে ছুটে যায় তারা। একে অন্যকে ঠেলে যেভাবেই হোক বিমানে ওঠার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। কেউ কেউ বিমানের চাকা ধরে ঝুলে পড়ে। এমন একটি ঘটনায় মাঝ-আকাশে উড়ন্ত বিমানের চাকা থেকে পড়ে তিন আফগান নিহত হয়েছেন।
কাবুল বিমানবন্দর জনসমুদ্রে পরিণত হওয়ার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তাতে দেখা গেছে, বিমানে কে আগে উঠবেন, তা নিয়ে চলছে ধাক্কাধাক্কি। অনেককে আবার সিঁড়ির রেলিংয়ে ঝুলেই বিমানের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করতে দেখা যায়। সেখানে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তবে তারা গুলিতে, নাকি ভিড়ের চাপে পিষ্ট হয়ে মারা গেছেন, তাৎক্ষণিক তা জানা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্র ও সহযোগী দেশগুলোর কূটনীতিক এবং কর্মীদের সরিয়ে নিতে কাবুল বিমানবন্দরের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে মার্কিন সেনারা। তারা এয়ার ট্রাফিক ব্যবস্থা বা বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রও নিয়ন্ত্রণ করছে।
কাবুল বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খলা ও কয়েকটি বিপর্যয়কর ঘটনার পর ফ্লাইট চলাচল স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন। বিমানবন্দরে হাজার হাজার মানুষ বিমান ধরার জন্য অপেক্ষা করছে। উদ্ধার তৎপরতা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের আরও এক হাজার সেনার আজ মঙ্গলবার কাবুল পৌঁছানোর কথা। এদিকে পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ফলে কাবুল ছাড়তে চাওয়া হাজারো মানুষকে বের করে আনা সম্ভব। তালেবানের কাবুল দখল করা বিষয়ে তিনি বলেন, কোনো পরিণতিই চূড়ান্ত নয়।
রাজধানী থেকে পালাতে ইচ্ছুকদের দূরে সরিয়ে রাখতে বিমানবন্দরের রানওয়েতে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা। যেসব মানুষ পশ্চিমা দেশগুলোর সহযোগী ছিল এবং তালেবান শাসনে ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব হবে বলে আশঙ্কা করছেন, তারাই মূলত দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন। অনেক আইনজীবী, মানবাধিকার ও সংস্কৃতিকর্মীও আছেন এ তালিকায়।
এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ ৬০টি দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে আফগানিস্তান ছেড়ে যেতে ইচ্ছুকদের বাধা না দিতে তালেবানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তার সব দূতাবাসকর্মীকে কাবুল থেকে সরিয়ে নিয়েছে। ইউরোপের অন্যান্য দেশও তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে। এদিকে গতকাল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক থেকে আফগানিস্তানের সব পক্ষ অন্তর্ভুক্ত করে সরকার গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
কাবুলের বিমানবন্দর মানুষে ঠাসা হলেও শহরের পথঘাট ফাঁকা। কাবুলে প্রথম সকালটা আফগানদের জন্য স্বস্তির ছিল না বলে মনে হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, কট্টরপন্থি তালেবানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে কাবুলে।
দোকান মালিকরা এর পর গ্রাহক পাবেন কোথায়, তা নিয়েও চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। একজন দোকান মালিক বলেছেন, ‘শহরে তালেবান ঢুকেছে। ভয়ে আছি। কিন্তু প্রেসিডেন্ট গনির চলে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলেছে।’
