#বই_বৃত্তান্ত
“কতগুলো কথা থাকে , হয়তো প্রত্যেকের জীবনেই থাকে ;সেগুলো বিশেষ জায়গা ও বিশেষ মুহূর্তে বলতে না পারলে বলাই হয়ে উঠে না।”
বই : বাবলি
লেখক : বুদ্ধদেব গুহ
প্রকাশনা : রিতা পাবলিকেশন
প্রকাশকাল : ১৯৯৩ ( প্রথম প্রকাশ : ১৯৮৫ )
পৃষ্ঠাসংখ্যা : ৮০
মুদ্রিত মূল্য : ৫০ টাকা
” সামনে অনেক পথ বাকি । নাগাল্যান্ডের মধ্যে কোহিমা , জখমা , খুজমা , হয়ে মাও । তারপর কান – কোপকি হয়ে অনেক অনেক দূরে মণিপুরের ইম্ফল ”
বুদ্ধদেব গুহের সাথে প্রকৃতির এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে । পাহাড় – পর্বত , ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী , পাহাড়ি রাস্তা , ঝর্নার বর্ণনা তার প্রায় সকল বইয়ে খুব সুন্দরভাবে উঠে এসেছে । ” সবিনয় নিবেদন ” এর ফরেস্ট অফিসার রাজর্ষি বসুর মাধ্যমে পেয়েছি পালাম্যু এর সৌন্দর্য্য, বন্য প্রাণীর প্রতি ভালবাসা অন্যদিকে ” একটু উষ্ণতার জন্য ” এর সুকুদার মাঝে পেয়েছি একাকী এক প্রাণ যার আপন বলতে রয়েছে শুধু ম্যাকলাস্কিগঞ্জের অপরূপ মায়া ।
#সংক্ষিপ্ত_কাহিনী :
একদিন দুপুর বেলায় বিশ্রামরত অবস্থায় অভির টেলিফোনে বড় সাহেবের স্ত্রীর ফোন আসে। উনার দিদির মেয়ে বাবলি কে দিল্লিতে পাবলিক সার্ভিসে জয়েনিং এর জন্য দ্রুত ডিমাপুরে পৌঁছাতে হবে । পরদিন সকালেই বাবলি আর অভি ডিমাপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে । লন্ডন হাউস অব ইকোনমিকস থেকে পাশ করে আসা অভিকে বাবলির কাছে নিতান্ত এক সাধারণ কর্মচারী মনে হয় অভির স্বাভাবিকতার জন্য । অন্যদিকে ক্ষীণ স্থূল , আকর্ষণহীন চেহারার বাবলি কে কেন জানি অভির ভালো লেগে যায় । দিল্লিতে যাওয়ার সময় ছোটবেলার বান্ধবী ঝুমার কাছে অভি সম্পর্কে জানতে পেরে অভির প্রতি সে আকর্ষণ অনুভব করে । এদিকে সর্বগুণে গুণান্বিত ঝুমা বেশ কিছুদিন ধরে অভির জন্য পাগল । মূলত এই ত্রিকোণ এক ভালবাসার সাত রং নিয়েই এই উপন্যাস । উপন্যাসের শেষে কি হবে তা পাঠকের জন্যই থাকুক ।
#উপন্যাস_বিশ্লেষণ ( স্পয়লার এলার্ট ) :
এই উপন্যাসকে শুধুমাত্র ত্রিকোণ ভালবাসার উপন্যাস হিসেবে মেনে নিতে আমি সম্মত নয় । কারণ উপন্যাসটিতে প্রেম ছাড়াও মানবমনের প্রকৃতি , সমাজ ব্যবস্থা সহ বিশেষ কিছু বিষয় সুন্দরভাবে উপস্থাপিত হয়েছে ।
১. প্রকৃতির বর্ণনা : বুদ্ধদেব গুহের উপন্যাসে অপরূপ প্রকৃতির সৌন্দর্য্য খুব সুন্দর করে উঠে আসে । এই উপন্যাস ও তার ব্যতিক্রম নয় । মনিপুর কিংবা নাগাল্যান্ডের নৈসর্গিক দৃশ্য পাঠককে কল্পনায় নিয়ে যাবে পাহাড়ি দেশে । কানকোপকি , মারাম , তাদুবি , মাও , খুজমা , জাখমা , কোহীমা নামগুলো পড়ার সময় ভ্রমণপ্রিয় পাঠকদের হৃদয়ে অদ্ভুত এক শিহরণ সৃষ্টি হবে । বুদ্ধদেব গুহের প্রকৃতি বর্ণনার এই স্বকীয়তা ব্যক্তিগতভাবে আমার ভীষন পছন্দের ।
