একটা প্রশ্নের উত্তর দিবেন?
আমাদের মনে, আবেগের সংখ্যা কতটি?
আচ্ছা থাক, গুনতে হবে না। আমিই বলে দিচ্ছি। আমাদের মনে আবেগের সংখ্যা প্রায় ২৭ টি।
অবাক হচ্ছেন?
মূল আবেগ ৬ টি। আনন্দ, দুঃখ, ভয়, রাগ, বিস্ময়, ঘৃণা থেকে এই ২৭ টি আবেগের জন্ম। প্রতিনিয়ত এই আবেগগুলো, আমাদের বিভিন্ন সিচুয়েশনের ভিতর দিয়ে নিয়ে যায়।
আচ্ছা, এই আবেগগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে নাকি আমরা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করি? প্রশ্নটা আপনার কাছে।
১৯৯০ সালে ইমোশনাল ইনটেলিজেন্স নিয়ে কাজ করা শুরু করেন দুইজন মনবিজ্ঞানী, জন মেয়ার এবং যুক্তরাষ্টের ইয়েল ইউনিভার্সিটির পিটার সালোভো। পরবর্তীতে ড্যানিয়েল গোল্ডম্যান এই ধারণা নিয়ে ব্যপকভাবে গবেষণা শুরু করেন এবং ১৯৯৫ সালে প্রথম বই আকারে প্রকাশ করেন। বইয়ের নাম- ইমোশনাল ইনটেলিজেন্স- হোয়াট ইট ক্যান ম্যাটার মোর দ্যান আই কিউ?
যাত্রাটা এখান থেকেই। আমাদের সাফল্যের ৫৮% নির্ভর করে ইমোশনাল ইনটেলিজেন্সের উপর তাই এটাকে ইগনোর করার উপায় নেই। আজকের ৯০% সফল মানুষের চরিত্র বিশ্লেষণ করলে করলে পাওয়া যায় উঁচু মাত্রার ইমোশনাল ইনটেলিজেন্স।
ইমোশনাল ইনটেলিজেন্স , একটু কাঠখোট্টা মনে হচ্ছে? বুঝতে কষ্ট হচ্ছে?
একটু সহজ করে বলি?
আমাদের আবেগগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান রেখে, ভালো আবেগ এবং খারাপ আবেগ কে আলাদা করে, উপকারী আবেগকে প্রশ্রয় দেওয়া এবং ক্ষতিকারক আবেগকে দমন করার জ্ঞানই হল ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স।
খুব সহজ মনে হচ্ছে?
এমনিই পারেন তাই না?
তাহলে অফিসের বস রেগে কথা বললে মন খারাপ করে থাকেন কেন? সব কাজ তখন বিশাল বোঝার মত মনে হয় কেন?
কিংবা, প্রেমিকা ছেড়ে চলে গেলে নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে হয় কেন?
আমরা যেটা পারি সেটা হল, কমন সেন্স থেকে শেখা জিনিসগুলো দিয়ে ম্যানেজ করতে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের কমন সেন্স, খারাপ পরিস্থিতিতে খুব ভালো কাজ করে না। এই সময়ের জন্যই আমাদের ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কিত জ্ঞানের প্রয়োজন পড়ে।
বাংলাদেশে এই কন্সেপ্ট খুব নতুন। মাত্র কয়েক বছর। তাই এই বিষয়ে জানতে হলে এতদিন ইংরেজি ভাষার খটমট বইগুলোই ছিলো ভরসা কিন্তু এখন সেই কষ্ট দূর করে দিয়েছেন রুশদিনা খান আপু । ধন্যবাদ রুশদিনা খান আপু । আপু ১২ বছর ধরে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের বাইরের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের ট্রেনিং করিয়ে যাচ্ছেন। ইমোশনাল ইনটেলিজেন্স এর উপর আন্তর্জাতিকভাবে ট্রেনিং-সনদ প্রাপ্ত হয়ে বাংলাদেশে ইমোশনাল ইনটেলিজেন্স নিয়ে প্রচুর ট্রেনিং করিয়ে যাওয়ায় ,এই বিষয়ে উনার তথ্য ভান্ডার এবং অভিজ্ঞতা ভীষণ আকর্ষণীয়।
আমাদের মস্তিষ্কের দুইটি অংশ থাকে-
১) লিম্বিক সিস্টেম।
এই লিম্বিক সিস্টেম আমাদের মনের ভিতর আবেগের প্রতিক্রিয়াগুলো ঘটায়। রাগ হলে্ ভয় পেলে, খুশি হলে যে প্রতিক্রিয়াগুলো দেখাই তা এই লিম্বিক সিস্টেম করে থাকে।
২) আর প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স।
ইনি আবার যুক্তি বাবু। আবেগ আসলে, উনি সময়য় নেন, ভাবেন, যুক্তি দিয়ে বিচার করেন তারপর মস্তিষ্ককে বলেন এটা করা যাবে বা এটা করা যাবে না।
আমার রিভিউ পড়ে ভয় পাচ্ছেন? ভাবছেন খুব খটমট ব্যপার?
বিলিভ মি! প্রতিটা চ্যাপ্টারে এমন এমন গল্প আছে যা পড়ে মনে হবে, আরে আমিওতো এমন করেছি। আহারে, সেদিন যদি এটা না করে ওটা করতাম তাহলে আজ এমন না হয়ে ওমন হতে পারতো।
এই এমন না হয়ে ওমন করতে গেলে একটু সময় নিয়ে এই বইটি পড়তে হবে। আর অবশ্যই প্রতিটা বিষয় প্রাকটিস করতে হবে।
আপু এমন সুন্দর করে আপনার সামনের দিনের করনীয় ম্যাপিং করে দিয়েছেন যে, আপনার নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে থাকতে বাধ্য।
অনেক কিছু রিভিল করে দিলাম।
ব্রিগস মায়ার পদ্ধতিতে সারা পৃথিবীতে ১৬ টি প্রোফাইলের মানুষ আছে। একেকজন একেক পরিস্থিতিতে একেক রকমের ব্যবহার করে থাকেন। চেষ্টা করলে তাদের এই ব্যবহারে পজেটিভ পরিবর্তন আনা সম্ভব।
সর্বশেষে একটা কথা-
The First Law of Thermodynamics states that energy is always conserved, it cannot be created or destroyed. In essence, energy can be converted from one form into another.
অর্থাৎ, শক্তি তৈরি করা যায় না, ধ্বংস ও করা যায় না। শুধু এক ধরনের শক্তি থেকে অন্য ধরণের শক্তিতে পরিবর্তন করা যায়।
আমাদের আবেগও এক ধরণের শক্তি। ভালো এবং খারাপ দুই-ই থাকবে। আমাদের চেষ্টা করতে হবে খারাপ শক্তিকে ভালো শক্তিতে রুপান্তরিত করতে-
সেজন্য আপনি প্রস্তুত তো?
সূত্র: সংগৃহিত
তারিখ: এপ্রিল ০৬, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,