তবে তালেবানের দাবি, কাবুল এখন শান্তিপূর্ণ। সেখানে কোনো সংঘাত হচ্ছে না। নিরপরাধ মানুষের ভয়ের কোনো কারণ নেই। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল দিনের শেষভাগে কাবুলকে কিছুটা আতঙ্কমুক্ত মনে হয়েছে। কিছু গাড়িও চলাচল করেছে। কিছুসংখ্যক নারীকে হিজাব পরে রাস্তায় চলতে দেখা গেছে। তালেবান যোদ্ধারাও ছিল তাদের পাশে। যদিও গতকাল রাতে বিবিসির আরেক প্রতিবেদনে নারীদের আতঙ্কের কথা উঠে এসেছে। এক আফগান নারী বলেন, ‘সব নারী এখন ঘরবন্দি। জানি না, আমাদের ভবিষ্যৎ কী হবে! আমি আশাহত। নারীদের জন্য এখানে আর কোনো আশা নেই। আমি দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছি।’ এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেশি আতঙ্কে ভুগছেন।
আফগানিস্তানে যুদ্ধ শেষ, ঘোষণা তালেবানের: কাবুলে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর আফগানিস্তানে যুদ্ধ শেষ হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছে তালেবান। দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বাহিনী চলে যাওয়া এবং গতকাল পশ্চিমা দেশগুলো তাড়াহুড়ো করে তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টার মধ্যেই তালেবান এ ঘোষণা দেয়।
তালেবানের রাজনৈতিক দপ্তরের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাঈম আলজাজিরা টেলিভিশনকে বলেন, ‘আজ আফগান জনগণ ও মুজাহিদিনদের জন্য একটা মহান দিন। তারা ২০ বছর ধরে তাদের ত্যাগের ও চেষ্টার ফল দেখতে পাচ্ছে। আল্লাহকে ধন্যবাদ, দেশে যুদ্ধ শেষ হয়েছে।’
ত্বরিত গতির অভিযান শুরুর প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যে দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার মধ্য দিয়ে অভিযান শেষ হয়। নাঈম জানিয়েছেন, আফগানিস্তানে নতুন সরকার গঠনের বিষয়টি শিগগির পরিস্কার করা হবে। তালেবান বিচ্ছিন্নতার মধ্যে থাকতে চায় না এবং শান্তিপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আহ্বান জানায় বলে জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘আমরা যা চেয়েছিলাম সেখানে পৌঁছেছি, এটি হচ্ছে আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও জনগণের স্বনির্ভরতা। অন্য কারও ওপর হামলা চালাতে কাউকে আমাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেব না এবং আমরা অন্যের ক্ষতি করতে চাই না।’
আফগানিস্তানে পরাজয়ের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তোপের মুখে পড়েছেন। কাবুল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসকর্মী ও নাগরিকদের সরিয়ে আনার দৃশ্য ভিয়েতনাম যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের করুণ পরিণতির কথাই অনেককে মনে করিয়ে দিয়েছে। ফলে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান পার্টির রাজনীতিবিদসহ মার্কিন গণমাধ্যমে বাইডেনের কঠোর সমালোচনা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার বেলা ৩টা ৪৫ মিনিটে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে বাইডেনের। এ জন্য তিনি অবকাশ ছুটি সংক্ষিপ্ত করে ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছেছেন।
গ্রিন জোন পরিত্যক্ত: কাবুলের সরকারি দপ্তরগুলো ফাঁকা পড়ে আছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। প্রায় সব কূটনীতিক তাদের পরিবার নিয়ে শহর ছেড়ে চলে যাওয়ায় নগরীর ওয়াজির আকবর খান কূটনৈতিক এলাকা বা গ্রিন জোন জনশূন্য হয়ে আছে। গতকাল রাতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ভারতীয় দূতাবাসও। অত্যন্ত সুরক্ষিত এ এলাকার চেকপয়েন্টগুলোয় এখন অল্প কয়েকজন রক্ষী আছেন। কিছু গাড়িচালক নিজেরাই গাড়ি থেকে বের হয়ে চেকপয়েন্টের বাধা সরিয়ে গন্তব্যের পথে রওনা হচ্ছেন। সেখানে এখন শুধু রাশিয়া, চীন, ইরান ও পাকিস্তানের দূতাবাস চালু আছে বলে জানা গেছে। বিবিসি জানিয়েছে, তালেবান সরকার গঠন করলে তাদের স্বীকৃতি দিতে পারে এই চার দেশ।
