Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

দেশের মানুষ গ্রামীণ ব্যাংককে ছিনিয়ে নিতে দেবে না-মুহাম্মদ ইউনূস (২০১৩)

Share on Facebook

গ্রামীণ ব্যাংক তদন্ত কমিশন আগামী ২ জুলাই বিয়াম অডিটোরিয়ামে গ্রামীণ ব্যাংকের আইনি কাঠামো পরিবর্তনের বিষয়ে তাদের সুপারিশগুলো আলোচনার জন্য একটি কর্মশালার আয়োজন করছেন। এই কর্মশালায় অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত তাঁর অভিজ্ঞতালব্ধ মূল্যবান বক্তব্য দেবেন বলেও ঘোষণা করা হয়েছে। এই কর্মশালায় দেশের অভিজ্ঞ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কমিশনের প্রণীত ‘গ্রামীণ ব্যাংকের ভবিষ্যৎ কাঠামো: কয়েকটি বিকল্প’ শিরোনামে আট পৃষ্ঠার একটি ওয়ার্কিং পেপার নিয়ে আলোচনা হবে।ওয়ার্কিং পেপারে তিনটি বিকল্প উপস্থাপন করা হয়েছে।এক. গ্রামীণ ব্যাংককে সরকারি ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকের আদলে নিয়ে আসা। এতে সরকারের মালিকানা ৫১ শতাংশ বা তার বেশি রাখতে হবে। পরিচালনা পরিষদেও সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকতে হবে।

দুই. গ্রামীণ ব্যাংককে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আদলে ১৯টি বা ততোধিক ক্ষুদ্র গ্রামীণ ব্যাংকে রূপান্তরিত করা যেতে পারে। প্রতিটি ক্ষুদ্র গ্রামীণ ব্যাংক স্বতন্ত্রভাবে নিবন্ধিত হবে। তাদের পরস্পরের মধ্যে কোনো আইনি সম্পর্ক থাকবে না। প্রত্যেকের স্বতন্ত্র ব্যবস্থাপনা কাঠামো থাকবে। গ্রামীণ ব্যাংকের বর্তমান প্রধান কার্যালয়কে এই গ্রামীণ ব্যাংক পরিবারের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হবে। প্রতিটি ক্ষুদ্র গ্রামীণ ব্যাংকের নিবন্ধন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হবে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণকারী শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। এই শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র গ্রামীণ ব্যাংকের সব ব্যাপারে নজরদারি করবে, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র গ্রামীণ ব্যাংক পরিবারের মধ্যে সমন্বয় বিধান করবে। শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ভার ক্ষুদ্র গ্রামীণ ব্যাংকগুলোকে বহন করতে হবে।তিন. গ্রামীণ ব্যাংককে সমবায় বা ক্রেডিট ইউনিয়ন ব্যতীত অন্য কোনো ধরনের ‘বেসরকারি প্রায়’ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা যেতে পারে। কোম্পানি আইনে নিবন্ধিত করার এই বিকল্পের মধ্যে কমিশন সমস্যা দেখে গ্রামীণ ব্যাংকের বিশালসংখ্যক (৮৪ লাখ) সদস্যকে নিয়ে বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠান করা নিয়ে। এই বার্ষিক সাধারণ সভা কোম্পানি আইনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এটা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় নেই।কিন্তু এত সব তোড়জোড়ের কারণ ঘটল কেন?

