Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

নজরুল গীতির ফিরোজা বেগম

Share on Facebook

সালটা ছিল ১৯৪০, HMV স্টুডিও তে কাজী নজরুলের কাছে গান শোনাতে এলো ক্লাস ফোরে পড়া এক কন্যা ।
স্টুডিওতে সহকারীদের দিকে ঘুরে কবি বলেছিলেন, ‘আজ আমার কী ভাগ্য দ্যাখ, এক জন মুসলিম মেয়ে আমাকে গান শোনাতে এসেছে৷ আমি হয়তো থাকব না৷ দেখবি, এ মেয়েটা একদিন দারুণ বিখ্যাত হবে৷’
পূর্ববাংলার এক জমিদার কন্যা, মা দীর্ঘদিন আরব দেশে কাটিয়েছেন ৷ এক প্রজন্মের বাঙালি মা বাংলার সঙ্গে আরবি, ফার্সি গানও গাইতেন আর জমিদার বাবা গাইতেন রবীন্দ্রনাথ …..অমল ধবল পালে’৷
ফরিদপুরের গ্রামে গাছের ডালের দোলনায় দোল খেতে খেতে, ফুলের রেনু মেখে কন্যা মায়ের স্টাইলেই গান গাইতেন । তাইতো তাঁর বেশ কিছু গানে শব্দ নিয়ে খেলার প্রবণতার মধ্যে ফুটে ওঠে ওই দূর বিদেশিনীর গল্প৷

ফিরোজা বেগম ……ফরিদপুরের মেয়ে হলেও কলকাতার সঙ্গীত সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে উঠেছেন দীর্ঘদিন৷ তাঁকে কি কোনও বাড়তি সম্মান দিয়েছে এই বাংলা ? …….দেয়নি ।
বাংলায় মুসলিম মেয়েদের চিরকালীন প্রাচীর ভাঙার জন্য বারবার নাম উঠে আসে বেগম রোকেয়া, সুফিয়া কামাল, সামসুন্নাহারের৷ কিন্ত ফিরোজা আসার আগে সত্যিই কোনও বাঙালি মুসলিম তরুণী গানে গানে মাতাতে পেরেছে গঙ্গা, পদ্মা, মেঘনার আকাশ বাতাস ? আফশোষ শুধু একটাই, ফিরোজা বেগমের পরে এপার বাংলা থেকে আর কোনও মুসলিম গায়িকা উঠে এলেন না !

আর শুধু গানের জন্যই বা তাঁকে মনে রাখতে যাব কোন দুঃখে? ফিরোজা বেগম সাংস্কৃতিক প্রাচীর ভাঙার সাথে সাথে দুই বাংলার সামাজিক সংস্কারও যে ভেঙে উড়িয়ে দিয়েছেন ! কিংবদন্তি সুরকার কমল দাশগুপ্তের সঙ্গে তাঁর প্রেম, বিয়ে এবং সংসারের ইতিবৃত্ত, সার্থক প্রেমকাহিনী দুই বাংলার ইতিহাসে সেরাদের সেরার তালিকায় থাকবে, যাঁর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে শুধু নজরুল ও প্রমীলার প্রেম৷

স্টুডিওতে ফিরোজার প্রথম গান শুনে নজরুল ডেকে পাঠিয়েছিলেন কমল দাশগুপ্তকে৷ ধুতি এবং হাতা গোটানো শার্টের বাঙালি স্টাইল বলতে আমরা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে বুঝি, ওটা আদতে কমল দাশগুপ্তের স্টাইল ৷ প্রথম দর্শনে ফিরোজাকে পাত্তা দেননি কমল৷ অত ছোট মেয়ে, আর তিনি তখনই বাংলার সেরা সুরকারদের একজন৷
পরবর্তী কালে কমলবাবুর সঙ্গে ফিরোজার প্রেম ছিলো কলকাতা ও ঢাকার এক অন্যতম চর্চার অঙ্গ৷ ফিরোজা কমলের তত্ত্বাবধানে প্রথম রেকর্ড করেন ১২ বছর বয়সে, ১৯৪২ সালে ৷ দু’জনের বিয়ে হয় ১৯৫৬ সালে, কমল তখন ৪৪ আর ফিরোজা ২৬৷