এ এলাকায় নিজের নানরুটির দোকানে বসা গুল মোহাম্মদ হাকিম বলেন, এখানে বসে ফাঁকা রাস্তা দেখতে অদ্ভুত লাগছে। দূতাবাসের ব্যস্ত গাড়িবহর, মেশিনগান বসানো বড় বড় গাড়ি আর নেই। রুটি বানাতেই এখানে এসেছি; কিন্তু আয় তেমন একটা হবে না। যে নিরাপত্তা রক্ষীরা আমার বন্ধু ছিল, তারা চলে গেছে। তিনি বলেন, আমার প্রথম কাজ হচ্ছে দাড়ি রাখা, কীভাবে এগুলোকে দ্রুত বাড়ানো যায় তা নিয়ে উদ্বিগ্ন আছি। স্ত্রী ও মেয়েদের জন্য যথেষ্ট বোরকা আছে কিনা, তাও দেখে রেখেছি আমরা।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান আমলে পুরুষদের দাড়ি কাটার অনুমতি দেওয়া হতো না এবং নারীদের জনসম্মুখে আপাদমস্তক বোরকা ঢাকা অবস্থায় চলাফেরা করতে হতো।
নগরীর চিকেন স্ট্রিটের সব দোকান বন্ধ ছিল। এখানে আফগানিস্তানে তৈরি কার্পেট, হস্তশিল্প ও অলংকারের দোকানের পাশাপাশি ছোট ছোট ক্যাফে আছে। এখানে একটি কার্পেট ও কাপড়ের দোকানের মালিক শেরজাদ করিম স্টানিকজাই জানান, মালপত্র রক্ষার জন্য দোকানের শাটার ফেলে ভেতরে ঘুমিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, এই যুদ্ধে সাত বছরে তিন ভাইকে হারিয়েছি আমি। এখন আমাকে আমার ব্যবসা রক্ষা করতে হবে। তার পরবর্তী ক্রেতা কোথা থেকে আসবেন, সে বিষয়ে তার কোনো ধারণা নেই বলে জানান তিনি। এখানে বিদেশি কেউ আর নেই। কোনো বিদেশি এখন আর কাবুলে আসবেনও না।
কাবুলে বাড়িতে বাড়িতে লুটপাট: তালেবান দেশটির রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সেখানে লুটপাট শুরু হয়েছে। গতকাল সকালে কাবুলে অনেকের বাড়িঘরে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া সেখানে গোলাগুলিও চলছে বলে জানায় বিবিসি।
কাবুলের বাসিন্দা আয়শা খুররাম একজন শিক্ষার্থী। গতকাল সকালে এক টুইট বার্তায় তিনি লিখেছেন, গুলি ও চিৎকার-চেঁচামেচির শব্দে ঘুম ভেঙেছে তার। কিছু মানুষ বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। এসব বাড়িতে থাকা গাড়ি ও বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। তবে তালেবান যখন এলাকায় যাচ্ছে, তখন তারা পালাচ্ছেন। তিনি ওই টুইটে বলেন, বিশৃঙ্খলা সবে শুরু। গত রোববার তালেবান কাবুলে প্রবেশ করলে বিভিন্ন থানা ছেড়ে পালান পুলিশ সদস্যরা। এর পর থেকে সেখানে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
তালেবানের নেতা সুহাইল শাহিন এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, তালেবানের পক্ষ থেকে আবারও নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, অনুমতি ছাড়া কারও বাসায় প্রবেশ করা যাবে না। কারও জীবন, সম্পদ ও মর্যাদাহানি হতে দেওয়া যাবে না। তালেবানের এসব রক্ষা করতে হবে। এর আগে গতকাল তিনি এক টুইট বার্তায় লিখেছিলেন, কারও ব্যক্তিগত সম্পদের প্রতি তাদের কোনো আগ্রহ নেই।
সরকার গঠনের তোড়জোড় তালেবানের: তালেবান দেশটির নাম দিয়েছে ‘ইসলামী আমিরাত আফগানিস্তান’। পুরো দেশে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হলেও এখন পর্যন্ত সরকার গঠন করতে পারেনি তারা। আলজাজিরা জানায়, বিদেশি কূটনীতিকরা দেশ ছাড়ায় এবং বিভিন্ন প্রদেশ থেকে তালেবান নেতারা কাবুলে সমবেত হওয়ার পর তারা সরকার গঠনের আলোচনা শুরু করবেন।
আফগান রাজধানীতে প্রবেশ এবং প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পর তালেবানের অন্যতম শীর্ষ নেতা মোল্লা গনি বারাদার বলেছেন, শাসন পরিচালনা করার আসল পরীক্ষা সবে শুরু হলো। এক ভিডিও বিবৃতিতে তিনি বলেন, এখন সময় হয়েছে আফগানিস্তানের মানুষের সেবা আর তাদের জীবনমান উন্নয়ন করার। তিনি বলেন, আমাদের জাতিকে আমরা সবচেয়ে ভালো সেবা দেব, পুরো জাতির জন্য প্রশান্তি নিয়ে আসব, তাদের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য যতদূর যা করা দরকার, আমরা তাই করব।