” তখন সবে ভাের হচ্ছে। ঝরঝর করে বয়ে চলেছে বর্যার ঘোলা জলে ভরা ডিফু নদী পাহাড় বুক কেটে। এপাশে রাস্তা, ওপাশে ঘন গভীর জঙ্গল। নানারকম বাঁশ ঝােপ, জংলী, কলাগাছের আত,বেত বন, আরাে কত কি গাছ-গাছালি ।”
২. মানবমনের বৈচিত্র্যতা : বৈজ্ঞানিকভাবে আমরা একই প্রজাতির জীব হলেও প্রত্যেকটা মানুষের মাঝে বৈচিত্র্যতা বিদ্যমান । এই উপন্যাসটিতে বাবলি , অভি এবং ঝুমার মাধ্যমে আমাদের সমাজের বিশেষ তিন শ্রেণীর মানুষের সত্তা বর্ণিত হয়েছে ।
বাবলি : সদ্য অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসে চাকরি পাওয়া বাবলি ভীষন আত্মবিশ্বাসী মেয়ে । ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ার কারণে ছোট থেকেই জীবনের কঠিন এক রূপ দেখে এসেছে ।
“বাবলি : অবলা মহিলা না ভেবে নিছক একজন, অন্য একজন মানুষ বলে আমাদের মেয়েদের কবে যে আপনারা ভাবতে শিখবেন জানি না। আপনাদের এরকম ব্যবহারে মাঝে মাঝে সত্যিই অপমান বােধ হয়।”
নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন, স্পষ্টভাষী এবং হাস্যোজ্বল চরিত্রের অধিকারী হলেও তার মাঝে কিছুটা অহংকার লক্ষ করা যায় । অভীকে ভালবাসার কারণে অনেকটা বিনা কারণেই ঝুমার প্রতি সে ঈর্ষা অনুভব করে । এই ঈর্ষা তার শান্ত হৃদয়ে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি করে ।
অভী : বুদ্ধদেব গুহ অভী চরিত্রের মাধ্যমে আদর্শ এক পুরুষের রূপ দেখানোর চেষ্টা করেছেন । আধুনিক , শিক্ষিত এক তরুণ যুবক হওয়ার পরেও তার মাঝে বিন্দুমাত্র অহংকার কিংবা ঈর্ষা নেই । কাউকে ভালবাসার ক্ষেত্রে তার কাছে কারো বাহ্যিক রূপের চেয়ে আত্ত্বার সৌন্দর্য্য মুখ্য । সেই কারণেই বাহ্যিকভাবে তুলনামূলক সুন্দরী ঝুমার জন্য আকর্ষণ অনুভব না করলেও নিতান্ত সাধারণ বাবলির জন্য তীব্র আকর্ষণ অনুভব করে সে ।
ঝুমা : আমাদের সমাজের খুব পরিচিত মুখ ঝুমা চরিত্র । সুন্দরী , বন্ধুমহলে বিখ্যাত , আধুনিক এই মেয়ের জন্য সাধারণত আশেপাশের মানুষগুলো পাগলপ্রায় থাকে । আবার কিছু মানুষ থাকে যারা ঝুমার মত সুন্দরী মেয়েদের নিয়ে মনে মনেই ঈর্ষা পোষণ করে । সবাই যতটা তাদের অহংকারী , স্বার্থপর ভাবে আসলে তারা ততটাও হয় না । ঝুমা ঠিক তেমনই এক মেয়ে । বাবলি ওকে মনে মনে ঈর্ষা করলেও ঝুমা তাকে খুব কাছের বন্ধুই মনে করে । সেই জন্যই নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে অভী আর বাবলির সম্পর্ক থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেয় ।
বাবলি উপন্যাসের কেন্দ্র হলেও ঝুমা চরিত্র ব্যক্তিগতভাবে আমাকে বেশি কাছে টেনেছে । এই আকর্ষণের জন্য তার বাহ্যিক রূপ বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলে নি । নিজের ভালবাসা অন্য কারো জন্যে ত্যাগ করার ক্ষমতা কয়জনের থাকে ?