গোপালগঞ্জের জমিদার খান বাহাদুর মোহাম্মদ ইসমাইলের মেয়ে কলকাতায় হিন্দু যুবকের সঙ্গে প্রেম করছেন, এমন ছবি চল্লিশ বা পঞ্চাশের দশকে অকল্পনীয় ছিল৷ ফিরোজার কৃতিত্ব, তিনি সমস্ত বাধা উড়িয়ে কমলের সঙ্গে নজরুল ও আধুনিক গান করে বেড়িয়েছেন৷ এইচএমভির সেরা ট্রেনারের ট্রেনিং নিতে নিতে গলা অন্যরকম হয়ে গিয়েছে৷ কলকাতা থেকে তাঁকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় গান বন্ধ করে বিয়ে দেওয়ার জন্য৷ এক বছর ফিরোজা খাবার বন্ধ করে দিয়েছিলেন, গানও৷ অসুস্থ হয়ে প্রায় মারা যাচ্ছিলেন তবু গান ছাড়েননি,কমলকেও না৷ বেশ গর্বের সঙ্গে বাঙালির প্রিয় বেগম বলতেন, ‘বেগম রোকেয়া তাঁর চার পাশে আত্মীয়দের অনেককে পেয়েছিলেন আমাকে কিন্ত্ত লড়তে হয়েছে একা৷’ এটাই তাঁর অশেষ কৃতিত্ব !

কমলের কৃতিত্ব, প্রেমের জন্য তিনি তাঁর বিশাল সাম্রাজ্য ছেড়ে চলে গিয়েছেন অন্য দেশে৷ ধর্ম ত্যাগ করে, নাম পাল্টে৷ কমল দাশগুপ্ত কমল ইসলাম হয়ে ঢাকায় কি সেই স্বীকৃতি পেয়েছেন কোনওদিন, যা পেতেন মুম্বই বা কলকাতায়? সেটা নিয়ে ভাবেনইনি তাঁর ফিরোজার পাশে থাকবেন বলে ।
নজরুলের প্রায় চারশো বিখ্যাত গান সুর করেছেন কমল দাশগুপ্ত যদিও বহু লোকে জানে সেগুলো
নজরুলের সুর । আর ফিরোজা? সিনেমায় গান করব না এই গোঁ ধরে রেখে তিনি নিজেই এক ইতিহাস৷

মুম্বইয়ে বাঙালি সুরকারদের দাপটের কথা বলতে গেলে আমরা সচিন কর্তা, সলিল চৌধুরী, আর ডির কথা বলি, কমলের সুরে হিন্দি গানের তালিকা খুঁজে দেখেছেন কখনও? পাবেন এক আলিবাবার গুহা, ১৯৪২ থেকে ১৯৫১ অসংখ্য হিন্দি গান! তখনই বোঝা যায়, কোন সুরে মজেছিল ফিরোজা বেগমের মন৷ মুক্ত ঢাকায় প্রমীলাকে নিয়ে নজরুলের প্রত্যাবর্তন যে ভাবে স্বাগত জানিয়েছিলেন মানুষ, ফিরোজাকে নিয়ে কমলের প্রবেশ কিন্ত তেমনটি ছিল না৷ চার পাশের জগত্ ছোট হয়ে গিয়েছিল কমল ইসলামের৷ সেই সময় ফিরোজাই তাঁকে সাহচর্য ও সাহস দিয়ে গিয়েছেন নিজস্ব স্টাইলে৷

ক্রমে আড়ালে চলে গিয়েছেন কমল ইসলাম, আলোয় ফিরে এসেছেন ফিরোজা বেগম,কিন্ত্ত জিতে গিয়েছে বাঙালির প্রেম৷ ৷ ফিরোজার প্রেমে সুগন্ধী কমল ফুটে উঠেছিল৷ ঠিক চল্লিশ বছর আগে চলে গিয়েছিলেন কমল৷ ফিরোজার প্রতিটি কথায় বারবার ফিরে আসতেন তিনি৷ মৃত্যুর আগে বেগমের ইচ্ছে ছিল, তাঁর ‘কমলবাবু’র কবরের পাশেই যেন তাঁকে শুইয়ে দেওয়া হয়৷ ঢাকার বনানীতে কমল দাশগুপ্তের কবর বড় একাকী পড়ে আছে যে ! ২০১৪ সালে বেগমের এন্তেকালের পর সেখানে তাঁকেও শুইয়ে দেয়া হলো ।
এবার হয়তো কবরের চারপাশটা ফিরোজা রংয়ে রঙিন হয়ে উঠবে

সৌজন্যে: এইসময় পত্রিকা
সংকলনে – স্বপন সেন

সূত্র: সংগৃহিত।
তারিখঃ মার্চ ০২ , ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

,

নভেম্বর ২৬, ২০২৪,মঙ্গলবার

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