যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে বেশ হাড্ডাহাড্ডি লড়েছে চীন। সেই সঙ্গে গত বছর করোনা মোকাবিলাতেও সবচেয়ে দক্ষতা দেখিয়েছে চীন। ধারণা করা হয়, চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে করোনার উৎপত্তি। তবে করোনা সামলে বড় অর্থনীতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরেছে দেশটি।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র করোনা মোকাবিলায় বলা যায় একরকম তালগোল পাকিয়ে ফেলেছিল। করোনায় এখন পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছিল, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রকে পিছিয়ে দেবে চীন।
তবে এ ধারণাকে এতটা জোরালো মনে করছে না বাণিজ্যবিষয়ক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের গবেষণা ও বিশ্লেষণ বিভাগ ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। তারা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলতে চীনের এখনো অন্তত ৫০ বছর সময় লাগবে। সম্প্রতি সংস্থাটির মুখ্য অর্থনীতিবিদ সাইমন বাপটিস্ট মার্কিন গণমাধ্যম সিএনবিসিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
বাপটিস্ট বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাবে ২০২০ সালে চীনের (সম্ভাব্য) মাথাপিছু আয় হচ্ছে ১০ হাজার ৫৮২ ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের মাথাপিছু আয় এর প্রায় ছয় গুণ, ৬৩ হাজার ৫১ ডলার। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পাল্টেছে। নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সাবেক প্রেসিডেন্টের মতো খামখেয়ালি নন। দায়িত্ব নিয়ে প্রথম সংবাদ সম্মেলনেই তিনি বলেন, ‘কোনো দেশকেই যুক্তরাষ্ট্রকে অতিক্রম করার সুযোগ দেব না। চীন শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী, তাদের সবচেয়ে ধনী দেশ হওয়ার লক্ষ্য থাকতেই পারে, তবে তা আমার জীবদ্দশায় হবে বলে মনে হয় না।’ চলতি বছর করোনা মোকাবিলায় ব্যাপকভাবে টিকা কর্মসূচিও চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
ধনী দেশ হিসেবে বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে না ফেলতে পারলেও এশিয়ার বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের দুশ্চিন্তার কারণ হবে চীন—এমনই পূর্বাভাস অর্থনীতিবিদ বাপটিস্টের। তাঁর মতে, বিশ্ববাজারে চীন বড় শক্তি। তবে শক্তি কার বেশি, এটা নির্ভর করবে দেশ দুটি কীভাবে তাদের শক্তির প্রয়োগ করবে। ২০৩০ সালের মধ্যে এশিয়ার পুরো বাজার চীনের দখলে চলে যাবে বলে ধারণা করেন এই অর্থনীতিবিদ।
অন্যদিকে, এশিয়াতে প্রভাব হারানোর বিষয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও সচেতন। তিনি তাঁর পররাষ্ট্রনীতিতে এশিয়ার দেশগুলোকে প্রাধান্য দিয়েছেন। প্রশাসনে একাধিক এশীয় বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিয়েছেন। এ ছাড়া জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মতো উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন বাইডেন। তবে চীনের সঙ্গে এখনো সেভাবে সম্পর্কোন্নয়ন হয়নি। সম্প্রতি এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে রীতিমতো পরস্পর পরস্পরকে অপমান করেছে দুই দেশ।
চীন আশা করছিল, ২০৩৪ সালের মধ্যে তাঁরা মার্কিন অর্থনীতিকে পেছনে ফেলবে।
তাদের এ ধারণার পক্ষে যুক্তিও যথেষ্ট জোরালো। করোনা মহামারির এই সময়ে চীন খুব দ্রুতই প্রবৃদ্ধিতে ফিরতে পেরেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যুরো অব ইকোনমিকস অ্যানালাইসিসের তথ্য অনুসারে, গত বছর চীনের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল ২ দশমিক ৩ শতাংশ। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি আগের বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে।
বাপটিস্টের ৫০ বছর তত্ত্ব আমেরিকার প্রশাসনকে আশাবাদী করলেও আশাবাদী নন ব্যাংক অব আমেরিকার এশিয়ার অর্থনীতি বিভাগের প্রধান গবেষক হেলেন কিয়াও।
তিনি সিএনবিসিকে বলেন, ২০২৭-২৮ সালের মধ্যেই চীনের অর্থনীতি আমেরিকাকে পেছনে ফেলে দেবে। কিয়াও পুরোপুরি মাথাপিছু জিডিপি ধারণা থেকে এ ধারণা করছেন। তিনি বলেন, যেহেতু চীনের জনসংখ্যা বেশি, তাই মোট দেশজ আয়কে জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে মাথাপিছু আয় ছোট দেখায়। এর মানে এই নয়, চীন অর্থনীতিতে আমেরিকার থেকে পিছিয়ে আছে।
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: মার্চ ৩০, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,