” ঝুমা মুখ না ফিরিয়েই বলল, আমাকে যদি তােমার কিছুমাত্র ভালাে লেগে থাকে-তবে সেই ভালাে লাগাটা আর আলাদা করে রেখাে না। আমার জন্যে যা-ই তােমার মনে থাকুক না কেন, যদি আদৌ কিছু থাকে, তবে সেটুকুকেও মিশিয়ে দিও। বাবলির মধ্যেই থেকে যাব আমি তােমার কাছে চিরদিন ।”
#পছন্দের_অংশসমুহ :
# ” মনে মনে সকলেই কবি । কারো কবিত্ব মনেই থাকে , আর কারো বা কাগজে । তফাৎ কি ? ”
# ” প্রতিটি সম্পর্ককেই তিল তিল করে গড়তে হয় প্রতিদিন – এই গড়ার চেষ্টা না থাকলেই বুঝি তা ভেঙে পড়ে , ফিকে হয়ে যায় ।”
# ” যে-কোন পারফেক্ট জিনিসই পারফেক্ট। একজন গৃহিনী তার গৃহিণীপনায়, তার ভালােবাসায় তার সহনশীলতায় তার বৃদ্ধিতে যদি তার ছােট্ট সংসারকে সুষ্ঠুভাবে চালিত করতে পারে, তবে তার কৃতিত্বের মধ্যে আর যে জননেতা কোনাে বিরাট দেশের সমস্ত ক্রিয়া-কলাপ কৃতিত্বের সঙ্গে এবং সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করেন, তার মধ্যে কৃতিত্বের মাত্রার কোনাে তারতম্য নেই। দেশ চালানাের মতাে ছােট্ট সংসার সুন্দরভাবে চালানােও একই রকম কৃতিত্ব।”
# ” ও বিশ্বাস করত যে ভালােবাসার প্রকৃতি বুঝি একই রকম। তার চেহারা সরল রেখারই মত। নিজের মনের এক গােপন কেন্দ্র থেকে অন্যমনের কেন্দ্রে সে রেখা সােজাই বুঝি পৌছায়। এপথে যে এত চড়াই-উত্রাই, বাধা-বিপত্তি; ও কখনও জানতো না ।”
#পৃথিবী_বইয়ের_হোক
#বই_বৃত্তান্ত
“কতগুলো কথা থাকে , হয়তো প্রত্যেকের জীবনেই থাকে ;সেগুলো বিশেষ জায়গা ও বিশেষ মুহূর্তে বলতে না পারলে বলাই হয়ে উঠে না।”
বই : বাবলি
লেখক : বুদ্ধদেব গুহ
প্রকাশনা : রিতা পাবলিকেশন
প্রকাশকাল : ১৯৯৩ ( প্রথম প্রকাশ : ১৯৮৫ )
পৃষ্ঠাসংখ্যা : ৮০
মুদ্রিত মূল্য : ৫০ টাকা
” সামনে অনেক পথ বাকি । নাগাল্যান্ডের মধ্যে কোহিমা , জখমা , খুজমা , হয়ে মাও । তারপর কান – কোপকি হয়ে অনেক অনেক দূরে মণিপুরের ইম্ফল ”
বুদ্ধদেব গুহের সাথে প্রকৃতির এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে । পাহাড় – পর্বত , ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী , পাহাড়ি রাস্তা , ঝর্নার বর্ণনা তার প্রায় সকল বইয়ে খুব সুন্দরভাবে উঠে এসেছে । ” সবিনয় নিবেদন ” এর ফরেস্ট অফিসার রাজর্ষি বসুর মাধ্যমে পেয়েছি পালাম্যু এর সৌন্দর্য্য, বন্য প্রাণীর প্রতি ভালবাসা অন্যদিকে ” একটু উষ্ণতার জন্য ” এর সুকুদার মাঝে পেয়েছি একাকী এক প্রাণ যার আপন বলতে রয়েছে শুধু ম্যাকলাস্কিগঞ্জের অপরূপ মায়া ।
#সংক্ষিপ্ত_কাহিনী :