তিনি আরও বলেন, ‘যেভাবে আমাদের এখানে আসতে হয়েছে, তা কাঙ্ক্ষিত ছিল না। সেইসঙ্গে আজ আমরা যে অবস্থানে পৌঁছেছি, তাও কেউ ভাবেনি।’ এদিকে কাবুলে অবস্থান করা সাবেক আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই গতকাল জানিয়েছেন, দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে তিনি তালেবানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন।
বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া: আফগানিস্তান তালেবানের কবজায় যাওয়ার পর উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বিশ্ব নেতৃত্ব। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পাশাপাশি নিজ নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা উঠে এসেছে নেতাদের বক্তব্য-বিবৃতিতে। অন্যতম শীর্ষ পরাশক্তি চীন, রাশিয়ার মতো দেশ তালেবানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন ও আফগানিস্তানে তালেবানের সম্ভাব্য সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে নতুন বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্র কী করবে, তা এখনও পরিস্কার করেনি। এদিকে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহার ও আফগান যুদ্ধের সমাপ্তি হওয়ায় পাকিস্তান ও ইরান সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তবে তালেবানকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা দেয়নি তারা। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য আফগান পরিস্থিতির জন্য বিশ্ব নেতৃত্বের ব্যর্থতাকে দায়ী করেছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি জার্মানি আফগান পরিণতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে দায়ী করেছে। তবে ভারত তালেবান সরকারকে সমর্থন দেবে না বলে বার্তা দিয়েছে।
দেশত্যাগের কারণ জানালেন আশরাফ গনি: তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগেই রোববার আফগানিস্তান ছেড়ে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। ফলে দেশে তিনি তীব্র সমালোচিত হন। এ পরিপ্রেক্ষিতে ফেসবুকে এক পোস্টে জানিয়েছেন, তিনি একটি কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হয়েছিলেন যে, তিনি কি সশস্ত্র তালেবানের মুখোমুখি হবেন, নাকি যে দেশের জন্য ২০টি বছর দিয়েছেন, সেই দেশ ছেড়ে যাবেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমাকে সরিয়ে দিতে তালেবানরা পুরো কাবুল ও বাসিন্দাদের ওপর হামলা করতে এসেছে। রক্তপাত এড়াতে দেশ ছেড়ে যাওয়া ভালো হবে বলে আমি মনে করেছি।’
আফগানিস্তান ছেড়ে প্রথমে তাজিকিস্তানে রওনা দিয়েছিলেন গনি। কিন্তু তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে দেশটি। বিমান ঘুরিয়ে ওমান পৌঁছেছেন গনি। তবে ওমান সরকার তাকে আশ্রয় দিতে রাজি কিনা, তা এখনও নিশ্চিত নয়। পরে তিনি চলে যেতে পারেন আমেরিকা।
আফগানিস্তানের পালাবদলের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গনি বলেছেন, ‘তালেবান তলোয়ার এবং বন্দুকের মুখে ফয়সালা করেছে। এখন তারাই দেশবাসীর সল্ফ্ভ্রম, সম্পত্তি এবং আত্মমর্যাদা রক্ষা করার দায়িত্ব নেবে। তারা মানুষের মন জয় করে ক্ষমতায় আসেনি। ইতিহাস ফাঁপা শক্তিকে কখনও বৈধতা দেয়নি বা দেবেও না। তারা ইতিহাসের নতুন পরীক্ষা দিচ্ছে।’
কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করা ৭২ বছর বয়সী আশরাফ গনি দীর্ঘদিন বিদেশে কাটিয়েছেন। ২০০১ সালে তালেবানের পতনের পর তিনি দেশে ফিরে আসেন। ২০১৪ সালে তিনি প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য পুনর্নির্বাচিত হন। অবশ্য দুটি নির্বাচন নিয়েই বিতর্ক রয়েছে।
সূত্র: সমকাল।
তারিখ: আগষ্ট ১৭, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,