Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

আফগানিস্তান এবং ভারত(২০২১)

Share on Facebook

লেখক: সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়

ভারতে কৃষি আইন, কোভিড, লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব ও পেগাসাস নামক অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদের মধ্যে নরেন্দ্র মোদির নতুন শিরঃপীড়া আফগানিস্তান। এ যেন গোদের ওপর বিষফোড়ার জ্বালা। এই জ্বালা শেষ পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি যন্ত্রণায় পরিণত হবে কি না, কে জানে। এটুকু বোঝা যাচ্ছে, আফগানিস্তান হতে চলেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের কূটনৈতিক দক্ষতার কষ্টিপাথর।

আপাতত স্বস্তির একটুখানি বাতাস জয়শঙ্করকে হয়তো তৃপ্তি দিচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, আফগানিস্তান নিয়ে রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বৈঠকে ভারতকে যোগ দিতে বলা হয়েছে। যদিও সরকারিভাবে ভারত এ বিষয়ে এখনো কিছু বলেনি। গত মার্চের বৈঠকে পাকিস্তান ডাক পেয়েছিল। সম্প্রতি রাশিয়াকে জয়শঙ্কর এটাই বুঝিয়েছেন, ওই দেশের ভালোমন্দের সঙ্গে ভারতও জড়িয়ে। ভারতকে উপেক্ষা করা ঠিক হবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পর টালমাটাল আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে তালেবানের ভূমিকা নিয়ে মস্কো একধরনের ঐকমত্য তৈরিতে আগ্রহী। তাতে সায় রয়েছে চীন ও ইরানের। তিন দেশের মূল লক্ষ্য, তালেবানি সহিংসতা যেন সীমান্ত পেরিয়ে অন্য দেশে না ঢোকে। তালেবান কর্তৃপক্ষকে সেটা বারবার বলাও হচ্ছে। ভারতও চায়, আগামী দিনে সে দেশে ক্ষমতার অলিন্দে যারাই পদচারণ করুক, তারা যেন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তা হাসিল করে, হিংসার মাধ্যমে নয়। পাশাপাশি কুড়ি বছর ধরে সে দেশের পুনর্গঠনে ভারত যেভাবে অংশ নিয়েছে, ৩৪টি প্রদেশে চার শতাধিক প্রকল্পে যে তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, তা যেন সুরক্ষিত থাকে। তালেবানের নব উত্থান মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ভাগ্য কীভাবে নির্ধারণ করবে, সেই অনিশ্চয়তার দুলুনিতে আপাতত দুলছে মোদির ভারত। পরিস্থিতি এখনো খুব একটা স্বস্তিদায়ক নয়।

সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ভারতকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করার পাশাপাশি ঘোর আঞ্চলিক অনিশ্চয়তাও সৃষ্টি করেছে। চীন-রাশিয়াও উৎকণ্ঠিত, যদিও কিছুটা প্রসন্নও। প্রসন্নতার কারণ, তাদের কাছে এটা যুক্তরাষ্ট্রের আরও একটা পরাজয়। যুক্তরাষ্ট্রের উসকানির কারণে সোভিয়েত ইউনিয়নকে একটা সময় আফগানিস্তান থেকে দেশে ফিরতে হয়েছিল পরাজিতের তকমা কপালে সেঁটে। মস্কো সেটা ভোলেনি। যুক্তরাষ্ট্রেরও একই হাল হওয়ায় বিষয়টা তাদের কাছে এখন শোধবোধের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বেইজ্জতি চীনকেও খুশি করেছে, যেহেতু, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনকে রুখতে যুক্তরাষ্ট্রের চেষ্টার অন্ত নেই। যুক্তরাষ্ট্রের অসম্মান একইভাবে খুশি করেছে তাদের হাতে কোণঠাসা ইরানকেও।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সিদ্ধান্তে স্বস্তির শ্বাস নিচ্ছে পাকিস্তান, যারা মনে করে মার্কিন বাহিনীর পিছু হটা তাদের সামরিক জয় এবং আফগানিস্তানে তাদের উপস্থিতি নিষ্কণ্টক করবে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশির সদর্প ঘোষণা, পৃথিবীর কোনো শক্তিরই পাকিস্তানকে অগ্রাহ্য করা সম্ভব নয়। সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদ বলেছেন, চার দশক ধরে বিশ্বের কাছে পাকিস্তানকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করে চলেছে ভারত। আফগানিস্তানে তারাই সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের মদদদার। স্পষ্টতই, পালাবদলের এই মাহেন্দ্রক্ষণে ভারতকে নির্বান্ধব করাই তার পশ্চিম প্রতিবেশীর লক্ষ্য। চীন, রাশিয়া, ইরান ও পাকিস্তান তাই যতটা উৎফুল্ল, ততটাই চিন্তায় ভারত। একদিকে আফগানিস্তানে স্বার্থরক্ষার তাগিদ, অন্যদিকে কাশ্মীরকে সুরক্ষিত করা, দুটোই বিরাট চ্যালেঞ্জ।