একদিন দুপুর বেলায় বিশ্রামরত অবস্থায় অভির টেলিফোনে বড় সাহেবের স্ত্রীর ফোন আসে। উনার দিদির মেয়ে বাবলি কে দিল্লিতে পাবলিক সার্ভিসে জয়েনিং এর জন্য দ্রুত ডিমাপুরে পৌঁছাতে হবে । পরদিন সকালেই বাবলি আর অভি ডিমাপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে । লন্ডন হাউস অব ইকোনমিকস থেকে পাশ করে আসা অভিকে বাবলির কাছে নিতান্ত এক সাধারণ কর্মচারী মনে হয় অভির স্বাভাবিকতার জন্য । অন্যদিকে ক্ষীণ স্থূল , আকর্ষণহীন চেহারার বাবলি কে কেন জানি অভির ভালো লেগে যায় । দিল্লিতে যাওয়ার সময় ছোটবেলার বান্ধবী ঝুমার কাছে অভি সম্পর্কে জানতে পেরে অভির প্রতি সে আকর্ষণ অনুভব করে । এদিকে সর্বগুণে গুণান্বিত ঝুমা বেশ কিছুদিন ধরে অভির জন্য পাগল । মূলত এই ত্রিকোণ এক ভালবাসার সাত রং নিয়েই এই উপন্যাস । উপন্যাসের শেষে কি হবে তা পাঠকের জন্যই থাকুক ।
#উপন্যাস_বিশ্লেষণ ( স্পয়লার এলার্ট ) :
এই উপন্যাসকে শুধুমাত্র ত্রিকোণ ভালবাসার উপন্যাস হিসেবে মেনে নিতে আমি সম্মত নয় । কারণ উপন্যাসটিতে প্রেম ছাড়াও মানবমনের প্রকৃতি , সমাজ ব্যবস্থা সহ বিশেষ কিছু বিষয় সুন্দরভাবে উপস্থাপিত হয়েছে ।
১. প্রকৃতির বর্ণনা : বুদ্ধদেব গুহের উপন্যাসে অপরূপ প্রকৃতির সৌন্দর্য্য খুব সুন্দর করে উঠে আসে । এই উপন্যাস ও তার ব্যতিক্রম নয় । মনিপুর কিংবা নাগাল্যান্ডের নৈসর্গিক দৃশ্য পাঠককে কল্পনায় নিয়ে যাবে পাহাড়ি দেশে । কানকোপকি , মারাম , তাদুবি , মাও , খুজমা , জাখমা , কোহীমা নামগুলো পড়ার সময় ভ্রমণপ্রিয় পাঠকদের হৃদয়ে অদ্ভুত এক শিহরণ সৃষ্টি হবে । বুদ্ধদেব গুহের প্রকৃতি বর্ণনার এই স্বকীয়তা ব্যক্তিগতভাবে আমার ভীষন পছন্দের ।
” তখন সবে ভাের হচ্ছে। ঝরঝর করে বয়ে চলেছে বর্যার ঘোলা জলে ভরা ডিফু নদী পাহাড় বুক কেটে। এপাশে রাস্তা, ওপাশে ঘন গভীর জঙ্গল। নানারকম বাঁশ ঝােপ, জংলী, কলাগাছের আত,বেত বন, আরাে কত কি গাছ-গাছালি ।”
২. মানবমনের বৈচিত্র্যতা : বৈজ্ঞানিকভাবে আমরা একই প্রজাতির জীব হলেও প্রত্যেকটা মানুষের মাঝে বৈচিত্র্যতা বিদ্যমান । এই উপন্যাসটিতে বাবলি , অভি এবং ঝুমার মাধ্যমে আমাদের সমাজের বিশেষ তিন শ্রেণীর মানুষের সত্তা বর্ণিত হয়েছে ।
বাবলি : সদ্য অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসে চাকরি পাওয়া বাবলি ভীষন আত্মবিশ্বাসী মেয়ে । ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ার কারণে ছোট থেকেই জীবনের কঠিন এক রূপ দেখে এসেছে ।
“বাবলি : অবলা মহিলা না ভেবে নিছক একজন, অন্য একজন মানুষ বলে আমাদের মেয়েদের কবে যে আপনারা ভাবতে শিখবেন জানি না। আপনাদের এরকম ব্যবহারে মাঝে মাঝে সত্যিই অপমান বােধ হয়।”
নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন, স্পষ্টভাষী এবং হাস্যোজ্বল চরিত্রের অধিকারী হলেও তার মাঝে কিছুটা অহংকার লক্ষ করা যায় । অভীকে ভালবাসার কারণে অনেকটা বিনা কারণেই ঝুমার প্রতি সে ঈর্ষা অনুভব করে । এই ঈর্ষা তার শান্ত হৃদয়ে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি করে ।
