Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

বেকারত্বের খন্ডিত চিত্র এখন স্পষ্ট (২০২১)

Share on Facebook

গত শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘কাদের জন্য সরকার, কাদের জন্য রাষ্ট্র’ শীর্ষক কলামের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেক পাঠক। লেখকের সঙ্গে একমত হলে তাঁরা যেমন প্রশংসা করেন, তেমনি দ্বিমত হলে তুলাধোনা করতেও দ্বিধা করেন না।

কলামের সূত্র ধরে অনেক পাঠক বন্ধু নিজেদের কিংবা সমাজের আশপাশের মানুষের কিছু জ্বলন্ত সমস্যা তুলে ধরেছেন। অবিলম্বে এসব সমস্যার প্রতিকার হওয়া প্রয়োজন। এই তাগিদ থেকেই অনেক পাঠকের মধ্য থেকে কয়েকজনের বক্তব্য এখানে তুলে ধরছি।

তাঁরা ব্যক্তিগত মেইলে এসব প্রতিক্রিয়া ও মতামত পাঠিয়েছেন। এ কারণে তাঁদের ঠিকানা বা পরিচয় দিলাম না। তবে সরকার, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিগতভাবে যদি কেউ সহায়তা করতে আগ্রহ দেখান, তাঁরা এই লেখকের কাছ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ই-মেইল ঠিকানা নিতে পারবেন।

প্রথম পাঠক
‘আসলে আমরা বলতে পারি না বা বললেও আমাদের কথা শোনার কেউ নেই। আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন একটি বেসরকারি কলেজের ছাত্র। গত বছর লকডাউনের জন্য আমি আমার সব প্রাইভেট টিউশনি হারিয়েছি। আমি আট মাস আমার রুমভাড়া দিতে পারিনি। পরে যখন লকডাউন শেষ হয়, তখন কয়েকটা প্রাইভেট পড়ানো শুরু করি। ধীরে ধীরে আমার বাসাভাড়া শোধ করা শুরু করি। কিছুদিন পর আমার কলেজ থেকে ইনকোর্স পরীক্ষার খাতা নিতে বলা হয়। গিয়ে দেখি আমার বকেয়াসহ ২০ হাজার টাকা পাওনা আছে। এ অবস্থায় কোনো উপায় না পেয়ে বড় বোনের সহায়তায় ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে কলেজে দিয়ে খাতা জমা নিই। এই টাকা এখনো শোধ হয়নি। বাসাভাড়া ১৪ হাজার টাকা বকেয়া। সরকার আবার লকডাউন দিল।এখন আমি কীভাবে চলব? বাসাভাড়া কীভাবে দেব? ঋণের কিস্তির টাকা কীভাবে শোধ করব? আমাদের দেখার কেউ নেই। আমার মাসে খরচ ১০ হাজার টাকা। আমি কোথায় টাকা পাব?’

এরপর তিনি কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়ে লিখেছেন, ‘কিসের করোনা? কিসের মরণের ভয়, যদি পেটে ভাত-ই না থাকে? রিকশা চালানো যায় না। গার্মেন্টসে আর লোক নেয় না। লজ্জায় কাউকে কিছু বলতেও পারি না। আমি এ দেশে জন্মগ্রহণ করে আগে গর্ব অনুভব করতাম ।এখন আমি লজ্জা অনুভব করি।’

দ্বিতীয় পাঠক
‘আজকের এই সমাজে সত্য বলার মানুষ অনেক আগেই হারিয়ে গেছে। কেউ মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেন না। শুধু কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে জীবনটা কোনোমতে পার করছে আমার মতো হাজারো মানুষ। বাবা অনেক কষ্ট করে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়িয়েছেন। কষ্ট করে ঢাকা গিয়ে একটি চাকরি পেয়েছিলাম। সংসারটা আমার চাকরি ও অন্যের ওপর নির্ভর করে কোনোমতে চলছিল।

শেষ পর্যন্ত এই লকডাউনে চাকরিটা হারালাম। নিঃস্ব হয়ে গেছি এই লকডাউনের জন্য। আমার পরিবার করোনার জন্য মরবে না, যদি মরে এই লকডাউনের জন্য মরবে । আমার মতো হয়তো হাজার মানুষের পরিবার এই লকডাউনে এভাবে নিঃস্ব হয়ে গেছে।’

তৃতীয় পাঠক
‘৭৫ বছর বয়স্ক এক নারী রিকশা থেকে পড়ে তাঁর মাজার টাকনি ভেঙে ফেলেছেন। কেউ তাঁকে হাসপাতালে নেননি। আমি ১৯/৩/২০২১ তারিখে তাঁকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিই। এই পৃথিবীতে তাঁর আপনজন বলতে কেউ নেই। তাঁর স্বামীকে পাকিস্তানিরা মেরে ফেলেছিল। তাঁর নাম দিলসাদ বেগম, তিনি পঙ্গু হাসপাতালে অস্ত্রোপচারকক্ষের সামনে অজ্ঞাত রোগী হিসেবে পড়ে আছেন।

অথচ তাঁকে এখন পর্যন্ত অপারেশন করা হচ্ছে না টাকার অভাবে। তিনি নিজে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের কাছে দরখাস্ত দিয়েছেন তাঁকে বিনা খরচে অপারেশন করানোর জন্য । দরখাস্ত নম্বর ১২৮৮ । হাসপাতালে তাঁকে দেখার মতো কোনো লোক নেই। কখনো সময় হলে আমি দেখে আসি।’