আফগানিস্তানের সম্ভাব্য পালাবদলের সন্ধিক্ষণে রাশিয়ার চেয়ে বেশি সক্রিয় চীন। ব্রিটেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পেশিশক্তি যা পারেনি, চীনের অর্থশক্তি তা পারবে কি না, সেটা নিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে জল্পনা ও আশার বুদ্‌বুদ। একসময় সোভিয়েতের অঙ্গ থাকা তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, কাজাখস্তানের মতো দেশের এই মুহূর্তের চাহিদা চীন ও রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে আফগানিস্তানকে রাজনৈতিক স্থিতিশীল করে তোলা। চীনও এই সুযোগই কাজে লাগাতে চায়। লক্ষ্য ‘চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর’কে আফগানিস্তানে প্রসারিত করা। তারা চিন্তিত উইঘুর মুসলমানদের জঙ্গি মনোভাবে তালেবান উসকানি নিয়ে। এই আশঙ্কা রাশিয়ার পাশাপাশি ইরানেরও।

দুশানবে সম্মেলনে আফগানিস্তানের জন্য চীন তাই সংযমের একটা গণ্ডি টেনে দিয়েছে। তবে পূর্ণ ক্ষমতাপ্রাপ্তির পর তালেবানের নতুন নেতৃত্ব কতটা সংযমী থাকবে, সে উত্তর ভবিষ্যতের গর্ভে। যদিও ঈদের শুভেচ্ছাবাণী হিসেবে তালেবান প্রধান মৌলভি হিবাতুল্লা আখুন্দজাদা বলেছেন, আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে কাউকে অন্য দেশের বিপদের কারণ তাঁরা হতে দেবেন না। তাঁরা চান সবার সঙ্গে ইতিবাচক এবং শক্তিশালী কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে।

কুড়ি বছর আগের তালেবান নেতৃত্বের সঙ্গে বর্তমান নেতাদের পার্থক্য এখনো দৃশ্যমান। এর প্রধান কারণ, ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যে থেকেও দেশ গড়ার তাগিদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের বাসনা। কিন্তু পাশাপাশি এটাও ঠিক, ধর্মীয় আধার যাদের রাষ্ট্র পরিচালনার ভিত, তারা কতটা আধুনিক হয়ে আজন্মলালিত বিশ্বাসের জলাঞ্জলি দেবে?

আফগানিস্তানের এই নব পর্যায় নতুন এক কোয়াডেরও জন্ম দিচ্ছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনকে বশে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের জোটবদ্ধতার মতো আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে নতুন সেই কোয়াডের শরিক চীন, রাশিয়া, ইরান ও পাকিস্তান। এই চতুষ্টয়ের মধ্যে চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক সন্দেহ, অবিশ্বাস, রেষারেষি ও বৈরিতার। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের মাখামাখি রাশিয়া ও ইরানকেও অনেকাংশে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। নতুন এই ‘কোয়াড’কে চীন ও পাকিস্তান পরবর্তীকালে ভারতবিরোধিতায় ব্যবহার করবে না, তেমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। চীন নিশ্চিতই চাইবে, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগের পাল্টা নতুন এই কোয়াড সক্রিয় করতে। তাতেও চাপ বাড়বে ভারতের। কেননা, শুধু চীন নয়, সেখানে তার দোসর পাকিস্তান।

আফগানিস্তানে স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি এই নব্য প্রবণতার আশঙ্কা দূর করাও মোদি-জয়শঙ্করের প্রধান দায়িত্ব। আফগানিস্তান পরিস্থিতি তাঁদের চিরায়ত নীতি বদলাতে বাধ্য করেছে। শুরু থেকেই মোদি সরকার পাকিস্তানকে বুঝিয়েছে, সন্ত্রাস ও আলোচনা একযোগে চলতে পারে না। ২০১৪ সাল থেকে তাই সর্বস্তরীয় দ্বিপক্ষীয় আলোচনা বন্ধ। সেই নীতি বদলে তালেবানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে ভারত। কাতারের রাজধানী দোহা তার প্রমাণ। নীতির এই পরিবর্তন পাকিস্তানের পক্ষে শ্লাঘার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে কাশ্মীর প্রসঙ্গে।

সন্ত্রাস রপ্তানিতে তালেবান নেতৃত্ব রাশ টানলেও লড়াকু আফগান গোষ্ঠীপতিদের কাশ্মীরে উসকানি দিতে পাকিস্তান বিরত থাকবে কি? এই প্রশ্নও আগামী দিনে বড় হয়ে উঠতে পারে। মোদি সরকারের কাশ্মীর নীতি পাকিস্তানকে ক্ষুণ্ন রেখেছে। অসন্তুষ্ট কাশ্মীর উপত্যকার জনগণের বড় অংশও। জেলা উন্নয়ন পর্ষদের ভোটে তারই প্রতিফলন ঘটেছে। সেই অসন্তোষের ধোঁয়ায় উজ্জীবিত পাকিস্তান ধুনো দেবে না, এমন বৈষ্ণবোচিত আচরণ আশা করা অন্যায়। চীনও পূর্ব লাদাখ ও অরুণাচলের প্রতি বাড়তি নজর দিতে পারে। কোভিড, কৃষক অসন্তোষ, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব কিংবা পেগাসাসের মতো অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপের পাশাপাশি আফগানিস্তানকে ঘিরে অনভিপ্রেত কূটনৈতিক জটের মোকাবিলা নরেন্দ্র মোদির ভারতকে করতে হবে। তাঁর কাছে আগামী দিনগুলো প্রকৃত অর্থেই চ্যালেঞ্জের।

লেখক: সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম আলোর নয়াদিল্লি প্রতিনিধি
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: জুলাই ২৫, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