চলমান করোনা মহামারিতে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অক্সিজেনের তীব্র সংকট সামাল দেওয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেছেন দেশটির উচ্চ আদালত। এ-সংক্রান্ত এক শুনানিতে গতকাল বুধবার দিল্লি হাইকোর্ট ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেছেন। এনডিটিভি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ফাইল চলাচল শুরু হয়েছে। সে প্রসঙ্গে আদালত বলেন, ফলাফল কী? আদালত এসব ফাইলের বিষয়ে মাথা ঘামান না।
আদালত বলেন, সরকারের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোলিয়াম কোম্পানি আছে। বিমানবাহিনী আছে। মঙ্গলবার আদালত একাধিক আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু তারপর সারা দিন সরকার কী করেছে, সে প্রশ্ন রাখেন আদালত।
আদালত বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব হলো, হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা। আদালত যেকোনো মূল্যে মানুষের বাঁচার মৌলিক অধিকার রক্ষায় কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশনা দিয়েছেন। যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় সরকার শিল্প থেকে সব অক্সিজেন নিয়ে চিকিৎসার কাজে যুক্ত করবে।
শুনানির একপর্যায়ে আদালত বলেন, তাঁদের উদ্বেগ শুধু দিল্লিকে নিয়ে নয়। কেন্দ্রীয় সরকার সমগ্র ভারতে অক্সিজেন সরবরাহের ক্ষেত্রে কী করছে, তা তাঁরা জানতে চান।
আদালত বলেন, অক্সিজেন সরবরাহ করা সরকারের দায়িত্ব। সে জন্য ভিক্ষা করবে, ধার করবে, নাকি চুরি করবে, সেটা সরকারের ব্যাপার।
ভারতে দৈনিক করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুতে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে গেছে। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ লাখ ১৪ হাজার ৮৩৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ভারতে এক দিনে এত করোনা রোগী আগে কখনো শনাক্ত হয়নি। শুধু তা-ই নয়, বিশ্বের কোনো দেশে এখন পর্যন্ত এক দিনে এত রোগী আগে কখনো শনাক্ত হয়নি। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রেও রেকর্ড হয়েছে। দেশটিতে এক দিনে রেকর্ডসংখ্যক ২ হাজার ১০৪ জন করোনায় মারা গেছেন।
ভারত সরকারের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৫৯ লাখ ৩০ হাজার ৯৬৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত ভারতে করোনায় মারা গেছেন ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৫৭ জন।
করোনার সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করায় ভারত তার সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। অক্সিজেন, ওষুধ, হাসপাতালে শয্যার সংকটসহ নানা সমস্যায় দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
অক্সিজেন সংকটে থাকা ম্যাক্স গ্রুপ নামের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একটি আবেদন শুনানিকালে আদালত ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন।
শুনানিকালে কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে একের পর এক কঠিন প্রশ্ন ছুড়ে দেন আদালত। অক্সিজেন সংকট প্রসঙ্গে আদালত প্রশ্ন করেন, কেন্দ্রীয় সরকারের ঘুম ভাঙছে না কেন? কেন্দ্রীয় সরকার মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা সম্পর্কে কীভাবে এতটা অজ্ঞ হয়?
কেন্দ্রীয় সরকারকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, অক্সিজেনের অভাবে মানুষ মরতে পারে না।
আদালতের আগের আদেশ সত্ত্বেও শিল্প খাতে অক্সিজেনের সরবরাহ অব্যাহত রাখায় কেন্দ্রীয় সরকারকে ভর্ৎসনা করেন দিল্লি হাইকোর্ট। আদালত বলেন, এটা সত্যিই পরিহাসের বিষয়। যখন মানুষ মারা যাচ্ছে, তখন কেন্দ্রীয় সরকার শিল্প নিয়ে উদ্বিগ্ন। তার মানে হলো—সরকারের কাছে মানুষের জীবন গুরুত্বপূর্ণ নয়।
গতকালের আগের দিন মঙ্গলবার একই আদালত শুনানিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে পরিস্থিতির প্রতি সংবেদনশীল হতে বলেছিলেন। শিল্প থেকে অক্সিজেনের সরবরাহ সরিয়ে তা চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করতে বলেছিলেন আদালত। এদিন আদালত বলেছিলেন, ‘অর্থনৈতিক স্বার্থ মানুষের জীবনকে পদদলিত করতে পারে না। আমরা একটি দুর্যোগের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’
মঙ্গলবারের পর দিল্লির করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। আবেদনকারী পক্ষের হাসপাতালে অক্সিজেনের সংকট আরও বাড়ে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আবেদনে কেন্দ্রীয় সরকার বিস্মিত বলে উল্লেখ করেছে। এমন কথার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অমন আচরণ না করতে বলেছেন আদালত। গতকালের শুনানিতে আদালত বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের পরিস্থিতি জানা উচিত। মঙ্গলবার সরকারকে আদালত শিল্পকারখানার অক্সিজেন ব্যবহার করতে বলেছিলেন। সে ব্যাপারে সরকার কী করেছে, সেই প্রশ্ন রাখেন আদালত।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: এপ্রিল ২২, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,