গ্রামীণ ব্যাংক একটি অনন্য আইনি কাঠামোর মাধ্যমে সৃষ্ট একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান। এই আইনি কাঠামো এই ব্যাংককে যে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা ও ক্ষমতা দিয়েছে তার কর্মদক্ষতা গত ৩০ বছরে ব্যাংকের সফলতার মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংক কী অপরাধ করেছে যে তাকে টুকরা টুকরা করে ফেলতে হবে।

২০০৮ সাল পর্যন্ত সংশোধনীগুলোসহ গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশটি এই ব্যাংকের আদর্শ ও উদ্দেশ্য পূরণের জন্য একটি চমৎকার আইনি কাঠামো। এই কাঠামো পরিবর্তন করলে ভয়াবহ পরিণতির সৃষ্টি হবে। ২০০৮ সালের সংশোধনীতে বলা হয়েছিল, গ্রামীণ ব্যাংক এখন থেকে শহরাঞ্চলে তার কার্যক্রম চালু করতে পারবে এবং গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান পর্ষদ কর্তৃক নির্বাচিত হবে, সরকার কর্তৃক নয়। কিন্তু বর্তমান সরকার এই সংশোধনী অনুমোদন না করাতে তা বাতিল হয়ে যায়।

যে আইনি কাঠামো নিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক আন্তর্জাতিকভাবে গৌরবের শীর্ষে গেছে, নোবেল পুরস্কার পেয়েছে, ৮৪ লাখ ঋণগ্রহীতার জীবনে এবং তাদের সন্তানদের জীবনে আশার আলো জাগাতে পেরেছে, দরিদ্র মহিলাদের একটি বিশাল ব্যাংকের মালিক বানাতে পেরেছে, যে আইনি কাঠামোর অবদানের জন্য সারা জাতি তার প্রতি কৃতজ্ঞ, যে আইনি কাঠামোকে পৃথিবী অভিনন্দন জানাচ্ছে, অন্যরা যে কাঠামো অনুকরণ করতে চাচ্ছে, তদন্ত কমিশন সেই কাঠামোতে কী অপরাধ পেল যে তাকে আস্তাকুঁড়ে ফেলে দেওয়ার আয়োজন করা হচ্ছে। কমিশন কি মেহেরবানি করে বিষয়টি জাতির সামনে খোলাসা করে বলবে?

গ্রামীণ ব্যাংক গরিব মহিলাদের নিজস্ব অর্থে গড়া সম্পদ। যে প্রতিষ্ঠানের ৯৭ শতাংশ মালিকানা গরিব মহিলাদের হাতে, সেখানে তদন্ত কমিশন কীভাবে প্রস্তাব করে যে এটার বৃহত্তর মালিকানা সরকারকে দিয়ে দিতে হবে। গরিব মানুষের মালিকানাকে গায়ের জোরে কেড়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে কেন? সরকারি মালিকানার ব্যাংক বানিয়ে সরকারি লোক দিয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করলে গ্রামীণ ব্যাংক উন্নতির চরম শিখরে উঠবে, নাকি ধ্বংসের গভীর গহ্বরে গিয়ে পৌঁছাবে এটা কি বাংলাদেশের মানুষকে বুঝিয়ে বলতে হবে? কী লক্ষ্য মাথায় রেখে তদন্ত কমিশন এ রকম আজগুবি ও বিধ্বংসী প্রস্তাব করতে পারল সেটা জানার আগ্রহ থাকবে দেশের সব মানুষের।

শেয়ারের মালিকানার ৯৭ ভাগ গরিব মহিলাদের, শুধু তা-ই নয়, তাদের সঞ্চয়ের টাকা দিয়েই গ্রামীণ ব্যাংকের মূল ঋণ কর্মসূচি চলে। এই ব্যাংকে তাদের আট হাজার কোটি টাকা সঞ্চয় জমা আছে। যে ব্যাংক নাগরিকদের নিজের টাকায় চলে সেখানে সরকারকে কেন ৫১ শতাংশ বা তারও বেশি মালিকানা দিতে হবে এবং সরকারের আজ্ঞাবহদের হাতে এই ব্যাংক পরিচালনার (তথা লুটপাটের) ব্যবস্থা করে দিতে হবে, এর ব্যাখ্যা কি কমিশন জাতির সামনে উপস্থাপন করবে? এই সোনালী ব্যাংক পরিচালনার সরকারি ‘মহাসাফল্য’ দেখে অনেকে নিশ্চয়ই কমিশনকে এ রকম সুপারিশ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন।