অভী : বুদ্ধদেব গুহ অভী চরিত্রের মাধ্যমে আদর্শ এক পুরুষের রূপ দেখানোর চেষ্টা করেছেন । আধুনিক , শিক্ষিত এক তরুণ যুবক হওয়ার পরেও তার মাঝে বিন্দুমাত্র অহংকার কিংবা ঈর্ষা নেই । কাউকে ভালবাসার ক্ষেত্রে তার কাছে কারো বাহ্যিক রূপের চেয়ে আত্ত্বার সৌন্দর্য্য মুখ্য । সেই কারণেই বাহ্যিকভাবে তুলনামূলক সুন্দরী ঝুমার জন্য আকর্ষণ অনুভব না করলেও নিতান্ত সাধারণ বাবলির জন্য তীব্র আকর্ষণ অনুভব করে সে ।
ঝুমা : আমাদের সমাজের খুব পরিচিত মুখ ঝুমা চরিত্র । সুন্দরী , বন্ধুমহলে বিখ্যাত , আধুনিক এই মেয়ের জন্য সাধারণত আশেপাশের মানুষগুলো পাগলপ্রায় থাকে । আবার কিছু মানুষ থাকে যারা ঝুমার মত সুন্দরী মেয়েদের নিয়ে মনে মনেই ঈর্ষা পোষণ করে । সবাই যতটা তাদের অহংকারী , স্বার্থপর ভাবে আসলে তারা ততটাও হয় না । ঝুমা ঠিক তেমনই এক মেয়ে । বাবলি ওকে মনে মনে ঈর্ষা করলেও ঝুমা তাকে খুব কাছের বন্ধুই মনে করে । সেই জন্যই নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে অভী আর বাবলির সম্পর্ক থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেয় ।
বাবলি উপন্যাসের কেন্দ্র হলেও ঝুমা চরিত্র ব্যক্তিগতভাবে আমাকে বেশি কাছে টেনেছে । এই আকর্ষণের জন্য তার বাহ্যিক রূপ বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলে নি । নিজের ভালবাসা অন্য কারো জন্যে ত্যাগ করার ক্ষমতা কয়জনের থাকে ?
” ঝুমা মুখ না ফিরিয়েই বলল, আমাকে যদি তােমার কিছুমাত্র ভালাে লেগে থাকে-তবে সেই ভালাে লাগাটা আর আলাদা করে রেখাে না। আমার জন্যে যা-ই তােমার মনে থাকুক না কেন, যদি আদৌ কিছু থাকে, তবে সেটুকুকেও মিশিয়ে দিও। বাবলির মধ্যেই থেকে যাব আমি তােমার কাছে চিরদিন ।”
#পছন্দের_অংশসমুহ :
# ” মনে মনে সকলেই কবি । কারো কবিত্ব মনেই থাকে , আর কারো বা কাগজে । তফাৎ কি ? ”
# ” প্রতিটি সম্পর্ককেই তিল তিল করে গড়তে হয় প্রতিদিন – এই গড়ার চেষ্টা না থাকলেই বুঝি তা ভেঙে পড়ে , ফিকে হয়ে যায় ।”
# ” যে-কোন পারফেক্ট জিনিসই পারফেক্ট। একজন গৃহিনী তার গৃহিণীপনায়, তার ভালােবাসায় তার সহনশীলতায় তার বৃদ্ধিতে যদি তার ছােট্ট সংসারকে সুষ্ঠুভাবে চালিত করতে পারে, তবে তার কৃতিত্বের মধ্যে আর যে জননেতা কোনাে বিরাট দেশের সমস্ত ক্রিয়া-কলাপ কৃতিত্বের সঙ্গে এবং সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করেন, তার মধ্যে কৃতিত্বের মাত্রার কোনাে তারতম্য নেই। দেশ চালানাের মতাে ছােট্ট সংসার সুন্দরভাবে চালানােও একই রকম কৃতিত্ব।”
# ” ও বিশ্বাস করত যে ভালােবাসার প্রকৃতি বুঝি একই রকম। তার চেহারা সরল রেখারই মত। নিজের মনের এক গােপন কেন্দ্র থেকে অন্যমনের কেন্দ্রে সে রেখা সােজাই বুঝি পৌছায়। এপথে যে এত চড়াই-উত্রাই, বাধা-বিপত্তি; ও কখনও জানতো না ।”
#পৃথিবী_বইয়ের_হোক
সূত্র : সংগৃহিত।
তারিখ: জানুয়ারী ১৮, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,