চতুর্থ পাঠক
‘এই মুহূর্তে আপনার কাছে একটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। এই সরকার এত উন্নয়ন করেছে বলে। তাহলে আমার দরজায় আগে ফকির আসত ২০-৩০ জন, আর এখন কেন আসছে ১৩০ জন। আমার মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, যাঁরা স্বপ্ন দেখেন ব্যবসা করে বড় হওয়ার, কিন্তু সরকারের উল্টাপাল্টা কাজকর্মের কারণে অধিকাংশ লোক ব্যবসা গুটিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন।

‘আর সরকারের সহযোগিতার কথা বলছেন। সরকারের দেওয়া ২৫০০ টাকা করে কার কাছে যায়, এটাই তো জানি না। তবে আমার এলাকায় জরিপ করে দেখেছি, সত্যিকার অর্থে যাঁদের সাহায্য দরকার, তাঁরা এই টাকা পাওয়ার উপায়ই খুঁজে পাননি।
‘সরকার যদি দরিদ্র মানুষের উপকার করতে চায়, তবে সরাসরি সশস্ত্র বাহিনীর মাধ্যমে কিংবা বিকাশ ও রকেট হিসাবে দিতে পারে।’

পঞ্চম পাঠক
‘গত ১২ বছরে এ দেশের এমপি মহোদয়সহ রাজনীতিবিদেরা অনেক টাকা কামিয়েছেন। এখন প্রধানমন্ত্রী যদি তাঁদের কাছ থেকে কিছু অর্থ সাধারণ মানুষের খাবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন, তাহলে সেই অর্থ দিয়ে গরিব মানুষের এক মাসের খাবারের ব্যবস্থা হয়ে যাবে।’

ষষ্ঠ পাঠক
‘ক্ষমতাবান ও ধনবান লোকগুলো যদি আমদের দেশের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াত, তাহলে আমাদের দেশের অবস্থা এই রকম হতো না। দেশের এই পরিস্থিতিতে যাঁরা কথা বলতে পারেন, তাঁরাও চুপ করে বসে আছেন ভয়ে।’

এই ছয় জন সম্মানিত পাঠকের বক্তব্য তুলে ধরার উদ্দেশ্য, যদি কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়। যদি রাষ্ট্রের ঘুম ভাঙে। প্রথমেই আমরা পঙ্গু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, ৭৫ বছর বয়সী যে নারী আপনাদের হাসপাতালে পড়ে আছেন, তাঁর অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করুন। টাকার জন্য আটকে রাখবেন না। তিনি আপনাদের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। অবিলম্বে তাঁর অস্ত্রোপচার না হলে বড় রকমের ক্ষতি হতে পারে।

দ্বিতীয় মেইলে কলেজপড়ুয়া বন্ধু লিখেছেন করোনার কারণে তিনি টিউশনি হারিয়েছেন। তিনি কেবল কপর্দকশূন্য নন, ঋণগ্রস্ত। একজন কলেজ শিক্ষার্থীর বিপদে কি আমাদের সরকার, কোনো ব্যাংক কিংবা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসতে পারে না? বিভিন্ন ব্যাংক শিক্ষার্থীদের ঋণ দিয়ে থাকে। তাহলে করোনাকালে এই শিক্ষার্থী কেন ঋণ পাবেন না?

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা বন্ধু লকডাউনের কারণে চাকরি হারিয়েছেন। একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করতে মা-বাবার খরচের পাশাপাশি রাষ্ট্রকেও অনেক বিনিয়োগ করতে হয়। লকডাউনের কারণে তিনি বেকার হয়ে পড়েছেন। এ ক্ষেত্রে কি রাষ্ট্রের কিছুই করণীয় নেই? যে দেশে জন্ম নিয়ে তিনি একদিন গর্ব বোধ করতেন, এখন লজ্জা অনুভব করেন। এই লজ্জা কি তাঁর একার, না আমাদের সবার?

একজন ব্যবসায়ী তাঁর দোকানে ভিক্ষাপ্রার্থীর সংখ্যা উল্লেখ করে বলেছেন, আগে আসতেন ২০ থেকে ৩০ জন। এখন আসেন ১৩০ জন। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা তাঁর কথা অগ্রাহ্য করতে পারেন। কিন্তু অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ হয় না। দেশে উন্নয়ন হয়েছে।

কিন্তু সেই উন্নয়নের সুফল গরিষ্ঠসংখ্যক মানুষ পাননি। পেলে এক সপ্তাহের লকডাউনে হাজার হাজার মানুষকে শহর ছেড়ে গ্রামে যেতে হতো না।
৭৫ বছর বয়সী নারী যিনি হাড় ভেঙে পঙ্গু হাসপাতালে পড়ে আছেন, ঋণগ্রস্ত কলেজপড়ুয়া তরুণ, লকডাউনে চাকরি হারানো সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের জন্য এই রাষ্ট্র ও সমাজের অধিপতিদের কি কিছুই করার নেই?

লেখক: সোহরাব হাসান প্রথম যুগ্ম সম্পাদক ও কবি।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: এপ্রিল ২১, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