গরিবের ব্যাংক গরিবের হাত থেকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। কলমের খোঁচায় আইন পাল্টিয়ে দিয়ে ৮৪ লাখ গরিব পরিবারের সঙ্গে চর দখলের খেলায় নামলে সেটা সরকারের জন্য সুখকর অভিজ্ঞতা হবে, এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। আর দেশের মানুষ বিশ্বসমাজে তার গর্বের প্রতিষ্ঠানটিকে গ্রাস করে ও টুকরা টুকরা করে ধ্বংস করতে দেবে, এই আশা করারও কোনো কারণ নেই।

এই ব্যাংক সরকারের কাছ থেকে কোনো টাকা নেয় না, কোনো দাতা সংস্থা থেকেও টাকা নেয় না। এটা সম্পূর্ণরূপে স্বনির্ভর প্রতিষ্ঠান। এটা গরিব মহিলাদের মালিকানায় এবং তাদেরই পরিচালনায় একটি ব্যাংক। তার নিজস্ব আইনি কাঠামোর আওতায় এটা সুন্দরভাবে বরাবর পরিচালিত হয়ে এসেছে। এই আইনি কাঠামো পরিবর্তনের কোনো কারণ এ পর্যন্ত ঘটেনি। গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনার ব্যাপারে কারও মনে কোনো সন্দেহের উদ্রেক কোনো দিন হয়নি, বরং এটা নিয়ে গর্ব বোধ করেছে। সংবাদমাধ্যমে এটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর পরিচালনার মান নিয়ে প্রশ্ন তো উত্থাপন করেইনি, বরং প্রতিবছর প্রশংসা করেছে। ঋণগ্রহীতারা এর ব্যবস্থাপনা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেনি। এখন তদন্ত কমিশন থেকে একটা অদ্ভুত প্রস্তাব এসেছে যে এর আইনি কাঠামো পাল্টানো দরকার। কিন্তু কেন?

গ্রামীণ ব্যাংককে গ্রামীণ ব্যাংকের আইনমতো চলতে দিন। কমিশনের প্রস্তাব অনুসারে আইন পরিবর্তন করলে এটা একটা জাতীয় বিপর্যয় ডেকে নিয়ে আসবে। কমিশন যে কটি বিকল্প প্রস্তাব করেছে তার প্রতিটিই ব্যাংকের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে। চার কোটি গরিব মানুষের ভাগ্য এই ব্যাংকের সঙ্গে জড়িত আছে, এ কথা মনে রেখে এ ব্যাংককে রক্ষার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যাদের সম্পদ কেড়ে নেওয়ার আয়োজন হচ্ছে, তারা এ দেশের নাগরিক। তারা এ দেশের ভোটার। এ কথা ভুলে গেলেও চলবে না।

৮৪ লাখ দরিদ্র নারীর মালিকানাধীন বিশ্বব্যাপী পরিচিত একটি স্বনির্ভর আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সরকারীকরণ করা হলে কিংবা খণ্ড-বিখণ্ড করা হলে এটা হবে সরকারের ক্ষমতার চরম অপব্যবহার।

আইনি কাঠামো পরিবর্তনের বিষয়ে গ্রামীণ ব্যাংক তদন্ত কমিশনের সুপারিশগুলোর কোনোটাই সামান্যতম বিবেচনারও যোগ্যতা রাখে না। কিন্তু এই সুপারিশগুলোর মধ্যে প্রচণ্ড ধ্বংসাত্মক শক্তি নিহিত আছে। তাই সমবেতভাবে এ সুপারিশগুলোকে প্রতিহত করতে হবে।

গ্রামীণ ব্যাংক চিরজীবী হোক। গরিব মহিলাদের ক্ষমতা চিরস্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হোক।

লেখক: মুহাম্মদ ইউনূস: শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা।

সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: জুন ২০, ২০১৩

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

,

ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪,সোমবার

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