যুক্তরাষ্ট্রে গত মার্চ মাসে ভোক্তা মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ, ফেব্রুয়ারি মাসে যা ছিল ১ দশমিক ৭ শতাংশ। দেশটিতে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির হার ২০০৯ সালের পর এটিই সর্বোচ্চ।
দ্য ইকোনমিস্ট–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই মূল্যস্ফীতির হার নিছক পরিসংখ্যান নয়। মার্কিন অর্থনীতি যে দ্রুতগতিতে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, এটি তারই লক্ষণ। দেশটিতে টিকাদান অনেক দূর এগিয়েছে। টিকাপ্রাপ্ত ভোক্তারাও খরচ করতে কসুর করছেন না। ফলে অর্থনীতির পালে হাওয়া লাগতে শুরু করেছে।
ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে ০ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১২ সালের পর এত দ্রুত হারে দেশটিতে দ্রব্যমূল্য বাড়েনি। মূলত পেট্রলের দাম বাড়ার কারণে এটি ঘটেছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। শুধু খাদ্য মূল্যস্ফীতিই নয়, সিপিআই সূচকও ০ দশমিক ৩ শতাংশ ঊর্ধ্বমুখী, যা করা হয় খাদ্য ও জ্বালানি মূল্যস্ফীতি বাদ দিয়ে।
এদিকে দেশটিতে সেবার মূল্যও বাড়তে শুরু করেছে। হোটেলকক্ষের চাহিদা আগের মাসের চেয়ে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। কক্ষের ভাড়া কয়েক মাস ধরে বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের পূর্বাভাস, ব্যবসা-বাণিজ্য ও দোকানপাট খুলে যাওয়ার কারণে মে মাস নাগাদ সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির হার ৪ শতাংশে উঠতে পারে।
তবে অর্থনীতিতে এখনো অনিশ্চয়তা থেকে যাওয়ার কারণে মূল্যস্ফীতির হার এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে সামাজিক দূরত্বের বিধি শিথিল করা হচ্ছে, অন্যদিকে নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ, তার সঙ্গে হঠাৎ ফেডারেল রিজার্ভের সুর নরম করা—এসব মিলে যেন যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। এরপর আবার অবকাঠামো খাতেও বিনিয়োগ করা হবে। এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতি এই ঘাটতি বাজেট কতটা সামাল দিতে পারবে, তা নির্ভর করবে এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা কতটা সফল হয়, তার ওপর।
ফেডারেল রিজার্ভ ও হোয়াইট হাউস একই সুরে কথা বলতে শুরু করেছে। উভয়েই মনে করছে, এ বছর মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেলেও তা হবে সাময়িক। আর্থিক বাজারের অনিশ্চয়তা আরও বেশি। তারা উভয়েই মনে করছে, মূল্যস্ফীতি দীর্ঘ সময় ফেডের নির্ধারিত সীমার ওপরেই থাকবে এবং সুদহার ২০২২ সালে বেশিই থাকবে, যদিও মার্চে অনুষ্ঠিত ফেডের সর্বশেষ বৈঠকে ২০২৩ সালের আগে অর্থনীতির উল্লম্ফন ঘটবে, এমন পূর্বাভাস নেই। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূলত শ্রমবাজারের পরিস্থিতি দেখে পূর্বাভাস দিয়ে থাকে। বাস্তবতা হলো, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির তুলনায় এখন যুক্তরাষ্ট্রে বেকারের সংখ্যা ৮৪ লাখ বেশি। ফলে এত বেকারত্ব থাকলে মূল্যস্ফীতির হার কমই থাকবে।
তবে গত আগস্ট মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বাড়ছেই। ফলে বর্তমান এই মূল্যস্ফীতি হ্রাস না পেলে ফেডারেল রিজার্ভ নতুন করে ভাবতে বাধ্য হবে, তারা প্রকৃত অর্থে কী চায়। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশের মধ্যে রাখা হবে, নাকি কোভিডের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে দেওয়া হবে।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: এপ্রিল ২০, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,