লেখক টমাস করলি প্রায় পাঁচ বছর ধরে ধনীদের চালচিত্র বুঝতে কাজ করেছেন। বহু ধনীর বিষয়ে গবেষণা করেছেন। জীবনের কোন অভ্যাস তাঁদের এমন সাফল্য এনে দিয়েছে, এটা জানতে প্রায় ১৭৭ জন ধনীর সারা দিনের জীবনযাপন দেখেছেন করলি। এসব ধনীর মধ্যে রয়েছেন বিল গেটস, ইলন মাস্ক, ড্যান গিলবার্ট, মার্ক কুবানের মতো ধনীরা। এ বিষয়ে করলির বিখ্যাত বই ‘রিচ হ্যাভিটস: দ্য ডেইলি সাকসেস হ্যাবিটস অব ওয়েলদি ইনডিভিজুয়্যাল’। গবেষণা শেষে করলি যে উপসংহারে এসেছেন তা হলো, ধনীরা টিভি খুব কম দেখেন। বেশির ভাগই দিনের একটা বড় সময় বই পড়েন। এমনটা দেখেছেন লেখক মাইকেল সিমন্সও। অনেক ধনী ইচ্ছে করেই শেখার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘণ্টা আলাদা করে রাখেন, যাকে লেখক মাইকেল সিমন্স সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি বলে মনে করেন। সিমন্স দেখেছেন ধনীরা দিনে অন্তত পাঁচটি ঘণ্টা এমন কাজে ব্যয় করেন, যা তাঁদের অন্যদের থেকে আলাদা করে। যাকে তিনি ‘পাঁচ ঘণ্টা নিয়মের’ বলে অভিহিত করেছেন। এই পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে রয়েছে বই পড়া, চিন্তা করা, নিজের কাজের বিশ্লেষণ করা।
বই পড়ার অভ্যাস
মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস বছরে ৫০টি বই পড়েন। ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ দুই সপ্তাহে কমপক্ষে একটি বই পড়েন। বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। তাঁর ভাই জানান, ছোটবেলা বাড়িতে রাখা দুটো পত্রিকা একেবারে গিলে খেতেন ইলন মাস্ক। ছোটখাটো কিচ্ছু বাদ দিতেন না। প্রতিদিন দুটো করে বই পড়তেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বন্ধকি ব্যবসার প্রতিষ্ঠান কুইকেন লোনসের প্রতিষ্ঠাতা ও মালিক ৫৮ বছর বয়সী ড্যান গিলবার্ট মিশিগান প্রদেশের শীর্ষ ধনী। ড্যান গিলবার্ট তাঁর দিনের এক থেকে দুই ঘণ্টা সময় পড়ার জন্য ব্যয় করেন।
বিনিয়োগগুরু ওয়ারেন বাফেট প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা পাঁচটি সংবাদপত্র এবং ৫০০ পৃষ্ঠার করপোরেট প্রতিবেদন পড়তে ব্যয় করেন। ব্যবসায়ী ও উদ্ভাবক হিসেবে সফল ক্যারিয়ার গড়েন মার্কিন ব্যক্তিত্ব মার্ক কুবান। তিনি একাধারে ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ‘ম্যাগনোলিয়া পিকচার্স’, পেশাদার বাস্কেটবল টিম ‘ড্যালাস মেভারিক্স’ ও যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় চেইন সিনেমা হল ‘ল্যান্ডমার্ক থিয়েটারস’-এর মালিক; এইচডিটিভি কেবল নেটওয়ার্ক ‘এএক্সএস’ টিভির চেয়ারম্যান। এই মার্ক কুবান দিনে অন্ত তিন ঘণ্টা বই পড়েন। হোম ডিপোর সহপ্রতিষ্ঠাতা আর্থার ব্ল্যাঙ্ক প্রতিদিন দুই ঘণ্টা পড়েন। বিলিয়নিয়ার উদ্যোক্তা ডেভিড রুবেনস্টাইন সপ্তাহে ছয়টি বই পড়েন।
ই–কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস কর্মীদের নিয়ে একসঙ্গে পড়েন। একবার এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একটা সফল মিটিংয়ের মূলমন্ত্র হলো পড়া। অনেকটা স্টাডি হলের মতো। সবাই টেবিলের চারপাশে বসে থাকে। আমরা প্রায় আধা ঘন্টা নীরবে পড়ি। ডকুমেন্ট পড়তে আমাদের বেশি সময় লাগে। তারপরে আমরা এটি নিয়ে আলোচনা করি।’
চিন্তার জন্য অবশ্যই আলাদা সময়
দিনে কিছু সময় অনন্ত চিন্তার জন্য সময় নিন। এওএল সিইও টিম আর্মস্ট্রং ও তাঁর সিনিয়র টিম প্রতি সপ্তাহে চার ঘণ্টা ব্যয় করেন চিন্তা করতে। লিঙ্কডইন সিইও জেফ ওয়েইনার প্রতিদিন দুই ঘণ্টা চিন্তাভাবনার জন্য সময় রাখেন। কিউটুই ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ব্রায়ান স্কুডমোর সোমবারটি রেখেছেন কেবল ভাবার জন্য। সপ্তাহে ১০ ঘণ্টা ব্যয় করেন চিন্তা করে।
নিজের কাজ পরীক্ষা করা
জীবনের কিছু সময় যে নতুন উদ্ভাবনের জন্য ব্যয় করা উচিত, তার সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হলেন টমাস এডিসন। প্রতিভাবান এই বিজ্ঞানী প্রতিদিনই নিজের উদ্ভাবন পরীক্ষা করতেন। অজানা সমস্যার সমাধান করতেন। টমাস আলভা এডিসনের এই অভ্যাস জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যদি নিজের কাজটি সঠিক হচ্ছে কি না, বারবার পরীক্ষা করি আমরা, তাহলে অবশ্যই ভুলত্রুটিগুলো বের হয়ে আসে। সমাধানও করা সম্ভব হয়।
সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার (প্রথম আলো)
তারিখ: ফেব্রুয়ারী ০৫, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,